আমি একজন ভাল ছেলে । অরক্ষিত পুলিশের অস্ত্রাগার। এ সুযোগেই অসাধু পুলিশ সদস্যরা দফায় দফায় সরকারি গোলা-বারুদ পাচার করেছে। নিয়ম মোতাবেক প্রতি মাসেই গোলা-বারুদের হিসাব দাখিলের কথা থাকলেও দায়িত্বশীল উচ্চ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহলোয় গত এক বছরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার গুলি খোয়া গেছে। তদন্তকারী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও উচ্চ পর্যায়ের দু’টি তদন্ত কমিটি চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পেয়েছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশের ব্যবহৃত স্পর্শকাতর দেড় শতাধিক অস্ত্রাগার রয়েছে। এর মধ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অবস্থিত কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগার ঢাকা মহানগর পুলিশের জন্য ও আইজিপি রিজার্ভ স্টোর সারা দেশের পুলিশের অস্ত্র সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রয়োজন পড়লেই ওই দুটি অস্ত্রাগার থেকে পুলিশ অস্ত্র সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (সদর দপ্তর) মো. হাবিবুর রহমান ও ডিসি (সরবরাহ) আতাউল কিবরিয়ার তত্ত্বাবাবধানে ওই দুটি অস্ত্রাগারের নির্দেশ ছাড়া একটি অস্ত্র কিংবা গুলিও বাইরে বের হওয়ার কথা নয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার রাউন্ড গুলি কিভাবে বেহাত হয়ে গেল সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি (সদর) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এটি দেখভালের দায়িত্ব আমার নয়।
বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের সরবরাহ শাখার ডিসি’র। তবে তার বক্তব্যে ভিন্নমত পোষণ করেন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। তারা জানান, ডিসি সদর দপ্তরের নির্দেশ ছাড়া কোন অস্ত্র কিংবা গুলি অস্ত্রাগার থেকে বের করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে তিনি তার অধস্তন এডিসি (সদর) ও এসি (ফোর্স) তত্ত্বাবধানে অস্ত্র সরবরাহ করে থাকেন। এছাড়া নিয়মিতভাবে অস্ত্র ও গুলির হিসাব রাখার দায়িত্বও তার।
রাষ্ট্রীয় অস্ত্র ও গুলি পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যাওয়ার ঘটনায় সর্বত্র উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। আর এর সাথে স্বয়ং দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যতম রাষ্ট্রীয় সংস্থার (পুলিশ) সদস্য জড়িত থাকায় সরকার ও প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ হওয়ার পরও আগের সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পর্ক রাখা এবং তাদের হাতে সরকারি অস্ত্র ও গুলি পৌঁছে দেয়ার ঘটনায় নানামুখী প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। স্বাধীন জুমল্যান্ডের স্বপ্ন দেখা উপজাতি সন্ত্রাসীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব অস্ত্র, গুলি জমা করা হচ্ছে কি না তা নিয়েও ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন দেশবাসীকে।
গত ২৪ অক্টোবর কাফরুলের একটি বাসা থেকে ৫শ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয় পুলিশ সদস্য প্রেম চাকমা ও জেনাল চাকমাকে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অভিযান চালানো হয়। এ সময় এসআই জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদে নিজ হেফাজতে অবৈধ অস্ত্র রাখার কথা স্বীকার করে। পরে সে আইজিপি রিজার্ভ অফিসের উত্তর পশ্চিম কর্নারে থাকা একটি কাঠের আলমারি থেকে অস্ত্র ও গুলি বের করে দেয়।
জড়িত পুলিশ সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এসব অস্ত্র তারা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছিলো। আর গত চার বছর ধরে তারা এভাবে হাজার হাজার গুলি, অস্ত্র বিক্রি করেছে। অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা এটি বিক্রি করলেও উপজাতি পুলিশ সদস্যরা তা কাজে লাগিয়ে নিজেদের সন্ত্রাসী সংগঠনের কাছে পৌঁছে দিতো।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও বলেছে, এক রাউন্ড গুলি তারা এক হাজার টাকায় বিক্রি করতে। পুলিশের ফায়ারিং প্রশিক্ষণের সময় কিছু সদস্য এসব গুলি ব্যবহার না করে নিজ হেফাজতে রাখতেন।
পরে তারা ওই গুলিগুলো বিক্রি করতেন। এছাড়া অস্ত্রাগার থেকেও গুলি চুরি করা হতো বলে তারা জানায়।
৫০০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার হওয়া দুই উপজাতি পুলিশও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, গুলিগুলো বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি জেলার জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র ক্যাডারদের কাছে সরবরাহ করার জন্য হেফাজতে রেখেছিলো।
অপরদিকে পুলিশের কাছ থেকে শুধু পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করেনি। তাদের পাশপাশি দেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড এবং রাজধানীর সন্ত্রাসীরাও অস্ত্র ও গুলি কিনেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পরেছে, গ্রেপ্তারকৃত ৫ পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে কয়েকটি ধাপে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করেছে। এছাড়া আন্ডারওয়ার্ল্ডের এসব দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন করে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছেও দিয়েছে কতিপয় পুলিশ সদস্য।
অর্থাৎ খোদ পুলিশ বাহিনীতে সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যরা ঢুকে পড়ছে। পুলিশে চাকরি নিয়ে তারা অপরাধমূলক কর্মকা- করছে। রাজনৈতিক নেতাদের তদবির ও বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঘাপটি মেরে থাকা দাগি অপরাধীরা পুলিশে ঢুকে এ বাহিনীকে আরও কলুষিত করছে।
পাহাড়ি বিদ্রোহী গ্রুপের প্রশিক্ষিত সদস্য ও চরমপন্থী থেকে শুরু করে-দলীয় ক্যাডার, প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজিতে অভিযুক্তরা এখন পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করছে। অনেকে রাজনৈতিক আশীর্বাদে দ্রুত পদোন্নতিও পাচ্ছে। পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে সরকারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা! বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড এমনিতেই ভেঙে পড়ছে। ক্রমাগতভাবে পুলিশের প্রতি মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্যরা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটের মতো ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তির পর পাহাড়িরা অস্ত্র ছেড়ে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়। বর্তমানে প্রায় ৬০০ পাহাড়ি পুলিশ বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করছে। তারা পুলিশে চাকরি নিয়ে আসলে কী করছে তা কারও নজরে আসেনি। বিশেষ কোটায় চাকরি নিয়ে অনেকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অথচ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি নেয়ার পরও এদের অনেকের সঙ্গেই পাহাড়ি বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ ছিল।
তারা ওই সংগঠন থেকেও নিয়মিত ভাতা নিত।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীটির পুরো শৃঙ্খলা ভেঙে তছনছ হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই যদি অস্ত্র বা গুলি বেচাকেনায় নিয়োজিত থাকেন, তা হলে তারা অপরাধ দমন করবেন কীভাবে? বিষয়টি হালকা করে দেখা উচিত নয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।