একুশে পদকে সম্মানিত প্রবীণ এই সাংবাদিক ৮৩ বছর বয়সে বুধবার মারা যান। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
এবিএম মূসার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক জানিয়েছেন। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াতের মেয়ে পারভীন সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার ঢাকায় কর্মসূচির পর তার বাবার মরদেহ ফেনীতে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।
১৯৩১ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারিতে ফেনীর পরশুরাম থানার ধর্মপুর গ্রামে এবিএম মূসার জন্ম। তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি হয়েছিল ফেনীর ‘সাপ্তাহিক কৈফিয়ৎ’ সম্পাদনার মাধ্যমে।
পরে ইনসাফ হয়ে ইত্তেফাকে যোগ দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন মূসা। বাসস, বিটিভিসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতীয় প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি।
ঢাকায় এবিএম মূসার প্রথম জানাজা হয় বুধবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের মাঠে।
রাতে বারডেমের হিমঘরে রাখার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহ নেয়া হবে জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানে জানাজার পাশাপাশি সহকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর লাশ নেয়া হবে ফেনীতে।
বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হন এবিএম মূসা। কয়েকদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে রাখার পর বুধবার দুপুর ১টায় তার মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এই সাংবাদিক তিন মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
১৯৯৯ সালে একুশে পদক পাওয়া এবিএম মূসার সাংবাদিকতায় বর্ণময় অভিজ্ঞতা রয়েছে, এ পেশায় তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকেছেন প্রায় ৬০ বছর ধরে।
সাংবাদিক মূসা স্বাধীনতার পর সরাসরি রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছিলেন, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে ফেনীর একটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
তবে রাজনীতিতে বেশি দিন থাকেননি তিনি, ফিরে গেছেন সাংবাদিকতায়। মাঝে ১৯৭৮ সালে যোগ দেন জাতিসংঘ সংস্থা এসকাপে।
তারপর দেশে ফিরে ১৯৮১ সালে নেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের দায়িত্ব, সেখানে চার বছর ছিলেন তিনি।
এরপর ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক ছিলেন এবিএম মূসা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব বেশ কয়েকবার পালন করেন এবিএম মূসা।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে সাংবাদিকতায় যুক্ত হওয়া মূসা পাকিস্তান অবজারভার, মর্নিং নিউজ, নিউ নেশন, নিউজ টু ডে-তে কাজ করেছেন। বিবিসি, সানডে টাইমসের সংবাদদাতা হিসেবেও কাজ করেন তিনি।
এবিএম মূসা ২০০৪ সালে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব নিলেও সেখানে বেশিদিন থাকেননি। এরপর কলাম লেখা ও টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে সক্রিয় উপস্থিতি ছিল তার।
সাংবাদিকদের শোকএ বি এম মূসার মৃত্যুতে জাতীয় প্রেসক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের আঞ্চলিক বিভিন্ন সংগঠন শোক জানিয়েছে।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব এম এ আজিজ ও আবদুল জলিল ভূইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, আবদুল হাই, সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাস ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এক শোকবার্তায় বলেন, “তিনি ছিলেন সাংবাদিকতা জগতের অনন্য প্রতিষ্ঠান।
তার নিষ্ঠা, সাধনা,আদর্শ ও পেশার প্রতি অঙ্গীকার তরুণ সাংবাদিকদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। ”
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এক শোক বার্তায় পূর্বসূরি এবিএম মূসার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কমান্ডের সভাপতি আকরাম হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চ্যার্টাজি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহেদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক মীর আহমাদ মীরু, ঢাকাস্থ বৃহত্তর কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ আখতার ইউসুফ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তালুকদার।
ল’রিপোর্টাস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠনও শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।