আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি হাটতে চাই মুক্ত স্বাধীন গনতন্ত্রের পথে....... শওকত হোসেন

একজন তরুন.. প্রতিটি মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষিতে জন্ম গ্রহণ করে। সামাজিক অগ্রগতি তথা অর্জিত জ্ঞানের সারসংকলন করে সে সামনের দিকে অগ্রসর হয় অর্থাৎ বর্তমানকে ছাপিয়ে ভবিষ্যতের পথ বিনির্মান করে। আর যদি বর্তমান থাকে অস্থির, সামাজিক দু:শাসন, নৈরাজ্য আর দুর্নীতি-অনাচারে ভরপুর তখন বর্তমানকে ভেঙ্গে, ভগ্নস্তুপের উপর দাড়িয়ে তাকে সামনে চলতে হয়। আমার জন্মও এক দারুন সময়ের প্রেক্ষাপটে। ’৯০ এর গণআন্দোলন যখন বৈপ্লবিক পরিবর্তন না ঘটিয়ে শুধুমাত্র রিফর্মেশনে রূপ নিল তখন।

এখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। সারা দেশের উপর চলমান অনাচার, দুর্নীতি আর অরাজকতার মত এখানেও চলছে অনিয়ম, আর ফ্যাসিবাদী কালা-কানুন। । বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঈশ্বরালয়ের মত ভৃত্যের চর্চা হওয়া উচিৎ নয় এটা প্রগতি চর্চার জায়গা। আর আমাদের ‘স্বাধীন দেশের’ স্বাধীন শিক্ষকগণ প্রগতিকে বাদ দিয়ে সাদা আর নীল দলে ভাগ হয়ে, শিক্ষাকে দলাদলির বাজারে পরিনত করছেন।

গবেষনার মত বাজে কাজে সময় নষ্ট না করে তারা এখন সাদা-নীলের বাজারে কেনাকাটায় ব্যস্ত। এখন প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রের পাতা ( যে নূন্যতম সংখ্যা জনতার সামনে আসে ) ছাত্রী নিপীড়ন, বক্কর-জোবায়েরদের হত্যা, রাম-দা, চাপাতি আর দেশজ (স্ট্যাম্প) অস্ত্রের বিভৎস দৃশ্যে কালো হয়ে উঠছে। ধীরে ধীরে ছাত্র-ছাত্রীদের নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে ইউজিসির (বিশাববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশন) ২০ বছর মেয়াদী কৌশল পত্র। বিভাগীয় উন্নয়নসহ নানা নামে বেনামে আরোপ করা হচ্ছে বর্ধিত ফি।

লেখা-পড়ার মান খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে । ছাত্র-ছাত্রীরা শেণীকক্ষ থেকে মনোযোগ হারাচ্ছে। অথচ সমস্যা বিবেচনা না করে শ্রেণী কক্ষের পাঠদান উন্নত না করে জরিমানা ধরা হচ্ছে, সমস্যার কোন প্রতিকার হচ্ছে না। হতাশা আর ব্যর্থতা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে। অর্ধ আবাসিক হলগুলোতে চলছে অশ্লীল সব নিয়ম নীতির চর্চা।

সরকারের তাবেদার ছাত্র সংগঠনগুলোর একচেটিয়া দখল দারিত্বে দিশেহারা সাধারন শিক্ষার্থীরা। জাতীয় নেতা-নেত্রীর আগমনে প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের শো-ডাউনে যেতে হয় ক্লাস, ল্যাব বাদ দিয়ে। মাঝে মাঝে সরকারি ছাত্র-নেতাদের টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে দেশজ অস্ত্র হাতে নামতে হয় মাঠে। এ দালালী বা তেলবাজীর সমর্থনে মাঠে না নামলে প্রতিনিয়ত চলে হুমকি আর শারীরিক মানসিক নির্যাতন। অনেকে আহত হয়, পঙ্গু হয় সারা জীবনের জন্য।

সরকারি ছাত্র-নেতাদের ধ্বংসাত্বক প্রতিহিংসার কারনে ঝরে পরে অনেক তাজা স্বপ্ন। যে অভিবাবকেরা সারা দিন মাঠে ঘাম ঝরায় আর ছোট্র একটি স্বপ্ন লালন করে, মাঝে মাঝে তারই উঠানে জমা হয় তার স্বপ্নের নায়কের নিথর দেহ। চলছে ২০১২ সাল। গনতন্ত্রের মানস কন্যার আমল। এখানে স্বপ্ন দেখা পাপ আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মহাপাপ ,কৌরানিক সংবিধানের পবিত্রতা লঙ্ঘন।

এখনো রাজপথে গর্জন করে রায়ট কার, পুলিশের আঘাতে বৃদ্ধ শিক্ষক আহত হয়, গনতন্ত্রমনা ছাত্ররা নির্যাতিত হয়। আমি পদার্থ বিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। আর দশটা ছেলের মত আমিও অনেক বড় স্বপ্ন আর আশা নিয়ে এ ঐতিহ্যবাহী মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন বাস্তবতার কঠিন চাপে হারিয়ে গেছে স্বপ্নদেখার সেই সোনালীক্ষণ। স্বপ্ন দেখতেও এখন ভয় হয়, পাছে কেউ জেনে ফেললে! এত ভয়! তবুও লুকিয়ে লুকিয়ে স্বপ্ন দেখি।

স্বপ্ন দেখি সুন্দর ভবিষ্যতেরÑকাঙ্খিত সমাজেরÑসুন্দর দেশের। পদার্থ বিজ্ঞানের উপর আমাদের দেশে কাজ করার কোন উচ্চতর প্রতিষ্ঠান নেই। তাই জীবনের তাগিদে সবাই না হলেও ৯০% বা তারও বেশি ব্যাংক, এনজিও বা সরকারি অফিসের কর্মচারি হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করে। কেউ কেউ বিসিএস পরিক্ষার মাধ্যমে প্রশাসনে যায় আবার কেউ কেউ নিজেই ব্যবসা শুরু করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রতিবছর গড়ে দু’ একজন বিদেশে পাড়ি জমায় উচ্চ শিক্ষার জন্য তবে স্বাভাবিক নিয়মের অধীনে কেউ ফিরে আসে না।

কারন দেশে এসে তারা কি করবে ? মন্ত্রীর দালালি? নাকি টেন্ডারবাজী? যে দু’চার জন দেশের মাটিতে শত ঝামেলা সহ্য করেও টিকে থাকে তারা কোন প্রকার আর্থিক সহযোগিতা পায় না। সাদা বা নীল রঙ গায়ে না মাখলে এখানে বরাদ্দ পাওয়া যায় না। আর যারা এ রঙে নিজেকে রাঙিয়েছে তারা গবেষনার মত বাজে কাজে সময় নষ্ট করে না। তারা ছাত্র-ছাত্রী নামক পশুশ্রেণীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না। তাদের সম্পর্ক থাকে ঐ উঁচু তলার মনুষ্য আকৃতির এক বিশেষ ধরনের প্রাণীদের সাথে-যাদের ঐহিহ্যের সাথে লেখা-পড়ার কোন অঙ্গাঙ্গি সমন্ধ নেই কিন্তু তারাই হয় নীতি নির্ধারক।

প্রচলিত সরকারি রাজনীতি আর ক্ষতিকর প্রথা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম হতে শুরু করে টি এস সি, কার্জন হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ফুলার রোড, স্বোপার্জিত বাঙলা, অপরাজেয় বাঙলার সবটুকু দখল করে আছে। এরা এখান হতে পয়দা করতে চায় গোলাম আর একান্ত বাধ্য কিছু ভৃত্য। আর যারা মাথা উচঁ করে দাড়াতে চায় তারাই স্থান পায় রেড লিস্টে। কি সুন্দর আমাদের ক্যাম্পাস! কি সবুজ আমাদের টি এস সি! কি দারুন আমাদের গণরুম! গণরুমের ছাড়পোকার কামড় আর অত্যাচারে জর্জরিত স্বপ্নের যেটুকু এখনো আমার হৃদয়ে আছে সেটুকুই আমার সম্বল। আর এ সম্বলকে আকড়ে ধরে বাকি পথ চলতে চাই।

দুর্নীতি আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ সোচ্চার রেখে জীবনা খরচ করতে চাই মানুষের জন্য। উচ্চতর ডিগ্রি (ডক্টরেট) অর্জনের ইচ্ছা আর নাই। ক্ষয়ে যাওয়া স্বপ্নের ধ্বংসাবশেষ থেবে জন্ম নেয়া ছোট্ট গাছের ছায়ায় দাড়াতে চাই মাথা উঁচু করে। তবে বেচে থাকার তাগিদে শিক্ষকতাই করবো। প্রচলিত প্রবাদ মতে ‘ শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’।

শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বৈরাচার চালিয়ে একটি দেশের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব না। মুক্ত আর গনতান্ত্রিক পরিবেশ গনতান্ত্রিক জ্ঞানের সৃষ্টি করে, মুক্ত মনের জন্ম দেয়। আর প্রচলিত রাজনীতি, প্রশাসনিক কাঠামো ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা বিকৃত করছে, ধ্বংস করছে সৃজনশীলতা। হতাশা আর হাহাকারে ভরে দিচ্ছে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জীবন। এহেন পরিস্থিতিতে সবার আগে চাই স্বপ্ন দেখার পরিবেশ।

আগামি প্রজন্ম যেন খোলা চোখে স্বপ্ন দেখতে পারে। স্বপ্ন দেখার এ রাজপথ দখল করে আছে সামান্য কিছু অতিকায় কদাকার বন্যমানুষ । সুন্দর দেশ,কাঙ্খিত সমাজের লক্ষে আমাদেরই নিতে হবে রাজপথের ঝাড়–দারের ভূমিকা। স্বপ্ন দেখার পরিস্কার রাজপথে চলার স্বপ্ন দেখি আমি। আমি হাটতে চাই মুক্ত পথে, সত্যিকারের গনতন্ত্রের পথে।

আর প্রতিদিন এ গনতান্ত্রিক রাজপথের ধুলো মাড়িয়ে দাড়াতে চাই কলেজের বারান্দায়, হয়তো সেখানে ভবিষ্যতের একদল তরুন গভীর আগ্রহে দাড়িয়ে আছে…… ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.