বাপে খায় বিড়ি পোলার নাম হ্যারি (প্রথম পর্ব)
বাপে খায় বিড়ি পোলার নাম হ্যারি (দ্বিতীয় পর্ব)
হেলাল মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছে জীবনে কোনদিন মদ,বাজে মেয়ে আর জুয়া এদিকে যাইবোনা। বড় হইতে হইবো অনেক বড়। গ্রামের আর বাসের কথা মনে পড়লে হেলালের মাথার রক্ত এখনো পায়ে চইলা আসে। প্রথমদিন মাহাজনের ১০ ট্রাক মাল আসলো। হেলালের আর কাম কি আম ভর্তি ক্রেস্ট গুলা মাথায় নিয়া মাহাজনের গুদামে গিয়া সাজাইয়া রাখা।
হেলাল খুব কাম দেখাইলো প্রথমদিন। আস্তে আস্তে হেলালের কাজ দেইক্ষা মালিক ও খুব খুশী। এমন খাটনে ওয়ালা পোলা মালিক ও দেখে নাই। এইখানে যা কাম করে সব কাম চোর। আর সবচেয়ে বড় কথা এই পোলার কোন বাজে অভ্যাস নাই।
হেলাল আস্তে আস্তে মালিক সালাম সাহেবের মন জয় কইরা ফালাইলো।
সালাম সাহেবের অনেকগুলা আরত আরো অনেক ব্যাবসা আছে আর টাকার অভাব নাই। কিন্তু দুঃখ একটাই মেয়েটা ছোটকালে এক্সিডেন্টে এ পা হারাইছে আর পোলাটা পড়াশুনা করেনা। স্কুল পাশ দিবার পারে নাই। পরে সালাম সাহেব আইনা অন্যান্য ব্যাবসার কামে লাগাই দিছে।
হেলাল মাজেমধ্যে সালাম সাহেবের বাসায় যায়, গিয়া সালাম সাহেবের দুপুরের খাবার নিয়া আসে। মালিকের বৌ খুব ভালো বাসায় গেলে যত্নআত্তি করে। মাঝে মাঝে মালিকের মাইয়ডার লগেও দেখা হয় চোখাচুখি হয় কিন্তু কোন কথা হয়না।
এদিকে হেলালের থাকার জায়গাও পরিবর্তন হইছে গুদামের পাশে মালিকের অফিস আছে ঐখানে এখন ঘুমায়। আগের মতো গন সবাইর লগে লাইন ধইরা ঘুমানো লাগেনা।
আর জমির ভাই কাম ছাইড়া দিছে এখন নাকি দেশে কৃষিকাজ করে।
হেলাল এখন প্রতিমাসে বাড়িতে বাপের নামে মাস খরচা টাকা মানি অর্ডার কইরা পাঠাইয়া দেয়। কিন্তু কই থাকে কি কাম করে এইটা কিছু কয়না।
-হেলাল ভাই ও হেলাল ভাই কই তুমি?
হেলাল ঘুমাইতে আছিল মালিকের পোলা সুমনের ডাক শুইন্না লাফ দিয়া উঠছে। জি ভাই, কিছু কইবেন।
-হ, কাপড়চোপড় পড় আমার লগে এক একটু মতিঝিল জিপিও যাওয়া লাগবো।
ভাই ৫ টা মিনিট সময় দেন আমি রেডি হইতাছি। আপনি এইখানে বসেন।
-বুজছো হেলাল ভাই ডিভি পাঠামু। অ্যামেরিকা যামু।
ডিভি কি ভাই?
-অ্যামেরিকা যাওয়ার কাগজ। পাঠামু ওরা পাওয়ার পর লটারি করবো। কপালে লাগলে যামুগা। নাইলে আবার পরের বছর পাঠামু।
ভাই আপনারা এতো টাকার মালিক অ্যামেরিকা গিয়া কি করবেন।
-আরে ভাই ঐটা হইলো স্বপ্নের দেশ আমি এখানে বছরে যা কামামু ঐখানে গিয়া মাসে একবারে কামামু। তুমি যাবা নাকি?
হেলাল হাঁসতে হাঁসতে ভাই পাঠাইতে তো অনেক খরচ আর আমি বেশী একটা লেখা পড়া পারিনা।
-আরে ধুর মিয়া কোন খরচ নাই। আমি তোমারটা পাঠাই দিমু। দাড়াও আজকে তাইলে আর যামুনা, কালকে তোমার সব কিছু পূরণ কইরা দুইজনেরটা একসাথে জমা দিমু।
আচ্ছা ভাই।
পরেরদিন হেলাল আর সুমন জিপিওতে গিয়া তাদের ডিভি জমা দিলো।
১০ মাস পরের কথা
-হেলাল ভাই ও হেলাল ভাই তোমার কপাল তো খুইল্লা গেলো।
হেলাল কাম করবার লাগছিলো। সুমনের কথা বুঝতে পারে নাই।
কি হইছে ভাই আমার কপাল আবার খুললো কেমনে?
-তুমিতো মিয়া রাজকপাল নিয়া জন্মাইছো। ডিভি পাইছো ভাই তুমি ডিভি পাইছো।
এর পরের ঘটনা নিম্নরুপ
হেলাল ডিভি পাওয়ার পর মালিক হেলালের লগে তার এক পা ছাড়া মেয়ের বিয়ে দিলো। হেলালের কোন উপায় আছিল না কারন অ্যামেরিকা যাওনের কাগজপত্র করতে নাকি অনেক খরচ। তাই বাধ্য হইয়া বিয়াটা করা।
হেলাল এখন ২০ বছর ধরে অ্যামেরিকা থাকে। প্রথম প্রথম বাংলাদেশিদের সাথে কাজ করতো। পরে বিদেশী এক জায়গাতে কাজ নেয়। বিদেশী মালিক তার নাম ঠিকমতো উচ্চারন করতে পারতোনা। তাই হেলাল নাম এখন রুপান্তর হয়ে হ্যারি হয়ে গেছে।
হেলালের এখন তিন সন্তান। হেলাল তার বউরে অ্যামেরিকা যাওয়ার ৫ বছরের মাথায় নিয়া আসছে। তার এখন বিশাল একটা গ্রোসারি শপ। এখানে সবাই তারে খুব সন্মান করে। আর তার কাস্টমার বেশীরভাগ বিদেশী।
হেলাল এখন প্রতি বছর দেশের বাড়িতে যায় বাবার কবর জিয়ারত করতে। এছাড়া বাবার নামে স্কুল দিছে আরো কত কিছু। আর গ্রামে তার সন্মান এখন অনেক।
এই হল আমাদের দেশের তথাকথিত হেলালের হ্যারি হয়ে যাওয়ার কাহিনী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।