‘শুক্রবার রাতে কুয়েটে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ১২ জন/ ১৬ জন/ ১৭ জন আহত হয়েছে’
এরকম আরো অনেক সংবাদে ভরে গেছে বিভিন্ন স্থানীয়, জাতীয় এবং অনলাইন পত্রিকা। পত্রিকাগুলোর নাম যথাক্রমে দৈনিক আমারদেশ, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দৈনিক সমকাল, দ্য এডিটর, দৈনিক পূর্বাঞ্চল এবং দৈনিক আমাদের সময়।
সাধারনত যেমনটি হয়, সব দোষ ছাত্রলীগের ঘাড়ে পড়ে। ফার্স্ট ইয়ারের দুই জন ছাত্রের বেয়াদবির জের ধরে এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটলেও, এর পেছনের ঘটনা স্পষ্ট করা প্রয়োজন। ১৬ ই নভেম্বর দুপুরবেলায় বেয়াদবির জের ধরে ফোর্থ ইয়ারের এক ছাত্র ফার্স্ট ইয়ারের দুই ছাত্রকে ডাকে।
কাকতালীয় ভাবে ১ম বর্ষের ছাত্র দুইজন ছিল কুয়েট ছাত্রদলের কর্মী। পরবর্তীতে তারা দুইজন ছাত্রদলের কিছু বহিরাগত(ফুলবাড়ি গেইট এলাকার) কর্মীকে নিয়ে উপস্থিত হয়। বহিরাগত ছাত্র দল কর্মীরা তাতে বাধা দেয় এবং হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের একটি মিটিং ডাকা হলে সেখানে ছাত্রদলের এক কর্মী মিটিং এর এক পর্যায়ে বলে, ‘ক্ষমতায় আসলে রশীদ হল, লালন শাহ হলে রক্তবন্যা বয়ে দিব। ' তারপর এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়।
ইতোমদ্ধেই ক্যাম্পাসের পাশের পকেট গেট এলাকায় ছাত্রদলের ১৫/২০ জন সদস্য ও বহিরাগত ছাত্রদল কর্মীর হাতে লাঠি, রড, বাঁশ নিয়ে হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে দেখলে ছাত্রলীগ কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত ছাত্রদল কর্মীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় ছাত্রদলের এক কর্মী আহত হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। এটাই ছিল মূল ঘটনা।
কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকায় বলা হয়, ৫ জন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং আরো ১২ জন স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়। অথচ পরদিন হাসপাতালে ভর্তি ছাত্রদের দেখতে যাওয়া হলে দেখা যায়, তন্মধ্যে ৪ জন সকালে ভুরিভোজের জন্য বের হয়।
কিন্তু যখনই কুয়েটের ভিসি স্যারের যাওয়ার খবর পায়, সেই ৪ জন নাস্তা ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আর যে ১২ জন আহত ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়, তাদের পরদিনই ক্যাম্পাসে দেখা যায়। এই ১২ জনের মধ্যে তৌহিদ আহমেদ ঘটনার সময় ক্যাম্পাসেই ছিল না। তার সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় ছাত্রদল কর্মীদের হলত্যাগে বাধ্য করার যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তার প্রমাণ আমার রুমমেট (১৪ জন ছাত্রদল কর্মীর একজন) সেদিনকার ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল, এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় গত দু’দিন ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এছাড়াও ক্যাম্পাস এ এবং হল এ হল এ ভয়ভীতি ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে এবং আতংকে শত শত ছাত্র ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। মূলত ক্যাম্পাস এ যে 'কিছু একটা' ঘটেছে তা সাধারণ ছাত্ররা জানতে পারে পত্রিকার মিথ্যা সংবাদ এবং ছাত্রদলের অপপ্রচারের মাধ্যমে।
এ ঘটনার পেছনের মদদ দাতার চরিত্র স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। আগামী ৮ডিসেম্বর কুয়েটে কনভোকেশন আয়োজন হওয়ার তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে এই কনভোকেশন আয়োজিত হয়ার কথা থাকলেও, ছাত্রলীগ আর ‘সাধারণ ছাত্রদের' মধ্যেকার সংঘর্ষে তা বাতিল হয়। সেখানেও এর ফায়দা তুলেছে ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী ছাত্রশিবির। ‘সাধারণ ছাত্র’ দের আড়ালে থেকে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির যৌথভাবে কনভোকেশন বাতিল করতে সমর্থ হয়। এবং ডিসেম্বর মাসে যে কনভোকেশন চুড়ান্ত করা হয়েছে, তাও বাতিলের জন্য ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে।
ছাত্রদল কর্মীরা ক্যাম্পাসে ফিরেই ঘটনাকে পুঁজি করে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ ছাত্রদের সহানুভূতি আদায় এবং কনভোকেশন বাতিলের জন্য যে নোংরা চেষ্টা চালাচ্ছে, তা বিভিন্ন বিএনপি সমর্থিত মিডিয়ায় ভুয়া সংবাদ প্রচার ও তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
এর জন্য কাউকে নিউটন-আইন্সটাইন হয়ে জন্মাতে হয় না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।