কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! ৪
খালা কেঁদে কেঁদে গাল ফুলিয়ে বুক ভাসিয়ে ফেলেছেন। খালুর চোখে মুখে পানি ছিটানো হচ্ছে।
হঠাৎ খালু নড়েচড়ে উঠলেন। সবাই চিৎকার দিয়ে উঠল। খালা কারো তোয়াক্কা না করে খালুর প্রশস্ত বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
খালু একটু সুস্থ হয়ে বলে উঠলেন, “আমি মারা গেছি এই সংবাদ কে দিছে?”
খালা বললেন, আসমা।
আসমা বলল, মিসেস কবির।
মিসেস কবির বললেন, মিসেস শফিক।
মিসেস শফিক বললেন, অনিন্দিতা।
অনিন্দিতা বলল, তাসলিমা।
তাসলিমা বলল, মিসেস রহমান।
মিসেস রহমান বললেন, সুস্মিতা।
সুস্মিতা বললে, নিগার।
অতঃপর নিগার বলল, “কই, আমাকে তো হাবিবা নিজেই ফোন করে বলল, “আমার স্বামী মারা গেছে”। “
খালা বললেন, “আমি বলেছি? কি বলেছি?”
নিগার বললেন, “তুই ঠিক এভাবে বলেছিস - “আমার স্বামী মারা গেছে”।
“
“আমি বলেছি?”
“অবশ্যই তুই বলেছিস”।
“ধেত তুই মিথ্যা বলছিস”।
“আমি কিজন্যে মিথ্যা বলব?”
খালা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। খালু তীক্ষ্ণ সন্দেহের দৃষ্টিতে একবার খালা আর একবার নিগার আন্টির দিকে তাকাচ্ছেন। প্রকৃতি তার জীবনে বড় একটা প্যাঁচ লাগিয়েছে।
এই প্যাঁচ খোলা বড় কঠিন হবে। বড় কঠিন।
৩
আমি আর খালু বাজার থেকে ফিরে বাসার কাছাকাছি আসতেই একটা কান্নার শব্দ পেলাম। যেমন তেমন কান্না নয়, একেবারে কর্ণভেদী মর্মভেদী কান্না। এ কান্নার সাথে শুধুমাত্র মরাবাড়ির কান্নারই মিল পাওয়া যায়।
খালু আমার হাত চেপে ধরে বললেন, কি রে কাশেম, কান্নার আওয়াজ আসে ক্যান?
আমি শুকনো মুখে বললাম, জানি না খালু।
আমরা তড়িঘড়ি করে বাসায় ঢুকলাম। পাশের বাসার নতুন ভাড়াটিয়াদের ছেলেটাকে দেখলাম বাসার মধ্যে। সে আবার খালুকে চেনে না।
খালু তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে বাবা?
সে বলল, এ বাড়িতে একজন মারা গেছে।
খালুর হাত থেকে বাজারের ব্যাগ পড়ে গেল। হঠাৎ মরাকান্না জুড়ে দিলেন তিনি নিজেই। ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন, কে মারা গেছে?
সে বলল, এ বাড়ির কর্তা আখতার সাহেব মারা গেছেন।
কে মারা গেছে?
আখতার সাহেব মারা গেছেন।
এ কথা শুনে, আমার প্রিয় খালু জনাব আখতারুজ্জামান, অজ্ঞান হয়ে মাটিতে আছড়ে পড়লেন।
২
নিগার ফোন করল সুস্মিতাকে। “অ্যাই জানিস, হাবিবার স্বামী মারা গেছে”।
সুস্মিতা ফোন করল মিসেস রহমানকে। “ভাবী জানেন, আখতার ভাই মারা গেছেন”।
মিসেস রহমান ফোন করলেন তাসলিমাকে।
“তাসলিমা জানো, হাবিবার স্বামী মারা গেছেন। না না, কারণ তো জানি না, বয়স হয়েছিল, হার্ট অ্যাটাক মনে হয়”।
তাসলিমা ফোন করল অনিন্দিতাকে। “বৌদি জানেন, আখতার সাহেব হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন”।
অনিন্দিতা ফোন করল মিসেস শফিককে।
“ভাবী, খুব খারাপ খবর। আখতার ভাই মারা গেছেন। হার্ট অ্যাটাক। না না, কেন জানি না। কি জানি, হয়তো মেয়ে নিয়ে কিছু হয়েছিল, জানি না”।
মিসেস শফিক ফোন করলেন মিসেস কবিরকে। “ভাবী, হট নিউজ। আখতার সাহেব তো আজকে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। মেয়ে কি যেন করেছে, পালিয়েছে মনে হয় কারো সাথে, জানি না”।
মিসেস কবির ফোন করলেন আসমাকে।
“অ্যাই শোন, হাবিবার মেয়ে তো একটা ছেলের হাত ধরে ভেগেছে। হাবিবার স্বামী শুনেই হার্টফেল করেছেন। বেচারা”।
আসমা ফোন করল হাবিবাকে। “অ্যাই তুই শক্ত হ।
কাঁদবি না একদম”।
“আমি কাঁদব কেন?”
“মানুষ একদিন না একদিন মারা যায়। এটাই পৃথিবীর নিয়ম”।
“তুই কি বলছিস এসব?”
“তোর মেয়েটা ফোন করেছে? কার সাথে ভেগেছে জানিস?”
“এসব কি বলছিস তুই? আমার শামিম আরা আবার কার সাথে ভাগবে?”
“বুঝতে পারছি, তুই খুব মেন্টাল প্রেশারের মধ্যে আছিস। দাঁড়া আমি আসছি”।
“দ্যাখ আসমা তোর কথা আমি কিছুতেই ধরতে পারছি না। কেউ মারা গেছে নাকি?”
“দ্যাখ, বিধবা হওয়াটা খুব কষ্টের আমি জানি, আমার মা-কে দেখেছি কি ভয়াবহ কষ্ট...”
“বিধবা! আমি! আ...আ...আখতার কি মারা গেছে?”
“আমি আসছি। তুই একদম কাঁদবি না বোকা মেয়ে”।
“আখতার মারা গেছে!!”
“তুই একদম কাঁদবি না। আমি আসছি”।
১
আমার খালা হাবিবা সুলতানা একজন সুখী মহিলা। উনার সুখের প্রধান কারণ উনার কৃতি মেয়ে শামিম আরা।
শামিম আরা মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর, ব্যবহারও তেমন মধুঝরা, রেজাল্টও তেমন টপ ক্লাস। হাবিবা সুলতানার বুক মেয়ের গর্বে সবসময়েই স্বাভাবিকের চেয়েও কয়েক ইঞ্চি বেশি ফুলে থাকে।
তো আজ ঘণ্টাখানেক আগে খালাকে ফোন দিয়েছিল তার স্কুল জীবনের বান্ধবি নিগার।
তাদের কথাবার্তা নানাবিধ মেয়েলি বিষয়াদি ঘুরে অবশেষে স্থির হল জাতীয় বাংলাদেশ আচার প্রতিযোগিতার উপর।
আমার খালার একটা স্বভাব হচ্ছে উনি কথা বলার সময় যখন মেয়ের প্রসঙ্গ আসে তখন তিনি “আমার মেয়ে” বা “শামিম আরা” এভাবে না বলে বলেন “আমার শামিম আরা”। তার ধারণা এভাবে তার মেয়েজনিত গর্ব আরও ভালোভাবে প্রকাশ পায়।
তো নিগার তাকে ফোনে বললেন, “অ্যাই তুই কি আচার কম্পিটিশনে গিয়েছিলি?”
“নাহ। ”
“তোর ফ্যামিলিতে কেউ যায় নাই? আমার শাশুড়ি বুড়া মানুষ হয়েও তো কম্পিটিশনে ফাইট দিয়ে আসল”।
“আমার শামিম আরা গেছে”।
“কি বললি?”
“আমার শামিম আরা গেছে”।
“ক্কি?”
“আমার শামিম আরা গেছে”।
“ওহ আমি সরি, আমি আসতেছি, তুই একদম ভেঙ্গে পড়বি না, একদম না...”
অতঃপর খুট করে কেটে গেল ফোন। হাবিবা সুলতানা ঈষৎ অবাক হলেন।
নিগার এরকম ব্যবহার করল কেন? আর খুট করে ফোন রেখে দেবার মানে কি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।