আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আস্তিক, নাস্তিক ও ধর্মান্ধ

প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্য তিনগুণ বেশি

(১) আদদীন আরবী শব্দ, বাংলায় এর অর্থ করা হয় ধর্ম। একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম, নীতি প্রণয়ন করার পর এই নির্দিষ্ট নিয়মের উপর রুল্‌স মেনে চলাই সংগঠন কিংবা সংস্থার ধর্ম। এই নীতিতে আস্তিক কিংবা নাস্তিকের কোন বিভাজন আপাতত নেই। একজন নাস্তিক অবশ্যই একটি রুল্‌স মেনে চলেন- যাতে অবিশ্বাস, অস্তিত্ব মাইনাসের ধর্ম পরিলক্ষিত। তিনি একটি দৃশ্যমান যৌক্তিক সরল পথের অনুসরণ করেন যাতে আস্তিকের বিশ্বাস ভিত্তিক কর্মকান্ড একেবারেই উপেক্ষিত, এই অর্থে আমরা একজন নাস্তিককে ও ধার্মিক বলতে পারি।

কিন্তু প্রচলিত অর্থে ধার্মিক (আস্তিক) বলতে যিনি আল্লাহ বা ইশ্বর আছেন বলে দৃড় বিশ্বাস করেন। আর অধার্মিক (নাস্তিক) যিনি আল্লাহ নাই বলেই বিশ্বাস করেন। এখানে আরেকটা বিষয় ষ্পষ্ট করা প্রয়োজন সে সমস্ত ধর্মের ভিত্তিমূলে একজন ব্যক্তি থাকেন সাথে সাথে তিনি দাবি করেন যে আমি আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্বাচিত বা মনোনীত ব্যক্তি। তার দাবির পক্ষে তিনি প্রমান হিসাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত কিতাব বা জীবন বিধান মানুষের সম্মুখে উপস্থাপন করেন। এহাই প্রকৃত ধর্ম।

বাকী যে ধর্মগুলিতে এধরনের দাবি দাওয়া বা প্রমাণ লক্ষ করা যায় না তাকে আমরা মতবাদ বলে থাকি। (২) ধর্মের সুত্র: একজন বিশ্বাসীর দৃষ্টিতে পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ । এই আদি মানবের সৃষ্টি কোন মানুষের বীর্যের সংমিশ্রণে সংগঠিত হয়নি। বরং সৃষ্টিকর্তা প্রথমে তাকে মৌলিক উপাদান মাটিসহ আরো বিভিন্ন উপাদান দিয়ে একটি মানব মুর্তি তৈরী করেছেন। অতপর এই মৃত্তিকাকে প্রাণ দিয়েছেন।

এই প্রাণকে বিশ্বাসীরা (মুসলিমরা) আল্লাহর একটি আদেশ -ই মনে করেন, যা প্রাণ সম্পর্কে মক্কার অবিশ্বাসীদের প্রশ্নের উত্তরে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আদি মানব হযরত আদম (আ এর সাথে তার সৃষ্টিকর্তার সাথে সাক্ষাত, কথোপকথন, স্বর্গে অবস্থানই আল্লাহর অস্তিত্ত্ব প্রমানের ব্যপারে বিশ্বাসীদের (ধর্মের) প্রথম উৎস অতপর এই পৃথিবীতে মানুষকে সৃস্টিকর্তার মর্জিমত পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায় এর নিকট মানুষ থেকেই যাকে ইচ্ছা সৃস্টিকর্তা একজন ব্যক্তিকে ফিরিস্তার মাধ্যমে নবী রাসুল (দূত) নির্বাচন করে এই মাটির তৈরী মানুষকে তার পথের চলার বিভিন্ন নিয়ম নীতি দিয়েছেন। যাকে সহীফা বা কিতাব বলা হয়। একই সাথে একটি চরম, চরম অধপতিত সমাজের মধ্য থেকে যিনি নিজেকে চলমান যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত রাখতে সক্ষম এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নির্বাচিত হওয়ার বড় প্রমাণ। বিশ্বাসিগণ আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ স্বরুপ উপরিউক্ত বিষয়টি উল্লেখ করেছেন এবং এই দুটি বিষয় ধর্মের প্রধান উৎস।

অধিকুন্ত কোন কোন আস্তিক বলেন যে যেহেতু আল্লাহ অবিনশ্বর, অসিম, চীরঞ্জীব, তাই তার অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য কোন দলিলের প্রয়োজন নেই। কারণ দলিলের উপর ভিত্তি করে যা প্রমাণিত হয় তার একটা নির্ভরতা থেকে যায় দলিলের উপর । যত দিন এই দলিল থাকবে ততদিন এটা প্রমাণিত কিংবা যার কাছে এই প্রমাণাদি আছে তার কাছে ইহা প্রামাণিত হলেও যার কাছে তা নেই তার কাছে তা প্রমাণিত নয়। অথচ অবিনশ্বর একটি সত্বা এগুলো থেকে চিরমুক্ত। (৩) নাস্তিকরা আল্লাহর অনস্তিত্বের ব্যাপারে কোন দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি তা একে বারে ঠিক নয়।

নাস্তিকদের স্বধর্মীয় বই পুস্তকে যুক্তি খোজা হয়েছে। যেহেতু আল্লাহ দৃশ্যমান নয় সুতরাং তার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য দৃশ্যতার প্রয়োজন। আমরা এই ব্লগেই বহুবার দেখেছি একজন জাদরেল নাস্তিককে একজন আস্তিক আল্লাহ নেই এ কথা প্রমাণ করার জন্য আহবান করেছেন। কিন্তু দু:খজনকভাবে সত্য যে এর কোন যুক্তিক প্রমাণ না দিয়ে উল্টো আস্তিককে প্রমাণ করার জন্য প্রশ্ন করেছেন। এ ক্ষেত্রে জানা প্রয়োজন- একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যকে প্রমাণ করার জন্য যতটুকু দলিলের প্রয়োজন তার থেকে বেশী প্রয়োজন এই প্রতিষ্ঠিত সত্যেক মিথ্যা বলে প্রমাণ করার দলীল।

৪। একটি উদাহরণকে লক্ষ করে একটি থিউরীর জন্ম। বোধগম্যদের জন্য উদাহরণ একেবারে বেমানান। এরপর ও আমরা একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পস্ট করতে চাই। ভূমি সংক্রান্ত মামলায় আমরা দেখেছি আদালত লক্ষ করে জামিনটির বর্তমান মালিক কে? এটি একটি বড় বিবেচনা।

এই বিবেচনার আলোকে বিবাদীর পক্ষে শক্ত কোন দলীল উপস্থাপন করা সম্ভব না হলে আদালত ভূমিটি দখলসুত্রে বর্তমান মালিকের আওতায় রেখেই মামলার নিস্পত্তি করেন বা দীর্ঘায়িত করেন বিবাদীর দলীলের অপেক্ষায়। আস্তিকরা এক্ষেত্রে একধাপ এগিয়েই ধরা যায়। ৫। আরো একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। না দেখাই যদি সকল অবিশ্বাসের জন্মদাতা হন তাহলে জানতে চাই এই থিওরি কি শুধু ইশ্বরের বেলায় না সকল বাস্তবতাই এর প্রয়োগ স্থান।

যদি শুধু ইশ্বরের বেলায় হয় তাহলে সত্যান্বেষী কমরেডগণ সার্থান্বেষীর পাল্লায় পা দিয়েছেন। যদি সকল বিষয়েই এই থিওরীর প্রয়োগস্থান হয় তাহলে আমরা এবার বাস্তবতার দিকে একটু ফিরে যেতে চাই। আস্তিক বলেন বা নাস্তিকই বলেন এ পৃথীবিতে আমরা এমন অনেক বিষয় বিশ্বাস করি যা আমরা একান্তই দেখিনি বলেই প্রমাণিত। কিছু বিষয়কে বিশ্বাস করি নিদর্শনের ভিত্তিতে। যদি নিদর্শনের ভিত্তিতে কিছু প্রমাণ করা না যেত তাহলে আদালতে কোন বিচার্যকার্য সম্পাদন করা সম্ভব হতনা।

আবার এমনো অনেক বিষয় আছে যা আমরা বিশ্বাস করি জন্মান্তর বিশ্বস্ত্য ব্যক্তির মাধ্যমে। (এক কথায় লোকমূখে শুনে) এই লোকমূখে শুনা বিশ্বাসটার মর্যাদা আমরা এমনভাবেই দেই, যদি কেও কখনো এই বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাহলে আমরা প্রচন্ড জর্জরীত হই। একজন আস্তিক কিংবা নাস্তিক যাকে পিতা বলে ডাকেন/জানেন চোখে দেখার প্রশ্নে অথবা কাগজে কলমে এর কোন প্রমাণ আছে বললে একেবারে বোকামী হবে। জন্মের পর মায়ের মুখে শুনে, মায়ের পাশে দেখে, লোকমুখে শুনতে শুনতে ইহা এখন এমন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যার বিশ্বাস প্রশ্নের উর্ধ্বে। ইশ্বরের অস্তিত্বের বিষয়টি আস্তিকরা এভাবেই কুরআন বর্ণিত নিদর্শন ও হাজার বছর ধরে লোকমুখে শুনে বিশ্বাসের সর্বোচ্চ মর্যাদায় স্থান দিয়েছেন যা মিমাংসিত সত্য, প্রশ্নের উর্ধ্বে।

৬। কমরেড আরো বলেছেন মানুষ নিজেই এই (ইশ্বরের অস্তিত্ব) বিশ্বাসের জন্ম দাতা। কিন্তু কবে, কখন, কোথায়, কেন মানুষ বেদনাবিধুর এই বিশ্বাসের প্রসব করেছেন তার কোন যৌক্তিক প্রমাণ আমরা পাইনি। সম্ভব ও নয় কারণ হাজার বছর আগের মানুষের ধারনার যে প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করবেন তা তার নিজ চক্ষুদয়ের দেখা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তাদের মতে ধর্মের প্রসবদাতা যদি জানতেন ধর্ম নামের এই বর্ণটি প্রশ্নের আঘাতে এত জর্জরীত হবে ? তাহলে অবৈধ সন্তানের মত জন্মান্তর গলাটিপে হত্য বা পিল খেয়ে এর জন্ম রোধ করা হতো কিন্তু নাস্তিকের সুভাগ্য তা করা হয়নি।

যাতে সময় কাটানোর একটা বিষয় অন্তত পাওয়া গেল। মনে রাখতে হবে এখন থেকে আমরা নাস্তিকদের সাথে ইশ্বর আছে কি নাই এই বিষয়ে তর্ক বিতর্ক করব না। আমাদের এখন নতুন বিষয় হবে আস্তিক এবং নাস্তিকের তর্ক বিতর্ক যেখান থেকে শুরু ঠিক সেখানে। তারা আমাদেরকে তাদের অনেক আপন মনে করে এমনকি ভাই পর্যায়েও হতে পারে, এবং আমরাও মনে করি তাই তাদেরকে অবিশ্বাসী থেকে বিশ্বাসী করতে চাই। ভাই মনে করে তাই তারা আমাদের সকল বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দিয়ে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে চায়।

আমার প্রশ্ন হল ঠিক কতটুকু পর্যন্ত পৌঁছালে আমি উন্নত হলাম এর সার্টিফিকেট পাব, এবং এর মাপকাঠি কি? । বিশ্বাস আমাকে এমন কোন কাজ করতে বাঁধা প্রদান করে যার কারেণ আমি হাজার চেষ্টা করেও উন্নতি করতে পারি না। অথচ এক সময় এই বিশ্বাস নিয়েই আমি উন্নত চিলাম।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.