'প্রশ্নবিদ্ধ' মামলায় গত দুই বছরে পাঁচবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। রাজনীতিতে 'ক্লিনম্যান' খ্যাত বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো দলের মহাসচিবই পাঁচবার কারাগারে যাননি। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ থেকে অদ্যাবধি কারাগারে রয়েছেন তিনি। জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধাদানসহ নানা অভিযোগে বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একে একে ৬৩টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এসবের মধ্যে ১৯টিতে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর মধ্যে সাতটি মামলায় মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মির্জা ফখরুলের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের মহাসচিবকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দুই বছরে পাঁচবার জেলে পাঠানো গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে মারাত্দক হুমকি। এটা আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের শাসনামলে আমরা কখনোই আশা করিনি। মির্জা ফখরুল একজন বিসিএস ক্যাডার শিক্ষক, ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি যেখানেই যান বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্র্মীরা থাকেন। ময়লার গাড়িতে তিনি আগুন দিয়েছেন, ভাঙচুর করেছেন, কেউ দেখল না, শুধু সরকারের আজ্ঞাবহ কিছু লোক দেখল, এটা বাংলাদেশের কেউ বিশ্বাস করে না। পাকিস্তানের আইয়ুব-ইয়াহিয়ার আমলেও এ ধরনের 'প্রশ্নবিদ্ধ' মিথ্যা মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এর আগে মির্জা ফখরুল প্রথমবার জেলে যান ১৬ মে, ২০১২ সালে। প্রায় এক মাস কারাগারে থেকে ১৯ জুন মুক্তি পান। এরপর ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর কারাগারে যান ফখরুল। মুক্তি পান ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি। একই বছরের ১২ মার্চ ফের গ্রেফতার করা হয় তাকে। এক দিন পর ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি মেলে তার। ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল আবার জেলে পাঠানো হয় মির্জা ফখরুলকে। প্রায় ২ মাস কারাভোগের পর ৬ জুন মুক্তি পান তিনি। এ কিউ এম বদরুদ্দোজ্জা চৌধুরী ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। এরপর ছিলেন কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান (১৯৮৪-১৯৮৬), কে এম ওবায়দুর রহমান (১৯৮৬-১৯৯১), ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার (১৯৯১-১৯৯৬), আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (১৯৯৬-২০০৭) সাল পর্যন্ত। ৩ সেপ্টেম্বর তাকে বহিষ্কার করা হলে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহাসচিবের দায়িত্ব পান। পরে ২০১১ সালের মার্চে খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পর দায়িত্ব পান মির্জা ফখরুল। কিন্তু কোনো মহাসচিবকে মির্জা ফখরুলের মতো জেল খাটতে হয়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে ওয়ান-ইলেভেনে আবদুল জলিল ছাড়া স্বাধীনতার পর কেউ জেলে যাননি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তিনটি মামলায় ফখরুলের জামিন আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে বিচারক রমনা ও শাহবাগ থানার দুই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের জামিন আবেদন নাকচ করেন। তবে রমনা থানায় দায়ের হওয়া ট্রাফিক কনস্টেবল ইব্রাহিম খলিল হত্যা মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করা হয়। অন্য মামলাগুলো হলো- হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়ে বাংলামটরে পুলিশ হত্যা, ৩০ নভেম্বর মালিবাগে এবং গত ৩ জানুয়ারি পরীবাগে বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে মানুষ হত্যা ও নাশকতার অভিযোগে। প্রথমবার ২০১২ সালের ১৬ মে ফখরুলকে আটক করার পর দুটি মামলায় ২০ দিনের রিমান্ড এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালের ১০ ডিসেম্বর আটকের পর ৬ মামলায় ৫৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বরের অবরোধকে কেন্দ্র করে যে মামলাগুলো হয়, তার মধ্যে ছয় মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মির্জা ফখরুলের রিমান্ড চাওয়া হয়। ওই বছরের ২৯ এপ্রিল হরতালের দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া এবং সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে দুটি মামলায়ও ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। ওই বছর তাকে ৭৭ দিনের রিমান্ডে নিতে চেয়েছিল পুলিশ। এরপর ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে আরও গ্রেফতার হন বিএনপির এ নেতা।
দুই 'হত্যা' মামলায় জামিন শুনানি ৬ এপ্রিল : রাজধানীর রমনা ও শাহবাগ থানার দুটি হত্যা মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন শুনানি ৬ এপ্রিল ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক জহুরুল হকের আদালতে এ জামিন আবেদন করা হলে শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করা হয়। মির্জা ফখরুলের পক্ষে জামিন আবেদন করেন বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। এর আগে ২৭ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম রেজাউল করিম তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন আবেদন করা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।