আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে। উৎসর্গ – ১৬ ই ডিসেম্বর
প্রথম পর্ব Click This Link
দ্বিতীয় পর্ব Click This Link
আনুমানিক ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা জেরুজালেমের প্রধান উপাসনালয়টি হেরোদ টেম্পল ধ্বংস করেছিল। তার আগেই আদি খ্রিস্টানরা ওই টেম্পলের নীচে মূল্যবান পান্ডুলিপি, পবিত্র পাত্র বা হলি গ্রেইলসহ প্রভূত ধনসম্পদ লুকিয়ে রেখেছিল এর হাজার বছর পর ‘নাইট টেম্পলার’ নামে গুপ্ত গোষ্ঠী ক্রসেডের সময় জেরুজালেমে থাকাকালীন সময়ে সে সব আবিস্কার করে, এবং পরবর্তীকালে তারা আদিখ্রিষ্টীয় কৃত্য দ্বারা প্রভাবিত হয় টেম্পল অভ সলোমন এর যে ঐতিহ্য কালক্রমে বিলীন হয়ে গিয়েছিল সে সংক্রান্ত তথ্যাদি জেরুজালেমে থাকাকালীন সময়ে ওই নাইট টেম্পলাররা আবিস্কার করেছিল ।
টেম্পল অভ সলোমন-এর আদলে পরবর্তীকালে ইউরোপ এবং আমেরিকায় প্রায় ১৫০০ হাজার ‘মেসোনিক লজ’ গড়ে উঠেছে ।
পরবর্তীকালে তারা তাদের গুপ্ত গোষ্ঠীতে সেই আদিখ্রিষ্টীয়কৃত্য অর্ন্তভূক্ত করেছিল ফ্রিম্যাসনারি দের সঙ্গে নাইট টেম্পলার দের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ক্রসেডের পর খ্রিস্টানরা জেরুজালেম নগর জয় করে নেয় এবং ফিলিস্তিনে ‘লাতিন কিংডম অভ জেরুজালেম’ প্রতিষ্ঠা করে। এর পর অনেক খ্রিস্টান তীর্থযাত্রী ইউরোপ থেকে জেরুজালেম আসতে থাকে।
এক কথায় নাইট টেম্পলাররা ছিল ক্রসেড চলাকালীন সময়ের যোদ্ধা-সাধুদের একটি গুপ্ত সংঘ; যে সংঘটি প্রায় ২০০ বছর ধরে ইউরোপে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি অব্যাহত রেখেছিল। জেরুজালেম নগরটি নিরাপদ হলেও এর বাইরে ইউরোপীয় খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের জন্য বিপদসঙ্কুল ছিল। ‘লাতিন কিংডম অভ জেরুজালেম’ -এর রাজা তখন দ্বিতীয় বল্ডউইন (শাসনকাল ১১১৮ থেকে ১১৩১ খ্রিস্টাব্দ)।
তাঁর কাছে ফরাসি নাইট হুগুয়েস দ্য পেয়েস তীর্থযাত্রীদের রক্ষা করার জন্য একটি সংঘ গঠনের প্রস্তাব করেন । রাজা দ্বিতীয় বল্ডউইন এতে সম্মত হন এবং এ এই সংঘের কেন্দ্র হিসেবে জেরুজালেম নগরের ‘টেম্পল মাউন্ট’ বরাদ্দ করেন । নাইট টেম্পলাররা ছিল সংখ্যায় মাত্র নয় জন। এদের মধ্যে হুগুয়েস দ্য পেয়েস বাদে উল্লেখযোগ্য ছিল গডফ্রে দ্য সেন্ট ওমের এবং আন্দ্রে দ্য মঁবা । তারা খ্রিষ্টের প্রতি আনুগত্য, দারিদ্র ও কৌমার্যব্রতের শপথ করে ।
তারা দানের ওপর নির্ভর করত। সলোমনের টেম্পল থেকেই "টেম্পলার" শব্দটির উদ্ভব। অর্থাৎ পবিত্র ও রহস্যময় টেম্পল অভ সলোমন-এর নাইট । নাইট টেম্পলার। এদের ক্রশ এর রং ছিল লাল।
মুসলিম অধ্যুষিত ফিলিস্তিনে নাইট টেম্পলার দের বীরত্বে সমগ্র ইউরোপ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছিল। অনেক ইউরোপীয় অভিজাত তাদের সংঘে যোগ দিয়েছিল। ফলে প্রচুর অর্থ ও ভূমি লাভ করে সংঘটি অতি অল্প সময়েই সম্পদশালী হয়ে ওঠে। তার ওপর ক্রসেড চলাকালীন সময়ে ফিলিস্তিনের নানা স্থান লুন্ঠন করেও তারা প্রচুর ধনসম্পদ হস্তগত করেছিল । নাইট টেম্পলাররা ফিলিস্তিনের নানা স্থানেদূর্গ নির্মান করে ‘লাতিন কিংডম অভ জেরুজালেম’ এর নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরেছিল।
সিরিয়ার টরটসায় নাইট টেম্পলারদের নির্মিত একটি দূর্গ। দূর্গটি অবস্থিত ছিল ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর ঘেঁষে, ফলে এটি বন্দর হিসেবেও ব্যবহৃত হত । ফিলিস্তিনে আরও কয়েকটি দূর্গ গড়ে তুলে ছিল তারা । ইউরোপীয় খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীরা প্রথমে নৌপথে টরটসা দূর্গে আসত। সেখান থেকে নাইট টেম্পলাররা তাদের নিরাপদে জেরুজালেম পৌঁছে দিত।
১১৮৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে মিশর ও সিরিয়ার সুলতান গাজী সালাহ্ উদ্দীন দিকে নাইট টেম্পলারদের দূর্গগুলি একে একে অধিকারকরেনেন।
নাইট টেম্পলাররা জেরুজালেম নগরে প্রায় ৭৫ বছর ধরে অবস্থান করেছিল। জেরুজালেমে নাইট টেম্পলারদের কার্যক্রম ইউরোপের ধর্মীয় ইতিহাসের এক বিস্ময়কর, বির্তকিত এবং অমীমাংশিত অধ্যায়। জেরুজালেম নগরে নাইট টেম্পলারদের ভূমিকা অনেকেই "রহস্যময়" বলে মনে করেন। ইউরোপে দ্বাদশ শতকে নাইট টেম্পলাররা একটি অত্যন্ত সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল।
সাদা জোব্বার ওপর লাল লাতিন ক্রশ ছিল তাদের প্রতীক।
১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সৈন্যদের কাছে পরাজয়ে আগ পর্যন্ত নাইট টেম্পলারদের কেন্দ্র ছিল জেরুজালেম । এর পর মুসলিম আক্রমনের প্রাবল্যে তারা তাদের কেন্দ্র এন্টিওর্ক, আক্রা, কাসেরা এবং সাইপ্রাস সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় । তবে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল এবং সে অর্থে তারা ইউরোপজুড়ে তারা বিশাল বিশাল সব দূর্গ এবং ক্যাথিড্রাল নির্মান করে ম্যাসনদের বিশেষ কারিগরি জ্ঞান এবং নাইট টেম্পলারদের নিজস্ব জ্ঞানের সংযোগ ঘটে। যে জ্ঞানের সমন্বয়ের ফলে পরবর্তী কালে ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠী উদ্ভব বলে অনেকে মনে করেন।
ক্রসেডে পরাজিত হওয়ার পর নাইট টেম্পলারদের আর ফিলিস্তিনে ‘লাতিন কিংডম অভ জেরুজালেম’ -এ নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। অবশ্য তাদের সংঘের অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
তাদের ধর্মীয় কৃত্য বদলে গিয়েছিল, যা আদি খ্রিস্টানদের মতো, রোমান ক্যাথলিক চার্চের অনুরূপ নয়। তারা "বাফোমেত" উপাসনা করত বলে ধারণা করা হয় । একজন আধুনিক ‘কোডব্রেকার’ অবশ্য মনে করেন ‘বাফোমেত’ অর্থ ‘সোফিয়া’ যিনি ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের জ্ঞানে দেবী; যাকে আবার যিশু খ্রিস্টের সময়কার মেরি ম্যাগডালেন মনে করা হয়।
সুতরাং অনেকের মতে নাইট টেম্পলাররা মেরি ম্যাগডালেন- এর উপাসনা করত। এ ছাড়া সংঘটি সম্পদশালী হওয়ায় তাদের বিলাসবহুল জীবন ইউরোপের শাসকশ্রেণির ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
নাইট টেম্পলারদের বিরুদ্ধে অনৈতিক অভিযোগ উঠছিল, বিশেষ করে যৌন বিকৃতির অভিযোগ। ফ্রান্সের রাজা তখন পঞ্চম ফিলিপ দ্য ফেয়ার (শাসনকাল ১২৮৫ থেকে ১৩১৪ খ্রিস্টাব্দ )। তিনি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন এবং নাইট টেম্পলারদের কাছ থেকে ঋন করেছিলেরোমান ক্যাথলিক পোপ সে সময় পঞ্চম ক্লিমেন্ট।
ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম ফিলিপ দ্য ফেয়ার পোপ পঞ্চম ক্লিমেন্ট কে নাইট টেম্পলারদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টবিরোধী কার্যক্রম বিশেষ করে শয়তান ‘ বাফোমেত’ উপাসনার অভিযোগ আনতে বলেন। ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর। ভোরবেলা গ্র্যান্ড মাষ্টার জ্যাক দ্য মোলেইসহ ইউরোপজুড়ে শতাধিক গ্রেপ্তার করা হয়। এতে সমগ্র ইউরোপে তোলপাড় পড়ে যায়। দিনটি ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর ছিল বলে ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’ কে আনলাকি বলা হয়।
গ্র্যান্ড মাষ্টার জ্যাক দ্য মোলেই এবং অন্যান্য শতাধিক নাইট টেম্পলার কে জিজ্ঞাসাবাদের পর আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। ১৩১২ সনে নাইট টেম্পলার দের সংঘটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করে চার্চ। ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম ফিলিপ দ্য ফেয়ার এবং ক্যাথলিক চার্চ তাদের সম্পদ কুক্ষিগত করে।
চতুদর্শ শতকে যাদের ওপর ধর্মদ্রোহীতার অভিযোগে গির্জা এবং রাষ্ট্রের খড়গ নেমে আসে । তা সত্ত্বেও তাদের অনেকেই স্কটল্যান্ড এবং অন্যত্র পালিয়ে যেতে পেরেছিল।
নাইট টেম্পলার সংঘটি এক নতুর রূপ নেয়। স্কটল্যান্ডের রোজলিন নামে একটি গ্রাম আছে। সেই গ্রামে পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগে নির্মিত একটি গির্জায় সেই রূপান্তরের ছাপ স্পষ্ট। এরপর ইউরোপে সামাজিক পরিবর্তন আসে, ফলে নাইট টেম্পলারদের মেইসনিক লজেও আমূল পরিবর্তন আসেমধ্যযুগের ইউরোপে ক্যাথিড্রাল নির্মাণের যুগে মেইসনরা ছিল স্বাধীন। তাদের বিশেষ কারিগরি জ্ঞান থাকলেও তারা ছিল শিক্ষাবঞ্চিত; তারা লিখতে-পড়তে জানত না।
সে জন্য তারা নিজেদের মধ্যে বিশেষ সঙ্কেত ব্যবহার করত। এর অন্যতম অন্যতম হল করমর্দনঅবশ্য তাদের করমর্দন ছিল ভিন্ন ধরনের।
মধ্যযুগের মেইসনরা ষোড়শ শতকে গঠন করেছিল গিল্ডে ছিল গনতন্ত্র এবং সাম্য। মাস্টার মেইসনকে গনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত করা হত। গিল্ডের সদস্যরা সহযোগী কারিগরদের ভালোমন্দের খোঁজখবর নিত।
কোনও মেইসন অসুস্থ হলে বা মৃত্যুবরণ করলে কোনও ধরণের রাষ্ট্রীয় সাহায্য ছিল না। সুতরাং মেইসনদের গিল্ড তহবিল গঠন করেছিল। পরবর্তীতে মেইসনদের লজে যোগ দিয়েছিল একদল স্বশিক্ষিত এবং জ্ঞান অনুরাগী আলোকিত মানুষ। মেইসনদের লজগুলি ছিল অনেকটা আজকের যুগের ‘পাঠচক্রের’ মতো, যেখানে জ্ঞানচর্চা হত। ।
মধ্যযুগে সমগ্র ইউরোপ ছিল খ্রিস্টীয় গির্জার কঠোর নিয়ন্ত্রনে। তারা এক বিশেষ ধরণের ‘সত্য’ লালন করত। সেই সত্যের বাইরে তারা কোনও ভিন্নমত সহ্য করত না। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকের ইউরোপের একদল স্বশিক্ষিত জ্ঞান অনুরাগী মানুষ বাস্তব জগতের বাস্তব ব্যাখ্যায় অনুসন্ধানে ব্রতী হয়। ইউরোপের ওই যুগটি বা ‘জ্ঞানদীপ্তির যুগ’ হিসেবে চিহ্নিত।
যে যুগে গির্জেপিতাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিশ্বজগৎ দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটি আমূল বদলে গিয়েছিল । জ্ঞানদীপ্তি যুগের সেইসব আলোকিতগণ সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ব বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিয়মিত মেইসন লজে যেতেন ।
অশিক্ষিত মেইসনরা যে নিগূঘ জ্ঞানের চর্চা করত সেই জ্ঞানের বিষয়টি বুঝতে চাইলেন ঐতিহাসিক এবং যৌক্তিক চিন্তার প্রেক্ষাপটে। এভাবে প্রাচীন প্রজ্ঞা এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় ঘটেছিল। ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে স্বৈরাচারী ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চালর্সকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়; এরপর পার্লামেন্ট বা আইনসভার ভূমিকা হয়ে ওঠে মূখ্য, রাজতন্ত্রের ক্ষমতা খর্ব করে ইংল্যান্ডে রিপাবলিক গঠন করা হয়।
রাজা চতুদর্শ লুই শাসিত ফ্রান্স এবং ইউরোপরে অন্যত্রও নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের ভিত কেঁপে ওঠে। একই সঙ্গে জ্ঞানদীপ্তির যুগের আলোকিতগণের ওপর নেমে আসে রাষ্ট্রের নির্যাতন। স্বাধীন চিন্তা গির্জা এবং গির্জার পৃষ্ঠপোষক রাজতন্ত্রের অন্তরায় বলে গির্জা রাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয় । গির্জার নির্যাতন, যাকে ‘ইনকুইজিশন’ বলে, সেটি অবশ্য আরও আগে থেকেই অব্যাহত ছিল। জ্ঞানদীপ্তির যুগের আলোকিতগণ রাষ্ট্র ও গির্জার পৃথকীকরণের সঙ্গত দাবি তুলেছিল।
এখান তারা লুকিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চাইল । ফ্রিম্যাসনদের লজ হয়ে উঠেছিল তাদের নিরাপদ আশ্রয়। এর আগেই ফ্রিম্যাসনদের গনতন্ত্র এবং সাম্যের বোধ তাদের আকর্ষন করেছিল।
১৭১৭ সালে আধুনিক ফ্রিম্যাসন গোষ্ঠীর যাত্রা শুরু। তাদের লিখিত চার্টারে প্রথম ধারাটি ছিল ধর্মীয় সহনশীলতা।
গনতান্ত্রিক উপায়ে গ্রান্ড মাষ্টার নির্বাচিত করা হত কেননা,মধ্যযুগের মেইসনরা গনতান্ত্রিক উপায়ে তাদের মাস্টার মেইসন নির্বাচিত করত যা ইউরোপীয় সমাজে প্রভাব ফেলেছিল। ।
ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীর সঙ্গে ইলুমিনাতি নামে আরেকটি গুপ্ত গোষ্ঠীর সর্ম্পক অত্যন্ত গভীর। ইলুমিনাতি বিশ্বময় One World Order প্রতিষ্ঠা করতে চায় । এই উদ্দেশ্যে তারা ধর্মসমূহের বিনাশ চায়, সরকারগুলির উৎখাত চায়।
ইলুমিনাতির শক্তির মূলে রয়েছে অকাল্ট এবং ইকোনমি । এই গুপ্ত গোষ্ঠটি দীর্ঘদিন ধরে আর্ন্তজাতিক ব্যাঙ্ক, তেলব্যবসা, শিল্পকারখানা, এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাবানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। আর্ন্তজাতিক রাজনীতি এবং মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সরকার কে প্রভাবিত করে আসছে শব্দটির অর্থ:- ‘জ্ঞানের দীপমালায় উদ্ভাসন। ’ তবে ইলুমিনাতি বলতে ক্ষুদ্র এক গুপ্ত গোষ্ঠীকে বোঝায়।
একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী জ্ঞানের জন্য ঈশ্বর-এর বিপরীত শক্তি শয়তানএর আরাধনা করে।
অ্যাডম ভাইসার্ট ছিলেন জার্মানির তৎকালীন বাভারিয়ার ইনগলস্টাড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক। তিনি ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ইলুমিনাতি গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত করেন। ভাইসার্ট -এর পূর্বপুরুষ ইহুদি হলেও পরবর্তীতে তারা ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহন করেছিল। পরিবারটির সঙ্গে জেসুইটস সম্প্রদায়ের সম্পর্ক ছিল। জেসুইটস সম্প্রদায়টি অকাল্ট এবং ভারতীয় যোগশাস্ত্র চর্চা করত বলে সম্প্রদায়টি ছিল রহস্যময় ।
অনেকের মতে জেসুইটস সম্প্রদায়ের গূহ্য প্রতীক এবং সংকেত পরবর্তী কালে ভাইসার্ট তার প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীর প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। ভাইসার্ট জার্মান ফ্রিম্যাসনারি লজ-এ যোগ দিয়েছিলেনভাইসার্ট ইলুমিনাতি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান দিন হিসেবে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের ১ তারিখ বেছে নিয়েছিলেন । কেননা ওই দিনটি আদিম প্যাগানদের পবিত্র দিন। যিনি বলেছিলেন: ইলুমিনাতি বিশ্বময় One World Order প্রতিষ্ঠা করতে চায় ।
ভাইসার্ট- এর ‘স্পন্সর’ ছিল ইউরোপের সম্পদশালী রথচাইল্ড পরিবার।
পরিবারটি তখনও এবং এখনও ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীর হর্তাকর্তা। ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীতে ৩৩ স্তর রয়েছে। এই ৩৩ ডিগ্রির ওপরে ইলুমিনাতি গোষ্ঠীর নিজস্ব গ্রেড বা স্তর রয়েছে। এমন কী যারা ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠী উচুঁ স্তরে বা লেভেলে অবস্থান করে তারাও এ বিষয়ে সচেতন নয়। বিষয়টি এমনই গোপন।
ভাইসার্ট ১৮৩০ সালে মারা যান। তিনি সম্ভবত কোনও ফ্রিম্যাসনের হাতে খুন হয়েছিলেন।
ভাইসার্ট ছিলেন রথচাইল্ড পরিবারের মতো ইউরোপীয় অভিজাতদের ক্রীড়নক। কারণ ইউরোপীয় অভিজাতরাই ছিল ইলুমিনাতি প্রতিষ্ঠার মূলে। যারা ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অডার’ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
বর্তমানে ইলুমিনাতি নিয়ন্ত্রণ করছে ইউরোপ এবং আমেরিকার ১৩টি সম্পদশালী পরিবার; যাদের শক্তির মূলে রয়েছে অকাল্ট এবং ইকোনমি । এই পরিবারগুলি ব্ল্যাক ম্যাজিক এবং অকাল্টচর্চা মূলত শয়তানের উপাসনা করে বলেই এদের বলা হয় ‘কৃষ্ণ অভিজাত’ বা ‘ব্ল্যাক নোবেলিটি’। বর্তমান বিশ্ব এই ‘শয়তান উপাসক’ সিক্রেট কাল্টই শাসন করছে। এদের পূর্বপুরুষও প্রাচীনকালে বিশ্ব শাসন করত। এরা আজও আজও আর্ন্তবিবাহের মাধ্যমে প্রাচীন রক্তের ধারা বা ‘ব্লাডলাইন’ অক্ষুন্ন রেখেছে।
ইলুমিনাতি ক্রমশ ‘এক সরকার’ এবং ‘নতুন বিশ্বব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য সমগ্র বিশ্বকে দাসত্বে আবদ্ধ করে রাখা। এ জন্য তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছে। আধুনিককালে শিল্পায়ন এবং ‘ইর্ফেমেশন টেকনোলজি’ তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সাহায্য করছে।
ইলুমিনাতির অন্যতম উদ্দেশ্য হল ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলির জীবনযাত্রার মান নিচুস্তরে রাখা, যাতে রাষ্ট্র সহজেই জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বিশ্বেও সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলির জীবনযাত্রার মানের সমকক্ষ করে তোলা কাজেই অ্যাডম ভাইসার্ট-এর মৃত্যুর পর তার গোপন পরিকল্পনা অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়নি। রথচাইল্ড পরিবারটি আজও তেরোটি ইলুমিনাটি পরিবারের অন্যতম। সিসিল রোহডস নামে একজন প্রভাবশালী ফ্রিম্যাসন নেতা পরিবারটিকে মদদ যুগিয়েছিল। সিসিল রোহডস উনিশ শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে ‘অভিন্ন বিশ্বব্যবস্থা’ নির্মাণের চেষ্টা করেছিলেন। রথচাইল্ড পরিবার সেই ‘এজেন্ডায়’ ‘স্পন্সর’ করেছিল।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সেই পরিকল্পনারই ফল বলেই অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। ফলে তারা জাতি সংঘ প্রতিষ্ঠায় স্বস্তি পায়। শান্তিরক্ষাই জাতিসংঘের প্রধান কর্তব্য। কাজেই বিশ্বযুদ্ধ আর সংগঠিত হবে না।
ইলুমিনাতি অগ্রসর হয় সমস্যা -প্রতিক্রিয়া-সমাধান পদ্ধতিতে ।
বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত করে তারা সমস্যা তৈরি করে; এতে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া হয়; মানুষ সমস্যার সমাধান চায়। কাজেই জাতিসংঘ সৃষ্টি করে ইলুমিনাতি সমস্যার সমাধান করেজাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর ইলুমিনাতির পরবর্তী সাফল্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন । যা, অনেক বিশ্লেষকের মতে, একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিনত হতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে অচিরেই ই ইউ-র সদস্য রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা এবং সার্বভৌমত্ম হ্রাস পাবে।
একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে মুষ্টিমেয় অভিজাত শাসকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে ইউরোপ। এরাই গ্রিস এর অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলেছে। ব্রিটিশ রাজকীয় পরিবার বিশ্বাস করে তাদের শিকড় প্রাচীন ইজরাইলে প্রোথিত; যে সময়টায় রাজা সলোমন প্রাচীন ইজরাইল রাজত্ব করতেন ।
ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের দ্বারা ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম অধিকৃত হওয়ার পর দক্ষিণ ফ্রান্সের অভিজাতরা এগারোজন ফরাসি নাইটকে এক বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে জেরুজালেমে পাঠায়। এদের সঙ্গে প্রাচীন ইহুদি গোত্রের রক্তসম্পর্ক ছিল।
এগারোজন ফরাসি নাইটএর মিশন ছিল জেরুজালেমের ‘টেম্পল অভ সলোমন’ এর ধংসস্তূপের নীচ থেকে রাজা সলোমনের আধিভৌতিক বা ব্ল্যাকম্যাজিকের প্রাচীন পান্ডুলিপি খুঁজে বের করা। কেননা, সেই সব ইউরোপীয় অভিজাতরা বিশ্বাস করত যে ব্ল্যাকম্যাজিক সম্বন্ধে গভীর জ্ঞানের অধিকারী রাজা সলোমন প্রাচীন ইজরাইল বশে রেখেছিলেন, যে ব্ল্যাকম্যাজিক ‘কাবালাহ্’ নামে পরিচিত। বিশ্বে প্রভূত্ব বিস্তার করতে হলে ইউরোপের অভিজাত রাজবংশের চাই সেই কাবালাহর জ্ঞান, যা পরবর্তীকালে ফ্রিম্যাসনারি এবং ইলুমিনাতি গোষ্ঠীর উপাসনার মূলভিত্তি হয়ে উঠেছিল। ইজরাইলের পতাকা এর মাঝখানের চিহ্নটিকে বলা হয় ‘স্টার অভ ডেভিড’। এবং রাজা সলোমন-এর কাবালার প্রতীক।
ব্রিটিশ রাজকীয় পরিবার বিশ্বাস করে তাদের শিকড় প্রাচীন ইজরাইলে প্রোথিত ১৯৫৩ সালে কুইন এলিজাবেথ নিজেকে ‘কুইন অভ ইজরাইল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
১৭১৭ সালের ২৪ জুন লন্ডনে প্রথম ফ্রিম্যাসনদের গ্র্যান্ড লজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম গ্র্যান্ড মাষ্টার নিযুক্ত হন আন্থনি সেয়ার। এর অল্প কিছুকাল পরই ফ্রিমেইসনরা ‘নতুন বিশ্বে’ পাড়ি জমায়। সেই নতুন বিশ্বের ভার্জিনিয়ার দক্ষিণে ক্যারোলিনায় ততদিনে প্রথম ইংরেজ বসতি গড়ে উঠছিল;এবং ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই জর্জিয়াসহ তেরোটি উপনিবেশের পত্তন হয়।
নতুন উপনিবেশের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য ছিল বহু ধর্মসম্প্রদায়ের বহুমাত্রিক সমাবেশ, এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জার্মান এবং ডাচ সংস্কারবাদীগণ, রোমান ক্যাথলিক এবং স্কচ-আইরিশ এছাড়া অনেক রাজকীয় কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী ছিলেন এঞ্জেলিকান।
জোনাথন এডওয়ার্ড নামে একজন ধর্মপ্রচারক ১৭৪০ সালে যে ধর্মবিপ্লবের ডাক দেন । এই ধর্মবিপ্লবের সময়েই ফ্রিমেইসনারি গোষ্ঠীর সদস্যরা উপনিবেশ-আমেরিকায় আসতে থাকে। সপ্তদশ শতকজুড়ে হেনরি প্রাইস- এর তত্ত্বাবধানে ইংল্যান্ড থেকে ফ্রিমেইনারিরা আমেরিকায় আসতে থাকে। গ্র্যান্ড লজ অভ ইংল্যান্ড হেনরি প্রাইস কে উপনিবেশের অন্যত্র লজ প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেয়।
প্রাইস ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দের দিকে ফিলাডেলফিয়ায় আরেকটি লজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে যে আমেরিকান বিপ্লব সূচিত হয়েছিল সেই সময়ের আগেই তেরোটি উপনিবেশে প্রায় ১৫০টি লজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । অগ্রসর ইউরোপীয় চেতনা ধারণ করত বলে বহু মানুষ লজে যোগ দেয়। নতুন উপনিবেশে ফ্রিমেইসনারি গোষ্ঠীটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতেথাকে। ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকান বিপ্লব ।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে উত্তর আমেরিকার তেরোটি উপনিবেশ যুদ্ধ ঘোষনা করে। এই বিপ্লবের পরই গঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । বিপ্লবের মূল কারিগরদের অনেকেই ছিলেন ফ্র্রিমেইসন। ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই প্রতিটি উপনিবেশ শাসন করার জন্য প্রাদেশিক কংগ্রেস গঠিত হয়। তবে তখনও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি।
যারা ওই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার কাজে মূল ভূমিকা রাখেন তারা হলেন: বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, জন হ্যানকক, পল রিভেরি, জন মার্শাল, জোসেফ ওয়ারেন এবং জন পল জোন্স। এরা সবাই মেইসন! জর্জ ওয়াশিংটন। (১৭৩২-১৭৯৯) ইনি আমেরিকান বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ইনিও ছিলেন মেইসন!ফ্রিমেইসনারি গোষ্ঠী সদস্য হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বাদে পরবর্তীতে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, তারা হলেন-জেমস মনরো, অ্যান্ড্রু জ্যাকসন, জেমস কে. পোল্ক, জেমস বুচানান, অ্যান্ড্রু জনসন, জেমস এ. গারফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাককিনলে, থিওডোর রুজভেল্ট, উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট, ওয়ারেন জি. হার্ডিং, ফ্যাঙ্কলিন ডি.রুজভেল্ট, হ্যারি এস. ট্রুম্যান, জেরাল্ড আর. ফোর্ড। কোনও কোনও গবেষক অবশ্য মনে করেন যে থমাস জেফারসন এবং জেমস ম্যাডিসনও ছিলেন ফ্রিমেইসনারি গোষ্ঠী সদস্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরপ্রেসিডেন্ট প্রথম জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রিম্যাসনারি সংঘে দীক্ষিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির অবস্থান ঠিক কোথায় হবে সেটি প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে ‘ডিসট্রিক্ট অভ কলম্বিয়ার’ পোটোম্যাক নদীর ধারে গড়ে উঠল ভবিষ্যৎ পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী নগর ওয়াশিংটন ডিসি। যে শহরটি কিন্তু অন্য কোনও শহরের মতো নয়।
ওয়াশিংটন ডিসি কে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটি ম্যাসনারি-নগর গিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সপ্তদশ শতক থেকেই এদিকে যেমন ফ্রিমেইসর দের ধ্যানধারণা অনুযায়ী লজ এবং নিগূঢ় প্রতীক সম্বলিত ভবন গড়ে উঠছিল । তেমনি ফ্রিম্যাসনারি মতবাদের তাত্ত্বিক ভিত্তি জোরদার হচ্ছিল বিভিন্ন লেখকদের লেখায়। এদের অন্যতম ছিলেন অ্যালবার্ট পাইক, যিনি ছিলেন একাধারে আইনবিদ, কনফেডারেট কর্মচারী এবং একজন ফ্রিমেইসন। অ্যালবার্ট পাইক ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রিমেইসন লজে যোগ দেন এবং জর্জ ওয়াশিংটন এবং অন্য ম্যাসনারিরা আমেরিকান বিপ্লবে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলে মার্কিন সমাজে তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। সাধারণ মার্কিনীদের মধ্যে তাদের ছিল প্রভূত সম্মান, তাদের জয়জয়াকার।
যদিও সাধারণ নাগরিক তাদের গোপন পরিকল্পনা ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি।
অবশ্য ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে হাওয়া তাদের বিরুদ্ধে চলে যায়, তাদের সব হিসেব উলটে যায়। উইলিয়াম মরগ্যান নামে নিউইয়র্ক শহরের এক নাগরিক অপহৃত এবং খুন হন ফ্রিম্যাসনারিদের হাতে। উইলিয়াম মরগ্যান ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিল। ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীর নিয়ম এই যে কেউ গোষ্ঠীর গোপন ত্য ফাঁস করে দিলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড!এতে স্ফূলিঙ্গের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্টজুড়ে ফ্রিমেইসনবিরোধী রোষানল ছড়িয়ে পড়ে ।
নিউইর্য়কবাসী রাজনীতিবিদ থারলো উইড ম্যাসনারি-বিরোধী রাজনৈতিক দল গঠন করেন। যারা প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনএরবিরোধীতাকরেছিলেন।
ফ্রিম্যাসনারি এমন এক গোষ্ঠী যারা অশুভ শক্তির আরাধনা করে এবং সেই অশুভ শক্তিকে ব্যবহার করে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বের’ তাত্ত্বিকগণ মনে করেন। ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠী সংক্রান্ত ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’-র মূলে রয়েছে ক্রসেড চলাকালীন সময়ে জেরুজালেম এর টেম্পল মাউন্ট- এ নাইট টেম্পলারদের আবিস্কার। মনে করা হয় যে তারা ‘রহস্যময়’ কিছু আবিস্কার করেছিল।
যদিও এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য আজও জানা যায়নি। ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভবের সময় থেকেই সক্রিয়। বর্তমানে ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অদৃশ্য নিয়ন্তা। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ইতিহাসে আরও কিছু সিক্রেট কাল্ট এর উদ্ভব হয়েছে। আমেরিকান বিপ্লবের কেন্দ্রিয় চরিত্র ছিলেন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯) ।
ইনিও ছিলেন ফ্রিম্যাসন! আমেরিকান বিপ্লবের পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর শপথ নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি. হার্ডিং, ডি আইজেনহাওয়ার, জিমি কার্টার এবং জর্জ এইচ ডাবলিউ বুশ । বলা হয়ে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ‘ইলেকটেড’ হয় না, ‘সিলেকটেড’ হয়। রক্তের উত্তরাধিকার নীতির মাধ্যমে; যাকে বলা হয় ‘ ইলুমিনাতি ব্লাডলাইন’ ।
প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সর্ম্পকে’ ব্রিটিশ রাজবংশের সঙ্গে জড়িত, যে ব্রিটিশ রাজবংশ ফ্রিম্যাসন গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক এবং সদস্যজর্জ এইচ ডাবলিউ বুশ এবং তার পুত্র প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি সিক্রেট কাল্ট এর সদস্য ছিলেন।
সেই কাল্টের নাম স্কাল অ্যান্ড বোনস স্কাল অ্যান্ড বোনস আসলে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট সিক্রেট সোসাইটি যা ১৮৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়স্কাল অ্যান্ড বোনস এর মতো আরেকটি মার্কিন সিক্রেট কাল্ট হল বোহেমিয়ান গ্রোভ ।
সানফ্রান্সসিসকো ভিত্তিক বোহেমিয়ান ক্লাব নামে পুরুষদের একটি ‘আর্ট ক্লাব’ বা বোহেমিয়ান গ্রোভ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মনটে রিও তে অবস্থিত ২,৭০০ একর বিশিষ্ট বিস্তীর্ণ এক বনভূমি । প্রতি বছর জুলাই মাসের মাঝামাঝি দু সপ্তাহের জন্য বোহেমিয়ান গ্রোভ-এ ক্লাবের সদস্যরা জমায়েত হয়। যাতে বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। এদের মধ্যে রয়েছেন শিল্পী-সাহিত্যিক, সংগীতশিল্পী, ব্যবসায়ী নেতা, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা এবং গনমাধ্যম এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গ।
কেননা, ষড়যন্ত্র তত্ত্বের তাত্ত্বিকগণ বোহেমিয়ান গ্রোভ সম্বন্ধে গা-শিউরানো সব কথা বলেন। ১৯৮৩ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ বোহেমিয়ান গ্রোভ এ গিয়েছিলেন। তাঁর সম্মানে ‘প্যাগান’ নৃত্যের আয়োজন করা হয়েছবোহেমিয়ান গ্রোভ এর মঙ্গলচিহ্ন পেঁচা। পেঁচা কে জ্ঞানের প্রতীক মনে করা হয় । পেঁচার মূর্তির সামনে আগুন জ্বালিয়ে কৃত্য সম্পন্ন করে।
। বিশ্বের সম্পদশালী গোষ্ঠী জড়িত বলে ফ্রিম্যাসনারি এবং ইলুমিনাতির শক্তি অপরিসীম। যে কারণে তাদের হীন উদ্দেশ্যের বিরোধীতা করায় ষড়যন্ত্র তত্ত্বের তাত্ত্বিকদের মতে মাত্র ৪৬ বছর বয়েসে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কে মরতে হয়েছিল
প্রাচীন ইজরাইলের সঙ্গে বর্তমান কালের মার্কিন আধিপত্যবাদীদের যোগসূত্রটি ব্রিটিশ রয়্যাল ফ্যামেলির ইহুদি সম্পৃক্ততা ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বাভারিয়ায় ‘ইলুমিনাতি’ গঠন করে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকান বিপ্লব ঘটায় যে বিপ্লবে নায়কদেরঅধিকাংশই ফ্রিম্যাসন মার্কিন ১ ডলার বিলে কাবালার চিহ্ন এবং সে নোটে ‘ওয়ান ওয়াল্ড অর্ডার’ প্রতিষ্ঠার ঘোষনাদিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বজুড়ে বোমা বর্ষন ইঙ্গমার্কিন শক্তির ইরাক ধ্বংসএবং ইঙ্গমার্কিন শক্তির আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসন ।
এটি কোন গল্প নয় এটি একটি ইতিহাস ভিত্তিক লেখা যার প্রতিটা তথ্য ইন্টার নেট থেকে সংগৃহীত হয়েছে । যদি কেউ মনে করেন কারো লেখার সাথে মিল রয়েছে তবে আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থী ।
( চলবে............ ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।