সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!
আপনি যদি ঢাকা শহরের কোন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে যান তাহলে হয়তো সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দেখা পান না। তাই বলে ভাববেন না যে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের পদ শূণ্য রয়েছে। এই শহরের বেশিরভাগ হাসপাতালেই পদের চেয়ে অনেক বেশি ডাক্তারের পোস্টিং আছে। আপনি বিএসএমএমইউ বা ডিএমসিএইচ-এর মতো প্রতিষ্ঠিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে খবর নিলে জানতে পারবেন যে সেখানে ওয়ার্কিং ডেপুটেশন, ডেপুটেশন, সংযুক্তি ও শিক্ষা প্রেষণ নিয়ে অনুমোদিত পদের বাইরেও অনেক চিকিৎসকের পোস্টিং আছে। অথচ আপনি যদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর খবর নেন তাহলে দেখবেন যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকতো দুরের কথা সেখানে মেডিকেল অফিসারের অনেক পদও শূণ্য রয়েছে।
আর যাদের পোস্টিং আছে তাঁরাও নিয়মিত সেখানে যান না। সপ্তাহের দু বা তিনদিন এই মহাশয়দের দেখা মিলে। ২০০৪ সালের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একবার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের জেলা পর্যায়ে বদলির একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বলাবাহুল্য, উদ্যোগটি প্রাথমিক প্রাথমিক পর্যায়েই পরিত্যক্ত হয়। কারণ যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বদলির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তারা প্রায় দলবেধেঁ স্বেচ্ছা অবসরে চলে যাচ্ছিলেন।
তাদের কাছে এ দু'পয়সার সরকারি চাকরির চেয়ে লাখ টাকার প্রাইভেট প্রাকটিস অনেক বেশি গুরুত্বের ছিল। স্থায়ী কমিটি শেষ পর্যন্ত এইসব বিশেষজ্ঞদের অন্তত তথ্যগতভাবে সরকারের ভান্ডারে রাখার তাগিদে এই উদ্যোগটি বাতিল করেন।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন থানা, পুলিশ কমিশনারের অফিস, এসবি অফিস ও হেড কোয়াটারের বিভিন্ন লোভনীয় পদে পোস্টিং নেয়ার জন্য পুলিশের কর্মকর্তাদের মাঝে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলে। মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি থানাওয়ারী পোস্টিংয়ের জন্য নাকি ভিন্ন ভিন্ন মাসোহারার অনানুষ্ঠানীক বিধান আছে। বিধানটা যেহেতু অনানুষ্ঠানীক এবং খবরগুলো যেহেতু প্রমাণিত নয় সে কারণে এগুলো আমাদের দেশপ্রেমিক এ বাহিনীটির প্রতি মিথ্যা প্রচার বলেই ধরে নেব।
তবে যে বিষয়টা একেবারেই মিথ্যা নয় তা হচ্ছে আমাদের এই বাহিনীর সদস্যদের গ্রামের প্রতি অনীহা। শহরের ফুটপাত, অলিগলি, সেতু এমন কোন জায়গা আপনি পাবেন না যেখানে পুলিশের আনাগোনা নেই। তারা আইন-শৃংখলা পরিস্থিতী নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে কি পারছে না সেটা ভিন্ন ব্যাপার। তবে এই দেশে এমন অনেক জায়গাও আছে যেখানে কেউ খুন হয়ে পড়ে থাকলেও পুলিশ পৌছতে কয়েক ঘন্টা লেগে যায়।
এই শহরের সরকারি কলেজগুলোর কোন ফ্যাকাল্টিতেই প্রভাষক, সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপকের কোন খালি পদ আপনি পাবেন না।
অধিদপ্তর বা বিভিন্ন প্রকল্পে কোন শূণ্য পদ নেই। যারা কোথাও পোস্টিং পাচ্ছেনা না বা প্রেষণে যেতে পারতেছেন না তাঁরা প্রয়োজনে ওএসডি থাকছেন তবুও মফস্বলে কোন অবস্থায়ই যাবেন না।
নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নিয়াগপ্রাপ্তদেরকে চাকরির প্রথম তিন বৎসর অত্যাবশ্যকভাবে মফস্বলে কাটাতে হয়। এ সময়টাকে তাঁরা নিজেদের কয়েদী সমতুল্য মনে করেন। এই তিন বৎসর পার হওয়ার পর তারা আর কেউ গ্রামে যেতে চাননা।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাঝে যারা ডিসি বা ইউএনও হন (তাও জেলা ও উপজেলার ক্যাটাগরি বিবেচনা সাপেক্ষে) তারা ছাড়া নিতান্তই যাদের কোন মুরব্বী নেই তাদেরকে মফস্বলে পড়ে থাকতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কাউকে কাউকে মফস্বলে বদলি করা হলেও তারা শিক্ষাছুটি, প্রেষণ বা লিয়েন নিয়ে ঔ স্থান ত্যাগ করেন। অথচ আপনি যদি খুঁজ নেন তাহলে দেখবেন এই সমস্ত কর্মকর্তাদের প্রায় ৮০% গ্রামে মানুষ হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত গ্রামে পড়ালেখা করেছে। তারপরে শহরের কোন কলেজে ভর্তি হয়েছে।
গাদাগাদি করে ম্যাচে থেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর হলে সিট না পেলে ঔ গাদাগাদির ম্যাচই ছিল আশ্রয়। কিন্তু চাকরীটা পাওয়ার পরই কেমন একটা নবাবী ভর করে। কোন এক বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করে নিজেকে শহুরে বাবু ভাবতে শুরু করে। গ্রামের কথা কেউ বললে বা গ্রামের কথা স্মরণে আসলে নাক সিটকায়।
অথচ তাদেরকে পড়ালেখা করিয়ে এই পর্যায়ে আনতে রাষ্ট্র যে ভর্তুকি দিয়েছে তার সিংহভাগ অর্থই এসেছে গ্রাম থেকে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে এখনও যে গ্রামের খেঁটে খাওয়া মানুষরা সচল রাখছেন তা বলার জন্য বিশেষজ্ঞের মতামতের প্রয়োজন পড়েনা।
আমাদের গ্রামদেশে একটা প্রবচন আছে। প্রবচনটা পূর্ণাঙ্গভাবে ভদ্রসমাজে বলা যাবে না। তবে খানিকটা এডিট করে বললে এমন বলা যায়-- "যে পাতে খায় সে পাতেই ত্যাগ করে"।
দেশের সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের আচরণ এই প্রবচনটার অর্থকে আরো সমৃদ্ধ করে। নিজের শিকর বা উৎসের প্রতি এই অবহেলা আমরা ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন জাতি করে কিনা তা আমার জানা নেই।
একটি প্রস্তাবঃ সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার মূলত ক্যান্টনমেন্টের বাইরে প্রেষণে কর্মরত সেনা অফিসারদের সুবিধা দেয়ার তাগিদে মূল বেতনের ২০% প্রেষণ ভাতা চালু করে। তবে এর সুবিধা বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তাও ভোগ করছে। বিভিন্ন সুবিধা থাকার কারণে কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রকল্পে প্রেষণে যাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকেই উৎসাহিত ছিল।
তার উপর অতিরিক্ত ভাতার কারণে এ ধরণের পোস্টিংয়ের জন্য কর্মকর্তাদের মাঝে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু এর মাধ্যমে প্রশাসনের বা দেশের মানুষতো কোন উপকার হচ্ছে না। যারা সুবিধা পেত তারা আরো বেশি সুবিধা পাচ্ছে। প্রেষণে কর্মরতরা ভাতা না পেলেও সেখানে থাকবে। এক্ষেত্রে তাঁদের বাড়তি এ প্রেষণ ভাতার দেয়ার কোন যুক্তিকতা নেই।
বরং এই ভাতাটা যদি মফস্বলে (অন্তত উপজেলা পর্যায়ে) পোস্টিং দেয়া হয়েছে এমন কোন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয় তাহলে মফস্বলে যাওয়ার ব্যাপারে বর্তমানে কর্মকর্তাদের মাঝে যে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে তা কিছুটা হলেও দুর হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।