আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাকওয়া

নিজের জন্য লেখি, নিজের কথা লেখি। < ১. স্রষ্টা কে> যে একক স্বত্তা পরন শূন্যতাকে বিলীন করে নিজে নিজেই অনস্ত্বিত্বের থেকে অস্ত্বিত্ব লাভ করলেন তিনিই এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টা। স্রষ্টা কে জানতে হলে সৃষ্টি সম্পর্কে জানা দরকার। আমরা বলি মহাশূন্য, আসলে এটা শূন্য নয়। মহাকাশে আন্ত নাক্ষত্রিক ফাকা স্থানের গরে প্রতি ঘন ইঞ্চিতে ২টি(১.৬৩ টি) কণা পাওয়া যায়।

মহাশূন্য সৃষ্টি হওয়ারও আগে এটা প্রকৃতই শুন্য ছিলো। এই শূন্য হচ্ছে এমন একটা অবস্থা যেখানে- 1. কোন বস্তু কণা, আলো বা কোন ধরনের শক্তি তরঙ্গও ছিলো না, 2. স্থান(যেমন: আপনার ও মনিটরের দূরত্ব) বা কাল(সময়) ছিলো না, 3. এমনকি এই শূন্য/শূন্যতা সম্পর্কে জানে এমন কিছু/কেহ ও ছিলো না। এই অবস্থায় শুধু মাত্র কোন একক কিছু(সিঙ্গুলারিটি)-র আবির্ভাব ঘটা সম্ভব, যা যত ছোটই হোক না কেন শূন্যতা বিলীন করে দেবে। যার আবির্ভাব ঘটবে তাই হবে সবকিছু। আর শুন্যতা বিলীন হয়ে যাওয়ায় অন্য কিছুরই আর তখন আগমন ঘটতে পারবে না।

কারণ একমাত্র শূন্যতাতেই যে কোন কিছু আসতে পারে, কিন্তু শূন্যতা তো আর নাই, কোথায় আসবে? যে একক স্বত্তার আগমনে পরন শূন্যতা বিলীন হল, যিনি নিজে নিজেই অনস্ত্বিত্বের থেকে অস্ত্বিত্ব লাভ করলেন তিনিই এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টা। যে কারনে স্রষ্টার আরেক নাম “স্বয়ম্ভূ”। এখন মহাবিশ্ব পূর্বে তৈরি করা কোন শূন্য বিন্দুতে তৈরি হয়ে থাকলে এটি একা একা তৈরি হয় নাই বরং ১জন ডিজাইনার মহাবিশ্ব তৈরি করার জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছিলেন। তারপর তিনি যেভাবে চেয়েছেন / ডিজাইন করেছেন সেভাবেই এই মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। আধুনিক ইনফ্লশন থিউরি অনুযায়ী শূন্য বিন্দুতে মহাবিশ্বের মত কিছু তৈরি করে সম্ভব।

কিন্তু শূন্য স্থানে কোন কিছু তৈরি করলে প্লাস-মাইনাস এনার্জি কাটাকাটি করে যেকোনো সময় আবার শূন্য “০” হয়ে যেতে পারে। যে কারণে মাল্টিভার্স তত্ত্ব (Mথিউরি) আনা হয়েছে। স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে মহাবিশ্বের স্থিতিশীলতা আনতে স্ট্রিং থিউরি অনুযায়ী এ রকম মাল্টিভার্স মহাবিশ্বের সংখ্যা 10^10^10^7 টি(১০ বিলিয়ন টু দি পাওয়ার ১ কোটি) বলা হয়েছে, এটি অকল্পনীয়/অবাস্তব রকম বড় একটি সংখ্যা। সংখ্যাটি এত বড় যে মানব মস্তিষ্ক এটা কল্পনা পর্যন্ত করতে পারে না, কারণ মানব মস্তিষ্ক সর্বোচ্চ 10^10^16(১০ বিলিয়ন টু দি পাওয়ার ১৬) টি পর্যন্ত পয়েন্ট ধরতে সক্ষম। স্রষ্টার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে তিনি অনস্তিত্বের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব তৈরি করে তাকে স্টেবিলিটি দিয়েছেন।

অস্তিত্ব তৈরি আগে তিনি সিংগুলারিটি/এক ও অদ্বিতীয়, অনাদী ও অনন্ত ছিলেন। আপনার যদি মনে হয় মহাবিশ্ব স্বাধীন, সুশৃঙ্খল ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলছে তাহলে এর স্রষ্টা বা পরিচালকও এমন এক জন যিনি স্বাধীন ও স্বয়ং সম্পূর্ণ। কোরআনে বলা হয়েছেঃ- তিনি সাত আকাশ সৃষ্টি করেছেন সুবিন্যস্ত ভাবে। তুমি পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে অসামঞ্জস্য দেখতে পারবে না। তারপর তুমি তোমার দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নাও, তুমি কি কোন ফাটল দেখতে পাচ্ছ?" (সুরা মুলক: ৩) < ২. এই ডিজাইনার বা স্রষ্টার নাম কি? > কোরআনে একটি আয়াত আছে- إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي [٢٠:١٤] আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।

অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর। (Taa-Haa: 14) কোরআনে আরেকটি আয়াতে এমন বলা হয়েছে- তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না আকাশের, যা তিনি নির্মাণ করেছেন? তিনি একে উচ্চ করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি এর রাত্রিকে করেছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং এর সূর্যালোক প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন। তিনি এর মধ্য থেকে এর পানি ও ঘাম নির্গত করেছেন, পর্বতকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।

(সুরা নাযিয়াত ২৭-৩১) < ৩. আল্লাহই সব জানেন! > •(তিনি (আল্লাহ) বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। ( (সুরা বাকারা আয়াত ৩০) মেরাজের ঘটনার বিবরণ থেকে বোঝা যায় যে বেহেস্ত, দোজখ, আসমান, দুনিয়া, হাশর সবই সৃষ্টি-জগতের অধীন, কারণ এসব স্থানে জিবরীল(আঃ) রসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সাথে ছিলো। কিন্তু আল্লাহর দিদারের সময় জিবরীল(আঃ) রসুলুল্লাহ(সাঃ) এর সাথে ছিলেন না। বরং বিবরণে দেখা যায় বাক্স/লিফট টাইপের কিছুতে করে রসুলুল্লাহ(সাঃ)-কে অন্য কোথাও নেওয়া হয়েছিলো, যেখানে যাওয়ার সাধ্য ফেরেশতা শ্রেষ্ঠ জিবরীল(আঃ)-এরও ছিল না। রসুলুল্লাহ(সাঃ)-কে একা আল্লাহর দিদারের জন্য সৃষ্টি-জগতের বাহিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।

কোরআন-এ বলা হয়েছে- • তিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়টি পর্যায়কালে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন (সূরা আল-ফুরকান ৫৯) • তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে (সুরা বাক্বারাহ ২৫৫) • যা কিছু নভোমণ্ডলে আছে এবং যা কিছু ভূমণ্ডলে আছে, সব আল্লাহরই। সব বস্তু আল্লাহর মুষ্টি বলয়ে। (সূরা আন-নিসা ১২৬) উপরের আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি-জগতের বাহিরে অবস্থান করছেন। অনেক কোরআন শরিফ তফসির কারক আলেমের মতে কোরআন-হাদিসের যেসব বিবরণে আল্লাহকে দুনিয়ায় উপস্থিত বলা হয়েছে সেখানে আল্লাহ-কে শারীরিক ভাবে নয় বরং তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে উপস্থিত বুঝান হয়েছে। বিজ্ঞানের নিয়ম আমাদের স্থানের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে দেয়, ফলে আমরা সামনে/পিছে, কাছে/দুরে যেতে বা দেখতে পারি।

বাস্তব জগতে বস্তুর ৩টি মাত্রা(dimension)- দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা। এদের আমরা সহজেই মাপতে পারি, এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পারি। কিন্তু বিজ্ঞানের নিয়ম আমাদের সময়ের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে দেয় না। ফলে আমরা অতীতকে দেখতে বা পরিবর্তন করতে পারিনা এবং ভবিষ্যৎ দেখিও না জানিও না। সময়ের কোন প্রমাণ মাপ নেই, কারণ সময়কে আমরা সরাসরি ধরতে পারি না।

শুধুমাত্র সময় প্রবাহের আপেক্ষিক হিসাব রাখতে পারি। আল্লাহর অবস্থান যেহেতু সৃষ্টি-জগতের সীমানার বাহিরে। সুতরাং, সৃষ্টি-জগতের (স্থান-কালের) বিজ্ঞানের নিয়ম আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য হবে না। ফলে সময়ের সীমানায়ও তিনি আবদ্ধ নন, বরং তিনি সময়ের সূত্রের বাইরে অবস্থান করেন। আমরা যেমন আমাদের সামনের টেবিলে রাখা জিনিষ-পত্র একবারে দেখি, আল্লাহ্‌ তায়ালাও সৃষ্টির শুরু(big bang) থেকে সৃষ্টির শেষ(big-crank) পর্যন্ত কবে কি হয়েছে এবং কবে কি হবে একইসাথে দেখতে পান।

মহাবিশ্বের কোন কিছুই তাঁর পেছনে বা অতীত /ভবিষ্যতে নয়, সবকিছুই তাঁর কাছে বর্তমান। তাই তিনি সৃষ্টি করার সাথে সাথেই জেনে গেছেন এর শেষ কী। আর সৃষ্টির শুরুতেই সব লিখে “লওহে-মাহফুজ”-এ রেখে দিয়েছেন। • আল্লাহ্‌ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের অদৃশ্য বিষয় জানেন, তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তা দেখেন। (সূরা আল হুজরাত ১৮) • তাঁর জ্ঞান সীমা থেকে তারা কোন কিছুই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন।

(সুরা বাক্বারাহ ২৫৫)| • আল্লাহ্‌ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়। (সূরা আল-আলা ৭)| আল্লাহ লিখে রেখেছেন বলে ঘটনা সমূহ ঘটছে এমন নয়, বরং “আলেমুল গায়েব”বলে তিনি আগেই জানতেন যে আমরা কে কী করব, কখন কী হবে, কিসের পরিণতি কী। আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম তৈরি করেছেন এবং সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি হবে তা লিখে রেখেছেন। “লওহে-মাহফুজ”-এ লিখে রাখাটা আল্লাহর অনন্যতার একটি নিদর্শন।

এই লেখা আল্লাহর superiority “আলেমুল গায়েব” নামের প্রমাণ। যাতে আমরা ধর্ম গ্রন্থ পড়ে তার সত্যতা উপলব্ধি করতে পারি। চিন্তা করে বুঝতে পারি যে আমাদের উপর ১জন মহান আছেন যিনি সমস্ত সৃষ্টি-জগতের উপর একক আধিপত্য রাখেন। < ৪. আমরা করি না আল্লাহ করান?> আমরা আগেই বলেছি যে, “লওহে-মাহফুজ”-এ লিখে রাখাটা আল্লাহর অনন্যতার একটি নিদর্শন। এই লেখা আল্লাহর superiority “আলেমুল গায়েব” নামের প্রমাণ।

আল্লাহ লিখে রেখেছেন বলে ঘটনা সমূহ ঘটছে এমন নয়, বরং “আলেমুল গায়েব”বলে তিনি আগেই জানতেন যে আমরা কে কী করব, কখন কী হবে, কিসের পরিণতি কী। এর একটা উদাহরণ কোয়ান্টাম মেকানিক্স থেকে দেয়া যায়। যেমন- ১ টি বাক্সে ২টি(১ জোড়া) মজা রাখলেন, এরপর চোখ বন্ধ করে ১টা মজা নিয়ে আপনার পকেট ভরলেন। এখন সাধারন ভাবে আমরা বোলব পকেটের রাখা মোজাটা ৫০-৫০ চান্স বাম বা ডান হবে। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে যতক্ষণ পর্যন্ত জোড়ার কোন ১টি মোজা পর্যবেক্ষণ করা না হবে ততক্ষণ এরা ১টা জটিল অবস্থায় থাকবে, বামও না ডানও না; এবং যেকোন ১ টা মোজা পর্যবেক্ষণ করলেই জোড়ার ২ টি মোজাই আকার লাভ করবে।

এই কথাটাই আমরা এভাবে বলতে পারি যে, আমরা যে বলি আমাদের সামনে একাধিক পথ আছে, এটা করলে এই হবে, ওটা করলে ওই হবে; আল্লাহ চাইলে আমি এই কাজ না করে ঐটা করতাম; এই কথাগুলো ঠিক নয়। বরং আমাদের চিন্তা/সিদ্ধান্ত থেকে পরবর্তী পথ সৃষ্টি হয়, এর প্যারালাল অন্য কোন পথ আসলে থাকে না। যদিও ভুল করে ফেলার পর আমরা ভাবি যে কাজটা “ওই ভাবে” করলে এই সমস্বা হত না। আসলে “ওই ভাবে” বলতে কিছু নাই। আল্লাহ সৃষ্টি জগত ও সৃষ্টি-জগতের নিয়ম-কানুন তৈরি করে মানুষকে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন।

মানুষকে দিয়েছেন চিন্তা করার ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। যা ঘটে তা আসলে আমাদের চিন্তা/সিদ্ধান্ত থেকেই ঘটে। এখানে আল্লাহ্‌র ক্ষমতা এতটুকুই যে তিনি কিছু প্যারামিটার দিয়ে রেখেছেন, আপনি চাইলেও কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। < ৫. মানুষ সৃষ্টি উদ্দেশ্য কী? > স্রষ্টা প্রথমে বিশুদ্ধ শক্তি তৈরি করেছেন। তারপর এই শক্তি থেকে বস্তু বা পদার্থ তৈরি করেছেন।

এরপর বস্তুর মন তৈরি করেছেন। এ বিষয়ে কোরআনে আল্লাহ-তায়ালা বলছেন- অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মত অথবা তদপেক্ষাও কঠিন। পাথরের মধ্যে এমন ও আছে; যা থেকে ঝর্ণা প্রবাহিত হয়, এমনও আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয় এবং এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে! আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। (Al-Baqara: 74) এই আয়াত থকে ২ টি বিষয় বোঝা যায়- ১ঃ সকল বস্তুরই মন আছে, ২ঃ এই মন স্বাধীন নয় বরং আল্লাহ্‌র নির্দেশ মত বা ভয়ে চলে।

এমনকি ফেরেশতারাও এর ব্যতিক্রম নয়। তারাও আল্লাহ্‌র নির্দেশের বাইরে কিছুই করতে পারে না। সবশেষে আল্লাহ্‌ তাঁর শ্রেষ্ঠতম জিনিষ তৈরি করলেন, - স্বাধীন মন। মানুষের মন আল্লাহ্‌ শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি , কারণ মানুষের মনকে আল্লাহ্‌ তাঁর নিজের গুণাবলী ও সৃজনশীলতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। একমাত্র মানুষই পারে নিজেকে আল্লাহ্‌ স্থানে কল্পনা করতে।

শয়তানও নিজেকে স্রষ্টা বলে দাবি করে না বরং নেগেটিভ গড হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করে, কিন্তু ইতিহাসে অসংখ্য মানুষ পাবেন যারা নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেছেন। এটা আসলে মানুষের মনের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারের নেগেটিভ একশন। আবার অনেক আল্লাহ্‌ প্রেমিকও সূফী সাধকও নিজের ভেতরে আল্লাহ্‌র সকল বৈশিষ্ট্য দেখে, বোঝার ভুলের কারণে নিজেকে আল্লাহর অংশ(আনাল-হক) বলে দাবী করেছেন। আসলে মানুষের কেউই আনাল-হক না, বরং আল্লাহ্‌ দয়া করে মানুষকে তাঁর নিজের গুণাবলি ও সৃজনশীলতা দান করেছেন, মানুষকে করেছেন তাঁর প্রতিনিধি। কোরআনের ভাষায়: (Yunus: 14) অতঃপর আমি তোমাদেরকে জমিনে তাদের পর প্রতিনিধি বানিয়েছি যাতে দেখতে পারি তোমরা কি কর।

(Al-Baqara: 30) আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। (Al-An'aam: 165) তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন এবং একে অন্যের উপর মর্যাদা সমুন্নত করেছেন, যাতে তোমাদেরকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে দিয়েছেন। আপনার প্রতিপালক দ্রুত শাস্তি দাতা এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু। এখানে দেখা যায় যে, আল্লাহ্‌ মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি বলেছেন।

আর প্রতিনিধি তাকেই বলে যে স্বাধীন ভাবে অনুপস্থিত কারো হয়ে কাজ করে। আল্লাহ্‌ তাঁর সবচেয়ে বড় গুন "চিন্তা করার স্বাধীনতা" বা স্বাধীন মন দিয়ে মানুষ তৈরি করেছেন। আর স্বাধীন মন এর তুলনায় সমস্ত মহাবিশ্ব মূল্যহীন। এখন আল্লাহ পরীক্ষা করতে চাইছেন যে কোন স্বাধীন মন আল্লাহ্‌র প্রতি অনুগত আর কোনটি আল্লাহকেই হিংসা বা অহংকার করে। আসলে আমাদের এবাদত/বন্দেগি, দান-খায়রাত, সৎকর্ম/ পরোপকার এগুলোর কোনটাই আল্লাহর দরকার নাই।

বরং আল্লাহ্‌ জানতে চান যে এই স্বাধীন মন-এর কে যেকোনো অবস্থায়ই আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকে কে গাফেল হয়ে আল্লাহ্‌র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এবাদত/বন্দেগি, দান-খায়রাত, সৎকর্ম/ পরোপকার এগুলো সবই আল্লাহ্‌র প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের বাহ্যিক রূপ। এসবের উদ্দেশ্য স্রষ্টার সন্তুষ্টি পাওয়া না হলে এর সবই অর্থহীন। আবার এবাদত/বন্দেগি, দান-খায়রাত, সৎকর্ম না করলে আপনি কখনও প্রমাণ করতে পারবেন না যে আপনিও স্রষ্টার আনুগত্য করেছেন। আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, যে কে আল্লাহর প্রতি যে কোন পরিস্থিতিতে নিঃশর্তে অনুগত থাকে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে; আর কে সুখে/দুঃখে আল্লাহকে দোষ দেয় বা অস্বীকার করে।

। বিষয়টাকে এভাবে সরলীকরণ করা যায় যে,: আল্লাহ বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন/সিচুয়েশন তিরি করেছেন, কোনটা সুখের কোনটা কষ্টের, কোনটা সমৃদ্ধির কোনটা দারিদ্রের, কোনটা সততার কোনটা স্বার্থপরতার। এই বিভিন্ন ধরনের সিচুয়েশনের মূল্যমানও আলাদা। কেউ হয়তো সারা জীবন ধরে দারিদ্র ও সততার মোকাবেলা করলো, আরেক জন ১ ঘণ্টা কষ্টের মোকাবেলা করে পরীক্ষা শেষ করলো( মারা গেলো )। এমন হতেই পারে যে ২য় লোকটার ১ ঘণ্টার পরীক্ষার মান ১ম লোকটার সারা জীবনের দারিদ্র ও সততার চেয়ে বেশি।

আবার অন্য ১জন সমৃদ্ধি ও সততা দিয়ে এক দানশীল জীবনে পার করলো, সে কোটি-কোটি টাকা উপার্জন করে তা দান-খায়রাত করে গেলো। এখন আল্লাহই ভাল জানেন যে কোনটার মর্যাদা বেশি, ৩য় ব্যক্তির দান-খায়রাতের না ১ম লোকটার সারা জীবনের দারিদ্র ও সততার। যেমন উমর(রা.) প্রায়ই বলতেন যে আবু-বকর(রা.) এর হিজরতের সময়কার ১ রাতের বিনিময়ে সারা জীবনের সওয়াব দিয়ে দিবেন। সুরা ফাতিহায় দেখুন- ১- সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। := শুরুতেই আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি যে ভাল কাজের প্রশংসা আমার না আল্লাহর প্রাপ্য।

এবং আল্লাহই সবার ভরন=পোষণ কারী, মহাবিশ্বের সবকিছুর নেপথ্য চালিকা শক্তি। ২- যিনি পরম করুণাময় ও মহান দয়ালু := এটাও স্বীকার করছি যে আল্লাহ করুণাময় ও দয়ালু । ৩- যিনি বিচার দিনের মালিক := এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাক্য। এই বাক্যের অর্থ হচ্ছে, " আমরা যেমন ভাবি যে এই করলে এই হয়, অমুক খারাপ কাজ করেছে তাই সে খারাপ থাকবে, আমি ভাল কাজ করি, অন্যের টা মেরে খাই না আমি ভাল থাকবো" এরকম ধারনা ঠিক নয়। মানুষের সকল কাজ কোন এক বিচার দিবসে পরিমাপ করা হবে ও উপযুক্ত প্রতিদান দেয়া হবে।

দুনিয়াতে ভাল -খারাপ যত যাই হয় তার সবই আসলে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কেউ ভাল করে খারাপ পায়, কাউ খারাপ করে ভাল পায়, আবার কেউ যেমন কর্ম তেমন কর্মফল পায়, এগুলো আসলে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করার জন্য করেন, যে, আমরা কে কোন অবস্থায় তাঁর প্রতি অনুগত থাকি বা বিরক্ত হই। ৪- আমরা তোমারই এবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি ৫- তুমি আমাদের সরল এ সহজ পথ দেখাও ৬- তাদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ । ৭- তাদের পথ নয়,(যারা) অভিশপ্ত এবং পথহারা হয়েছে। := এই ৪টি বাক্যে আসলে প্রার্থনা। এই ৪টি বাক্যে দিয়ে আমরা আল্লাহকে বলছি যে "আমরা যে এবাদত করি তার উদ্দেশ্য একটাই যাতে আল্লাহ আমাদের কে তাঁর প্রতি অনুগত পথে পরিচালিত করেন, কখনও বিপথে যেতে না দেন"।

এটা আসলে একধরনের রক্ষাকবচ। বিচার দিবসে আল্লাহ-তায়ালা আমাদের পাকরাও করে ফেললে যেন বলতে পারি "আমিতো দুর্বল ছিলাম আর তাই তোমার আশ্রয়ও চেয়েছিলাম। " ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.