ধর্ম হল নিয়ন্ত্রণ। যার বিবেক আছে, সে নিজেকে এমনিতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যার বিবেক নাই, তাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
স্থিতিশীল সমাজের জন্য দরকার নিয়ন্ত্রিত মানুষ। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যে কোন দুর্বল মুহূর্তে অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
তাই তার ধর্মের দরকার হয়। ধর্ম মানুষকে পরকালের লোভ দেখিয়ে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।
যেমন বিবেকবান মানুষ ঘুষ খেতে পারে না, কিন্তু একজন খারাপ ব্যক্তিকে ঘুষ খাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ধর্মের দরকার। বলা দরকার যে ঘুষ খেলে পরকালে জাহান্নামী হবে।
একইভাবে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য নর নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কিছু বিধি নিষেধ থাকা জরুরী।
বিবেকবান মানুষ নিজ উদ্যোগেই নিজেকে অবৈধ নারী সংসর্গ বা পরকীয়া বা ব্যভিচার থেকে দূরে রাখে। কিন্তু কিছু মানুষকে ভয় না দেখালে সমাজে অন্যায়গুলো হতে থাকে। তাই ধর্মের দরকার আছে।
এত কিছুর পরেও ধর্মের মূলবস্তুর দিকে কি আমরা খেয়াল করেছি? করি নাই। ইসলাম ধর্ম হোক আর বৌদ্ধ ধর্মই হোক, সব ধর্মের মূল সুর এক- মানুষে মানুষে ভালবাসা, মায়া মমতার বোধ সৃষ্টি করা।
কিন্তু আমরা কি সেটা সৃষ্টি করতে পেরেছি? পারি নি তো। আমরা সবাই ধর্মটাকে আক্ষরিক অর্থে মেনে চলি। নামাজ পড়া, রোজা রাখা সব ফরজ ঠিক আছে। কিন্তু মানুষে মানুষে ভালবাসা সৃষ্টি করা গেছে কি?
আমার বাসার পাশেই মসজিদ, তার পাশেই একটা বস্তি। গতবছর রোজার সময় মসজিদে ১৬ লাখ টাকা খরচ করে এসি বসানো হয়েছে।
এই এসি খুব কম সময়ই প্রয়োজন হয়। এই টাকাটা অনর্থক খরচ গেল। মসজিদে মানুষ বড়জোর সারাদিনে ৪ ঘণ্টা সময় কাটায়। এই সময়টুকু একটু গরমে থাকলে কি খুব কষ্ট হত? ১৬ লাখ টাকা বস্তির মানুষগুলোর মাঝে বিতরণ করা যেত না?
এই জিনিসটা কারো মাথায় আসে নাই কেন? কারণ আমরা ধর্মের ভিতরে প্রবেশ করি না।
আমরা সারাদিন চিন্তা করি মেয়েরা হিজাব পরা শুরু করলে কী না ভালো হত, খুচরা নেকি কামানোর জন্য “আল্লাহ আল্লাহ” তসবি জপি, কিন্তু মানুষ হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের প্রশ্নটা এড়িয়ে যাই সযত্নে।
আমাদের ধর্ম পালনের মূল উদ্দেশ্য পরকালে জান্নাতে একটা জায়গা করে নেয়া, এই ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য নেই আমাদের। ধর্মকে আমরা জীবনপ্রেরনা রূপে পাই নি, পেয়েছি শুধু মুখের বুলি রূপে।
আশে পাশের মানুষের জন্য কোন ভালবাসা নেই, বরং কেউ ভিন্ন মত প্রকাশ করা মাত্রই তার উপর চওড়া হওয়া, এটা তো ধর্ম আমাদের শিখায় না
“দ্বীনের ওপর জোর নেই” কোরআনে স্পষ্ট এই কথা বলা আছে। এখন কেউ যদি ইসলাম না মানতে চায়, তাহলে সে খারাপ, তার সকল কথাবার্তাই খারাপ হয়ে যায়? ধর্ম সংক্রান্ত তার সকল বিশ্লেষণ খারাপ হয়ে যায়?
একটা মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে শুধু একটা হ্যাঁ বা না এর উপর?
আল্লাহকে বিশ্বাস করি বললে আমার সব কথা শুনতে রাজি, আর না বললে আমার কথা শোনা পাপ হয়ে যায়? আমি ঈশ্বরকে মেনে মিথ্যা বললেও ক্ষেত্রবিশেষে আমি গ্রহণযোগ্য হতে পারি, কিন্তু না মানলে আমি যত ভালো কথাই বলি না কেন আমার কোন মূল্য নেই?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।