লিবিয়ায স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এক যুবকের পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার প্রতিবাদে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ১১টি বৌদ্ধমন্দির ও ১৫টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। ভাংচুর করা হয়েছে আরও দুটি বৌদ্ধমন্দির এবং শতাধিক বসতঘর। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি গণহত্যার শিকার। এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির মানবাধিকার লংঘিত হছে দীর্ঘ দিন ধরে।
শুধু তাই নয়, প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে যখন সাময়িক আশ্রয় চেয়েছে, সেই মানবিক আবেদনও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাদের একমাত্র অপরাধ তারা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা আদিবাসী নয়। এখন তাদের ইসলামি জঙ্গি প্রমাণ করে এবং বৌদ্ধদের বাড়িঘর জ্বালানোর প্রধান হোতা হিসাবে অভিযুক্ত করে মায়ানমারে তাদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও হত্যার ছুতা তুলে দেওয়া হল। কসাইয়ের হাতে গরু জবাই করবার ছুরি তুলে দেবার মতো। একই সঙ্গে প্রমাণ করা হল ইসলাম মূলত বর্বরদের ধর্ম, মুসলমানমাত্রই সা¤প্রদায়িক।
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমন করেছে সব সময় প্রভাবশালী লোকেরা। আর এই প্রভাবশালী লোকেরা বিএনপি আওয়ামী লীগ উভয় দলেই আছে।
গতকয়েকদিন ধরেই প্রায় সকল ধরণের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রোনিক্স গণমাধ্যম এবং কমিউনিটি’তে আলোচিত হচ্ছে ‘কক্সবাজারের রামু ট্র্যাজেডির কথা। সে সাথে এই ট্রাজেডির ঢেউ লাগে পুরো জেলায়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তৌহিদি জনতা।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত ভাবে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনাও ঘটে। ট্র্যাজেডি শব্দটির সাথে হয়তো অনেকেই একমত হবেন না। তবুও সামগ্রিক অর্থে ট্রাজেডি শব্দটা ব্যবহার করলাম। কারণ একটি ঘটনার পেছনে অনেক ঘটনার জন্ম হয়েছে। ঘটেছে অমানবিকতার মতো অনেক কাজ।
তাই এ মুহুর্তে আর সংঘাত নয়। সব নাগরিকের জন্য চাই সহমর্মিতা।
কক্সবাজারের রামুতে একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি পবিত্র কোনআনকে অবমাননা করেছে। এনিয়ে শুরু হয় হুলস্থুল। সর্বপ্রথম এ নিয়ে রামুতেই বিক্ষোভ মিছিল চলে।
এসময় অপর একটি দল গাম পাউডার সহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ দিয়ে শুরু করেন তান্ডবলিলা। জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয় বৌদ্ধদের মন্দির, বসত বাড়ী, দোকানপাট সহ বিভিন্ন স্থাপনা। এর নেপথ্যে বরাবরই অভিযোগ উঠে এসেছে স্থানীয় সাংসদের ইন্দনের কথা। এটা উড়িয়ে দেয়ার অবকাশ নেই। রাজনীতির জন্য মানুষ এর চেয়ে আরো ঘৃণ্যতম কাজ করতে পারে তা কোন বিবেকমান মানুষের অজানা নয়।
একদিকে, এক ঘটনার প্রতিবাদে রামু চৌমুহী চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল চলে। অপর দিকে মোটর সাইকেলারোহীরা শুরু করে ধবংসযজ্ঞ। আস্তে আস্তে এর পরিধি বিস্মৃতি লাভ করে। ঘটনাটি যে আসলেই পরিকল্পিত ছিল এটাই তার অন্যতম প্রমাণ বৈকি।
আমরা সাধারণত দেখতে পাই যেকোন বাদ-বিবাদেই প্রধাণত দুইটি পক্ষ থাকে।
রামু ঘটনায়ও তাই। রামুর অধিবাসী ‘উত্তম বড়–য়ারা’র ফেসবুক আইডি তে পবিত্র আল কোর আনকে অবমাননামূলক কিছু ফটো ট্যাগ করা হয়। ঐ পেজটার নাম ছিল ‘ইনসাল্ট আল্লাহ্’ (যতদূর জানা যায়)। এ খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর অনেকেই এটার সাথে তার ( উত্তম বড়ুয়ার ) সরাসরি যোগসাজশ আছে মনে করে হামলা চালান বড়ুয়াপল্লীতে এবং ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ সহ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন বিক্ষুদ্ধ জনতা।
রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ধবংসের কাজ। ভাংচুর করা হয়।
সকাল হতেই মূলতঃ এ খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো জেলা সহ পাশ্ববর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতেও। রোববার রামুতে সংগঠিত ঘটনায় কেই হতাহত না হলেও উখিয়ার কোট বাজার, টেকনাফের হোয়াক্যং এ পুলিশ জনতা সংঘর্ষে ২০ জন অহত হয়। সেখানেও বড়ুয়া পল্লীতে হামলা ও মন্দির ভাংচুর করা হয়।
এখানে একটি উগ্রবাদি গোষ্টির ইন্দন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনার পর র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা টহল জোরদার বৌদ্ধ মন্দিরে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা। এসময় বৌদ্ধ মন্দিরে উপসনার কাজে দায়িত্বরত ভিক্ষুরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার জন্য একশ্রেণীর উগ্রধর্মান্ধ গোষ্টিকে দায়ী করেছেন। পাশাপাশি ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে জানান অনেকে।
সা¤প্রতিক সময়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠা জামায়াতে আরকান, হিজবুত তাহরি,জামায়াত ইসলাম সহ একাধিক ধর্মীয় উগ্রবাদি জঙ্গি সংগঠন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পরিকল্পিত ভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছেন এল অভিযোগ করেন অনেকে। পুরো জেলার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্টান ও বসত বাড়ীতে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সর্তক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এর পরেও কি বৌদ্ধধর্মাম্বলম্বীরা আতংকে রয়েছে। মন্ত্রীরা ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা রামুর ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। ঘটনায় জড়িতদের তদন্ত পূর্বক আইনের আওতায় আনার নির্দেশও দিয়েছেন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর।
তাই আর সংঘাত নয়, নয় হিংসা বিদ্বেষ আর হানাহানি। আতংকে কাটতে না হোক কোন মানুষকে। কক্সবাজার জেলার নাগরিক হিসেবে এটা সবার অধিকার।
প্রেক্ষাপটে অবশ্য রামুর ঘটনার পর থেকেই দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভার্চুয়াল মিডিয়াতেও দ্বিপাক্ষিক সংঘর্ষ বা রেশারেশি দেখা যাচ্ছে। একপক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করছেন।
আবার অনেকে তা প্রত্যাক্ষান করছেন। এটা ঠিক যে সবার কথাতেই যুক্তি আছে। একদল বলছেন, এটা মুসলিমদের চিরায়ত স্বভাব। আবার অনেকে বলছেন এটা একটা অত্যন্ত গর্হিত ও অমানবিক কাজ। কিন্তু, এ ব্যাপারে কি আমরা নিশ্চিত যে ঐ ধরনের নেক্কারজনক কাজে উত্তম বড়–য়ার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিলনা।
অথবা ট্যাগ করা ছবিতে তার কোন অশ্লীল কমেন্ট থাকতেও পারে । আবার, অনেকেই বলছেন যে এটা ছিল মুসলমানদের চাপে ফেলাতে একটা উষ্কানিমূলক ষড়যন্ত্র। হয়তো মহলটি সফলতাও পেয়েছে। এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যায় কি? ।
তাই সবার একটাই কামনা সব ধর্মাম্বলম্বীদের মাঝে যেন সহমর্মিত বোধ জাগ্রত হয়। সবাই যেন ধৈর্য্য ধারন করে। উত্তেজিত কিংবা উষ্কানী দিয়ে অন্যের ক্ষতি কিংবা অন্যকে অন্যায় করা ভাল না। নিশ্চয় আল্লাহ অন্যায়কারীকে পছন্দ করেন না।
সর্বোপরি, আমাদের উচিৎ সহমর্মি হওয়া।
সংঘাত নয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট পুরুষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) মক্কা বিজয়ের পর কোন ইহুদীর ঘর পুড়িয়েছিলেন কি? তিনি তা করেননি। কারন এতে করে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি ফিরে আসবে না বরং লংঘিত হবে মানবাধিকার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।