সন্ধ্যার আঁধারে আমি যদি হারিয়ে যাই বন্ধু, আমাকে মনে রেখো তোমার ঘরের ধূপ-আগরের সুবাসে- তোমার ঘরের প্রদীপের আলোয়, আমাকে ফেলে দিও না বাসি ফুলের মত। মনের ঘরেই রেখো বন্ধু পথের ধারের ফুলটি ভেবে। আমি যে জলসাঘরে ...www.jolsaghor.com
দুর্গটি খালি পড়ে আছে। সেই যে শেষ মশালটি জ্বলেছিল এক বিষাদমুখর ঝড়ো সন্ধ্যায়। তারপর নিভে গিয়েছিল।
তারপর থেকে কেউ এপথে আসেনি। পদপৃষ্ঠে পথ হয়ে যাওয়া পথের বুকের ঘাসেরা মাথা তুলছে। মাস কয়েক যেতে না যেতেই লতা-গুল্মরা বাড়তে লাগল। অজস্র বাঁদুড় এসে বসবাস শুরু করল। শেয়ালেরা রাতে ঘুরতে এল।
তারপর থেকে গেল নিজের ঘর ভেবে। চুড়ুই ঘর বাঁধলো। শালিক ঘর বাঁধলো। কোথা থেকে এসে জানি কিছু বটের চারা বেড়ে উঠতে লাগলো এখানে ওখানে। শতাব্দীর নির্জনতা সাথে নিয়ে অশরীরি হয়ে উঠলো পরিবেশ।
রাত হলে ঝিঁঝিঁ পোকারা বিকট কীর্তন শুরু করে। তাদের সাথে সুর মিলিয়ে পেঁচা ডাকে। শেয়াল ডাকে। নেকড়ের মত কি জানি দীর্ঘ-গম্ভীর স্বরে 'হা-উউউ' ডাকে। কারা জানি মাঝে মাঝে দেখেছে- সিংহদ্বারে বাতি জ্বেলে সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে।
এই দেখলো, আবার এই নেই। কেউ কেউ ঘোড়ায় চড়ে আসা মহারাজেকে দেখেছে। এই ছিল, এই নেই। শেষ রাত্রিতে আলতো পায়ে হেঁটে যাওয়া শাহজাদীর মত কাউকে কেউ কেউ দেখেছে। সে পেছন ফিরে ঠমক-থমক ঢেউ জাগিয়ে চলছিল।
এক মুখ দুই মুখ করে- সেই কাহিনী পাশের জনবসতির পুরান হয়ে গেল। যারা দেখেছিল তারা বার্ধক্যের গীত শেষে মাটির ঘরে মাটিতে মিশল। কাহিনীগুলো এত জীবন্ত হয়ে উঠল যেন সবাই দেখেছে। ভুল করেও এই পথে কারও পা পড়লো না।
একদিন পূর্ণিমার শেষ রাত্রিতে সিংহদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে শুনলাম কেউ গাইছে-
লাজ আবতো মোর
পাও পড়তো তোরা
ঘুঙটা না খোলো জী
কাহে ছাতাও সাইয়াঁজী
দেখতো জীয়ারা মোরা
গির গির ঘাবড়তো
বাতিয়া না ভুজাও জী
কাহে ছাতাও সাইয়াঁজী
মোরা জী মোরা জী মোরা সাইয়াঁজী
কাহে ছাতাও সাইয়াঁজী
রাত কিভাবে কেটে গেল জানি না।
সুরেলা কন্ঠের সেই গীত শুনার পরে কি হয়েছিল জানি না। ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম বিছানায় শুয়ে আছি। চারপাশে শঙ্কিত জনকুল। খুঁজতে গিয়ে অজ্ঞান আমাকে খুঁজে পেয়েছিল কয়েকজন। তারা বললো, আমাকে প্রেত্নী ধরেছিল।
ভাগ্যের গুনে বেঁচে আছি। তাদের কেচ্ছাগুলো শুনলাম। বিশ্বাস হলো না- সুরবিহারী কেউ প্রাণ সংহারী হতে পারে। আমার কানে তখনও সেই সুর সেই কথা বাজতে লাগলো। আমি জানি, আমাকে আবার যেতে হবে।
বারবার যেতে হবে।
---------------x----------------
*গানের কথা ব্রজ ভাষা এবং তৎসংলগ্ন স্থানের কথ্য বুলিতে রচিত
বাংলা রূপান্তরঃ
লাজ আবতো মোর / লজ্জা লাগে আমার
পাও পড়তো তোরা / পায়ে পড়ি তোমার
ঘুঙটা না খোলো জী / ঘোমটা না খোল গো
কাহে ছাতাও সাইয়াঁজী / কেন জ্বালাও প্রীতম গো
দেখতো জীয়ারা মোরা / দেখ তো প্রাণ আমার
গির গির ঘাবড়তো / শিরশির ঘাবড়ে যায়
বাতিয়া না ভুজাও জী / বাতি না নেভাও গো
কাহে ছাতাও সাইয়াঁজী / কেন জ্বালাও প্রীতম গো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।