নাজমুল ইসলাম মকবুল
সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা জাতি
নাজমুল ইসলাম মকবুল
তাজ্জব ব্যাপার। এক জোয়ান মরদ সাংবাদিকতার চাকুরি নেবার জন্য যার সুপারিশ প্রয়োজন তাঁর বাসায় বিশাল আকারের একটি মাছ নিয়ে হাজির হলো ফুরফুরে মেজাজে। বেচারা থতমত হয়ে উঠলেন। বাপরে বাপ। এত্তোবড় মাছ কোনদিন বাজার থেকে কিনে আনার সামর্থ অন্তত আমার মতো ফাটা কপালির তো হয়নি।
করি কি। তবে ভাবনার বিষয় হলো, নিশ্চয় ওই জোয়ান মরদের মতলব ভালো না। যোগ্যতা থাকলেতো আর দামী মাছ নিয়ে বাসায় আসতো না। ওকে ওই ধরনের পদবীতে চাকুরীর সুযোগ করে দিলে পদে পদে যে দুর্নীতি করবেনা তারইবা নিশ্চয়তা কোথায়। ঘুষ দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি কালোটাকা বা পেশিশক্তির জোরে যে বা যারাই উচ্চ মাঝারি বা নিম্নপদে চাকুরীতে প্রবেশ করে তারা আপাদমস্তক দুর্নীতি ও লুটপাটে আতœনিয়োগ করে দেশকে ক্রমান্বয়ে রসাতলে নিতে শুরু করে দেয় বিশেষ কার্যক্রম।
তাদের এ কীর্তি কলাপকে খাটো করে দেখার কারণেই আমাদের দেশ দুর্নীতিতে বার বার বিশ্ব চ্যাম্পীয়নের তকমা অর্জনসহ বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমুহের নিকটও আস্থা হারিয়ে এক করুণ অবস্থার মধ্যে দিন গুজার করছে।
সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সংবাদপত্র জাতির দর্পণ বা আয়না। এই জাতির বিবেকের মধ্যেও যদি ঘুণে ধরে তখন বুঝতে হবে আমরা জাতি হিসেবে কোন ধরনের আরাম অনুভব করছি। ‘হলুদ সাংবাদিকতায় সয়লাব দেশ : জাতির জন্য অশনি সংকেত’ শিরোনামে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম।
বিদেশের অনেকগুলি পত্র পত্রিকায় তা ফলাও করে ছাঁপিয়ে কপি পর্যন্ত ডাকযোগে পাঠিয়ে দিয়েই শুধু ান্ত হয়নি অনেক মোবারকবাদও জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে দেশের পত্র পত্রিকাগুলো নিয়ে। জাতিয় দৈনিকগুলোর মধ্যে একমাত্র আমার দেশ পত্রিকা আর্টিকেলটি ছাঁপানোর দুঃসাহস দেখিয়েছিল। আমার দেশ এ ছাঁপা হওয়ার পর দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিনন্দন জানিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্য হতে অগণিত ফোন আসে এ অধমের নিকট। স্থানীয় ও জাতিয় অনেক পত্রিকার কর্তাব্যক্তিরা ফোন করে ধন্যবাদ জানালেন এক্কেবারে হাড়ির খবরটা নিয়ে লেখার জন্য।
তবে অনেকে এও জানালেন যে, যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা থাকায় লেখাটি ছাঁপাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকা লেখাটি ছাঁপানোর দুঃসাহস দেখানোর পর ভুক্তভোগীদের দোয়া ও ধন্যবাদের ঝড়ে সিক্ত হয়ে লেখকের সাথে যোগাযোগ পরিচয়পর্ব ও শুধু ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই গড়ে তুলে ান্ত হলেন না প্রতি সপ্তাহেই কুড়িটি করে পত্রিকা বিশেষ ব্যবস্থায় এ অধমের নামে পাঠিয়ে দেয়া শুরু করে দিলেন। অন্তত এস.এস.সি পাশের শিাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে এভাবে বড়ো মাছ খেয়ে যারা অযোগ্য অথর্ব ও দুর্নীতিবাজদের প্রবেশে সুযোগ করে দেন তাদেরও মুখোশ উন্মোচন না করলে দেশ ও জাতির কাছে দায়বদ্ধতা থেকেই যাবে বলে মনে করি।
বিটিভিতে শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় ‘শেষ কোথায়’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। ভ্রাম্যমান আদালতও থাকেন পরিচালকের সাথে।
দুর্নীতি অনিয়ম বিশেষ করে খাবারে ভেজাল মেশানো এবং নোংরা অপরিচ্ছন্ন পঁচা বাসি খাবার পরিবেশনের সরেজমিন খোজ খবর নিয়ে দোষীদের তাৎনিক সাজা ও জরিমানা করা হয়। গত ১২ অক্টোবর দেখলাম একটি সরকারী হসপিটালের নিকটেই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা অনেকগুলি কিনিকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে আসা হয়। যারা ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ভাগিয়ে রোগী আনতে সমর্থ হয় তারা নির্দিষ্ট একটা কমিশনও পায় এক্কেবারে নগদে। এই ভাগানোর মহৎ! কাজে কিনিকের মালিকের স্ত্রী কন্যা পুত্ররাও দিব্যি কাজ করে যাচ্ছে। আচানক লাভজনক ওই পেশাদারীরা রোগী ভাগিয়ে এনে হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে এই পরীা সেই পরীার নামে অনেকগুলি টেস্ট শুরু করে দেন।
রিপোর্টে নামকরা ডাক্তার ও টেকনিশিয়ানদের সিল মারা থাকে ঠিকই কিন্তু তাতে স্বার করেন পাঠশালা পড়–য়া কেয়ারটেকাররা। ডাক্তারী চিকিৎসাও দেন ওই কেয়ারটেকার কিংবা মালিকের পুলা মাইয়া নাতি পুতিরা। তারা এগুলোর কয়েকটি হাতেনাতে ধরে দুলাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিনিক সিলগালা এবং বছর দুবছরের জেলও দিতে দেখলাম। কিন্তু ওসব দেখে অবাক হলামনা মোটেও। কারণ ওরা অভিযান চালিয়েছেন নির্দিষ্ট একটি জায়গায়।
সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে একই ধরনের অবস্থা চলছে সেগুলোতে অভিযান চালাবেন কারা। সারাদেশে একযোগে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হলে শুধু জরিমানা আদায় বাবৎ সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়তো হতোই দেশের চিকিৎসা সেবার হাল হকিকতও বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে বাহবা দিতে পারতেন। অনুসন্ধানে জানা যায় সরকারী চাকুরিজীবি প্রায় ৯০% ডাক্তার ঠিকমতো কর্মেেত্র থাকেননা। রোগীদের সাথে ভালো ব্যবহার দেখাননা কিন্তু চেম্বারে গেলে চড়া ভিজিটের বিনিময়ে ওরাই আবার হাসিমুখে কথা বলার নাটক মঞ্চস্থ করতে বিবেকটা একটুও নাড়া দেয়না। কি আজব মানুষ।
অধিকাংশ ডাক্তারের চেম্বারে রোগীদের চেয়ে ঔষধ কোম্পানীর লোকদের ভীড় দেখা যায় বেশি। কোম্পানী থেকে যে যতো বড়ো অফার দেয় তার ঔষধও লেখেন তত বেশি। রোগী গুল্লায় যাক তাতে তাদের কিছু যায় আসেনা। কোম্পানীর প থেকে ডাক্তার বাবুদের বাসা ও চেম্বারের ফোরে মার্বেল পাথর লাগিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে ফ্রিজ এয়ারকুলার খাট আরামদায়ক চেয়ার দামী আসবাবপত্র এমনকি ডাক্তারের বউকে মেকআপ পর্যন্তও নাকি করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এগুলি সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা দেখেও না দেখার ভান করেন।
চিকিৎসা সেবার নামে এসব মহৎ! মানুষগুলো আমাদেরকে কোন ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তা সকলেরই জানা থাকলেও ভয়ে আতংকে কেহ মুখ খোলার যেন সাহস পাননা। পাবার কথাও নয়। কারণ দুর্নীতিকে হালাল করা হয় আরও বড়ো দুর্নীতি দিয়ে।
ফেসবুকে একটি কার্টুন দেখলাম। সরকার থেকে অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয় বিভিন্ন কাজের জন্য।
কাজ পর্যন্ত এই বরাদ্ধ আসতে যে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে আসে সবগুলি ধাপেই নির্দিষ্ট অংকের পার্সেন্টেজ দিয়েই আসতে হয়। দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত যা থাকে তা দিয়ে আর ওই কাজ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন হয়না। কদিনের ব্যবধানে আবার যেই লাউ সেই কদু। তলাবিহীন ঝুড়ির তকমাতো অনেক আগেই আমরা পেয়ে গেছি। সময়ের ব্যবধানে একই প্রকল্পে বারবার বরাদ্ধ বারবার লুটপাট।
বিজ্ঞজনেরা তাই বলে থাকেন দেশে বহাল তবিয়তে আছে মাত্র দুটিই দল। একদল হলো লুটপাট পার্টি। আর অন্যদল হলো সাধারন পাবলিক, যাদের হরদম লুট করা হয়। লুটপাট পার্টির কোন আদর্শ নেই। সকল রসুনের এক কোয়া।
তাদের গোড়া বড়ই মজবুত। তারা হর হামেশা লুটপাট করতে করতে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতেই থাকে। ওদের রোখার শক্তি সাহস ও সামর্থ যেন কারোরই নেই। আর সাধারন পাবলিক শুধু মার খেয়ে খেয়েই কোনমতে দিন গুজার করে হায়াতের খাতা খতম হলেই চিরবিদায় নিয়ে চলে যাবে অনন্ত জগতে। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।