"সত্য যখন আসে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়। মিথ্যা বিলুপ্ত হবারই জন্য" ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের মানবতাবোধ !!!
আসন্ন “ঈদ ঊল আযহা” তে বিশ্বজুড়ে মুসলিম যার যার সামর্থের মধ্যে থেকে প্রিয় পশুটিকে কিনে লালন-পালন করে শুধু মাত্র এক আল্লাহের সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করবেন, তার গোশত নিজেরা খাবেন, চেনা-অচেনা মানুষ, আত্মীয় স্বজন, মিসকিন ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ভাগাভাগি করে সম্পুর্নভাবে এই ঈদ করবেন ইন-শা-আল্লাহ্।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ইদানীং একদল “মানপশুবতাবাদী” (এরা কখনও মানবতাবাদী এবং কখনও পশু প্রেমী। এক কোথায় সুবিধাবাদী।
তাই নামটা আমি নিজে তৈরী করে দিলাম) লোক দেখা যাবে, আচরণগত দিক দিয়ে তারা অনেকটা পশুদের নকল করলেও(কোন কোন ক্ষেত্রে, কারন পশুরাও অনেক কৃতজ্ঞ তাদের থেকে), তারা আসলে মানুষ, সেহেতু ভয় পাবার কিছু নেই।
এদের কিভাবে চিনবেন তাইত?
বেশী কষ্ট করতে হবেনা, সোস্যাল নেটওয়াওর্ক/ব্লগে দেখা যাবে কালা আর কালা (জলিল সাহেবের ভাষায় “ইউ পম ঘানা”), কিন্তু রাস্তাঘাটে বিকেল বেলা বুঝতে পারবেননা, যে তারা কারা (কারন সব গোশত খাবার জন্য বন্ধু-বান্দব/আত্মীয়-স্বজন এর বাসায় যাবে)।
সেহেতু সকাল সকাল চিনে রাখতে পারলে বিনা পয়সায় অতি মুল্যবান সম্পদ দেখতে পারবেন। তা হইল ডারউইন সাহেবের পোলাপান :পি (পশম পরে গিয়ে তাদের চেহারা মানুষের মত হয়েছে এটাই তাদের বিশ্বাস :পি)।
এই একদিনে এই মানবপ্রেমি(কথিত) দের ভীষণভাবে পশুপ্রেম চলে আসে, আর তার প্রথম ও প্রধান কারন মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে হবে( আর মুসলিমদের দের আঘাত হানা সাম্প্রদায়িক না তাদের ভাষায়)।
...তাই এইদিনে মানবতা আউট এবং পশুপ্রেম ইন(যদিও তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত যা দেখবেন, তার সব কিছুর মাঝেই পশুদের চিহ্ন বিদ্যমান(কি করবে নগ্ন-তো আর থাকা যায়না, পারলে হয়ত ওভাবেই থাকত। )
তারা ভুলে যায় আল্লাহ্ এভাবেই তার সৃষ্টিকে তৈরি করেছেন, এক একটি বস্তুকে অন্য আরেকটির উপর প্রধান্য দিয়েছেন, একজন কে অন্য একজনের উপর নির্ভরশীল করেছেন। নাহলে কেউই বাচতে পারবেনা। গাছ কেটে যখন বড়বড় দালানকরা হয়, তখন ভুলে যায় যে গাছেরও প্রান আছে, বরং তাদের হত্যা করাতো আরো অন্যায় বলতে হয়, কারন ১. তাদের দুটি ইন্দ্রিও কম, আর ২. আমাদের বাঁচার সবথেকে গুরুত্বপূর্ন জিনিস ‘অক্সিজেন’ তাদের মাঝ থেকে আসে (আলহামদুলিল্লাহ্), ঐতিহ্য বলে টনকে টন মাছ যখন ভেজে ফেলে, তখন ভুলে যায় মাছের প্রান আছে, KFC/BFC তে বসার জায়গা থাকেনা !!(কিজানি বাপু, কবে জানি বলে মুরগী ... এর বিবর্তন), একটা ওষুধ গিলে যখন কোটি কোটি ব্যক্টেরিয়া মেরে ফেলেন, তখন এই “মানপশুবতাবাদী” রা ভুলে যায় ব্যক্টেরিয়ার জীবনের কথা। এমন করে সব ক্ষেত্রেই, যা বলে শেষ করা যাবেনা !!!
বাঘ যখন হরিণের বাচ্চাটাকে খপ করে ধরে নিল, মুখে তুলে তার বাচ্চাদের জন্য নিল, আপনি এখন কাকে বাচাবেন ? তার মানে, “বাঁচার তাগিতে প্রয়োজন”।
আল্লাহ্ ঐ প্রয়োজন পর্যন্ত আমাদের অধিকার দিয়েছেন, এর বাইরে বিনা প্রয়োজনের হত্যাকে অবৈধ করেছেন, আর তার(আল্লাহ্ তায়ালার) নির্দেশ গুলো আমাদের জ্ঞানের বাইরে গিয়ে, তার(আল্লাহ্ তায়ালার) বানানো এই প্রকৃতির ভারসম্য টিকিয়ে রাখে (সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার)।
তিনি তার বান্দাদের পরিক্ষার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং উপহার আর শাস্তি স্বরূপ তৈরি করেছেন জান্নাত এবং জাহান্নাম। আর দুনিয়াতে আমাদের স্বাধীন করে, তার প্রেরিত রাসুলদের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সর্ব শেষে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর উপর সারা বিশ্ব মানবতার জন্য পরিপূর্ণ জীবন বিধান আল-কোরআন নাযীল করেছেন। আর দুনিয়ার পরিক্ষাতেও রেখেছে তার বান্দার জন্য কল্যান। এর মধ্যে একটি হল শুধুমাত্র আল্লাহ্ এর সন্তুষ্টির ইচ্ছায় কোরবানি করা।
আল্লাহ্ এর এই নির্দেশ পালনে সততা যেভাবে পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে, পুরষ্কার হিসেবে জান্নাত প্রদান করবে, ঠিক একইভাবে দুনিয়াতে মানবতা এবং ভারসম্য রেখে যাবে। আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহ মানুষের নিয়তকে কবুল করবেন ইন-শা-আল্লাহ্, আর বাকি অংশ আমাদের উপকারে দান করবেন।
“এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
” (২২:৩৩)
কিভাবে একদিনে এত পশু কোরবানি করাতে ভারসম্য হল ? তাইত ...
কোন মুসলিম কোরবানি করে আল্লাহের জন্য পশুটিকে রাস্তায় ফেলে দেয়না, কারন আগেই বলেছি ‘আল্লাহ্ তার বান্দার নিয়তকে কবুল করে বাকি অংশ বান্দার জন্যই দিয়ে দেন।
যে দিনে মানুষ একটি চকলেট পর্যন্ত কারন ছাড়া কাউকে কিনে দিতে চায়না, সে যুগে একজন মুসলিম নিজের উপার্জনে কেনা এই পশুর তিনটি ভাগ করে, দুটি ভাগই পরিচিত বা অপরিচিতদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। যে চামড়া বিক্রি করতে পারেন ১৮০০/২৫০০ টাকায়, বিনে পয়সায় এতিমদের দান করে দেন (কেউ বিক্রি করে ভাগ করে করে দান করেদেন) !!! মানবতার কাজটি কারা করল, জ্ঞান থাকলে বুঝা উচিত।
আমাদের এখানের যে বড় বাজারটি, তাতে প্রায় আসে পাশের প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার থেকে লোক যাতায়াত করে(এই ১০/১৫ কিঃমিঃ এর বাকি বাজার এর কথা আর নাই উল্লেখ করলাম)। ...প্রতিদিন এখানে প্রায় ৪৫/৫০টি গরু জবাই হয় চাহিদা মিটানোর জন্য।
আর খাসি ৮০/৯০টি প্রায়। একজন কসাই যার গরু কেনার সামর্থ নেই, সে নাকি শুধু পায়ের নলি বিক্রি করে ভালোভাবে সংসার চালিয়ে ফেলে আলহামদুলিল্লাহ্। মুরগির কথা সংখ্যায় লিখলাম না (তাদেরতো স্তরে স্তরে খাওয়া হয় "ডিম/ছোট অবস্থায়/ পুর্ন বয়সে), কারন আমার হাতে সাইন্টিফিক ক্যালকুলেটর নাই !!! আর এই কোরবানি ঈদ থেকে ৫দিন পর্যন্ত কোনো চার পায়া পশু কোরবানি হয়না। তার পরের এক মাস পশু জবাই এর সখ্যা ১/৮ এ নেমে আসে অন্যান্য চারপায়া প্রানী জবাই কমে আসে। তাহলে সংকট আসবেই কেন আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহু আকবার।
আর প্রত্যেক পরিবারে যারা কোরবানি করল তাদের নিম্ন ১/২ মাস জুড়ে আমিষ জাতিও পন্যের খরচও নেমে আসে। এটাই ভারসম্য, আল্লাহের রহমত।
অর্থনৈতীক প্রভাব কিভাবে ?
অর্থনীতি সম্বন্ধে যদি কিঞ্চিত জ্ঞান থাকে তাহলে সেই লোকটি ভালো করেই বুঝবে দুটি ঈদ কিভাবে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করে। আর এর মাঝে একটি ঈদে যাকাত প্রদান এবং আরেকটিতে কোরবানি। বছরে দুই বার এই মৌলাবদী নাম করে ডাকা মুসলিমরাই নিজ উপার্জন খুশী খুশী অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেয়।
আর সারা বছরের দান ছদকা !! তাতো বলার প্রয়োজন নেই আশা করি।
সারা বছরের সিংহভাগ চামড়া দ্রব্য জিনিসের সবথেকে বড় যোগান টাই এই কোরবানি ঈদ থেই আসে। তার সাথে বাজারে কোরবানি প্রয়োজনে অন্যান্য দ্রব্য (গাছের ফেলে দেয়া গুরি, পাটি, রশি, লৌহজাত দ্রব্য ইত্যদি আরো অনেক)। ...পশুর খুর এবং শিং পর্যন্ত ব্যাবসা হয়। এই যে পশু গুলো আনা হয় তার ১১.৫/১২ ভাগই আসে গ্রাম থেকে।
এমনও গ্রাম যাদের ফসল বিক্রি উপার্জন নেই, তাই তারা ঈদকে রেখেই পশু লালন পালন করে। (বিস্তারিত লিখলে লিখে শেষ করা যাবেনা)
এখন অই “মানপশুবতাবাদী” রা কেউ সব কিছুকেই রুখে দিতে চায়? না চায়না, শুধুমাত্র মুসলিমের কাজ বলে তার অবমাননা করতে চায়। তাদের কথায় কথায় এই অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠানে যে কি পরিমান অর্থ নষ্ট করে, তারা যখন যখন পুলিশ রেট দিয়ে ধরে নিয়ে আসে তখন দেখা যায়, আর তারাও ভালো বুঝে।
বর্তমানে একজন মুসলিম শুধু এক আল্লাহের নির্দেশ আধাআধি মেনেও যে পরিমান মানবতার কাজ করে, তা অই সব “মানপশুবতাবাদী” এর দল কিছুই করতে পারবেনা। তারা পারে নিজ বারি ছেরে ১০০০ কিঃমিঃ দূরে গিয়ে কিছু নগ্ন প্রায় বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ছবি তুলে আনতে আর সোশ্যাল নেটয়ার্কে এ্যালবাম বানাতে।
অথচ নিজ আশেপাশে যারা রাস্তায় ঘুমায় তাদের দিকে তাকায়ও না। আর একজন তাকে যাকাত প্রদান করে বলে/ ছদকা করে বলে / আল্লাহ্ সন্তুষ্টির আশায় কোরবানি করে তা বিতরন করে বলে, তাকে ধর্মান্ধ বলে !!! এই তাদের মানবতা !!!
আর বেশী কিছু লিখতে ভালো লাগেনা। সময়ের একটা মুল্যতো আছে।
শুধুমাত্র এইটুকু বলি, একজন মুসলিম যদি উগ্রবাদী হত, তাহলে বার বার আঘাত দেবার পর তারা বেঁচে থাকতে পারতনা।
আল্লাহ্ সুবহানআল্লাহ আমাদের সঠিক পথ দান করুক এবং অন্যায়কারীদের উপর পুনরায় বিজয় দান করুক - আমীন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।