শুধু তোকে হাসাতে জোকার সেজেছি, আর তুই কিনা......।
আমরা স্বপ্ন দেখি সেদিনের যেদিন বাঁধন ধ্বংশ হবে!!! আর বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ হবে একেকটা বাঁধন । বাঁধনের এই শ্লোগানটা আমার ভাল লাগলেও, বাঁধনকে আমি ভীষণ ভয় পাই। সত্যি বলতে কি, আমি ভয় পাই ব্লাড ব্যাগের মোটা সুইটাকে ।
তরু ওর হলে বাঁধনের হল প্রতিনিধি।
ইদানিং ও কথায় কথায় রক্ত দেয়ার একশ একটা ভাল দিকের কথা বলে। আড়ালে অবশ্য আমরা বাঁধন কর্মিদের ভ্যাম্পায়ার, ড্রাকুলা ডাকি। সারাক্ষণ কেবল রক্তের জন্য হাহাকার করে!!! একদিন তরুকে বলেই ফেললাম, “তোদের ওই মোটা সুই দেখলে তো ভয়ে অজ্ঞান হলে যাই, রক্ত দিলে তো মারাই যাব। ”
ভীষণ রেগে তরু বলল,“ আচ্ছা তোর যেদিন রক্ত লাগবে সেদিন ওই মেটা সুই দিয়ে তোকেও রক্ত দেয়া হবেনা , আমার রক্ত লাগলেও খবরদার রক্ত দিবিনা। আর তোর আম্মার...।
না, পাগলিটাকে নিয়ে আর পারিনা।
বিকেলে টি.এস.সিতে যাচ্ছি। হল গেটে হামিমের সাথে দেখা। হামিম আমাদের হলের ড্রাকুলা। ওকে অনেক কান্ত দেখাচ্ছে।
আমাকে দেখেই ও বলল, “তোমাদের ফোরে কি কারও ‘এ পজেটিভ ’ রক্ত আছে ?” নেই বলে কেটে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাই করছিলাম, হঠাৎ চোখ পড়ল হামিমের পাশের লোকটার দিকে। লোকটাকে দেখিয়ে হামিম বলল, “ওনার ছেলের অপারেশনের জন্য রক্ত লাগবে, প্রায় একঘন্টা ধরে ‘এ পজেটিভ’ রক্ত খুঁজছি”। হামিমকে দেখে খুব মায়া লাগছে। কি ভেবে বলে ফেললাম, আমার রক্তের গ্রুপ ‘এ পজেটিভ’ চল আমি রক্ত দেব।
আমার কথা শুনে লোকটা কেঁদে ফেললেন। আমরা তিনজন হাসপাতালে রওনা হলাম। ঝোঁকের বশে রক্ত দেয়ার কথা বললেও এখন আমার দারুন ভয় লাগছে। মুঠোফোনে তরুকে ফোন দিলাম। সব শুনে তরু তো ভীষণ খুশি।
ওর খুশি দেখে আমার ভয় অনেকটাই কেটে গেল।
রক্ত দেয়ার পর , চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার কপালে কারও হাত অনুভব করলাম। চোখ খুলে দেখি একজন মহিলা। আমার বুঝতে বাকি রইলনা মহিলা কে।
মহিলা কাঁদছিলেন। না, মহিলা আমাকে কিছুই বলেননি। কিন্তু তার চোখেমুখে আমি যে কৃতজ্ঞতাবোধ দেখেছি তা বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আমার কি যে ভাল লাগছিল, সে অনুভুতিও বোঝানো যাবেনা। বাঁধনের আরেকটা শ্লোগানের কথা মনে পড়ল, প্রত্যেক স্বেচ্ছায় রক্তদাতা একেকজন হিরো।
হুম, অবশ্যই, অবশ্যই আমিও একজন হিরো। বাঁধনের শ্লোগানের মত আমিও বাঁধন হয়ে গেছি। চারমাস অন্তর অন্তর এখন নিয়মিত ব্লাড দেই। বাঁধনের সুরে বলছি, “কমপক্ষে আপনার জন্মদিনে এক ব্যাগ রক্ত দিন, আপনার রক্ত একজনকে নতুন জীবন দেবে।
গত ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আম্মার কাছে রক্ত দেয়ার কথা বললে, আম্মা আমাকে ঝাড়ি কত প্রকার ও কি কি বুঝিয়ে দিলেন।
দুপুরে শুয়ে আছি। পাশের রুমে আম্মা ছোট খালাকে বলছেন, জানিস রোদ্র এবার একটা ছোট বাচ্চার অপারেশনের জন্য রক্ত দিয়েছে। এই ছেলেটা ঠিক ওর বাবার মত হয়েছে। ওর বাবা বেঁচে থাকলে আজ কি যে খুশি হতেন।
জানিনা কেন আমার দুচোখ ভিজে আসছিল।
গল্পের পেছনের গল্পঃ
আমার বন্ধু হামিম, পিন্টু, যুবায়ের, জাহিদ, শাহজালাল । বাঁধনের জন্য এদের ছোটাছুটি, পরিশ্রম আমাকে সবসময় মুগ্ধ করে । মজার ব্যাপার হচ্ছে, কাউকে মুগ্ধ করার জন্য, কারও বাহবা পাওয়ার জন্য ওরা কিছু করে না। সত্যি বলছি, প্রত্যেক বাঁধন কর্মি একেকজন রিয়েল হিরো। আমার প্রথম ব্লাড দেয়ার দিন, হামিমের সাথে মিলি আপুও ছিলেন।
মিলি আপু বর্তমানে মারাত্মক অসুস্থ, মাথায় অপারেশন করা হয়েছে এবং মাথায় আরও একটা বড় ধরণের অপারেশন করা জরুরী । তিনি বর্তমানে দক্ষিন কোরিয়ায় চিকিৎসারত । আপুর জন্য সবাই দোয়া করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।