জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা না-করা নিয়ে সরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তির মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। আদালতের নির্দেশে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করার পর থেকেই জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি ব্যাপকভাবে সামনে এসেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা থেকে এটা মনে হয়েছে যে, জামায়াতের ব্যাপারে আপিল বিভাগের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার কোনো পদক্ষেপ নেবে না।
বিষয়টি আবার সামনে এসেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের একটি বক্তব্যের পর।
১৪ মার্চ তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে এদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আগামী জুন মাসের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে বলেও মন্ত্রী জানিয়েছেন।
মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করলেও অনেকেই অবশ্য এটা বিশ্বাস করতে চাইছেন না যে, সরকার সত্যিই জামায়াতের প্রশ্নে কী ধরনের অবস্থান নিতে যাচ্ছে! জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে সরকারের অবস্থান দোদুল্যমান বলেও তারা মনে করছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে জামায়াতে ইসলামীকে অপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনতাবিরোধীদের স্থান না দিতে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে যাতে তারা স্থান না পায়, তাও নিশ্চিত করার পরামর্শ আদালত সরকারকে দিয়েছেন।
কিন্তু সরকার এই পরামর্শ বিবেচনায় নিয়েছে তার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই।
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবির প্রতি সরকার যে সহমত পোষণ করে না সেটা স্পষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য থেকেই। সৈয়দ আশরাফ গত বছরের ৩ আগস্ট বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা কোনো ইস্যুতে একমত প্রকাশ করে সাধারণত বক্তৃতা-বিবৃতি দেন না। আওয়ামী লীগ যা বলে বিএনপির অবস্থান হয় তার বিপরীত।
আবার বিএনপি কোনো কিছুতে ‘হ্যাঁ বললে আওয়ামী লীগ অবধারিতভাবেই তাতে ‘না’ বলে। কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের দুই নেতাকে প্রায় এক সুরে কথা বলতে শোনা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের ২ আগস্ট বলেছিলেন, ‘বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা সমর্থন করে না। রাজনীতিকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করা উচিত। ’
সৈয়দ আশরাফ এবং মির্জা ফখরুল জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে প্রায় অভিন্ন মত প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগের অন্য নেতা-মন্ত্রীরা বলেছিলেন ভিন্ন কথা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা সঠিক ও স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করে বলেছেন, এর মাধ্যমে জামায়াত এদেশে থাকার অধিকার হারিয়েছে, বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই তাদের।
বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, উচ্চ আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এটি জামায়াত নিষিদ্ধের প্রথম ধাপ। এখন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, রাজনীতি কলুষমুক্ত করতে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া জরুরি।
তথ্যমন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর মতে, জামায়াতকে দলগতভাবে নিষিদ্ধ করা দরকার এবং এর প্রত্যেক সদস্যের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার। জামায়াত একটি সশস্ত্র জঙ্গিবাদী সংগঠন, তার গণতন্ত্রে থাকার অধিকার নেই।
দেখা যাচ্ছে জামায়াত নিষিদ্ধ করা না করা নিয়ে সরকারি দল এবং তার মিত্রদের মধ্যে ভাবনাচিন্তার ঐক্য নেই। এ অবস্থায় হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করলেও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া না-হওয়ার বিষয়টি ঝুলেই আছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে জামায়াত।
সরকার আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায় আছে বলেই মনে হয়। নির্বাহী আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ করার দায় সরকার না নিয়ে আদালতের মাধ্যমেই সমস্যাটির সমাধান করতে চায়।
অন্যদিকে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত কী হবে সেটা স্পষ্ট না জানায় আশা ও আশঙ্কার দোলাচলে দুলছে জামায়াত। তবে তারা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে তৈরি আছে সেটা বোঝা যায় তাদের মিলিট্যান্ট এবং আধাগোপন, আধাপ্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান থেকেই। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হিসেবে তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আপিল করেছে।
আবার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য দেশব্যাপী সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির সারাদেশে ব্যাপক নৃশংসতা চালিয়েছে। সরকার জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও তারা হতোদ্যম হয়নি। তাদের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে; কেউ কেউ আত্মগোপনে আছে।
জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে যে তা হয়নি সেটা বোঝা যায় উপজেলা নির্বাচনে তাদের ‘সাফল্য’ দেখেই।
হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডসহ নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়েও তাদের নেতাদের দণ্ডের হাত থেকে মুক্ত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। সরকার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রশ্নে অবিচল রয়েছে। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এতোকিছুর পরও উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীদের বিজয় কি এক ধরনের বিপদ সংকেত দিচ্ছে না?
নিষিদ্ধ না করলেও বর্তমান সরকারের আমলে জামায়াতের উপর চাপ অব্যাহত থাকবে এবং তাদের পক্ষে নির্বিঘেœ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়তো সহজ হবে না। সে ক্ষেত্রে জামায়াত আগামী দিনগুলোতে আসলে কোন কৌশল অবলম্বন করবে সেটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানারকম জল্পনা-কল্পনা চলছে।
জামায়াতের প্রধান মিত্র বিএনপির মধ্যেও জামায়াতকে নিয়ে নানারকম হিসাব-নিকাশ চলছে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দেশে-বিদেশে অনেকেই বিএনপিকে পরামর্শ দিলেও বিএনপি তা কানে তুলছে না। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক অথবা তাদের নিবন্ধন বাতিল থাকুকÑ এই দুটোর কোনোটাতেই বিএনপির কোনো লোকসান নেই বলে বিএনপির শীর্ষনেতাদের ধারণা। দল হিসেবে টিকে থাকলে জামায়াত থাকবে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র; আর নিষিদ্ধ হলে যে কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না থাকায় জামায়াতের ভোট পাবে বিএনপি। কারণ জামায়াতের নেতাকর্মী-সমর্থকরা কখনও-ই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না।
জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বিএনপিরই লাভ। কারণ সে ক্ষেত্রেও অন্য কোনো দলের চেয়ে জামায়াতের বিএনপিতেই লীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্য কোনো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে মিশে গেলে জামায়াতের রাজনীতি এক ধরনের ঝুঁকির মধ্যেই থাকবে। কিন্তু বিএনপিতে মিশলে তারা থাকবে ঝুঁকিমুক্ত। কারণ রাজনীতিতে যত প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থানই গ্রহণ করুক না কেন বিএনপিকে অনেকেই উগ্র সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে মনে করে না।
জামায়াতের সঙ্গে এক ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা আওয়ামী লীগ তথা সরকারের পক্ষ থেকেও আছে বলে শোনা যায়। সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনেও কোনো কোনো জায়গায় জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কৌশলগত সমঝোতা করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের এই সুবিধাবাদী অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো অপছন্দ করলেও তারা এটা বন্ধ করতে সক্ষম হয়নি। বিএনপি থেকে জামায়াতকে আলাদা করার কৌশল হিসেবে যদি আওয়ামী লীগ এটা করে থাকে তাহলেও এতে রাজনৈতিকভাবে তাদের লাভবান হওয়ায় সম্ভাবনা খুব কম। জামায়াত এটা খুব ভালো করেই বোঝে যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে তাদের লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি।
তাই তারা আওয়ামী লীগ বা বর্তমান সরকারের কোনো ফাঁদে পা দেবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন না। রাজনৈতিক চাতুরিতেও জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ পেরে উঠবে বলে মনে হয় না। তবে জামায়াতের মতো একটি নৃশংস সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে বিএনপি কতোদিন একসঙ্গে চলতে পারবে সে প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। বিএনপি এখনও নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলেই দাবি করে থাকে। অন্যদিকে জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী দল।
এছাড়া জামায়াতকে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।
জামায়াত-শিবিরের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এদের শুধু আইনগতভাবে মোকাবিলা করতে চাইলে তাতে সাময়িক কিছু ফল পাওয়া গেলেও এই প্রক্রিয়ায় তাদের শিকড় উপড়ে ফেলা যাবে না। রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবেও তাদের বিচ্ছিন্ন করার সর্বাত্মক পরিকল্পনা সরকারের থাকতে হবে। ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য জামায়াত-শিবিরের কৌশল মোকাবিলা করতে হলে একমুখী তৎপরতায় ফল পাওয়া যাবে না।
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির প্রতি দেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন নেই, এটা আগে যতটা জোর দিয়ে বলা যেত; উপজেলা নির্বাচনের পর সেভাবে বলা যাবে না? জামায়াত একেবারে জনবিচ্ছিন্ন, এমনটা ভাবা সম্ভবত ঠিক নয়। নানা ধরনের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া থেকে শুরু করে ‘বেহেশতি দরজা’ দেখানোর লোভ-প্রলোভনসহ নানাভাবে এরা মানুষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে এবং এ ক্ষেত্রে যে তারা একেবারে ব্যর্থ নয়, তার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। একাত্তরে দেশবিরোধী, গণধিকৃত ভূমিকা পালন এবং গত কয়েক মাসের আন্দোলনের নামে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরও জামায়াত যে কোথাও কোথাও নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারছে এটাকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখা ঠিক নয়। তাই কেবল কথার ফানুস উড়িয়ে কিংবা আইনি ভয় দেখিয়ে জামায়াতকে জনবিচ্ছিন্ন করা যাবে না; সেজন্য দরকার সমন্বিত রাজনৈতিক উদ্যোগ ও কর্ম পরিকল্পনা। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে একযোগে কাজ করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে মোকাবিলা করলে তারা সাংগঠনিকভাবে হয়তো কিছুটা দুর্বল হবে কিন্তু এভাবে তাদের নির্মূল করা যাবে না।
সবচেয়ে বড় কথা, আইনি প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেও এরা একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে না। এদের কার্যপদ্ধতি সুচারু ও সুসংগঠিত। মসজিদ-মাদ্রাসা কেন্দ্র করে এরা সক্রিয় থাকবে, সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে এবং অনুকূল পরিস্থিতি পেলে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যেমনটা তারা করেছিল মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে।
এটা মনে রাখতে হবে যে, দারিদ্র্য-বৈষম্য-পশ্চাৎপদ
চিন্তাচেতনাই হলো জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির প্রধান ভিত্তি। সমাজে যদি ধনবৈষম্য না থাকে, বেকারত্ব না থাকে, কোনো মানুষ যদি শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত না হন, দেশে যদি ন্যায়বিচার, সুশাসন নিশ্চিত হয় তাহলে জামায়াত-শিবির শুধু মৃত্যুপরবর্তী সময়ের সুখ-সুবিধার কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। সেজন্য তাদের কার্যকরভাবে মোকাবিলার পূর্বশর্ত হল অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন এবং বৈষম্য কমিয়ে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হওয়া। ওই পথে না এগিয়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বাগাড়ম্বর করাটা শূন্যে গদা ঘুরানোরই নামান্তর বলে বিবেচিত হবে।
জামায়াত-শিবির কতোটা হিংস্র ও পৈশাচিক হতে পারে একাত্তরে আলবদর-আলশামস বাহিনী গঠন করে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ
সন্তানদের রাতের অন্ধকারে চোখ বেঁধে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে যেমন তার প্রমাণ তারা দিয়েছে, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রগ কেটে কিংবা ঠাণ্ডা মাথায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের খুন করেও দিয়ে আসছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলনের নামেও জামায়াত দেখিয়েছে যে তারা কতোটা অমানবিক ও বর্বর। শান্তির ধর্ম ইসলামের নাম করে তারা অসংখ্য নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে।
ধর্ম এবং রাজনীতিকে একাকার করে জামায়াত-শিবির যে কতো ধরনের অপকর্ম করতে পারে তার প্রমাণ তারা অব্যাহতভাবেই দিয়ে চলেছে। এই ফ্যাসিস্ট-সন্ত্রাসী শক্তিকে যারা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বা করার কৌশল নিচ্ছে তাদের সবাইকে একসময় চরম মূল্য দিতে হবে।
জামায়াত-শিবির আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যে সম্পৃক্ত তার তথ্যও এখন অজানা নয়।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থানে আছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদের সহযোগী রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে সেটা অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। তবে এটা ঠিক এই অপশক্তির বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত ও বিচ্ছিন্ন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে হিতে-বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।