আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo প্রিয় পাঠক, নিম্নে বর্নিত গল্পটি একটি বাস্তব জীবনের ছায়া গল্প। গল্পটি কিছুদিন আগে ব্লগার একজন আরমান এর সাথে আড্ডাতে শেয়ার করি। গল্পের কাহিনী শুনে আরমান বললেন, এই কাহিনী দিয়ে একটা সুন্দর রম্য গল্প হয়ে যায়। এককাজ করি, আমি লিখে ফেলি, আপনিও লিখেন।
প্রথমে রাজি হইনি কিন্তু আরমানের হুমকির মুখে লিখে ফেললাম। একই প্লট নিয়ে দুইজন মানুষ ভিন্নভাবে একই গল্প লিখেছে, আশা করি খারাপ লাগবে না।
তবে শুরুতেই বলে নেয়া ভালো, গল্পের কোন অংশ যদি কিঞ্চিত লুলীয় মনে হয়, তাহলে সেটার দোষ কোন ভাবেই আমাদের উপর বর্তাবে না।
মূলগল্পঃ
এক ছিল বালক। একদা বালকের এক বান্ধবী বালককে ফোন করিয়া কহিল,'ওহে বালক, আমার এক বান্ধবীর কিছু অনুপ্রেরনা দরকার।
যত দূর জানি তুমি ভালোই অনুপ্রেরনা দিতে পারো। বেচারী ইদানিং বড়ই অনুপ্রেরনার অভাবে ভুগিতেছে '
বালক ভাবিল এ আর এমন ক্ষতি কি? আমার অনুপ্রেরনা পাইয়া কেহ অনুপ্রানিত হইবে মন্দ অনুভূতি নয়। বালক বান্ধবীকে কহিল, ঠিক আছে। তোমার বান্ধবীকে পাঠাইয়া দিও।
এরপর বালক বালিকার পরিচয় পর্ব।
যথারীতি তাহা ফেসবুকেই হইল। তারপর বালক বালিকার কত রকম কথা। বালকের চাইতে বালিকাই বেশি কথা বলিল। তাহার কত কিছু জিজ্ঞাসা। বালিকার এত প্রশ্নে বালক কিছুটা বিব্রত বোধ করিল আর মনে মনে ভাবিল, 'ও'রে কত কথা বলে রে!'
বালিকাকে কিছু জিজ্ঞাসা করিলে খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলে, বলিব পরে বলিব।
বড়ই করুন কাহিনী। বালক ভাবিল, আহা কতই না করুন কাহিনী। ঠিক আছে পরে শুনিয়া নিব। আপাতত ইহাকে শান্ত করিয়া লই।
এই ভাবে চলিল বেশ কিছুদিন।
ইতিমধ্যে তাহাদের সর্ম্পক বেশ বন্ধুত্বপূর্ন হইয়াছে। বালিকা বেশ প্রফুল্ল বোধ করিতেছে। বালক ভাবিল বাহ! তাহার সংস্পর্শের এত গুন। বেদনাকাতর একটি বালিকাকে সে প্রফুল্ল করিয়া তুলিয়াছে।
একদা বালক ভাবিল তাহার বান্ধবীকে ফোন করিয়া বালিকার মানসিক অগ্রগতির খবর জানায়।
যথাসময়ে ফোন করিল। কিন্তু ফোন ধরিল ফোন ধরিল বান্ধবীর ছোট বোন। কিঞ্চিত ফাজিল টাইপের মেয়ে। ফোন ধরিয়াই সে কহিল, ওহে বালক ভাই, আপনার প্রজেক্ট কেমন চলিতেছে? কপট গাম্ভীর্যের সাথে বালক কহিল, কিসের প্রজেক্ট? কি সব কথা বলিতেছ? ও পাশ থেকে রিনিঝিনি হাসিয়া সে কহিল, আহা! ন্যাকা। আপনার অনুপ্রেরনা কথা বলিতেছি।
বালক বড়ই বিরক্ত হইল। বলিল, 'ঠেস মারিয়া কথা বলার স্বভাব তোমার আর গেল না। বালিকা আবার আমার হইল কবে? আমি তো কেবল তাহাকে খারাপ সময় পার করিতে সাহায্য করিতেছি।
আহা মধু! মধু! কি সুন্দর মনোবাসনা। তবে সাবধান, অনুপ্রেরনা আবার যেন প্রেমপ্রেরনা না হইয়া দাঁড়ায়।
বালক তো এবার বেশ রাগানিত্ব হইল। খানিকটা রাগত্ব স্বরে কহিল, আমি তোমার বড় ভাই সমতূল্য। এই সব কথা আমাকে বলিতে তোমার একটুও বাঁধিল না? তোমার পড়াশুনা নাই? যাও, গিয়া পড়তে বস। পাজী মেয়ে কহিল, মন বসে না পড়ার টেবিলে বালক ভাই। আমারও কিঞ্চিত অনুপ্রেরনা পাইতে মন চায়।
বালক আর কিছু না বলিয়া ফোন কাটিয়া দিল। মনে মনে ভাবিল, দেশে ফাজিল মেয়েদের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বাড়িয়া যাইতেছে। এইসব ফাজিল মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে হবে। মোবাইলের রিং টোনে বালকের ভাবনায় বাধা পড়িল। বালিকার ফোন।
বালিকার নাকি দেখা করিতে ইচ্ছা করিতেছে। বালক বলিল, এখন দেখা করা যাইবে না। জরুরী কাজ আছে। বালিকা কিছু না বলিয়া ফোন রাখিয়া দিল। ঘটনার আকস্মিকতায় বালক কিছুটা বিব্রত বোধ করিল।
ঘটনার জানার নিমিত্তে আবার ফোন করিল বালিকাকে। বালিকা কাঁদো কাঁদো স্বরে কহিল, ' আমি দেখা করিতে চাহিলে শুনিলে আমার আগের প্রেমিকর কাজ ফালাইয়া ছুটিয়া আসিত, আর তোমার নাকি সময় হইবে না। এই বলিয়া বালিকা কিছুটা থতমত খাইয়া গেল। সাথে সাথে আবার কহিল, ' না না প্রেমিকরা না, আগের যে বন্ধু ছিল তাহারা। '
বালক ঢোঁক গিলিয়া কহিল, 'ঠিক আছে বুঝিয়ে পারিয়াছি।
আচ্ছা যাও আগামীকাল তোমার সাথে দেখা করিব। ' বালিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ফোন রাখিয়া দিল।
এইদিকে বালকের তো মাথায় বালিকার কথাগুলি গাথিয়া রহিয়াছে। ভাবিল বালিকা তো কিছুই কহে না, দেখি নিজ চেষ্টা বালিকার কোন খবর বাহির করা যায় কিনা। বালিকার এলাকাতে বালকের কিছুটা জানা শোনা ছিল।
বিকেলের মধ্যেই বালিকার অনুপ্রেরনা চাওয়ার রহস্য বাহির হইল। বালিকা এই দুঃসময়েও পাঁচ পাঁচটি প্রেম করিয়াছে এবং যাহার সব গুলোকেই নাকি বালিকা ছ্যাঁকা দিয়াছে বলিয়া বালিকা দাবি করে। তবে আশার কথা বালিকা নাকি সম্প্রতি দাবি করিয়াছে, জনৈক বালকের মাঝে নাকি সে তাহার বিগত প্রেমের হারানো স্মৃতি খুঁজিয়া পাইয়াছে।
বালক আবারো ঢোঁক গিলিল। মাইক্যার চিপা কাহাকে বলে সে কিছুটা হইলেও বুঝতে পারিল।
তাহার সমস্ত রাগ গিয়া পড়িল, সেই বান্ধবীর উপর। কি দরকার ছিল তাহার অনুপ্রেরনার এত প্রচারনা চালানোর।
যাই হোক, কয়েকদিন পরের কথা।
এই কয় দিনে বালক, বালিকার অনেক মোবাইল সেবা পাইয়াছে। যেমন, ওগো, অফিসে পৌছাইয়াছ? ওগো, দুপুরে ভাত খাইয়াছ? আহা একা খাইতে কষ্ট হইতেছে? মনে করো আমি চাবাইয়া দিতেছি ইত্যাদি।
তারপর কোন কারন বসত বালকের কাছ হইতে বালিকা, অন্য বালিকার কথা শুনিয়া তেলে বেগুনে জ্বলিয়া উঠিয়া বালককে কহিল, অন্য বালিকাদের সাথে তোমার কি এত কথা?
বালক এমন মোবাইল সেবা সহ্য করিতে না পারিয়া, বালিকাকে কহিল, তুমি কি আমার প্রেমে পড়েছ নাকি? অন্য বালিকাদের সাথে কথা বলিলে তোমার এত জ্বলে কেন?
বালিকা এই কথা শুনিয়া, সপ্ত আসমান থেকে পড়বার ভান করিয়া বলিল। এটা কি বললা? আমার বন্ধুত্বকে তুমি প্রেম বলিলে?
বালক কহিল, তোমার আচরনে তো এমনটা মনে হয় না। ঠিক আছে, এমনটা না হইলেই ভালো। আমরা বন্ধু হিসেবেই ঠিক আছি।
বালিকা কহিল, আমার জন্য কত ছেলেই তো পাগল হইল, শেষমেষ তুমি কিনা এই ভাবে বলিলে? বালিকার কথায় যে দুঃখভাবটা আসিল তাহাতে বালকের মনে হইল, সপ্ত আসমান থেকে পড়িবার ব্যাথা এর কাছে কিছুই নহে।
বালিকা আর বেশি কিছু না বলিয়া, আরো দু'চারটি কথা শুনাইয়া ফোন রাখিয়া দিল।
খানিকক্ষন পর, বালকের মনে হইল, এইভাবে না বলিলেও চলিত, কে জানে হয়ত আসলেই কষ্ট পাইয়াছে। এই ভাবিয়া, বালিকাকে ফোন দিল। বালিকা ফোন ধরে না। কিছুক্ষন পর আরো একবার দিল।
কিঞ্চিত মেজাজ খারাপ হইল। কিছুক্ষন পর আবার ফোন দিল। কিন্তু এবারও বালিকা ফোন ধরিল না। অতঃপর বালক একটি ম্যাসেজ পাঠাইল, ' ভালো করিয়া মুড়ি খাইও, সাথে নিও সরিষার তেল'
তারপর দিন, বালিকার আবার বালককে ফোন দিল। সারা দিনে চার থেকে পাঁচ বার ফোন আসিল।
বালক ধরিল না। কিছুক্ষন পর ম্যাসেজের উত্তর আসিল, লেখা, ' তোমাকে ধরিয়া থাপরানো দরকার। '
বালক উত্তর দিল, ' এটা তোমাকে কে পাঠিয়েছে? তাহাকে আমার ধন্যবাদ পৌছে দিও।
বালিকা রাগিয়া ম্যাসেজে পাঠাইল, 'শয়তান, তোর মত আমার মনটা মুখে না, আমার মনটা আমার বুকে"
বালক উত্তর দিল, ' সহমত, তাই তো তোমার মনটি নরম এবং উষ্ণ'।
হাজারটি গালাগালি নিয়ে উত্তর এলো।
বালক বালিকার গল্প এখানেই আপাতত শেষ।
পরিশিষ্টঃ শুনিয়াছি বালিকা নাকি নতুক এক বালক খুঁজিয়া পাইয়াছে। জানি না, সেই বালক আবার বালিকার মন খুঁজিতে গিয়েছে কিনা। !! মন খুঁজিতে গেলেই ধর
আরমানের লেখা গল্পঃ তোর মত আমার মন মুখে না, মনটা বুকে শয়তান ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।