বেশ কিছুদিন ধরে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সারাদেশে সহিংসতা, তা-ব, নাশকতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর চোরাগোপ্তা আক্রমণ, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদের গাড়িবহরের ওপর আক্রমণ চালানো, সর্বশেষ গত মঙ্গলবারের হরতালের সময় যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের দাবিতে সারাদেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলার সময় আইনমন্ত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও তাঁর এপিএসের গাড়িসহ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবিরের জঙ্গী সদস্যরা। এ আক্রমণে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। জামায়াত-শিবিরের সাম্প্রতিক উপর্যুপরি পরিকল্পিত নগ্ন হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার ঘটনায় বাংলাদেশের প্রগতিশীল সচেতন মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ যখন জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে রাজপথ উত্তাল করে তুলছে; তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা শিবিরের সহিংসতা বন্ধের জন্য ওই ফেসিস্ট দল জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তাব করেন তখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক শক্তি ও দেশপ্রেমিক জনগণ তার এ প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে।
এ প্রস্তাবটা কি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাবনা নাকি ড্যান মজিনার ব্যক্তিগত মত তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে ড্যান মাজিনা যেহেতু বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সুতরাং তার জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংলাপে বসার এ কূট ও কৌশলী প্রস্তাবকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতির প্রতিফলন বলে মনে হয়। যে সময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর পক্ষে দালালী ও সে সময় রাজাকার-আলবদর বাহিনী গঠন করে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ত্রিশলক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত আব্রু হরণ করে বাংলাদেশে পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করে যুদ্ধাপরাধ করেছে; সেই রাজাকার-আলবদরদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে এবং অচিরেই সেই বিচারের রায় ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছেÑ ঠিক এমনই এক মুহূর্তে মজিনার জামায়াত-শিবিরের চলমান সহিংসতা ও নাশকতা বন্ধের জন্য সরকারকে তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তাব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ও বন্ধেরই নামান্তর।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত ও সহিংসতার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে গত ১৫ নভেম্বর ২০১২ এক বিবৃতিতে এ সংঘাত ও মতপার্থক্য দূর করতে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।
এ আহ্বানের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে আমেরিকার নতুন চাল বলেই মনে করে দেশের রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। কেননা, কোনভাবে একটা আলোচনার আয়োজন করতে পারলেই প্রশ্ন আসবে চলমান যুদ্ধাপরাদের বিচার বন্ধ করে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তিদানের বিষয়টি। আমেরিকা যেহেতু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র সুতরাং সেই মিত্রদের লবিংয়ের কারণেই হয়ত
যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারে। আমেরিকার এ চালাকিটা সরকার ও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এ সংলাপের প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যারা দেশের আইনমন্ত্রীকে অকারণে আক্রমণ করতে দ্বিধা করে না, যারা খুনী, ডাকাত, মানুষ হত্যা করে; তাদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? আগে তাদের দমন করতে হবে। ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মাধ্যমই যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপের প্রস্তাব নাকচ হয়ে গেছে তা নিশ্চয়ই ড্যান মজিনার বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
সুতরাং আমরা চাই না যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সব কিছুতেই নাক গলাক। সব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে ড্যান মজিনা বা যুক্তরাষ্ট্র কাদের স্বার্থ হাসিল করতে যাচ্ছে, তা সহজেই অনুমিত। যুক্তরাষ্ট্রের এ মনোভাবে অনেকেই সন্দেহ করে বলেছেন, দেখুন তারাই আবার সংলাপের অজুহাত সৃষ্টির জন্য জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছে কিনা?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।