আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জানা আপুর মেয়ে 'কিন্নরী' ও তার পরিবারের সাথে কাঁটানো কিছু সময় (অবিস্মরনীয় পোস্ট)

বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... আজ সন্ধ্যায় রংপুর বিভাগীয় বাংলা ব্লগদিবস আয়োজনের ব্যাপারে 'জানা' আপুর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিলো আমি পরিচয় দিলাম 'রংপুর থেকে মাহতাব'। তিনি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন ও 'সমুদ্র?' আমি হেসে বললাম 'জ্বি' আমাদের আয়োজন, আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে তার উচ্ছ্বাস সত্যিই আমাকে বিমুগ্ধ করছিলো। বিভিন্ন আলাপের ফাঁকে জানা আপুর পারিবারিক কিছু কথাবার্তা চলে আসে। তিনি পরিবারের কথা বলতে গিয়ে জানান তার এক মেয়ে আছে নয় বছর বয়স। আমি আগ্রহ বাড়িয়ে জিজ্ঞস করি তার মেয়ের নাম।

তিনি বললেন 'কিন্নরী'। আমি এই নাম শুনে থমকে যাই। এরপর জানা আপুকে থামিয়ে আমি কথা বলতে শুরু করি। আমি বলি 'আপু আপনি একবার রংপুরে এসেছিলেন' জানা আপু বললেন 'হ্যাঁ' আমি আবার বলি 'আপনি আপনার পরিবারসহ এসেছিলেন, সাথে আপনার হাসবেন্ড, আপনার বড়বোন, বড়ভাই, আপনার মা। ' জানা আপু সহজে অবাক হওয়ার মত মানুষ নন, তিনি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেই বললেন 'হ্যাঁ' আমি আবার বলতে শুরু করি 'আপনারা এসেছিলেন আপনার বড় ভাইয়ের স্মৃতি বিজড়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হোস্টেল দেখতে' তিনি জানালেন 'হ্যাঁ'।

'আপনাদের একটি একজন আবাসিক বর্ডার গোটা হোস্টেল ঘুরিয়ে দেখায়, যার কিনা আপনার বড় ভাইয়ের সীটে তার বর্তমান অবস্হান ছিলো, সেই ছেলে একে একে হোস্টেলের ডাইনিং, বাথরুম এলাকা, হোস্টেলের বাইরে বিশাল বটগাছ ঘুরিয়ে দেখায়, হোস্টেল এবং ক্যাম্পাসের বিশদ বর্ণনা দিচ্ছিলো, আপনার মেয়ে কিন্নরী কে কোলে নিয়ে আদর করেছিলো, কাঁধে নিয়ে ক্যাম্পাসের কিছুটা পথ ঘুরে বেড়িয়েছিলো ' জানা আপু আমার কথা শুনে 'টাস্কিত' বুঝলাম। জানা আপুর সব মনে পড়ে। এরপর আমি বলি আমিই সেই বর্ডার আপনার পরিচিত 'মাহতাব সমুদ্র' জানা আপুর উচ্ছ্বাসের কাছে আমি পরাজিত। আমার সালটা মনে ছিলো না, জানা আপুই মনে করিয়ে দিলো ২০০৯সাল। বিকেলে হোস্টেলের সামনে দুটো গাড়ী পর পর এসে থামার শব্দ পাই।

আমি রুম থেকে করিডোরে এসে দেখি বেশ কয়েকজন পুরুষ মহিলা এবং একজন বিদেশি মাইক্রোবাস থেকে নেমে আমার হোস্টেলের ভিতর প্রবেশ করছিলেন। আমি এগিয়ে কথা বলতেই একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক জানালেন তিনি এখানে পড়াশোনা করেছেন এবং এই হোস্টেইলেই ছিলেন এরপর তিনি তারপর তার রুম খুঁজতে লাগলেন এবং পেয়েও গেলেন। যে রুমটা পেলেন সেটা ছিল আমারই রুম। তিনি তার পরিবার কে দেখিয়ে দিলেন যে বেড সেটা বর্তমানে আমারই বেড। আর একজন অল্প বয়স্কা মহিলা সেটা ইংরেজি আর অন্য ভাষায় সেই বিদেশিকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।

তাদের সাথে ছিলো ফুটফুটে তুলতুলে এক বাচ্চা যাকে কোলে নেয়ার লোভ আমি সামলাতে পারি নি। পরে তাদের সাথে পরিচিত হই, সেই মধ্যবয়স্ক লোক সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, সাথে সম্ভবত তার মা ছিল, তার অন্যান্য বোন, অল্পবয়স্কা মহিলাও তার ছোটবোন এবং ছোটবোনের স্বামী সেই বিদেশি। এরপর আমি আমার দুএকজন বন্ধুকে নিয়ে গোঁটা হোস্টেল ঘুরিয়ে দেখিয়েছি অনেক কথা বলেছি। এও জেনেছি যে ষাটের দশকে সেই ভদ্রলোক এখানে ছিলেন। অনেক কথা গল্পের মাঝে তাদের বিদায় দিয়েছি।

তাদের সবার সাথে পরিচিত হওয়ার পরও সবার নাম ভুলে গিয়েছি। শুধু একটি নাম মনে ছিলো, মাথায় গেঁথে গিয়েছিলো 'কিন্নরী'। মনে ছিল এজন্য যে একজন বিদেশিকে বিয়ে করার পরও তাদের মেয়ের নাম এত সুন্দর বাংলায় কিভাবে রাখে? তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার মেয়ের নামও রাখবো 'কিন্নরী'। আজ জানা আপুর সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলাম সেই অল্পবয়স্কা ভদ্রমহিলাই আমাদের 'জানা' আপু, সেই বিদেশি (তখন শুনেছিলাম নরওয়েজিয়ান এবং আইটি বিষয়ক কি যেন করে) আরিল তার হাসবেন্ড এবং মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক সৈয়দ আব্দুল মতিন জানা আপুর বড় ভাই। হোস্টেলে তো অনেকেই আসে, আসাম থেকে আসে, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি থেকে আসে।

১৯১৬ সালে কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানের শিক্ষার্থীদের বিশাল অংশই ছিল ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্হানের। জীবনের শেষ বয়সে স্মৃতিকাতর হয়ে কিংবা অকারনে অকারনেই অনেকেই আসে। কারো নামতো মনে থাকে না। ভাগ্যিস 'কিন্নরী' আমার মেয়ের নাম রাখতে চেয়েছিলাম। আসলেই আমি ভাগ্যবান।

জানা আপুর নাম এতবার শুনেছি অথচ তার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো সেটাই জানা ছিল না। আজ জানা আপুর সাথে কথা না বললে সেটাও জানা হত না! [জানা আপুকে বলেছিলাম এই ব্যাপারে রাত্রে পোস্ট হবে, তিনি হেসে বললেন দিও][yt|]  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.