আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চীনে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন? লক্ষ্য করুন !

দুঃস্বপ্ন দেখি পৃথিবী থমকে গেছে, চোখ খোলার আগে ভাবি- জেগে যেন দেখি সব আগের মতোই আছে। ইউরোপ আমেরিকায় বাজার মন্দার প্রভাব ইউনিভার্সিটিগুলোতে বিস্তৃত হওয়ার খবর অনেক পুরনো। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব দেশে পড়াশোনার জন্য যাওয়ার আগে তথ্য যাচাইয়ের যথেষ্ঠ সুযোগ থাকে, ফলে একটু চোখকান খোলা রাখলেই সুবিধা অসুবিধাগুলো জেনে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়, গ্যাঞ্জাম থাকলে হয়তো ঐ দেশী এম্ব্যাসি ভিসার আবেদন নাকচ করে দেয়। অর্থাৎ এখানে দালালরা (শুদ্ধ ভাষায় এজেন্ট আর কি!) তাদের ক্লায়েন্টদেরকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ কম পায়। এর ব্যতিক্রম হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের উচ্চশিক্ষা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

কারণ ভিসা পাওয়া যতটা সহজ, ভার্সিটি সম্বন্ধে বাস্তব তথ্য পাওয়া ততটাই কঠিন , আর অবশ্যই খরচ কম হওয়া। এটা ঠিক সরকারী তত্বাবধানে থাকায় এরা নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টগুলোতে মান বজায় রাখে; কিন্তু আসল ধাঁধাঁ কিন্তু এর বাইরে। ইন্টারন্যাশনাল কো অপারেশন ডিপার্টমেন্ট নামের একটি ডিপার্টমেন্টের তৈরী স্পষ্ট ব্যবধান কমবেশী সবগুলোতেই বিদ্যমান (হাতেগোনা কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে)। চাইনিজ ছাত্রদের এবং ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রদের শিক্ষাব্যবস্থা, লক্ষ্য, কৌশল এমনকি উদ্দেশ্যেও আকাশ পাতাল তফাৎ। বলা বাহুল্য চীনে অবস্থানকালীন সময়ে একজন ছাত্রের ইউনিভার্সিটির সংশ্লিষ্ট সবধরণের কর্মকান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব এরাই পালন করে।

সরকারী অডিট আসলে চাইনিজ ডিপার্টমেন্টে যেখানে শিক্ষার মান, ছাত্রদের ক্যারিয়ার এগুলো নিয়ে মাথা ফাটাফাটি অবস্থা তৈরী করে, সেখানে ইন্টারন্যাশনাল ডিপার্টমেন্টে মাণ নির্ণায়ক হয় মুলতঃ কতজন ছাত্র ভর্তি হলো, কতগুলো ভিনদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতার (হোকনা সেটা নাম মাত্র) চুক্তি হলো ইত্যাদি। সাধারণত নতুন আসা শিক্ষার্থীরা যেসব অসুবিধায় পড়ে তার প্রেক্ষিতে দরকারী মনে হচ্ছে এমন কিছু বিষয়ে বলছি- ১. দালাল/এজেন্টদেরকে ছাড়া কাজ করার চেষ্টা করুন। নিতান্তই যদি যেতে হয় তাহলে তাদের কাছ থেকে নাম জানার পর সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করুন, ইমেইল করুন, ফোন করুন (৬/৭ টাকা - মিনিট)। যদিও মতলব খারাপ যাদের তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু লোকও জড়িত থাকতে পারে। ওখানকার ছাত্রদের সাথে কথা বলুন।

এদের সবার কথা তুলনা করে দেখুন সামঞ্জস্য কতটুকু। কারো কথাই আলাদাভাবে বিশ্বাস করে বসে থাকবেননা। ২. ছাত্রদের কাছ থেকে শুনেই ভিসার জন্য দৌড়াবেননা, কিছু ভার্সিটি ছাত্রদের রেফারেন্সে নতুন ছাত্র আসলে তাদেরকে ভালো অংকের কমিশন দেয়। চীনে আইনানুযায়ী বিদেশী ছাত্রদের পার্ট টাইম কাজ অবৈধ, ফলে ইনকামের উৎস না থাকায় অনেকেই মরিয়া হয়ে ছাত্র সংগ্রহের চেষ্টায় থাকে। এমন লোকের পাল্লায় পড়লে বুঝতেই পারছেন ... ৩. যদিও চীনের ভার্সিটি গুলোর জন্য র‍্যাংকিং এর নির্ভরযোগ্য ডাটাবেইজ নেই, তারপরও প্রাথমিক ধারণা নিতে নেট এ দেখতে পারেন, সম্ভব হলে পরে লিংক দিচ্ছি।

৪. সাধারণত যে বিশ্ববিদ্যালয় যত বেশী পুরনো সেটা তুলনামুলক ভাবে ভালো এবং নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু এখানেও ফাঁক আছে। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় কবে প্রতিষ্ঠিত না দেখে - দেখুন তারা ইন্টারন্যাশনাল ছাত্র কবে থেকে ভর্তি করে, অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল ডিপার্টমেন্টে আপনার সাবজেক্টের অন্তর্ভুক্তি কবে হয়েছে। ৫. এজেন্ট/ছাত্র কারো মাধ্যমেই ভার্সিটিতে ঠাকা পাঠাবেননা। আমার দেখা বেশীরভাগ প্রতারণাগুলোই এই শ্রেনীর।

ব্যাংকের মাধ্যমে অথবা আসার সময় সাথে করে নিয়ে এসে সরাসরি ভার্সিটিতে টাকা জমা দেবেন। ৬. আপনার ভিসা সহজে কম খরচে ঝামেলা ছাড়া প্রসেস করে দিবে - এইসব বুলি গিলতে যাবেননা। চাইনিজ এম্ব্যাসিতে গেলে এমনিতেই ১ দিন পরে ভিসা পেতে পারেন। শুধু ডকুমেন্ট গুলো ঠিক আছে কিনা মিলিয়ে নিবেন। ৭. আখাউয়া লেবেল লাগানো সাবজেক্ট বাদ দিয়ে সাধারণ (মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, সিভিল, সি এস ই এইধরণের) সাবজেক্টগুলো প্রাধান্য দিন, বিশেষ করে যদি ব্যাচেলর কোর্সে আসেন।

পড়াশোনার পর চীনে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে এইসব সাবজেক্ট ভালো হবে, আবার দেশে বা মধ্যপ্রাচ্যের বাজারেও এইগুলোর চাহিদা আছে, থাকবে। কিন্তু বিশেষায়িত কিছু সাবজেক্টে কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় ইন্ডাষ্ট্রী, নিজের দেশে চাহিদা না থাকা, সাধারণ চাকরীতে মুল্যায়ন না পাওয়া ইত্যাদি হাবিজাবি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে, কাজেই ভালো করে খোজ খবর নিন। ৮. মেডিক্যালে পড়তে আসলে অবশ্যই অবশ্যই বি এম ডি সি র অনুমোদন আছে কিনা যাচাই করুন। প্রায় ৫০ টির মত বিশ্ববিদ্যালয় এই অনুমোদনভুক্ত। এগুলোতে পড়লে বাংলাদেশে বি এম ডি সি তে আরেকটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বাংলাদেশে প্র্যাক্টিস করার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন।

৯. দালালদের কথায় কথায় লাখ টাকা বেতনে চাকরীর প্রলোভনে ভুলবেননা। চীন ঘনবসতির দেশ যেখানে বেকারের অভাব নেই। নিজ যোগ্যতায় প্রতিযোগীতামূলক এই বাজারে চাকুরী পেলে পেতে পারেন, কিন্তু এটা সহজ কাজ নয়। কারণ একজন বিদেশীকে চাকুরী দিতে গেলে তার ভিসার জন্য কোম্পানিকে সরকারী অফিসে ধর্ণা দিতে হয় এবং ব্যাখ্যা করতে হয় কেন দেশী বাদ দিয়ে ভিনদেশী কর্মী চায় সে। আসলে চীন এই খাতে নতুন করে প্রবেশ করায় এখানে অনেক কিছুই সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত নয়, অনেক কিছুই গোছানো নয়।

একটা সময় গিয়ে হয়তো সব কিছুই পরিষ্কার হবে কিন্তু এই অন্তর্বর্তিকালীন সময়টা একটু বিপদজনকই। সাবধানের মাইর নাই! বুঝেশুঝে সিদ্ধান্ত নিন। শুভ কামনা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।