শব্দ খুঁজি, সৃষ্টির অদম্য নেশায়
অবাঙালি 'আটকে পরা পাকিস্তানি'দের নিয়ে ছোটবেলা থেকেই আমার সন্দেহ ছিল। ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় রংপুরের জেনেভা ক্যাম্পের দেয়ালে বড় করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পতাকা আঁকা ছিল। দুই দেশের জন্য শুভ কামনা ছিল। আমার তবুও সন্দেহ হত। সেলুনের উর্দুভাষী নাপিতের পান খাওয়া জবানে শোনা ভিনদেশি কিচিরমিচির আমার রক্তে আগুন জ্বালাতো।
লাথি মেরে আরব সাগর পার করে ওদের বন্দিদশা খতম করার ইচ্ছে জাগতো। এমনই হয়তো থাকতাম উগ্র জ্যাতাভিমান নিয়ে। শহরের নাম করা স্কুলে পড়ার সময় একদিন আমার চেনা বাস্তবতায় ধাক্কা লাগে প্রথম বারের মতো। আমার খুব কাছের বন্ধু একদিন কাঁদো কাঁদো মুখে আমাকে বলেছিল, 'বিশ্বাস কর, আমি বিহারি না। আমি বাসায় বাংলায় কথা বলি!'
তার আগে কল্পনাও করিনি বন্ধুটি আমাদের একজন নয়।
সংখ্যালঘুর সাথে সংখ্যাগুরুর পার্থক্যটা এরপর বুঝতে শিখেছি। পূর্বপুরুষের পাপের বোঝা এদের এখনও সহ্য করতে হয়। যদিও বুকের পুরোটা জুড়ে রয়েছে প্রিয় জন্মভূমি 'বাংলাদেশ'!
রংপুরের রবার্টসনগঞ্জের বিহারি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের খবর পেলাম ফেসবুক মারফত। এদেশের মুক্তি সংগ্রামে 'উড়ে এসে জুড়ে বসা' বিহারিরা বিরোধিতা করেছে। বাঙালি-সাঁওতালের রক্তে গাঢ় লাল করেছে ঘাঘটের ঘোলা জল।
তবুও এরা মানুষ। পূর্বসুরীর পাপের দায় ঢালাওভাবে এদের ওপর চাপানোতেও আমি বিশ্বাস করিনা। আমার মনে হয়, জেনেভা ক্যাম্পের সীমাবদ্ধ আশ্রয়ে ধুকেধুকে চলা এই হতভাগ্য মানুষগুলো আর পাকিস্তানেও যেতে রাজি নয়। মনুষ্য বর্জ্যের বিছানাও যে পাকিস্তানের চেয়ে ভালো। এই অসহায় স্বল্প আয়ের মানুষগুলোকে আজ ডিসেম্বরের শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে কাটাতে হবে।
রংপুরের শীত ভয়ংকর। এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দাবি করছি। আশা করছি, এমন যেন আর না ঘটে।
যাদের মনে এখনও সন্দেহ রয়ে গেছে তাদের বলছি, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে রংপুরের দুই কৃতি খেলোয়াড় নাসির হোসেন ও সোহরাওয়ার্দী শুভ জাতিগতভাবে বিহার প্রত্যাগত 'আটকে পরা পাকিস্তানি'!
আরেকটা জিনিস এড করছি, জাভেদ ওমর, আতহার আলি খান, আকরাম খান, তামিম ইকবালও কিন্তু বিহারি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।