অহন থিক্কা সব শয়তানরে দৌরের উপর রাখুম।
“(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি। ” (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১)
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়ায় আগমন করেন পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ। উনার আবির্ভাবের এই মাসের প্রথম বার দিনের ঘটনা ঐতিহাসিক ওয়াকিদী বর্ণনা করেন।
* “ওয়াকিদী বর্ণনা করেন, পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসের প্রথম রাত যখন সমাগত হলো তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার অন্তর মুবারকে সুখ ও আনন্দানুভূতি সৃষ্টি হলো।
”
* “পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার দ্বিতীয় রাতে উনাকে বাসনা বাস্তবায়নের সুসংবাদ প্রদান করা হলো। ”
* “পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার তৃতীয় রাতে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনাকে কেউ একজন জানালেন, “হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! সময় নিকটবর্তী হয়েছে উনার আগমনের, যিনি সকলের প্রশংসায় ও কৃতজ্ঞতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ”
* “পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার চতুর্থ রাতে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি উচ্চ কণ্ঠে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের তাসবীহ-তাহলীল শুনতে পেলেন। ”
* “পঞ্চম রাতে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি স্বপ্নে দেখলেন, হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে। তিনি বলছেন, “আমি আপনাকে সুসংবাদ প্রদর্শন করছি সেই মহিমান্বিত নবী ছল্লাল্লাহু উনার আগমনের যিনি নূরের অধিকারী।
যিনি উজ্জ্বল প্রভা, কল্যাণ, সম্মান ও প্রশংসার অধিকারী। ”
* “ষষ্ঠ রাতে চরম প্রশংসার অধিকারী উনার জন্য বিভিন্ন স্থান হতে নূরসমূহ প্রকাশ পেল। ”
* “সপ্তম রাতে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার গৃহে একত্রিত হতে লাগলেন। এতে উনার অন্তর মুবারকে আনন্দের ধারা বইতে লাগল। ”
* “অষ্টম রাতে এক আনন্দবার্তা ঘোষিত হতে লাগল।
উনার আগমনের সময় ঘনিয়ে এলো। ”
* “নবম রাতে এক মমতাময়ী কণ্ঠস্বর করুণা ও মমতার আওয়াজ দিল। এতে উনার (উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) সকল দুশ্চিন্তা ও কষ্টক্লেশ দূর হয়ে গেল। ”
* “দশম রাতে খাইফ ও মিনা আনন্দিত হল। ”
* “একাদশ রাতে আসমান ও যমীনবাসী উনার আগমন বার্তার কথা একে অপরের সাথে আলোচনা করতে লাগল।
”
* “আর ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ রাতের অবস্থা বর্ণনায় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এটা ছিল চন্দ্রের আলোয় আলোকিত রাত্র। কোনো প্রকার অন্ধকার ছিল না চারপাশে। সে সময়ে হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার সন্তানাদিদের নিয়ে হারাম শরীফ উনার দিকে গমন করেন। তিনি পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ উনার ভাঙা দেয়াল মেরামত করতে যান। সে সময় আমার নিকট কোন নারী বা পুরুষ কেউই ছিল না।
আমার নিঃসঙ্গতার জন্য আমি কাঁদছিলাম। হায়! কোনো মহিলাই আমার সহযোগিতায় নেই। আমার জন্য কোনো একান্ত সাথীও নেই যিনি আমাকে সান্তনা দিবেন। কোনো দাসীও নেই যে আমার মনোবল অটুট রাখবে।
অতঃপর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি তাকালাম বসতবাড়ীর এক কোনায়।
সহসাই উহা উম্মোচিত হলো এবং চারজন মহিলা বের হয়ে এলেন। ”
“উক্ত চারজন মহীষী সুউচ্চ ছিলেন যেন উনারা চন্দ্র। উনাদের চারদিকে আলো আর আলো। আবদে মানাফ বংশের সহিত সাদৃশ্য রাখেন উনারা। অতঃপর উনাদের প্রথম জন এগিয়ে এলেন এবং তিনি বললেন, হে আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনার মতো কে আছে? আপনি যে সাইয়্যিদ, রবিয়া ও মুদার গোত্রের সাইয়্যিদ উনাকে পবিত্র রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন।
অতঃপর তিনি উনার ডানদিকে বসলেন। তখন আমি (সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম) উনাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম, মানবজাতির মাতা। অতঃপর দ্বিতীয়জন এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, আপনার মতো কে আছেন? হে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনিতো পবিত্র রেহে শরীফ-এ ধারণ করেছেন পুত-পবিত্র জ্ঞানভান্ডারের রহস্যকে, রতœরাজির সাগরকে, নূরের ঝলককে, সুস্পষ্ট তত্ত্বজ্ঞানীকে। অতঃপর তিনি বামদিকে উপবেশন করলেন।
তখন আমি উনাকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত সারাহ আলাইহাস সালাম, হযরত ইব্রাহীম খলীল আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া। ”
“অতঃপর তৃতীয়জন এগিয়ে এলেন এবং বললেন, ইয়া সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনারতো কোন মিছালই হয় না। আপনি যে চির প্রত্যাশার হাবীবে খোদা উনাকে পবিত্র রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন যিনি প্রশংসা ও গুণগানের লক্ষ্যস্থল। অতঃপর তিনি আমার পিঠের দিকে বসলেন। আমি বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি হযরত আছিয়া বিনতে মুযাহিম আলাইহাস সালাম।
(ফিরআউনের স্ত্রী)
এরপর চতুর্থজন এগিয়ে এলেন। তিনি অন্যদের তুলনায় বেশি উজ্জ্বলতার অধিকারী ছিলেন। তিনি বললেন, হে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম! আপনার কোন তুলনা হয় না। আপনি পবিত্র রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন অকাট্য দলীলের অধিকারী ব্যক্তিত্ব উনাকে, যিনি পবিত্র মু’জিযা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র দালায়িলের অধিকারী, যিনি যমীন ও আসমানবাসীদের সর্দার। উনার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বোত্তম ছলাত এবং পরিপূর্ণ সালাম।
তারপর তিনি আমার নিকটে বসলেন। আর আমাকে বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনি আমার উপর হেলান দিন। আমার উপর পূর্ণ আস্থা রাখুন। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম। আপনি কে? তিন বললেন, আমি হযরত মরিয়ম বিনতে ইমরান আলাইহাস সালাম।
আমরা আপনার ধাত্রী এবং হাবীবুল্লাহ মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গ্রহণকারী। ”
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, উনাদের উপস্থিতিতে আমার শঙ্কাভাব দূর হলো। আর আমি দেখতে লাগলাম, দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট জনেরা আমার নিকট দলে দলে আসছেন। আমি আমার গৃহের দিকে তাকালাম, এখানে নানান ভাষায় বৈচিত্র্যপূর্ণ দূর্বোধ্য কথা আমি শুনতে পেলাম। এসব কথা বার্তায় সুমিষ্ট ভাষায় কথাগুলো বেশি মনে হচ্ছিলো।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি সে সময় লক্ষ্য করলাম, দলে দলে হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার ডানে-বামে উড়ছেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম উনাকে আদেশ মুবারক করলেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম! রূহসমূহকে পবিত্র পানীয় উহার পাত্রের নিকট শ্রেণীবদ্ধ করুন। হে রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম! পবিত্র জান্নাত উনার নবোদভিন্না হুরগণকে নতুন সাজে সজ্জিত কর আর পবিত্র মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে দাও। সারা মাখলূক্বাতের যিনি মহান ব্যক্তিত্ব সেই হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবির্ভাব উপলক্ষে। ”
হে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম! বিছিয়ে দিন নৈকট্য ও মিলনের জায়নামায সেই মহান ব্যক্তিত্বের জন্য যিনি নূরের অধিকারী, উচ্চ মর্যাদার এবং মহামিলনের।
হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! দোযখের খবরদার ফিরিশতা হযরত মালিক আলাইহিস্ সালাম উনাকে আদেশ করুন যেন সে দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করেন। হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! সম্মানিত জান্নাত উনার তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতা হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস্ সালাম উনাকে বলুন যেন সে সম্মানিত জান্নাত উনার দরওয়াজাসমূহ উন্মুক্ত করেন। হে হযরত জিব্ররীল আলাইহিস সালাম! হযরত রিদ্বওয়ান আলাইহিস সালাম উনার পোশাক (অনুরূপ পোশাক) পরিধান করুন। হে জিবরীল আলাইহিস সালাম! যমিনের বুকে গমন করুন সুসজ্জিত, কাছের ও দুরের সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সহকারে। হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আসমান-যমীনের চারপাশে ঘোষণা দিন সময় ঘনিয়ে এসেছে।
মুহিব ও মাহবূব উনাদের মিলনের, তালিব ও মাতলূবের সাক্ষাতের অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে উনার হাবীবে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে পবিত্র মি’রাজ শরীফ হবে তার সময় নিকটবর্তী হলো উনার আবির্ভাবের মাধ্যমে। ”
“অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি হুকুম বর্ণনা করলেন যেমনটি মহান আল্লাহ্ জাল্লাজালালাহু আদেশ মুবারক করলেন। এক জামায়াত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পাহাড়ে দায়িত্ব দিলেন। উনারা পবিত্র হারাম শরীফ উনার দিকে নজর রাখলেন। তাদের পাখাসমূহ যেন সুগন্ধিযুক্ত সাদা মেঘের টুকরা।
তখন পাখীসমূহ তাসবীহ্ করতে লাগল এবং উম্মুক্ত প্রান্তরে বনের পশুগুলো সহানূভুতির ডাক, আশার ডাক দিতে লাগলো। এসব কিছুই সেই মহান মালিক জলীল জাব্বার মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উনার আদেশ মুবারক মোতাবিক হলো। ”
ত্বহিরা, তইয়্যিবা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার চোখ মুবারক উনার পর্দা অপসারিত করলেন। আমি দেখতে পেলাম শাম দেশের বসরা নগরীর প্রাসাদসমূহ। আর আমি দেখলাম তিনটি পতাকা।
একটি পতাকা পূর্ব প্রান্তে, আরেকটি পতাকা পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ছাদ মুবারকে।
ত্বহিরা, তইয়্যিবা, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি যখন এ অবস্থায় উপনীত তখন আমি দেখলাম, আমি পাখিদের একটি দলে যে পাখিদের চক্ষুগুলো স্বর্ণাভ, ডানাগুলো বৈচিত্রময় রঙ বেরঙের ফুলের মতো। সেগুলো আমার কক্ষে প্রবেশ করলো। মণিমুক্তার মতো। এরপর উক্ত পাখীগুলো মহান আল্লাহ্ পাক উনার ছানা-ছিফত মুবারক করতে লাগল আমার চারপাশে।
আমি উত্থিলিত রইলাম এ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার নিকট দলে দলে আসতে লাগলেন। আর উনাদের হাতে ছিল আগরদান-স্বর্ণাভ ও রৌপ্য নির্মিত। আর তারা সুগন্ধি ধুম্র ছড়াচ্ছিল। সেই সাথে তারা উচ্চ কণ্ঠে সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি, মর্যাদাবান হাবীব উনার প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠ করছিলো।
তাদের কণ্ঠে সৌজন্যতার ও মহানুভবতার ভাব স্পষ্ট ছিল। ”
ত্বহিরা, তইয়্যিবা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, চন্দ্র আমার মাথার উপর চলে এলো তাবু মাথার উপর থাকার মতো। আর তারকারাজি আমার মাথার উপর সুদৃশ্য মোমবাতির ন্যায়। সে অবস্থায় আমার নিকট ছিলো দুধের ন্যায় শুভ্র সুগন্ধিময় পানীয়। যা ছিল চিনি ও মধুর চেয়ে মিষ্ট এবং বরফের চেয়ে বেশি ঠা-া।
তখন আমার খুব পিপাসা লেগেছিল। আমি উহা গ্রহণ করলাম ও পান করলাম। এর চেয়ে অধিক কোনো সুপেয় আগে পান করিনি। এটা থেকে আমার মধ্যে প্রকাশ পেল মহিমান্বিত নূর মুবারক উনার ছটা। আমি লক্ষ্য করলাম এক সাদা পাখি আমার কক্ষে প্রবেশ করেছে।
উহা আপন ডানা মেলে আমার কক্ষ অতিক্রম করে চলে গেল। (আন্ নি’য়মাতুল কুবরা আলাল আলাম)
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক তাজদীদ
আন নাযীরু, আন নাজমুছ ছাক্বিবু, আন নূরুম মুজাসসামু, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার দিনই হচ্ছে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর এবং তা পালন করা জিন-ইনসান তো অবশ্যই বরং কুল-কায়িনাতের জন্য ফরয আর
এই মুবারক তাজদীদই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক তাজদীদ
محمد رسول الله
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল। ” (পবিত্র সূরা ফাতহ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক ফরমান,
وما محمد الا رسول
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূলুল্লাহ ব্যতীত আর কিছুই নন। ” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৪)
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্যে রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। ” (মুসলিম শরীফ)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু আমাদেরই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নন; বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরসহ সমস্ত মাখলুকাতের রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাক্বাম। তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক নন। এছাড়া বাকি সমস্ত মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী তিনি। সুবহানাল্লাহ!
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে- কোনো ব্যক্তি যদি ক্বিয়ামত পর্যন্ত শুধু لا اله الا الله“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পড়ে তারপরেও সে ঈমানদার হতে পারবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত না “মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” না পড়বে।
সম্মানিত বেহেশত উনার দরজায়, গাছের পাতায় পাতায়, হুর-গেলমানদের কপালে কপালে কুদরতীভাবে সোনালী হরফে লিখা রয়েছে-
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এই পবিত্র কালিমা শরীফ শুধু উম্মতে হাবীবী তথা আমাদের জন্যই খাছ নয়; বরং সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মাখলুকাতের, এমনকি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরও পবিত্র কালিমা শরীফ হচ্ছে এই পবিত্র কালিমা শরীফ।
” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাবীবুল্লাহ হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র হাদীছে কুদছী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি (আল্লাহ পাক) গুপ্ত ভা-ার ছিলাম। যখন আমার মুহব্বত হলো- আমি প্রকাশ পাই, তখন আমি মাখলুক তথা আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করলাম। ”
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। ” মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি স্বীয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করতেন, তাহলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না।
এই সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন “আমি যদি আমার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হযরত মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না। ” (মুসতাদরেকে হাকীম)
পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, “আপনি যদি সৃষ্টি না হতেন, তাহলে আমি পবিত্র জান্নাত সৃষ্টি করতাম না। ”
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন- “আপনি যদি সৃষ্টি না হতেন তাহলে আমি জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না। ”
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনি যদি না হতেন তাহলে আমি আসমান সৃষ্টি করতাম না। ”
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন- “যদি আপনি সৃষ্টি না হতেন, তাহলে আমি আমার রুবূবিয়াত প্রকাশ করতাম না।
” সুবহানাল্লাহ!
এমনকি কাউকে কোনো পবিত্র নুবুওওয়াত মুবারক, কোনো রিসালত মুবারক দেয়া হতো না বা প্রকাশ পেতো না যতোক্ষণ পর্যন্ত না আপনার প্রতি পবিত্র ঈমান আনা হতো।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “রোযাদারের জন্য দুটি খুশি বা ঈদ। একটা হচ্ছে ইফতার করার সময়। আর একটা মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাৎ মুবারক উনার সময়। ” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে জুমুয়ার দিন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে “(এটি জুমুয়ার দিন) এমন একটি দিন যাকে আল্লাহ পাক ঈদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন।
” (ইবনে মাজাহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আরাফা উনার দিনকেও ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত আবু লুবাবাতা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র জুমুয়া উনার দিন সকল দিনের সাইয়্যিদ এবং সকল দিন অপেক্ষা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি পবিত্র ঈদুল আযহা উনার দিন ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এ দিনটিতে পাঁচটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় রয়েছে- (১) এ দিনে মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, (২) এ দিনে উনাকে যমীনে প্রেরণ করেছেন (৩) এ দিনে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ লাভ করেন, (৪) এ দিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে। (৫) এ দিন এমন একটি সময় রয়েছে যে সময় দোয়া কবুল হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের জন্য আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন মুবারক হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয়ই আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাঞ্চা নাযিল করবো।
অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাঞ্চা নাযিলের দিনকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিবো, যে শাস্তি জগতের অপর কাউকে দিবো না। ” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪, ১১৫)
এখন বলার বিষয় হচ্ছে, আবুল বাশার হযরত আদম শফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আগমন ও বিছাল শরীফ উনার দিন হওয়ার কারণে পবিত্র জুময়া উনার দিন যদি পবিত্র ঈদ উনার দিন হয় এবং তা পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পবিত্র ঈদুল আযহা উনার দিন থেকেও সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ হয়, পবিত্র আরাফা উনার দিন যদি পবিত্র ঈদ উনার দিন হয়, রোযাদারের জন্য যদি ইফতারের সময় ঈদ হয়, খাঞ্চা নাযিলের কারণে খাঞ্চা নাযিলের উক্ত দিনটি যদি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং উনার উম্মতের জন্য খুশির দিন হয় এবং সে দিনকে খুশির দিন হিসেবে পালন না করলে কঠিন শাস্তির যোগ্য হতে হয়; তাহলে যিনি সৃষ্টি না হলে মহান আল্লাহ পাক তিনি আসমান-যমীন, আরশ-কুরসী, লওহ, কলম, জামাদাত-শাজারাত-হাজারাত, জিন-ইনসান কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না, কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম সৃষ্টি হতেন না, হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনারাও সৃষ্টি হতেন না।
রোযা, নামায, যাকাত এমনকি খোদ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অজুদ মুবারক খুঁজে পাওয়া যেতো না, শুধু তা-ই নয় স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াতকেও প্রকাশ করতেন না, তাহলে সেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই দিন যে তারিখে এই দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনলেন, সেই পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার দিন কি পবিত্র ঈদ উনার দিন হবেন না, অন্যান্য ঈদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাবান ও ফযীলতপূর্ণ হবে না এবং সমস্ত মাখলুকাতের জন্য তা পালন করা ফরয-ওয়াজিব হবে না?
অবশ্যই অবশ্যই সেই দিন পবিত্র ঈদের দিন হবে, সকল ঈদের সেরা ঈদ তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদু ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদু ঈদে আকবর হবে এবং তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য তো অবশ্যই এমন কি সমস্ত মাখলুকাতের জন্য ফরয-ওয়াজিব হবে। আর তা পালন না করলে কঠিন শাস্তিতে গ্রেফতার হতে হবে।
আর এটাই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক।
আর এই মুবারক তাজদীদ-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তাজদীদ মুবারক। কেননা অন্যান্য মুজাদ্দিদগণ উনাদের তাজদীদসমূহ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথে সম্পৃক্ত। আর এই মুবারক তাজদীদ স্বয়ং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিষ্ঠাতা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার সাথে সম্পৃক্ত। যিনি না হলে খোদ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অজুদ মুবারক পাওয়া যেতো না। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজুদ মুবারক উনার মর্যাদা, বুযুর্গী, সম্মান অন্যান্য তাজদীদসমূহের তুলনায় অনেক বেশি।
আর এর তাজদীদকারী সুমহান মুজাদ্দিদ উনার মর্যাদা, সম্মান, বুযুর্গীও অন্যান্য মুজাদ্দিদ উনাদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এই তাজদীদ মুবারক-ই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক তাজদীদ। আর এর তাজদীদকারী মুজাদ্দিদই হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ। আর এই জন্যই উনার দ্বারা শোভা পেয়েছে এই তাজদীদ মুবারক করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সুমহান মুজাদ্দিদ উনাকে চেনার এবং উনার এই মুবারক তাজদীদকে বুঝার তাওফীক দান করুন, কবুল করুন, মদদ করুন।
(আমীন)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।