আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্যঃ ভোকাল টোন

আমি অথৈ জলে খুঁজে ছিলাম, পূর্ণিমারই চাঁদ...
ভোকাল টোন বাড়ানোর জন্য কতজন কত কিছুই না করে! কেউ সারগাম করে, কেউ বা খোলা মাঠে চিল্লাচিল্লি করে। কিন্তু আমাকে এসব কিছুই করতে হয়নি। জন্মসূত্রে পাওয়া আমার এই ভোকাল টোন মাশাল্লাহ্ ছিল গর্ব করার মতো! জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এই টোনের রাইট ব্যবহার করতে লাগলা। ভাইবোনদের কারো সাথে একটু ঝগড়া হলেই এক চিল্লানি! ফলস্বরূপ মার উপস্হিতি , ব্যস্ কাজ হয়ে যায়। বাইরে বের হচ্ছেন মা, সঙ্গে কিছুতেই নিবে না।

ভোকাল টোনের ক্ষমতা দেখিয়ে দেই! আমার চিল্লানি বন্ধ করতে শেষে মা রাজি হন। বাইরেও একই অবস্হা! চাওয়ার কি কোনো ফিনিশ আছে! একগাদা খেলনা থাকা সত্ত্বেও eye গিয়ে পড়ে বেবি ডলটির ওপর। তারপর বাবাকে লিটল অনুরোধ এবং কাজ না হলে চিল্লানি! কিন্তু কৈশোর জীবনে এসে বুঝলাম এই ভোকাল টোনের আসল মাহাত্ম্য! গর্ব করা তো দূরের কথা, কথা বলাটাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধুমহলে পারতপক্ষে কেউ আমার সঙ্গে কথা বলে না। আড়ালে আবডালে ফাটা বাঁশ বলে! একবার এক বন্ধু বলেই ফেললো, "প্লিজ দোস্ত, কথা বলিস না।

তোর যা বলার একটা কাগজে লিখে দে। আর কিছু না হোক, অন্তত আমাদের কানের কথা ভেবে...! বন্ধুর জন্য এতটুকু পারবি না?" "গুষ্টি কিলাই এমন বন্ধুত্বের। আমার টোন নিয়ে ফাজলামি!" রেগে গিয়ে বললাম। বাসায় কোনো মেহমান এলে আগে থেকে ওয়ার্নিং দেওয়া হয়, "এ্যাই ঝুমী, মা তোকে কথা বলতে বারণ করেছে!" আপনারাই বলুন কথা ছাড়া কি ওয়ান মিনিট থাকা যায়? ফোনে হ্যালো বললে অপর প্রান্ত থেকে রিসিভার রেখে দেয়। কি ইনসাল্ট একবার ভাবুন! একবার এক আত্মীয়ের বিয়েতে রোদ প্লাস বৃষ্টি হচ্ছে দেখে ছোটবোনকে ফিসফিস করে বললাম, "জানিস, আজ খেঁকশেয়ালের বিয়ে!" কিন্তু কে জানতো আমার এই ফিসফিসানি (স্বয়ং ভোকাল টোনের কল্যাণে!) বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত সবার কান অবধি পৌঁছবে।

পাগড়ী পরা বরটা আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি তাকেই খেঁকশেয়াল বলেছি! একদিন ঠিক করলাম যে করেই হোক এই কুফা দূর করতেই হবে। শুরু করলাম আস্তে কথা বলার প্র্যাকটিস্। কাজও হলো, কিন্তু সমস্যা সেই রয়েই গেল। এখন এত আস্তে কথা বলি যে, আমার কথা কেউ শুনতে পায় না! বন্ধুদের আড্ডায় এত কথা বলি তবু আড্ডা শেষে বন্ধুদের অভিযোগ, "তুই তো কোনো কথাই বললি না! কি ব্যাপার মুড অফ নাকি???!!!!"
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।