আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্যঃ হজ্জ পূর্ব নেমন্তন্য

গত বছর ৬ অক্টোবর হজের ফ্লাইট শিডিউল পাওয়া গেল । ব্যস নিমন্ত্রনের মহোৎসব শুরু হল । হবু হাজিদের খাওয়ানো নাকি বিশাল নেকীর কাজ । মানুষের নেকীর আয়োজনের অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে গেলাম । নিত্য সকাল বিকাল নেমন্তন্ন খাওয়া চলল ।

সবার দাওয়াত কবুল করাও সম্ভব হল না । গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে হাত জোড় করে টরে নিস্কৃতি পেতে হল । নিমন্ত্রনকারীর তালিকায় আত্মীয় অনাত্মীয় ঘনিষ্ট স্বল্প পরিচিত অনেকেই আছেন । এর মাঝে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিমন্ত্রনটি পাওয়া গেল । নিমন্ত্রনকারিনী আমার মেয়ের বান্ধবীর মা ।

শুধু কি তাই, তিনি আবার মেয়ের মায়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী । পাঠক তাহলে বুঝুন কেমন দাওয়াত এটি ! আমি একজন ডায়াবেটিক রোগী । দাওয়াত খেতে খেতে অস্থির । দাওয়াত আমার জন্য নিতান্তই দুঃসংবাদ । কিন্তু এই দাওয়াতটির ক্ষেত্রে কি আর হাংকি পাংকি চলে ! একে খুবই উৎফুল্ল চিত্তে কবুল করে ফেললাম ।

যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে আসন অলংকৃ্ত করলাম । আমি একা নই কিন্তু । সাথে কাফেলা আছে । আমার সহধর্মিনী , দুই কন্যা, পুত্র এবং একমাত্র গৃহপরিচারিকা । দশ চেয়ারের বিশাল ডাইনিং টেবিল ।

টেবিলের পৃষ্ঠদেশ কিসের তৈ্রী বোঝা দুষ্কর , ডিশের মিছিলে সয়লাব । আয়োজনের রুপে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । ধ্যাৎ, ডায়াবেটিস আবার কিসের ? বাঘের লোলুপ দৃষ্টিতে ঝাপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিলাম । ভদ্রমহিলা আমাকে আশ্বস্ত করে জানালেন আমার জন্য নরমাল ডিশের ব্যবস্থা আছে । বা বা , বলে কি , আজতো তাহলে নরমাল সাবনরমাল আর এবনরমাল মিলে ফাটা ফাটি খানা দানা হয়ে যাবে ।

নরমাল ডিশ গুলো চলে এল । টেবিলের উপরটা এবার জ্যাম প্যাক্ট হয়ে গেল । নরমাল ডিশগুলো খারাপ না , আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা, লাল শাক ভাজি, মিকসড ভেজিটেবল, কুচো চিংড়ি লাঊ, মুড়িঘন্ট , মুরগীর রেজালা ইত্যাদি । পোলাও সার্ভ হচ্ছে । আপা জানালেন আমার জন্য সাদা ভাতের ব্যবস্থা আছে ।

তবে শুরুতে একটু পোলাও নিতেই হবে । এতে তিনি ঘি দেন নি, সোয়াবিনেই রেঁধেছেন যাতে আমি খেতে পারি । আমি লাজুক হাসি দিয়ে ডবল টিকিয়া সহ ভোজন পর্ব শুরু করলাম । উনার স্বা্মী সযত্নে পাতে রোস্ট তুলে দিলেন । গ্লাসে বোরহানি ঢেলে দিলেন ।

সালাদ লেবু দিলেন । আপা মিহি হাসির সাথে বিশাল এক পিস ইলিশ ফ্রাই দিলেন । ভদ্রতার খাতিরে বেশি ক্ষিপ্র হতে পারছিনা , তার পরও গতি মন্দ নয় । আমার হৃদয়ের ‘বাঁধ ভেংগে দাও’ সংগীত সধর্মিনী টের পেয়ে থাকবে । সে মনে মনে প্রমাদ গুনল ।

বলল, এই তোমার জন্যতো সাদা ভাত আছে । ওর দিকে তাকালাম । স্থির চোখে সাবধান বাণী ‘কম খাও কম খাও’। বান্ধবীটি বললেন , এই তুই কি বলছিস, পোলাওইতো ভাল; আমিতো ঘি দেই নি । আমিও মিন মিনে গলায় বললাম, আসলেই ঘি নাই ।

বলেই তাকালাম স্ত্রীর চোখে । দেখলাম চাউনীতে অগ্নিসংযোগের আভাস । চোখ নিচু করে আপন মনে খেয়ে চললাল । সামনে দুটো ডিশে মংসের রেজালা । একটা খাসীর আর একটা গরুর ।

মনে হয় খাসীটা আমার জন্য । ঝোল ঝরিয়ে দুতিন পিস নিলাম । আবার সেই মিহি হাসির চিনি মিশিয়ে আপা তুলে দিলেন দু তিন পিস । আহা, জমেছে ভোজ । কয়েক ঢোক বোরহানি পান করে খাদ্যনালীর নাব্যতা বাড়িয়ে নিলাম ।

গরুর রেজালার ডিশটার দিকে চেয়ে দেখলাম , আহা পিসগুলো অসহায় নেত্রে চেয়ে আছে । আমার লোভাতুর দষ্টি ভদ্রমহিলার নজরে পড়ে থাকবে । তিনি চামচের মাথায় ভাল মাংসের পিস খুঁজতে লাগলেন । এরই ফাঁকে উনার স্বা্মী পাতে ডিমের কোরমা পরিবেশন করলেন । আমিও ‘স্লো এন্ড স্টেডি উইনস দ্য রেস’ এর কিঞ্চিৎ মডিফিকেশন করে ‘ মিডিয়াম ফাস্ট এন্ড স্টেডি উইনস দ্য রেস’ চালিয়ে যেতে থাকলাম ।

এরই মঝে কচি গরুর গর্দান ও সিনার কয়েক টুকরা সাবাড় করেছি । এবার পাতের শোভা বর্ধন করল বড় দুটি গলদা চিংড়ি ভূনা । নরমাল আইটেমও বাদ গেল না । চেখে নিলাম সবই, একটু আলু ভরতা, ভেজিটেবল, মুড়ি ঘন্ট...। ভুঁড়ি ততক্ষণে স্থিতিস্থাপকতার প্রান্তসীমায় উপনীত , এলো ডেজার্ট-ঘণ দুধের পায়েশ , পুডিং আর কোক ।

পূণ্যার্থী নিমন্ত্রনকারিনীর ভোজে উদরপুর্তি করে বাসায় ফিরলাম । স্ত্রীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মনে মনে ভাবলাম মহিলাটির জন্য হজে গিয়ে প্রাণভরে প্রার্থনা করব । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।