আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিউশনির গল্প ও মন-খারাপের আখ্যান

দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া না! ১. ভার্সিটি পড়ুয়া আশিভাগ স্টুডেন্টই মনে হয় টিউশনির সাথে পরিচিত। বাকী বিশভাগের মধ্যেই ছিলাম কিছুদিন আগেও। বন্ধুদের দেখতাম প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে বের হয়ে যেত। কেউ পড়াতো ছাত্র। কেউবা স্টুডেন্ট।

বিনিময়ে মাস শেষে একটি বিশেষ দিন তাদের পকেট আগুনের মত গরম হয়ে উঠতো। আর সেই উষ্ণতা কমাতাম আমরা। বন্ধুও কার্পন্য করতো না। মনে মনে ভাবলাম স্টুডেন্ট লাইফ শেষ হয়ে আসতেছে। এই অভিজ্ঞতা না হইলে লাইফটা পুরাই বৃথা।

যে করেই হোক একটা টিউশনি লাগবেই। ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়- তাই পেয়েও গেলাম একটা টিউশনি। অসাধারন অভিজ্ঞতা। হঠাৎ করে একজনের স্যার হয়ে গেলাম। ভুল হলো।

একজন না। ছাত্রের বাবা-মা সবাই স্যার ডাকা শুরু করলো। দুদিনের মধ্যে স্টুডেন্ট এর সাথে হিমু-বাদল সম্পর্ক হয়ে গেলো। তাই যেসব অভিজ্ঞতা হচ্ছিলো তা বলতে গেলে নোটের পর নোট লেখা লাগবে। আজ বরং সেই পকেট গরম হবার কাহিনী বলি।

এই এক মাসের কখনো ভাললাগা,কখনো পেইন অনুভব হওয়ার অভিজ্ঞতার পর সেই কাঙ্খিত দিনটি এলো। আন্টি পড়ানো শুরু করার আগেই এসে বলে গেলেন -পড়ানো শেষে একটু থাকবেন। এই ইঙ্গিতের অপেক্ষাতেই তো ছিলাম। না বোঝার তাই কোনো প্রশ্নই আসে না। খুশি খুশি মনে পড়ানো শেষ করলাম।

পড়ানো শেষে আন্টি দু একটা মধুর মধুর কথা বলে কয়েকটা বড় নোট ধরিয়ে দিয়ে গেল। আহ শান্তি। শান্তিগুলো টপাটপ পকেটে ভরে ফেললাম। যারা টিউশনি করায় তারা বোঝে এই এক মাসের পরিশ্রম শেষে মূল্য পাওয়াটা কতটা আনন্দের। স্টুডেন্ট এর বাড়ি থেকে বের হতেই পকেটে হাত।

কয়টা দিলো? জানি কয়টা। তবু গোনাগুনি করার একটা শান্তি আছে না? না ঠিক আছে। ভুল করে বেশি দেয় নি। ২. ফুরফুরে মেজাজে হাটতে থাকলাম। দুইদিন থেকে আসি আসি করতে থাকা অভাবটা হুট করে এখন একশ হাত দূরে।

কিছুদূর হাটার পর ফোনটা বের করে এক ফ্রেন্ডকে ফোন দিলাম। -দোস্ত,রাতে খেয়ে ফেলছিস? আজকে তোরে খাওয়ামু। দোস্ততো মহা খুশি। - কুকিজার না মাস্টার শেফ? -তা দুইজন বের হবার পর ঠিক হবে। -ওকে মামা।

লাবিউ। এবার রিক্সায় ওঠা যাক। রাতের বয়স বেডে যাচ্ছে। বন্ধুকে নিয়ে আবার বের হতে হবে। -ওই রিক্সা যাবা? -উডেন, কই যাবেন? -আই পম রুয়েট।

-উডেন ১০ টাকা। উঠে পড়লাম। কিছুক্ষন পর রিংটোন বেজে উঠলো। এক ফ্রেন্ডের ফোন। -মামা,সুসংবাদ।

সাইটের র‌্যাংকিং তো আরো একহাজার আগাইছে। -আহ মধু। সব সুসংবাদ আজকেই পাইয়া গেলে গোটা মাস কি পামু? -মানে? -কিছুনা। রুমে আইসা অনলাইন হইতেছি। বিস্তারিত কমুনে।

রিক্সায় থেকে নেমে রিক্সাওয়ালার ডিমান্ডের চেয়ে বেশিই দিয়ে দিলাম। তারপর মানিব্যাগ পকেটে ঢুকাতেই মনটা খচখচ করতে লাগলো। এইরে, আমি তো আন্টির দেয়া নোটগুলো মানিব্যাগে রাখি নি। পকেটে কোনো ভাবে ঢুকিয়েছি। মানিব্যাগটা বের করে নিলাম একহাতে।

তারপর দেখি কয়েকটা নোট একেবারে পকেটের গোড়ায় অযত্নে মাথা বের করে রয়েছে। সবগুলো বের করে আবার গুনলাম। আবার। বেশ কয়েকটা নোট মিসিং! ৩. সাথে সাথে ৩৬০ডিগ্রী এঙ্গেলে চোখ ঘুরিয়ে আনলাম। যেখানে রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়েছি সেখান থেকে শুরু করে যেখানে দাঁড়িয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা আবিস্কার করেছি সেইখান পর্যন্ত পুরো যায়গা মোবাইলের আলোতে তন্ন তন্ন করে খুজলাম।

কিচ্ছু নেই। যেনো একটু আগেই ঝাড়ুদার এসে গোটা রাস্টাটা ঝাড়ু দিয়ে গেছে। কোথায় কোথায় পরতে পারে? আগে রিক্সায় উঠি তারপর ভাবা যাবে। এক রিক্সায় উঠে বসলাম। নোটগুলো গুনেছিলাম স্টূডেন্ট এর বাড়ি থেকে বের হবার পর।

ওখানে খুজতে হবে। একবার ফোনও করেছিলাম পকেট থেকে মোবাইল বের করে। ওখানেও খুজতে হবে। এলাকায় পৌছাতেই যেন আমাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। লোডশেডিং।

উপায় নেই। একটা টর্চ ম্যানেজ করা লাগবে। তাই স্টুডেন্ট এর বাসার দরজায় নক করলাম। আন্টি বেড়িয়ে এলেন, -কে? -আমি সাদাবের টিচার। -স্যার আপনি? -আমার একটা টর্চ লাইট লাগবে।

-এত রাতে টর্চ! কি বলবো? বলে বসলাম, -আন্টি আমার চাবি হারিয়ে ফেলেছি। এখানেই রাস্তায় কোথাও পড়েছে। একটু খুঁজে দেখবো। এইসব পরিস্থিতিতে পড়লে মনীষীরা কিভাবে সত্যটা বলতেন তা জানার খুব ইচ্ছাও হলো মনে মনে। বাড়িতে হুরোহুরি শুরু হয়ে গেছে।

সবাই টর্চ খুজছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো এক বিশেষ কারনে আজকেই টর্চটা সবচেয়ে দুর্গম যায়গায় লুকিয়ে পড়েছে। আন্টি আবার অতিরিক্ত টেনসড। গোটা বিল্ডিং এ খোঁজ লাগালেন।

অবশেষে ঢাউস সাইজের একটা টর্চ ম্যানেজ হলো। -আন্টি আমি সাদাবকে নিয়ে গেলাম। একসাথে খুঁজে ওকে রেখে যাবো। -ঠিক আছে। সমস্যা নেই।

শুরু হলো গরুখোঁজ। স্টুডেন্টকে প্রথমেই বলে নিলাম -সাদাব, চাবির সাথে কিছু কাগজও হারিয়েছে। আমি চাবি দেখছি,তুমি মেইনলি কাগজ জাতীয় কিছু পাও কিনা দেখো। -রজার দ্যাট স্যার। নোট গুনেছিলাম যেখানে সেই যায়গায়,আর ফোন বের করেছিলাম যেখানে সেই জায়গা দুটোতে স্টুডেন্টকে রেড এলার্ট দিয়ে দিলাম।

কোনো লাভ হলো না। দুইজোড়া চোখের চেয়ে পড়ে থাকা নোটগুলো অতিরিক্ত চালুমাল। ধরাই দিলো না। আগেই বলেছিলাম স্টডেন্ট এর মা অতিরিক্ত কনসার্ণ। ফোন করে একবার বললেন যেসব যায়গায় মোবাইল বের করেছিলেন সেগুলোতে খুজে দেখবেন।

তাড়াহুড়া করবেন না। সারারাত খুঁজলেও সমস্যা নেই। ওদিকে আবার বন্ধুও বাইরে খেতে যাওয়ার জন্যে সেজেগুজে রেডি হয়ে আছে। মাঝে মাঝে মিসডকল দিয়ে স্মরন করিয়ে দিচ্ছে। নাহ।

পেলামই না। একসময় আশা ছেড়ে স্টুডেন্টকে এগিয়ে দিতে গেলাম। আন্টি বরাবরের মত উৎকন্ঠিত কন্ঠে বললেন- -পেয়েছেন? -পেলাম না তো। -ইশ আমারই খারাপ লাগছে। আর কিছু হারায় নি তো? মহিলা কি কিছু আন্দাজ করলো? -আরে নাহ আন্টি।

চাবিই। তবেখুব ইম্পর্টেমট চাবি। ট্রাঙ্ক খুলবো কিভাবে ভাবছি। -আমি সাদাবের স্টাডি রুমেও খুজে দেখলাম,নেই। -থ্যাঙ্ক ইউ আন্টি।

থাক ব্যাপার না। চাবিই তো। আসলেই ব্যাপার না। জীবনে কত চাবি আসবে যাবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।