আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
রামু কান্ডের কথা কারোই ভোলার কথা না। কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধপল্লীতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক ঘটনার অন্যতম হোতা কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কুরআন অবমাননা করে ফেসবুকে ছবি প্রকাশকে কেন্দ্র করে সেখানকার বৌদ্ধমন্দির ও বসতিতে যে হামলা হয় তার মূল অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ গতকাল বুধবার ভোরে চট্টগ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, উত্তম বড়–য়ার ফেসবুকের ওয়ালে পবিত্র কুরআন অবমাননার যে ছবিটি যুক্ত (ট্যাগ) করা হয়েছিল, তা মুক্তাদির করেছিলেন।
মুক্তাদির ছাত্রশিবিরে ক্যাডার। তিনি ফেসবুকে থাকা অবমাননাকর ছবি নামিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখিয়েছিলেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জানান, গ্রেপ্তার হওয়া মোঃ আব্দুল মুক্তাদির আরিফ (১৮) রামুর শ্রীকূল গ্রামের শাহাবউদ্দিনের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামের শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার ডিপ্লোমা বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র বলে এএসপি বাবুল জানান।
এএসপি বাবুল আক্তার আরো জানান, ঘটনার দিন বিকালে আরিফ রামু বাজারে একটি মোবাইল ফোনের দোকানে বসে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তম বড়–য়ার প্রোফাইলে যায় এবং সেইসব ‘অবমাননাকর’ ছবি স্থানীয় লোকজনকে দেখায় ও ডাউনলোড করে।
পরে রাতে এর প্রতিবাদ জানিয়ে রামু বাজারে সমাবেশ করে পাঁচ শতাধিক লোক। সেই সমাবেশ থেকেই মিছিল নিয়ে বৌদ্ধ বসতিতে হামলা চালানো হয়।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার সেলিম মোঃ জাহাঙ্গীর এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ’ বৌদ্ধমন্দিরে হামলার পর থেকে ১৬ মামলায় এ পর্যন্ত ২১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফেসবুকের উত্তম বড়ুয়ার ছবির জের ধরে গত ২৯ সেপ্টেম্বরে রাতে রামু এবং ৩০ সেপ্টেম্বর দুুপুরে উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কয়েকটি বিহারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় উগ্রপন্থীরা।
ওই ছবি ট্যাগ করেছিলেন মুক্তাদির।
উত্তম বড়ুয়া নামে রামুর এক যুবকের ফেসবুকে ওয়ালে পবিত্র কুরআনানের অবমাননাকর ছবি থাকার অভিযোগ তুলে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধমন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। রাতভর হামলায় কয়েকটি বৌদ্ধমন্দির, অন্তত ৩০টি বাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়। হামলা, ভাঙ্চুর ও লুটপাট
চালানো হয় শতাধিক বাড়ি ও দোকানে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার পর ‘ফারুক কম্পিউটার টেলিকম’ নামে ওই দোকানের মালিক ফারুককে আটক করা হয়।
কিন্তু মুক্তাদির পালিয়ে ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতার বলেন, মুক্তাদিরকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সে ঘটনায় জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকারও করেছে।
অবশ্য কম্পিউটারের দোকানের মালিক ফারুক এর আগে ভোরের কাগজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি কাউকে চেনেন না। দুজন অজ্ঞাত লোক এসে তাকে জেরা করেছিলেন, এই ছবি তার কম্পিউটারে কে ট্যাগ (যুক্ত) করেছিলো।
ফারুক ওই যুবকদের জানিয়েছিলেন, তিনি জানেন না। ফারুক ভোরের কাগজকে আরো বলেন, ওই ছবিগুলো দেখার পর তিনি উত্তেজনায় কাঁপতে থাকেন। তার হাত-পা কাঁপতে থাকে। এসময় তার কথাবার্তা অসংলগ্নও মনে হয়।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় বৌদ্ধধর্মাবলম্বী যুবক উত্তম কুমার বড়–য়ার ফেসবুক প্রোাফাইলে কুরআন অবমাননার ছবি ট্যাগ করাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা আর উস্কানির জের ধরে স্থানীয় বৌদ্ধমন্দির, বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগসহ অবর্ণনীয় তা-ব চালানো হয়।
সুত্র: ভোরের কাগজ : ১১/১০/২০১২ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।