[রতন সিং-এর প্রথম গ্রন্থ 'পহেলী আন্তরাজ' লাখনৌ উর্দু একাডেমি পুরস্কার লাভ করে। তার গল্প প্রতীকীধর্মী। ছোট ছোট বাক্যে অনেক বক্তব্য পাঠকের কাছে তুলে ধরাই তার উর্দুগল্পের বৈশিষ্ট্য। এই তরুণ উর্দু কথাশিল্পীর গল্প ছাড়া উর্দু ছোট গল্প সংকলন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অতি অল্প সময়ে উর্দু কথাসাহিত্যে নিজেকে উর্দু কথাশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
বর্তমানে তিনি যুক্ত প্রদেশের লাখনৌ অল ইন্ডিয়া রেডিওতে কর্মরত। ]
শ্রোতারা তার বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনছে। বক্তা কিন্তু সকলের মাঝখানে শুয়ে আবোল তাবোল কাহিনী শুনাচ্ছে। এতে কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না। কাহিনী বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে যায়, যেমন মুসাফির পথ চলতে গিয়ে ভুল রাস্তায় চলে যায়।
একটি কাহিনী অসমাপ্ত রেখে অন্য কাহিনী শুরু করে। এভাবে রাত ধীরে ধীরে গভীর হয়েছে।
ওরা সকলে রেলওয়ে স্টেশনের বামদিকে বাজারের দিকে যাওয়ার পথে একটি দোকানের সামনে বারান্দায় রাত কাটানোর জন্য শুয়েছিল। কিছুক্ষণ পর ওদের মাঝে বয়স্ক বুড়ো লোকটি কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে একটি রাজার গল্প বলছিল। বারান্দায় শায়িত সকলে বলে উঠে, 'তারপর কি হলো বাবা?' তারপর বুড়ো বলতে থাকে, এক রাজা ছিল, তার ছিল সাত রানী।
সাত রানীর জন্য পৃথক পৃথক প্রাসাদ তৈরি করেছিল। একটি ছিল কাঠের তৈরি। দ্বিতীয়টি ইটের, তৃতীয়টি শ্বেতপাথরের। চতুর্থটি তামার। পঞ্চমটি রুপার, ষষ্ঠটি সোনার আর সপ্তমটি ছিল হিরা-জহরতের তৈরি।
একজন শ্রোতা বলল, ঠিক আছে।
এত ধনদৌলত অথচ বাদশাহর কোনো সন্তান ছিল না। সে জন্য সে ছিল অত্যন্ত দুঃখী। রাজাকে একজন সভাষদ পরামর্শ দিল, অনেক দূরে এক জঙ্গলে একটি কুল গাছ আছে। গাছে সাতটি ফল আছে।
ফলগুলো পেড়ে এনে সাত রানীকে খাওয়ালে তাদের বাচ্চা হবে। কিন্তু এই গাছের কাছে পৌঁছানো ছিল দুষ্কর। মাঝখানে সাত নদী পাড়ি দিতে হবে এবং সাতটি দৈত্যের মোকাবিলা করতে হবে। কুল গাছটির চারদিকে সাতটি সাপ পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু রাজা তার সিদ্ধান্তে অটল।
তিনি সৈন্য-সামন্ত নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এর মাঝে বুড়োর কাশি পায়। কাশি থাকলে বুড়ো অন্য গল্প শুরু করে।
অনেকদিন আগের কথা। একজন কারিগর এতবড় একটি লাঠি তৈরি করে।
এর মাঝে একজন লোক বসতে পারে। এই লাঠি আবার মানুষের মতো কথা বলে। চলাফেরা করে, খাওয়া-দাওয়া করে। শ্রোতারা সমস্বরে বলে উঠে, ঠিক আছে।
এ সময় হঠাৎ রিকশা আর টাঙ্গার সারি হৈচৈ করে সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল।
হয়তো স্টেশনে কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন এসে থেমেছে। তাই বুড়ো গল্প বলা কিছুক্ষণ স্থগিত রাখে। তারপর সে এক মাছের গল্প শুরু করে। মাছটি এতবড় ছিল যে, তার পেটের ভিতর একটি শহর ঢুকানো যায়।
সকলে সমস্বরে বলে, সব ঠিক আছে।
বুড়োর গল্প বলার সাথে সাথে রাত গভীর হয়। সকলে কিন্তু তার গল্প মনোযোগ সহকারে শুনছিল। সে আবার গল্প শুরু করে।
হাজার বছর আগের কথা। এক রাজা অর্ধেক পৃথিবী জয় করে নিয়েছিল।
তাই রাজা জয়ের আনন্দে এক বিরাট ভোজের আয়োজন করে।
সেখানে সকলের আমন্ত্রণ জানায়।
সবাই জানতে চায়, তারপর?
অনেক রান্না বান্না হয়। শহরের প্রতিটি বাড়ির লোকজন যাতে বাদ না পড়ে সেভাবে বিপুল খাবারের আয়োজন করা হয়।
তারপর শ্রোতারা সমস্বরে বলল।
বুড়ো কাহিনী অব্যাহত রাখে।
প্রথমে রাজা তার আত্দীয়-স্বজনের আহার শেষ করে।
ঠিক আছে, তারপর।
তারপর রাজার অসংখ্য উজির-নাজির ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা
আহার শেষ করল।
ঠিক আছে, তারপর শ্রোতারা বলল।
সবশেষে শহরের অসংখ্য গরিব, ফকির, মিসকিনরা রাজার বাড়িতে পেটপুরে খেল আর রাজার দীর্ঘ জীবনের ও সুখ-সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করল।
সম্পূর্ণ মিথ্যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। সকলে সমস্বয়ে প্রতিবাদ করে ওঠে। বারান্দায় শায়িত সকলে একত্রে উঠে দাঁড়ায়। একজন বলল, বুড়ো তোমার মিথ্যা কথা বলতে লজ্জা করে না।
আমরা যদি রাতে পেটভরে খাবার খেতাম তাহলে অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়তাম। সারা রাত তোমার বাজে গল্প কেউ শুনত না।
বুড়ো ধীরকণ্ঠে জবাব দিল, ভাই বেজার হচ্ছো কেন? আমিও তোমাদের মতো ভুখা। আমার যদি ঘুম আসত, কবে ঘুমিয়ে পড়তাম। ক্ষুধার জ্বালায় আমারও তো ঘুম আসছে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।