আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে। উৎসর্গ – ১৬ ই ডিসেম্বর
প্রথম পর্ব Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব Click This Link
তৃতীয় পর্ব Click This Link
চতুর্থ পর্ব Click This Link
পঞ্চম পর্ব Click This Link
ভিয়েতনাম যুদ্ধ ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত একটি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সংঘাত। এটি দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যুদ্ধের একপক্ষে ছিল উত্তর ভিয়েতনামি জনগণ ও ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং অন্যপক্ষে ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামি সেনাবাহিনী ও মার্কিন সেনাবাহিনী। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামিরা প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধে লড়াই করে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে।
এই যুদ্ধশেষে ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম --- এই দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা যারা ফ্রান্সের বিরোধিতা করেছিল, তারা উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ পায়। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ-বিরোধী ভিয়েতনামিরা শাসন শুরু করে। উত্তর ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা একটি একত্রিত সাম্যবাদী ভিয়েতনাম গঠন করতে চাচ্ছিল।
মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা বিশ্বাস করেছিলেন যে যদি সমগ্র ভিয়েতনাম সাম্যবাদী শাসনের অধীনে চলে আসে, তবে "ডমিনো তত্ত্ব" অনুসারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বত্র সাম্যবাদ ছড়িয়ে পড়বে।
ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের ঘটনাবলির সাথে জড়িয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তারা দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ বিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। কিন্তু এই সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের প্রতিবাদে দক্ষিণ ভিয়েতনামে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৬০ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা হয়।
১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকারের পতন রোধকল্পে সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি।
১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়।
১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও ও ক্যাম্বোডীয় জাতির লোক মারা যান। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন।
মি লাই-য়ের হত্যাযজ্ঞ ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মার্কিন সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত সবচেয়ে কুখ্যাত হত্যাকান্ড।
১৯৬৮ সালের মার্চ মাসে দক্ষিণ ভিয়েতনামের মি লাই গ্রামে লিউটেন্যান্ট উইলিয়াম কেলি-র নির্দেশে এটি পরিচালিত হয়। অনুমান করা হয় প্রায় সাড়ে তিন শো থেকে পাঁচ শো লোক এতে নিহত হয়। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন নিরস্ত্র গ্রামবাসী এবং তাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী ও শিশু। এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ড যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে ও বাইরে তুমুল সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় তোলে।
বসনিয়ার যুদ্ধ বা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার যুদ্ধ হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক যুদ্ধ।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষ সংশ্লিষ্ট ছিলো, যার মধ্যে রয়েছে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং সেখানে বসবাসকৃত স্বতন্ত্র পরিচয়দাবীকৃত বসনীয় সার্ব ও বসনীয় ক্রোয়েট গোষ্ঠী, রেপুব্লিকা স্পোর্সকা ও হার্জে-বসনিয়া, যারা ছিলো যথাক্রমে সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সহায়তাপুষ্ট।
এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যায় ও সোশালিস্ট ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়া ও সোশালিস্ট রিপালিক অফ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নামের নতুন দুটো রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এর মধ্যে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ছিলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার মোট জনগোষ্ঠীর ৪৪% মুসলিম বসনীয়, ৩১% অথোর্ডক্স সার্বীয়, এবং ১৭% ক্রোয়েশীয় ক্যাথলিক।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২-এ তাদের স্বাধীনতার ঘোষণা পাস করে।
কিন্তু এই ঘোষণা বসনীয়-সার্ব রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা প্রত্যাখান করে এবং নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।
এর ফলে সার্বিয়ান সরকারের প্রধান স্লোবদান মিলসোভিচের সহায়তায় বসনীয়-সার্ব বাহিনী এবং যুগোস্লাভ পিপল’স আর্মি রাষ্ট্রটির সার্বীয় অংশ নিজেদের দখলে নিতে রিপাবলিক অফ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা আক্রমণ করে। এর পর খুব তাড়াতাড়িই সমগ্র বসনিয়া জুড়ে যুদ্ধ শুরু হয়, এবং বসনিয়ার বিভিন্ন অংশের (বিশেষ করে পূর্ব বসনিয়ার) জাতিগত জনগোষ্ঠী এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
মোগাদিশুর যুদ্ধ যা কৃষ্ণ সাগরের যুদ্ধ বা এবং ব্ল্যাক হক ডাউন নামেও পরিচিত হচ্ছে অপারেশন গোথিক সার্পেন্টের আওতাধীন একটি যুদ্ধ। ১৯৯৩ সালের ৩ ও ৪ অক্টোবর সোমালিয়ার রাজধানী শহর মোগাদিশুতে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো।
যুদ্ধের এক পক্ষে ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের সমর্থিত ইউএনওএসওএম ২ , এবং অপরপক্ষে ছিলো তৎকালীন সোমালিয়ার রাষ্ট্রপতি ও মিলিশিয়াদের নেতা যুদ্ধবাজ মোহাম্মদ ফারাহ এইদিদ। যুদ্ধে এইদিদের পক্ষে অনেক বেসামরিক ব্যক্তিকেও যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছিলো। এই যুদ্ধটি মোগাদিশুর প্রথম যুদ্ধ নামেও পরিচিত, কারণ পরবর্তীতে ২০০৬ সালে মোগাদিশুতে আরো একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা মোগাদিশুর দ্বিতীয় যুদ্ধ নামে পরিচিত।
মোহাম্মদ ফারাহ এইদিদের অনুগত হাবার গিদির গোত্রীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আটক করতে মোগাদিশু শহরে তাদের অবস্থানকে লক্ষ্য করে টাস্ক ফোর্স রেঞ্জারের এই অপারশেন পরিচালিত হয়। এই টাস্ক ফোর্স রেঞ্জারদের মধ্যে ছিলো মার্কিন সেনাবাহিনীর ডেল্টা ফোর্স ও ৭৫তম রেঞ্জার রেজিমেন্ট, যাদের আকাশ থেকে সহায়তা প্রদান করছিরো মার্কিন সেনাবাহিনীর-ই ১৬০তম স্পেশাল অপারেশন্স এভিয়েশন রেজিমেন্ট ও পাঁচজন নেভি এসইএএল অপারেটর।
এছাড়াও সহায়তা করেছিলো মার্কিন বিমান বাহিনীর এয়ার ফোর্স প্যারাসিকিউর ও কমব্যাট কন্ট্রোলার দল।
এই ত্বরিত অপারেশনে ব্যবহৃত হয়েছিলো ১৯টি যুদ্ধবিমান (বেশিরভাগই হেলিকপ্টার), ১২টি যানবাহন (বেশ কয়েকটি হামভিসহ), এবং ১৬০জন সৈন্য।
অপারেশনের সময় দুইটি মার্কিন ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার রকেট চালিত গ্রেনেডের কপলে পড়ে ভূপাতিত হয়।
এছাড়া আরো তিনটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিছু সৈন্য আহতদের উদ্ধার করে মূল কম্পাউন্ডে ফিরে আসতে সমর্থ হলেও বাকিরা হেলিকপ্টার ধ্বংসের স্থানে আটকা পড়ে।
পরবর্তীতে তাদের উদ্ধারের প্রচেষ্টার্থে রাতব্যাপী যুদ্ধ চলে।
পরের দিন ভোরে, জাতিসংঘের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন দেশের সৈনিকদের একটি দল আটকে পড়া সৈনিকদের রক্ষার্থে রওনা হয়। বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের মধ্যে ছিলো পাকিস্তান, ও মালয়েশিয়া।
এছাড়াও মার্কিন ১০তম মাউন্টেন ডিভিশনের সৈন্যরাও তাদের সাথে উদ্ধার অভিযানে রওনা হয়। তাদের যুদ্ধযানের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১০০।
এর মধ্যে ছিলো পাকিস্তানি ট্যাংক (এম৪৮ প্যাটন) ও মালয়েশীয় ট্যাংক কন্ডর আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার । এদেরকে সহায়তা করার জন্য আকাশে ছিলো মার্কিন এ/এমএইচ-৬ লিটল বার্ড, এবং ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার। এই টাস্ক ফোর্স প্রথম হেলিকপ্টার ধ্বংসের স্থানে যায়, এবং সেখানে আটকে পড়া সৈন্যদের উদ্ধার করে। দ্বিতীয় হেলিকপ্টার ধ্বংসের স্থানের একমাত্র জীবিত সৈন্য আহত পাইলট মাইক ডুরান্ট সোমালি মিলিশিয়াদের হাতে বন্দী হয়, যদিও পরবর্তীতে কিছু দিন পর তিনি মুক্তি পান।
এই যুদ্ধে নিহত সোমালির প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না।
মার্কিন হিসাবে এই নিহতের সংখ্যা ১,০০০ থেকে ১,৫০০-এর মধ্যে। এই সংখ্যা সোমালি মিলিশিয়া ও বেসামরিক নাগরিকসহ। এছাড়াও আহতের সংখ্যা প্রায় ৩,০০০ থেকে ৪,০০০। যদিও আন্তর্জাতিক সংগঠন রেডক্রসের হিসাবে প্রায় ২০০ বেসামরিক সোমালি এই যুদ্ধে নিহত হয়, এবং আরো কয়েকশত বেসামরিক নাগরিক আহত হন। এই যুদ্ধের ওপর লেখা বই ব্ল্যাক হক ডাউন: আ স্টোরি অফ মডার্ন ওয়ার এ আনুমানিক নিহতের সংখ্যা বলা হয় ৭০০ সোমালি মিলিশিয়ার।
এছাড়াও আরো ১,০০০ আহত হয়েছিলো বলে জানানো হয়। পরবর্তীতে মার্কিন টেলিভিশনে সোমালি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের এক তথ্যচিত্রে দাবি করা হয় সম্পূর্ণ যুদ্ধে মাত্র ১৩৩ জন সোমালি প্রাণ হারিয়েছিলো। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার প্রতিবেদনে সোমালি নিহতের সংখ্যা ৩১২জন ও আহতের সংখ্যা ৮১৪জন উল্লেখ করা হয়। এই যুদ্ধে নিহত মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা ছিলো ১৮ ও আহত হয়েছিলো ৭৩ জন। দুই দিন পর মোগাদিশুর অপর এক মর্টার হামলায় আরো একজন মার্কিন সৈন্য নিহত ও একজন আহত হয়।
জাতিসংঘের সৈন্যের মধ্যে শুধু মালয়েশিয়ার একজন সৈন্য নিহত হয়, ও অপর ৭ মালয়েশীয় সৈন্য ও ২ পাকিস্তানি সৈন্য আহত হয়।
১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে ঐক্যজোটের দল ইউনাইটেড সোমালি কংগ্রেস সোমালিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সিয়াদ বারেকে উৎখাত করে। এই বিপ্লবের পর ঐক্যজোটের সরকার দুই ভাগে বিভক্ত হয়। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন আলি মাহদি মুহাম্মদ, যিনি রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন, ও অপর অংশের নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ ফারাহ এইদিদ। সবমিলিয়ে সোমালিয়ায় তখন মোট চারটি বিরোধী দলের সৃষ্টি হয়।
এগুলো হচ্ছে ইউনাইটেড সোমালি কংগ্রেস, সোমালি স্যালভেশন ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, সোমালি প্যাট্রিয়টিক মুভমেন্ট, এবং সোমালি ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট। সবগুলো দলই সোমালিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য যুদ্ধ শুরু করে। ১৯৯১ সালের জুনে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা পরে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে জুন মাসেই পঞ্চম একটি দল, সোমালি ন্যাশনাল মুভমেন্ট সোমালিয়ার উত্তরপশ্চিম অঞ্চল দখল করে। এসএনএম এই অংশের নতুন নাম দেয় সোমালিল্যান্ড প্রজাতন্ত্র।
এটির রাষ্ট্রপতি হন আবদেল-রহমান মোহাম্মদ আলি।
উপসাগরীয় যুদ্ধ
১৯৬৭ সনে জুন মাসের ৫ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত আরব আর ইসরাইলের মাঝে ৬ দিনের এক যুদ্ধ হয় যেখানে এক পক্ষে ছিল মিশর, সিরিয়া, জর্ডান আর অন্য দিকে ইসরাইল । মিশরে সেই সময় বিমান বাহিনী ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী যা ইসরাইলকে এক পলকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল কিন্তু ইসরাইলীরা মিশরের সেই বিমান বহরের সব বিমান এক রাতের আঁধারে আকাস পথে এসে বম্বিং করে ধ্বংস করে দিয়েছিল।
সেই রাতে মিশরের বিমানগুলো আকাসে উড়ার সময় পর্যন্ত পায়নি। এভাবে চুপিসারে অন্য দেশের আকাস পথে ধুকে এসে ইসরাইল যে এক কলঙ্কিত ইতিহাসের সূচনা করেছিলো তা হয়ত সে দিন পৃথিবী বাসীকে অবাক করে দিলেও তা নিয়ে পরা শক্তি আমেরিকা কোন উচ্চ বাচ্চ করেনি অথচ সেই আমেরিকা আজ মুসলিম বিষ্যকে বলছে ওরা নাকি জঙ্গি ওদের ধ্বংস করে দিতে একে একে চালিয়ে যায় ধ্বংস লীলা আর মরছে সব নিরীহ মানুষ গুলো ।
সেই ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল গাজা এবং মিশরের সিনাই, জর্ডানের পূর্ব ও পশ্চিম জেরুজালেম আর সিরিয়ার গোলান হাইতস তাদের দখলে নিয়ে নেয় যা আজো ইসরাইলরা অন্যায় ভাবে দখল করে রেখেছে।
পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সূচনা ২রা আগস্ট, ১৯৯০ সালে। ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম নামে সমধিক পরিচিত এই যুদ্ধের সংঘটিত হয় ইরাক এবং ৩৪টি দেশের জাতিসংঘ অনুমোদিত যৌথ বাহিনীর মধ্যে। ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে ইরাকের কুয়েত আগ্রাসন এবং কুয়েতি ভূ-খন্ড দখলের প্রেক্ষিতে ইরাকী বাহিনীর হাত থেকে কুয়েতকে মুক্ত করাই ছিল এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য।
ইরাক যুদ্ধ (মার্কিন অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম নামেও পরিচিত; অন্য নাম: অপারেশন টেলিক, ইরাক দখল) একটি চলমান যুদ্ধ যা ২০০৩ সালের ২০শে মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত বাহিনীর ইরাক আগ্রাসনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এই আগ্রাসী বাহিনীতে অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড এবং অন্যান্য কয়েকটি জাতির সৈন্যদল অংশ নিয়েছিল।
ইরাক আক্রমণ করার জন্য তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ ও কোয়ালিশন বাহিনী যে কারণ দেখিয়েছিল তা হল: ইরাক ১৯৯১ সালের চুক্তি অমান্য করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ করছে এবং তাদের কাছে এ ধরণের অস্ত্রের মজুদও আছে। তখন সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, ইরাক যুক্তরাষ্ট্র, এর জনগণ এবং মিত্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য বড় ধরণের হুমকি। পরবর্তীতে এএ সমর্থক কর্মকর্তাদের প্রচণ্ড সমালোচনা করা হয়।
কারণ আগ্রাসনের পরে পরিদর্শকরা ইরাকে গিয়ে কোন ধরণের গণবিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পায়নি। তারা জানায়, ইরাক ১৯৯১ সালেই গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ ত্যাগ করেছে, ইরাকের উপর থেকে আন্তর্জাতিক অনুমোদন সরিয়ে নেয়ার আগ পর্যন্ত তাদের নতুন করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণের কোন পরিকল্পনাও ছিল না। আআ এখানে সেখানন ছড়িয়ে থাকা যা কিছু অস্ত্র পাওয়া গেছে আগেরগুলোরই ভগ্নাবশেষ। এগুলোর জন্য মার্কিন বাহিনী ইরাক আক্রমণ করেনি। কোন কোন মার্কিন কর্মকর্তা দাবী করেন যে, সাদ্দাম হোসেন আল-কায়েদাকে সহযোগিতা করছেন, কিন্তু এর পক্ষেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তার পরও আগ্রাসনের কিছু কারণ দেখানো হয়েছে। যেমন: ফিলিস্তিনের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা, ইরাকী সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লংঘন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং ইরাকের তেল সম্পদ অধিগ্রহণ করা। অবশ্য সর্বশেষ কারণটির কথা মার্কিন কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে।
আগ্রাসী বাহিনী আক্রমণ করার পরপরই ইরাকী সামরিক বাহিনী পরাজিত হয়। রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন পালিয়ে বেড়ায়, অবশেষে ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে আটক করা হয়।
২০০৬ এর ডিসেম্বরে সাদ্দামের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মার্কিন কোয়ালিশন বাহিনী ইরাক দখল করে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের চেষ্টা চালায়। কিন্তু আগ্রাসনের পরপরই কোয়ালিশন বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং ইরাকের বিভিন্ন পন্থী দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে অপ্রতিসম বিভিন্নমুখী আক্রমণের মাধ্যমে ইরাকী অভ্যুত্থানের সূচনা ঘটে। সুন্নি এবং শিয়া দলগুলোর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং আল-কায়েদা ইরাকে তাদের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করে।
এই যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা আনুমানিক ১৫০,০০০ থেকে ১০ লক্ষের বেশী।
যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে ৮৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশী, আর যুক্তরাজ্যের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন ইউরো। উল্লেখ্য এই সময়ে মার্কিন অর্থনীতির মোট ব্যয়ের পরিমাণ ৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে। এক পর্যায়ে কোয়ালিশনের বেশ কিছু রাষ্ট্র ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করে। গণ অসন্তোষ এবং ইরাকী বাহিনীর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেয়ার কারণেই এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৯১-২০০৩: জাতিসংঘ পরিদর্শক এবং নো-ফ্লাই জোন
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ শেষ হবার পর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রিজলিউশন ৬৮৭ সংশোধনের মাধ্যমে আদেশ জারি করে যে, ইরাকের সকল ধরণের রাসায়নিক, জৈব, নিউক্লীয় এবং দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রোগ্রাম অবিলম্বে বন্ধ করে দিতে হবে। জাতিসংঘ বিশেষ কমিশন কন্ট্রোলের (ইউএনএসকম) মাধ্যমে এই আদেশ প্রচার করা হয়। জাতিসংঘ পরিদর্শকদের উপস্থিতিতে ইরাক বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংস করে, তার পরও কিছু বস্তুনিষ্ঠ ইস্যুর সমাধান হয়নি। ১৯৯৮ সালে পরিদর্শক দল ইরাক ত্যাগ করে, কারণ কমিশন কন্ট্রোলের প্রধান রিচার্ড বাটলার বুঝতে পারছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক মহড়া আসন্ন। পরিদর্শকেরা চলে আসার পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ৪ দিনব্যাপী বোমা বিস্ফোরণের মহড়া চালায়।
জাতিসংঘ পরিদর্শনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য (১৯৯৮ পর্যন্ত ফ্রান্স) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের নো-ফ্লাই জোনে ইরাকের সাথে ছোটখাটো যুদ্ধে লিপ্ত হয়। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের শিয়া অঞ্চলের কুর্দিস্তান রক্ষার জন্য এই নো-ফ্লাই জোন তৈরি করা হয়েছিল। ইরাক সরকার এটাকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের লংঘন বলে মনে করতো। সেখানে ইরাক আকাশ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে মার্কিন ও ব্রিটিশ আকাশ পেট্রোলের নিয়মিত ছোট আকারের গোলাবারুদ বিনিময় চলতো।
২০০১ সালের এপ্রিলে বুশের কেবিনেট ইরাকে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সম্মত হয়, কারণ ইরাক মধ্যপ্রাচ্য থেকে আন্তর্জাতিক তেল বাজারে একটা অস্থিতিশীল প্রভাব বিস্তার করেছিল।
১১ই সেপ্টেম্বর হামলার অনেক আগেই নিওকনজারভেটিভেরা ইরাকের তেল ক্ষেত্রগুলো আয়ত্বে আনার জন্য একটি ক্যু এর পরিকল্পনা করেছিল। তারা আশা করছিল, "একটি নতুন সরকার ইরাকের তেল ব্যবহার করে ওপেক কোটা থেকে বেশী তেল উৎপাদনের মাধ্যমে ওপেক বাণিজ্য-জোট ভেঙে দিতে সক্ষম হবে। " কিন্তু আগ্রাসনের পরপরই এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, কারণ শেল অয়েল কোম্পানির তৎকালীন সিইও ফিলিপ ক্যারল (যাকে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল) ইরাকী তেল কারখানাগুলো ব্যক্তি মালিকানায় নিয়ে আসার সাথে জড়িত হতে চাচ্ছিলেন না, যেহেতু জড়িত হলে মার্কিন ফার্মগুলো বর্জন করতে হতে পারে। রাজ্য পরিচালিত তেল মন্ত্রনালয়ের অবশ্য এ ভয় ছিল না, তাই তারা ইরাকে তেল আগ্রাসন চালাতে উদ্যত হয়। মার্কিন তেল বাণিজ্য উপদেষ্টা ফালাহ্ আলজিবারি দাবী করেছেন, ২০০১ সালে বুশ ক্ষমতা পাওয়ার পরপরই ওয়াশিংটন, মধ্যপ্রাচ্য ও ক্যালিফোর্নিয়াতে ইরাকের বর্তমান সরকার উচ্ছেদ বিষয়ে গোপন মিটিং শুরু করেছিলেন।
আলজিবারি বিবিসি-কে বলেছেন, তিনি বুশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাদ্দাম হুসাইনের প্রভাবশালী উত্তরসূরীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন।
অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম এর এক বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্র অপারেশন সাউদার্ন ফোকাস শুরু করেছিল, এর সাড়া দানের কৌশল পরিবর্তনের জন্য। তারা নির্বাচিত লক্ষ্যবস্তু অনেকাংশে বৃদ্ধি এবং ইরাকের নো-ফ্লাই জোনে ঢুকে পড়ার মত কাজকর্মের মাধ্যমে ইরাকের নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে বিঘ্ন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছিল। ইরাকে নিক্ষেপিত বোমার ভর ২০০২ সালের মার্চে ছিল ০, এপ্রিলে হয়েছে ০.৩, আর মে-আগস্টে গিয়ে তা হয়েছে ৮-১৪ টনের মত। যুদ্ধের আগে সবচেয়ে বেশী বোমাবর্ষণ ঘটেছিল সেপ্টেম্বরে, সপ্তাহ প্রতি ৫৪.৬ টন।
( চলবে............ )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।