সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে এনেছে সরকার। বিভিন্ন সময়ে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের কথা শোনা গেলেও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার ঘটনা এটাই প্রথম। নিঃসন্দেহে এটি সংশ্লিষ্টদের কৃতিত্ব এবং দেশবাসীর জন্য সুসংবাদ।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর ‘টেলিটক’র একটি প্রকল্পের কাজ পেতে জার্মান বহুজাতিক কোম্পানি ‘সিমেন্স এজি’র স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ‘সিমেন্স-বাংলাদেশ’ বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ক্ষমতাঘনিষ্ঠদের ঘুষ দেয়। এর মধ্যে কোকোও ছিলেন।
২০০৫ সালে সিঙ্গাপুরে একটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কোকোকে দেয়া ঘুষের অর্থ লেনদেন হয়েছিল। কাজ পেতে কোকোকে ঘুষ দেয়ার এই ঘটনায় মার্কিন আদালতেও দোষী সাব্যস্ত ও অর্থদ-িত হয়েছিল সিমেন্স। এ ঘটনায় দুদকের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালের মার্চে কোকো এবং সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেন সায়মনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার রায়ে কোকো ও সায়মনকে ছয় বছরের কারাদ- এবং ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আদালতের নির্দেশে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে কোকোর ওই হিসাব বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের আদালতে কোকোর উল্লিখিত ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত ঘোষণার পর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যায় বাংলাদেশ। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ জন্য সমঝোতা সই হয় এবং সবশেষে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ পাচারকৃত অর্থ বাংলাদেশে পাঠায়। জানা গেছে, কোকোর হিসাবটি ছিল সিঙ্গাপুরের নাগরিক লিম ইউ চ্যাং-এর সঙ্গে একটি যৌথ হিসাব। কোকোর পাচার করা অর্থ নিজ নামে ব্যাংকে রাখা এবং এ বিষয়ে দুর্নীতি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে না জানানোর অপরাধে লিম ইউ চ্যাংকে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুরের আদালত ৯ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার অর্থদ- দেয়। এ ঘটনাও বাংলাদেশের অর্থপ্রাপ্তির সহায়ক হয়।
সোনালী ব্যাংকের একটি বিশেষ একাউন্টে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুরি ডলার (প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা) জমা হওয়ার তথ্য গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারমান। কোকোর পাচারকৃত আরো ৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ মার্কিন ডলারও দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে আসছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে দুদক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। বিগত সময়ে এ দেশে সংঘটিত অনেক আর্থিক দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেয়েছে। এগুলোর অনেকগুলো আদালতের রায়েও প্রমাণিত।
তারপরও রাজনৈতিক কারণে এগুলো অস্বীকারের বা মিথ্যা বলে প্রচারের একটা প্রবণতা বর্তমান। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের একটি ঘটনাই আমাদের সামনে অনেক কিছু স্পষ্ট করে দেয়। বলাই বাহুল্য, দেশের সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যের এরকম ঘুষ-দুর্নীতি ও অর্থপাচার অনাকাক্সিক্ষত, দলের জন্যও বিব্রতকর। তবে এ ধরনের ঘটনাগুলোকে দলীয় আবেগমুক্ত থেকে ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতি হিসেবেই বিবেচনা করাই সঙ্গত। অন্যদিকে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমও দলমত নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত।
এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ একচক্ষু আচরণ গোটা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা আবারো বিদেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সরকারের উদ্যোগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাই। প্রত্যাশা করি, এযাবৎকালে নানা দল-মত শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিদের দ্ধারা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সংশ্লিষ্টরা একই রকম তৎপর থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।