খাজা সলিমুল্লাহ ঢাকার নবাব ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য তিনি ঢাকার রমনা এলাকায় নিজ জমি দান করেন। ১৯০৩ সালে বড় লাট লর্ড কার্জন ঢাকায় সফরে এলে নওয়াব সলিমুল্লাহ পূর্ব বাংলার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। ১৯০৬ সালের নভেম্বরে সলিমুল্লাহ সমগ্রভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দের নিকট পত্রালাপে নিজের অভিপ্রায় তুলে ধরলেন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘের প্রস্তাব রাখলেন।
নবাব সলিমুল্লাহ ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম কনফেডারেন্সী’ অর্থাৎ সর্বভারতীয় মুসলিম সংঘ গঠনের প্রস্তাব দেন; হাকিম আজমল খান, জাফর আলী এবং আরো কিছু প্রতিনিধি প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেন।
সলিমুল্লাহ ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি মারা যান। নবাব সলিমুল্লাহ ১৮৭১ সালের ৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নবাব খাজা আহসানউল্লাহ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান নবাব স্যার সলিমুল্লাহর সাহসী পদক্ষেপ ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দোশরদের ক্রমাগত আক্রমন থেকে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য এবং ধর্ম রক্ষায় নবাব স্যার সলিমুল্লাহর একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে (এশরাত মঞ্জিল) ঢাকার শাহবাগের এক শিক্ষা সম্মেলন আহবান করেন। সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য তৎকালীন ভারতবর্ষের সকল মুসলিম মনীষীদের কাছে দাওয়াত পত্র পৌঁছান। দীর্ঘ ৬ মাস যাবত নৌকায়, ঘোড়ায় ও ট্রেনে করে দূত পাঠিয়ে এ দাওয়াত পত্র পৌঁছান। এ সময় শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক সহ অনেকে বিশ হাজার মাইল ট্রেন ভ্রমন করে আট হাজার মনীষীর নিকট আমন্ত্রন পত্র পৌঁছে দেন ।
মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯১৫ সালে ১৬ জানুয়ারী কলকাতায় বৃটিশ ষড়যন্ত্রে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় বলে জনশ্রুতি আছে।
মৃত্যুর পর নদী পথে নবারের লাশ সদরঘাট আনা হলেও কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি। এমকি তার স্ত্রী সন্তানকেও দেখতে দেওয়া হয়নি। বেগম বাজার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার পর দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ বৃটিশ বাহিনী তার কবর ঘিরে পাহারা বসায়। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাটা নিজ বাড়িতে বিদেশি শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে হয়। ছিলেন ময়মনসিংহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন ঢাকায়। ১৯০১ সালে পিতার মৃত্যুর পর পরিবারের প্রধান নিযুক্ত হন।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের একটি সরকারী মেডিকেল কলেজ। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরাতন ঢাকায় অবস্থিত। এর আগের নাম "মিটফোর্ড হাসপাতাল"।
১৮৫৮ সালে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। চার বছর ধরে এর নির্মাণ কাজ চলে। একটি মহিলা এবং দুইটি পুরুষ ওয়ার্ড নিয়ে এর শুরু। প্রথমে বেড ছিল ৯২ টি। বর্তমানে সুপ্রীম কোর্ট ভবনে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নবারের দেওয়া জমির উপরে।
নবারের পূর্ব পুরুষ কাশ্মীর থেকে সুবেদার বাংলায় ব্যবসা করতে আসেন। খাজা সলিমুল্লাহ ছিলেন আধুনিক ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলার মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে গড়ে তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা আলিয়া মাদরাসা, সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা এবং আজকের বুয়েট।
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা ঢাকার নবাবদের গড়া এমনি একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এ এতিমখানাটি এদেশে সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ অনাথ আশ্রম।
তিনি ঢাকাকে আধুনিক ঢাকা করার জন্য ঢাকার পয়োনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ, বিদ্যুত্ সরবরাহসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনিই প্রথম অনুধাবন করতে পারেন বৃটিশ বাংলায় মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ স্বাধীন করতে এবং শাসন করতে হবে। তাই তিনি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তেমনি রাজনৈতিকভাবেও মুসলমানদের অগ্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
খাজা সুলিমুল্লাহ একটি মুসলিম রাষ্ট্রের চিন্তা করতেন। সেই চিন্তা থেকেই আজকের বাংলাদেশ।
আজকের যে শিক্ষিত বাঙ্গালী মুসলমান দেখি তাদের সকলের ওপরই অবদান আছে নবাব সলিমুল্লাহর। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।