পুনর্গঠিত হতে যাচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। পরিষদের সদস্য হতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের কাছে তদবির শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরাও রয়েছেন। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা সচিবালয়ে পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। অনেকে প্রতিমন্ত্রীর দোয়াও নিচ্ছেন। কিছু আগ্রহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে টেলিফোন করাচ্ছেন। তা ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে প্রতিটি জেলা থেকে জাতীয় পার্টির পাঁচজনকে সদস্যপদ দিতে ডিও লেটার দিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ডিও লেটারে জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাদের জেলা পরিষদের সদস্যপদ দিতে প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা জেলা পর্যায়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিটি সদস্যের নাম স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে আসতে হবে। তা ছাড়া প্রার্থীদের স্থানীয় পর্যায়ে জনসমর্থন আছে কি-না তা যাচাই করা হবে। জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা একটাই। সেটা হলো পরিষ্কার ইমেজের প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো। আমার কাছে যারা এসে দেখা করছেন আমি তাদের সেই নির্দেশনাই দিচ্ছি। জানা গেছে, আইন সংশোধন করে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর আকার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এত বছর সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের (একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য) মনোনীত জেলা পরিষদ কাজ পরিচালনা করলেও এখন এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১১ করা হচ্ছে (চেয়ারম্যান ও ১০ জন সদস্য)। এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা এ-সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী অনুমোদন করেছে। এখন তা জাতীয় সংসদে বিল আকারে পাসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১টি নৃগোষ্ঠীর বসবাস। সরকার প্রতিটি জেলা পরিষদে তিনজন করে বাঙালি প্রতিনিধি থাকবে বলে অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা দিয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যারাই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং একচ্ছত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করেছে তারাই জেলা পরিষদের প্রার্থী হতে দৌড়াদৌড়ি করছেন। তাদের কারণেই উপজেলা নির্বাচনেও হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এদিকে রাঙামাটির সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত) ঊষাতন তালুকদার বলেন, জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠনের অবস্থান মাথায় রেখে প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে। ঢালাওভাবে কোনো কিছু করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা পরিষদের সাবেক সদস্যরা জানিয়েছেন, পাঁচ বছর পর পর জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন হয় না ২১ বছর ধরে। ফলে পছন্দের দলীয় লোকজনই সদস্য হওয়ার সুযোগ পান। নির্বাচিত জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যান ও ৩০ জন সদস্য থাকার কথা। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পর থেকে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক গৌতম দেওয়ান বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন জরুরি। কিন্তু সেটা না করে যদি একতরফাভাবে অনির্বাচিত পরিষদের আকার বাড়ানো হয় তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও জেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।