টোল নীতিমালায় সড়ক-মহাসড়কে টোল আরোপের বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা দূর হয়নি। সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সড়কে টোল দিতে হবে, নাকি সেটি নতুন সড়কের বেলায় প্রযোজ্য হবে- নীতিমালায় তা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। তবে নীতিমালা অনুমোদনের একদিনের মাথায় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, নতুন করে কোনো রাস্তায় টোল আদায় করা হবে না। গতকাল একই কথা বলেছেন, সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের টোল নীতিমালার সারসংক্ষেপ দেখেই আমি বক্তব্য দিয়েছি। এখানে আমার কোনো কনফিউজিং নেই। তিনি আরও বলেন, সেদিন আমি স্পষ্টই বলেছি, কর আরোপযোগ্য সড়ক, মহাসড়ক ও সেতুতে পর্যায়ক্রমে টোল আরোপ করা হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তাদের সুবিধামতো সময় অনুযায়ী এগুলো বাস্তবায়ন করবে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে টোল নীতিমালা ২০১৪ অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আওতায় দেশের সব মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক পর্যায়ক্রমে টোলের আওতায় আনা হবে। এই টোল যাবে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলে। সেখান থেকে অর্থ ব্যয় করা হবে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে। কিন্তু নীতিমালা অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য এবং এর একদিন পর যোগাযোগমন্ত্রীর বক্তব্য সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে টোল নীতিমালা নিয়ে।
জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের মহাসড়কগুলোকে টোলের আওতায় এনে সারা দেশের সড়ক কাঠামোর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে গত সোমবার টোল নীতিমালা ২০১৪ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই নীতিমালার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, টোল নীতিমালায় সর্বোচ্চ ১ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৫ টাকা টোল আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আদায়কৃত টোলের অর্থ সরাসরি সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিলে জমা হবে। এ অর্থ মহাসড়কের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানিয়েছিলেন, টোল আদায় প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যেই এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয় বাড়বে, যা মহাসড়কের উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণেই ব্যয় করা হবে। পর্যায়ক্রমে সওজের আওতাধীন দেশের সব জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ককে টোলের আওতায় আনা হবে। উড়াল সেতু, ফেরি, ট্যানেল এবং অনুরূপ কাঠামোগুলোও টোলের আওতায় আসবে। ১৮৫১ সালের টোল আইন যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে টোল নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় মহাসড়কে একটি মাঝারি ট্রাক চলাচল করলে তাকে ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। সে অনুযায়ী হেভি ট্রাককে ২০০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০০ টাকা এবং ট্রেইলারকে ২৫০ শতাংশ অর্থাৎ এক হাজার টাকা টোল দিতে হবে। একইভাবে মিনিট্রাককে ৬০, বড় বাসকে ৯০, মাইক্রোবাসকে ৪০ ও প্রাইভেট কারকে ২৫ শতাংশ টোল দিতে হবে। যানবাহনকে ১৩টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে টোল আদায়ের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে। টোল আদায় হবে তিন পদ্ধতিতে। এগুলো হচ্ছে- অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, দরপত্র এবং উন্মুক্ত ইজারা পদ্ধতি।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরদিন দেশের সব গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হলে মঙ্গলবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে বলেন, টোল নীতিমালার আওতায় নতুন করে কোনো সড়কে টোল আরোপ করা হবে না। বিদ্যমান যেসব সড়কে টোল আদায় করা হচ্ছে অর্থাৎ বনপাড়া-হাটিকুমরুল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রুস্তমপুর থেকে সিলেটের জাফলং এবং চট্টগ্রাম পোর্ট এঙ্সে রোডের বাইরে আর কোনো সড়কেই টোল আদায় করা হবে না। নতুনভাবে কোনো সড়ক নির্মিত হলে সে সড়কে টোল আরোপ করা হবে কিনা তা সরকার সার্বিক দিক বিবেচনা করে যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
যোগাযোগমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর টোল নীতিমালা নিয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে। সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক যোগাযোগমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, নতুন করে কোনো সড়কেই টোল আরোপ করা হবে না। নীতিমালার মধ্যে এরকম কিছু ছিল না। তিনি জানান, ১৮৫১ সালের আইনে বলা হয়েছে টোল আদায় করা হবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সার্কুলারের মাধ্যমে টোল আদায় করা হতো। টোল আদায়ে আধুনিক পদ্ধতিও চালু হয়েছে। সেগুলো একত্রিত করে টোল আদায় পদ্ধতি স্বচ্ছ, আধুনিক, যুগোপযোগী ও সমন্বিত করতে এ নীতিমালা করা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।