টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। ঘরের কাছে এত বড় ক্রিকেট আয়োজন না দেখলে কেমন দেখায়। কন্যা-স্ত্রীসহ গেলাম খেলা দেখতে। টিকিট পেয়েছি এক তরুণ লেখকের সৌজন্যে। ঢুকতে যাব, গেটের কাছেই হাউ কাউ! কী ব্যাপার? পুলিশ এক মধ্যবয়স্ক লোককে ধরেছে।
তার অপরাধ, সে টিকিট ব্ল্যাক করছে। কিন্তু লোকটা দেখলাম বেশ মরিয়া—
: আমারে ধরলেন কেন?
: কেন ধরছি বোঝো নাই?
: না।
: টিকিট ব্ল্যাক করতাছ না?
: জি, করতাছি। ৫০ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় বেচতাছি।
: তো, এইটা অপরাধ না?
: কেমনে অপরাধ? মানুষ এক লাখ টাকায় জমি কিইনা পাঁচ বছর পর ১০ লাখ টাকায় বেচে না? আমিও সকালে ৫০ টাকার টিকিট কিইনা বিকেলে ৫০০ টাকায় বেচি।
সমস্যা কী?
আশপাশের লোকজন তার কথায় মজা পেয়ে হেসে উঠল। কিন্তু বেরসিক পুলিশ তার লজিকের মধ্যে গেল না। তাকে ধরে ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল।
আমরা যেখানে খেলা দেখতে বসেছি, তার ওপরের দিকে হঠাৎ মারামারি লেগে গেল। দ্রুতই পুলিশ ছুটে এসে মারামারি থামিয়ে দিল।
হঠাৎ দেখি এক তরুণ ফোনে চেঁচিয়ে বলছে, ‘ভাই, আপনে কোথায় বসছেন? যেখানে মারামারি লাগছে, তার কোন দিকে? ডাইনে, না বাঁয়ে?’ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাকে ধরল, ‘এই মারামারি লাগছে মানে? কী উল্টাপাল্টা বলো? চলো আমাদের সঙ্গে...। ’ সেও রেড হ্যান্ড কট।
তাকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।
খেলা দেখব কী? আমি মাঠের মাঝখানে স্পাইডার ক্যামেরা দেখে মুগ্ধ! চারটে প্রায় অদৃশ্য সুতায় বাঁধা একটা অদ্ভুতদর্শন ক্যামেরাটা ছুটে বেড়াচ্ছে মাঠময়। কখনো দর্শকের কাছে যাচ্ছে কখনো প্লেয়ারদের পিছে পিছে।
যেন ভিনগ্রহ থেকে ছুটে আসা একটা ইউএফও ছুটে বেড়াচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়ামময়। আমার খুব আশ্চর্য লাগল সবাই ক্রিকেট নিয়ে কত কিছু লিখল, কিন্তু এই অদ্ভুত ক্যামেরা নিয়ে কিছু লিখল না! সত্যি, প্রযুক্তি যে কোথায় চলে গেছে, এই স্টেডিয়ামে না গেলে বুঝতে পারতাম না।
স্টেডিয়াম ধূমপানমুক্ত এলাকা। কিন্তু স্টেডিয়ামের ভেতরে দুই বাঘ ঘন ঘন ধূম্র উদিগরণ করছে। এই দৃশ্য দেখে কি আর ধূমপায়ীরা ঠিক থাকতে পারে? একটু পরপর ছুটে যায় বাইরে।
দর্শকদের এত আগাপাছতলা চেক করে ঢোকায়, তার পরও এত সিগারেট কীভাবে ঢোকে স্টেডিয়ামে কে জানে! তবে একজন ধূমপায়ী আমাকে জানাল, সে নাকি তার আন্ডারওয়্যারের ‘বুক পকেটে’ করে সিগারেট নিয়ে ঢোকে। বুক পকেটওয়ালা আন্ডারওয়্যার যে আজকাল বাজারে পাওয়া যায়, এটা জানতাম না। সেটাও স্টেডিয়ামে গিয়ে জানলাম।
সবশেষে এক মর্মান্তিক ক্রিকেট-দর্শকের কথা বলা যাক। সে বহু গবেষণা করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলাটির টিকিট কেটেছে।
বেলা সাড়ে তিনটা থেকে খেলা শুরু হবে, রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে। এক টিকিটে দুই খেলা। ঠিক তিনটায় গিয়ে হাজির হলো সে স্টেডিয়ামে। খেলা শুরু হবে সাড়ে তিনটায়, শেষ হবে ১১টায়। কিন্তু সে পুরো খেলাই মিস করল।
বন্ধুরা অবাক!
: তুই খেলা দেখতে গেলি, খেলা দেখলি না মানে?
: না রে, পারলাম না!
: সে কী! কেন?
: আমার যে হঠাৎ কঠিন ডায়রিয়া হয়ে গেল!
: কয়বার টয়লেটে গিয়েছিল?
: একবার।
: মাত্র একবার? এ আর এমন কি ডায়রিয়া?
: কিন্তু তিনটায় ঢুকলাম স্টেডিয়ামের টয়লেটে...বেরোলাম যে ১১টায়...ততক্ষণে দুটি খেলাই শেষ!
এতক্ষণ টানা টয়লেট অবরুদ্ধ রাখার জন্য কর্তব্যরত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল কি না, সেটা অবশ্য জানা যায়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।