আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

~~~রম্যঃ আমাদের চুরি শিল্পঃ টার্গেট বিচি কলা ~~~

কলম চালাই ,এইগুলো লেখার পর্যায়ে পরে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে :) ব্লগের বয়স বছরের উপরে দেখালেও নিয়মিত লিখছি ১৭ আগস্ট ২০১২ থেকে :) গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হইত না । তবে গরমের ছুটি , শীতের ছুটি কিংবা ঈদে ছুঁচার মতন আমাদের পরিবার ব্যাগ পোটলা বান্ধিয়া দৌড় দিতাম । গ্রামের বাড়িতে আমাদের ছেলেপেলেদের একটা চোর সিন্ডিকেট ছিল । ঐ সিন্ডিকেটে আমি ছিলাম বিশেষ সম্মানিত (!) অতিথি । শহুরে চোর !! আমার চুরি শিল্পে ব্যাপক প্রতিভা এবং নব্য নব্য চুরি কৌশল দেখিয়া ওরা আমার নাম দিয়াছিল ‘’ ছোট আইজ্জ্যা ‘’ আইজ্জ্যা ( আজিজ সর্দার ) আমাদের এলাকার কুখ্যাত (!) চোর ছিলেন ( তাহাকে সশ্রদ্ধ সালাম ) ।

বাড়িতে যাইবার হপ্তাখানেক পূর্বেই খবর দেওয়া হইত – যে আমরা আসিতেছি । সেই খবর আমার সিন্ডিকেটের কাছেও পৌঁছাইয়া যাইত । রিফুজিদের মতন ব্যাগ পোটলা নিয়া যখন বাড়িতে পৌঁছাইতাম , সে এক হাউ কাউ জাতীয় অবস্থার সৃষ্টি হইত । এদিকে গ্যাদা কান্দিতেছে , ঐ খানে একজন মেঝেতে হিসু করিয়া দিয়াছে , কেউ আসিয়া গাল ধরিরা টানিতেছে , কি বিতিচ্ছিরি অবস্থা ( এতবড় হইয়াছি , তারপরেও ! অবশ্য আপুরা টানলে কিছু বলিতাম না হিক হিক হিক ) !! এইদিকে আমার বিশেষ বন্দু এবং অনুগামী ভ্রাতারা সকাল বিকাল হানা দিতেছে । কোনোটা চৌকিতে বসিয়া আছে , কোনোটা দরজায় হেলান দিয়া আবার আর একটা দেখি বাইরের জানালার শিক ধরিয়া সার্কাসের বান্দরের ন্যায় ঝুলিতেছে ! যাহা হউক , উহাদের শুকনা মুখ দেখিয়া পিতাজী শুধাইলেন – হেতু কি বৎসরা ? এইবার উহারা চোখমুখ শুকাইয়া পুরাই শুঁটকি মাছের ন্যায় করিয়া ফেলিল ।

কহিল – বন্দুরে মেলাদিন দেখি নাই । মন আঁকুপাঁকু করিতেছে । আইজকা রাইতে বন্দুর আমাগো বাড়িতে দাওয়াত । দুইডা ডাইল ভাত খামু ভাইয়ে ভাইয়ে । বন্দুদের দরদ এবং তেলাপিয়া মাছের মতন ছল্‌ ছল্‌ কাতর চক্ষু দেখিয়া পিতাজীর মনের শুকনা খালে পদ্মার স্রোত বান ডাকিয়া বন্যা বহিয়া গেল ।

আমাকে ছিনাইয়া লইয়া উহারা যখন বিজিতের মতন বক্ষ দেড় হাতখানিক ফুলাইয়া বন্দুর বাড়ির দিকে যাইতেছিল , দেখিলাম এক অনুগত শিষ্য ভ্রাতা এখনও কাঁদিতেছে । আমি কহিলাম – কি রে তুই এহনও কান্দস ক্যান ? -কাঁদন তো আইতাছিল না ভাই , তাই লেবু চক্ষের সামনে ধইরা কচলাইছিলাম । এহনও ঝাঁঝ যাই নাই ! তাহার হাতের লেবুর অবস্থা বড়ই করুন ! উহাদের লেবু কচলানোর ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করিয়া দিল । কহিলাম – কলপাড় দৌড় দে , এক্ষুনি ! আমি বাড়িতে যাইবার পূর্বেই ওরা কাজ অনেকদূর আগাইয়া রাখে । বিভিন্ন গোপন সুত্র এবং সোর্স হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লিস্ট করিয়া রাখে ।

এই যেমন – কার বাড়িতে কয়টা মুরগী আছে , কোনটা নধর হইয়াছে , কোন গাছের আম মিষ্টি , কার পুকুরের মাছ খাইবার উপযোগী হইয়াছে ইত্যাদি ! তালিকার শেষের দিকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকার সুন্দরীদের নামও থাকিত । এই যেমন – হাওলাদার বাড়ির মুক্তা আচানক ফর্সা হইয়া উঠিয়াছে , সর্দার বাড়ির ঝর্ণা আফা’র (!) হাসি সুন্দর কিংবা ভূঁইয়া বাড়ির শারমিন , পায়ে নুপুর রিন্‌ঝিন্‌ ! চুরির তালিকায় উহাদের নাম এবং মন্তব্য সংযুক্তি আমাকে বড়ই ভাবাইয়া তুলিত । চুরির তালিকায় যাহা তাহা তো চুরি করিবার হেতুতে ! কিন্তু উহাদের কিভাবে চুরি করিব এবং চুরি করিয়া কি করিব , ভাবিয়া কূলকিনারা করিতে পারি না । ভ্রাতাদের আগ্রহী খোমাসমুহের দিকে তাকাইয়া বলি – সামনের বছর ! ওরা হতাশ হয় !! এই বৎসর অবস্থা বড়ই শোচনীয় ! চারিদিকে হাহাকার , দুর্ভিক্ষ চলিতেছে যেন । চুরি করিবার মত তেমন কিছুই নাই ।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে এক সোর্স আসিয়া খবর দিল , তাহাদের বাড়িতে চুরি করিবার মত এক কাঁদি কলার ছড়া রহিয়াছে । বিচি কলা !! নধর নধর ! কি আর করিব ! হস্ত নিশপিশ করিতেছিল । আজকের রাত্রে চুরি করিতে না পারিলে মরিয়াই যাইব মনে হইতেছে ! ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । উদগ্রীব হইয়া রহিয়াছি ! নয়নে চুরির নেশা একশ হাত দূর হইতেও দেখে যাইতেছিল ! চুরির লেবেল কায়েক মাত্রা কমাইয়া দিলাম । হোকনা বিচি কলা ! চুরি চুরি ই ! শিল্প বলিয়া কথা ! এইখানে একটা গড়বর আছে ।

আমরা ছিলাম প্রফেশনাল চোর । ব্যাকআপ ছাড়া কখনোই চুরি করিতে যাইতাম না । যে বাড়িতেই ( গোষ্ঠীতে ) চুরি করিতে যাইতাম , সেখানেই ব্যাকআপ থাকিত । এইবারের ব্যাকআপ হইল মোতালেব । বিচিকলা তাহার চাচার গাছের ।

তবে শর্ত একটাই । আমাদের গোষ্ঠীর সুন্দরী হ্যাপিকে তাহার মুরগীর রক্তে লিখিত পত্র পৌঁছাইয়া দিতে হইবে । আমি উৎসুক হইয়া জানিবার মনবাসনা পোষণ করিলাম – সুন্দরী হ্যাপি কে ? জ্ঞান লাভ করিলাম , সুন্দরী হ্যাপি এলাকার পত্র নায়িকা ! ইদানীং সে একই সাথে অনেকের সহিত পত্র বিনিময় করিতেছে ! যদিও তাহার লিখনির মর্ম উদ্ধার করিতে প্রাপকেরা একে অপরের শরণাপন্ন হইতেই ঘটনার সুত্রপাত । উক্ত ঘটনার জের ধরিয়া প্রেমিক পুরুষ মোতালেব কৈফিয়ত চাইলেই তাহাকে মাছকাটা বটি নিয়া ধাওয়া করিয়াছিল পত্রনায়িকা হ্যাপি ! তাই এই মুরগীর রক্তে লেখা হৃদয়বিদারক পত্র ! আমার মন ভিজিয়া ক্যাদা ক্যাদা হইয়া গেল ! বলিলাম – তথাস্তু ! ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সহিত চুরির ধুম প্রস্তুতি চলিতে লাগিল । আরও একটা আশাব্যাঞ্জক তথ্য পাইলাম ।

যাহাদের বাড়িতে টার্গেট করিয়াছি , সেই বাড়িতে নাকি হুর পরী ধরনের এক কন্যা রহিয়াছে ! হুর পরী কন্যার বাড়িতে বিচি কলা চুরি ! ইহা হইতে আমোদের বিষয় আর কি হইতে পারে এ ভুবনে !! আমার মনে দখিণা বাতস বহিয়া গেল । কি হইবে আজকে রাতে ? ~~~রম্যঃ আমাদের চুরি শিল্পঃ টার্গেট বিচি কলা (শেষ পর্ব ) ~~~ আমার লেখা অন্যান্য পোস্টগুলিঃ কবিতা সমূহ গল্প সমূহ রম্য সমূহ রহস্য / ভৌতিক / হরর গল্প সমূহ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।