Youth cannot know how age thinks and feels. But old men are guilty if they forget what it was to be young.
১৯২৫ সালের ১৮ জুলাই, হিটলার প্রকাশ করেন তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ "মাইন কাম্ফ"। প্রকাশের প্রথম কয়েক বছর বইটি খুব কম মানুষই কিনেছিলেন। ফলে বইটি থেকে হিটলারের আয় ছিল যৎসামান্য। কিন্তু হিটলার চ্যান্সেলর হবার পরে দৃশ্যপট রাতারাতি পাল্টে যায়। মাইন কাম্ফ অতি অল্প সময়ে তৎকালীন সব রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়।
হিটলারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও রাতারাতি ফুলে ফেপে উঠে। শীঘ্রই তিনি লাখপতি বনে যান।
মাইন কাম্ফের উপার্জন দিয়ে হিটলার জার্মানির বার্চেসগারডেনের ওবারসাল্য্বার্গে একটি বাড়ি কিনেন। ওবারসাল্স্বার্গ এলাকাটি জার্মানির ব্যাভারিয়া অঞ্চলে আল্পস্ পর্বতমালার পাশে অবস্থিত। অবসর কাটানোর জন্যে একটি মোক্ষম স্থান।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ কিলোমিটাল উপরে অবস্থির এই বাড়িটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১০ কোটি রাইখ্স্মার্ক। চলুন তবে ঘুরে আসি হিটলারের বাড়ি থেকে।
এই হল হিটলারের বাড়ি "দ্য বার্গহফ"। বার্চেসগারডেন ছিল অবকাশ যাপনের জন্যে একটি উত্তম স্থান। ১৯২৭ সালে এক বিধবার কাছ থেকে তিনি বাড়িটি প্রথম ভাড়া নেন।
এরপর ১৯৩৩ সালে বাড়িটি কিনে নেন।
১৯২৭ সালের বার্গহফ এবং সংস্কার পরবর্তী বার্গহফের মধ্যে ছিল আকাশ পাতাল পার্থক্য। ১৯৩৩ সালে কিনে নেওয়ার পর প্রায় পুরো বাড়িটিই পুনঃনির্মাণ করা হয়।
হিটলার ভালোবেসে তার বাড়ির নাম দেন "বার্গহফ"। এর অর্থ হল "The Mountain Palace." পূর্বে এর নাম ছিল "Haus Wachenfeld"।
১৯২৭ সালের Haus Wachenfeld।
১৯৩৪ সালের Haus Wachenfeld। এই বছর একটি গ্যারেজ, একটি লম্বা টেরেস(terrace) এবং রোদ পোহানোর জন্যে একটি সানরুম(sunroom) যোগ করা হয়। উল্লেখ্য, বাড়ির নাম এখনো বার্গহফ করা হয়নি।
১৯৩৬ সালে Haus Wachenfeldকে ভেঙ্গে বার্গহফে পরিণত করার কাজ শুরু হয়।
চিত্রে Haus Wachenfeldএর পশ্চিম ভবনের পাশে একটি নতুন ভবন তোলা হচ্ছে।
১৯৩৯ সালে, নির্মাণকাজ শেষ হবার পরে বার্গহফ।
বার্গহফের তিন তলার বারান্দা থেকে দেখা বাহিরের দৃশ্য।
*****
বার্গহফের ড্রয়িং রুম তথা "The Great Room." হিটলার তার অতিথিদের এই রুমেই আপ্যায়ন করতেন।
"The Great Room" এর বিশাল চিত্রকর্ম।
বার্গহফের প্রায় প্রতিটি রুমেই এরূপ দামী দামী চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছিল।
"The Great Room" এর মূল আকর্ষণ ছিল এর বিখ্যাত জানালা। "The Grand Window."
***
হিটলারের অফিস। দ্বিতীয় তলায়।
বার্গহফের সানরুম।
(The sunroom)। শীতকালে এখানে ভালই রোদ পোহানো যেত। Haus Wachenfeld এ এটি "The winter room" নামে পরিচিত ছিল।
এই রুমটিকে মূলত "ইভার রুম" বলা হত। কেননা ইভা ব্রাউন বেশীর ভাগ সময়ে এই রুমেই তার বন্ধু বান্ধবদের আপ্যায়ন করতেন।
এছাড়া এটি একটি গেস্ট রুমও বটে।
বার্গহফের বিশাল ফায়ারপ্লেস। চিত্রে একটি মিলিটারি স্টাফ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হতে দেখা যাচ্ছে। বার্গহফের পশ্চিমের বিল্ডিংটি ছিল মূলত সরকারি এবং সামরিক স্টাফদের বসবাসের জন্যে তৈরি করা। ফলে যখনই প্রয়োজন হত, হিটলার তার স্টাফদের নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে কনফারেন্স করতে পারতেন।
বার্গহফের ডাইনিং রুম। সাধারণত কোনো কাজ না থাকলে হিটলার দুপুর ১২টার দিকে লাঞ্চ করতে বসতেন। তিনি ছিলেন নিরামিষাশী এবং কঠোরভাবে এর চর্চা করতেন।
বান্ধবীদের নিয়ে রোদ পোহানো অবস্থায় ইভা ব্রাউন।
হিটলার এবং ইভা।
বার্গহফের টেরেসে।
*****
পূর্ব প্রাশিয়ার "wolf's lair(নেকড়ের গুহা)" নামক সামরিক হেডকোয়ার্টারের পাশাপাশি হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অধিকাংশ সময় এই বার্গহফেই কাটিয়েছিলেন।
১৯৪৪সালের দিকে, হিটলার বার্গহফের উপর মিত্রবাহিনীর বোমাবর্ষণের আশঙ্কা করতে থাকেন। এই কারণে, কয়েক শ শ্রমিককে বার্গহফের চারপাশে বোমা প্রতিরোধী কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজে নিয়োজিত করা হয়। অকস্মাৎ বোমারু বিমান হামলা করলে এসব স্থানে যে কেউ আশ্রয় নিতে পারত।
কিন্তু বার্গহফ মিত্রবাহিনীর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল না। যুদ্ধের শেষের দিকে হিটলার বার্লিনে চলে আসেন। রাজধানীতেই শেষ লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার অনুসারীগণ তাকে বার্গহফের পাশের আল্প্স্(alps) পর্বতমালায় আশ্রয় নিয়ে যুদ্ধ করার অনুরোধ জানান। মিত্রবাহিনীর কাছেও এই খবর চলে আসে।
তারা কোনো সুযোগ নিতে চাইনি। ফলে তখন তারা বার্গহফের উপর বোমা হামালার সিদ্ধান্ত নেয়।
১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল, ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনী ওবারস্যাল্জ্বার্গে বোমাবর্ষণ করে। হিটলারের বার্গহফ, যা ওই অঞ্চলে অবস্থিত ছিল, বোমার আঘাত থেকে রেহাই পায়নি। ছবিটি একটি "ল্যাঙ্কাস্টার বোমারু বিমান" থেকে তোলা।
এখানে বার্গহফের উপর দুইটি ডাইরেক্ট হিট দেখা যাচ্ছে। (আমি খুজে পাই নাই)।
মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা বার্গহফে পৌছানোর আগেই, S.S সৈন্যরা বার্গহফের কিছু দালানে আগুন ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
বার্গহফের একটি পুড়ে যাওয়া অংশ। ছবিতে দুই জন আমেরিকান সৈন্যকে নাৎসি পতাকা নামিয়ে ফেলতে দেখা যাচ্ছে।
ধারণা করা হয় যে, আমেরিকান ১০১তম ছত্রি বাহিনীর ইজি কোম্পানির সৈন্যরা প্রথম বার্গহফে এসে পৌছায়। স্টিভেন.ই.অ্যাম্ব্রোজ তার বিখ্যাত বই "ব্যান্ড অফ ব্রাদার্স" এ বার্গহফে আগে পৌঁছানোর ব্যাপারে ইজি কোম্পানির কথাই লিখেন। কিন্তু এই বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। ধারণা করা হয় যে, মার্কিন ৩য় পদাতিক ডিভিশনের একটি দল অথবা ফ্রি ফ্রেঞ্চ ফোর্সেসের একটি দল সত্যিকার অর্থে প্রথম বার্গহফে এসে পৌছায়।
বার্গহফের পিছন থেকে তোলা।
ছবিতে পুরে যাওয়া বার্গহফের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।
যুদ্ধ পরবর্তী বার্গহফ।
****
১৯৩৩ সালে, ক্ষমতায় আসার পর, হিটলার গর্ব করে বলেছিলেন যে তার থার্ড রাইখ হাজার বছর শাসন করবে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা শাসন করেছিল ১২ বছর।
হিটলার বার্গহফকে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করতেন।
কেননা, যে সব যুদ্ধে তিনি জিতেছিলেন, সে সব যুদ্ধের পরিকল্পনা তিনি বার্গহফে বসেই করেছিলেন। ফলে আজ যদি থার্ড রাইখ টিকে থাকতো, তবে হিটলারের সাধের বার্গহফ হত নাৎসিদের তীর্থস্থান। কিন্তু থার্ড রাইখের পতনের মধ্যে দিয়ে বার্গহফেরও পতন ঘটে।
১৯৫২ সালে, বার্গহফকে কেন্দ্র করে নাৎসিদের পুনঃজাগরণের আশঙ্কায় মিত্রবাহিনী বার্গহফের শেষ ধ্বংসাবশেষও বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়।
এভাবে শেষ হয়ে যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন হিটলারের বহু স্মৃতিবিজড়িত বার্গহফ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আমার লেখার লিঙ্কস ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।