কতিপয় এক ভাইকে বলিয়াছিলাম,TUTIONI লাগিবে। অনেক অপেক্ষার পর তাহার কৃপাদৃষ্টি লাভ করিলাম। তিনি আমার হল এর পাশে এক কোচিং সেন্টার এ ক্লাস নেয়ার ব্যাবস্থা করিয়া দিলেন। নবম- দশম শ্রেণীর গণিত লইতে হইবে। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া আমাকে দেখিয়া কোচিং প্রধান খানিকটা দমিয়া গেলেন।
সমস্যা আমার যোগ্যতার নয়, চেহারার। বয়স টা যুবকের হওয়া সত্ত্বেও মুখমণ্ডলে কৈশোরের ছাপ জ্বলন্ত । এখন ও অনেকে আমাকে নবম দশম শ্রেণীর ছাত্র বলিয়া ভুল করিয়া থাকেন। অবশেষে চেহারায় ভারিক্কী আনার জন্য দাড়ি রাখিয়া দিলাম। কোচিং প্রধান আমাকে বলিলেন," আপনাকে ছাত্র পড়ানোর জন্য কঠোর হইতে হইবে এবং মুখে সবসময় গাম্ভীর্য ধরিয়া রাখিতে হইবে"।
তাহার আরও অনেক বিরক্তিকর উপদেশ গলধকরন করিয়া পরের দিন কোচিং এ আসার পন করিয়া হলে ফিরিয়া আসিলাম। সারারাত TENSION এ ঘুমাইতে পারিলাম না। কিভাবে পড়াইব, কি দিয়া শুরু করিব খালি এসবই ভাবিতে লাগিলাম।
পরের দিন ক্লাস শুরু করার ১৫ মিনিট আগে কোচিং এ গিয়া উপস্থিত হইয়া অতিথি রুমের এক চেয়ারে বসিয়া পরিলাম। আশেপাশে কিছু বিখাউজ ছেলেপেলে বসিয়া তাদেরই এক সহপাঠিনীকে লইয়া রসবোধক আলাপ করিতেছিল।
তাহারা আমাকে কেয়ারই করিলনা। খানিক সময় পর কোচিং প্রধান আমাকে দশম শ্রেণীতে গিয়া পরিচয় করাইয়া দিলেন। বলিলেন," ছাত্রছাত্রীরা ,তোমরা সকলে স্যার এর নিকট হইতে সকল বিষয় বুঝিয়া লইবা, মনে কোনও প্রশ্ন রাখিবা না"। আর আমার হাতে একটি বেত ধরাইয়াদিয়া বলিলেন,"যে আপনার কথা মানিবে না, তাহাকে যথোপযুক্ত উত্তম মাধ্যম দিতে ভুলিবেন না"। ক্লাসে সর্ব সাকুল্লে ২৫ জন ছাত্রছাত্রী ছিল।
শুরু করিবার আগে কোঁত করিয়া একটা ঢোক গিলিলাম । সবাই দেখি জুলজুল চোখে আমার পানে তাকাইয়া আছে। পরিচয় পর্ব শেষ করিবামাত্রই পিছনের বেঞ্চে চোখ গেল। দেখিলাম ঐ বিখাউজ ছাত্ররা পিছনে বসিয়া আমাকে দেখিয়া হাসিতেছে আর কি যেন কানাকানি করিতেছে।
ধারার অঙ্ক দিয়া শুরু করিলাম।
যখন ই বোর্ড এ লিখিতে লাগিলাম তখনই পিছনে ফিসফিস শুরু হইয়া গেল। অতঃপর একটা অঙ্ক করাইয়া বলিলাম বুঝিয়াছ কিনা। তাহারা মাথা নাড়িল। ডানে বায়ে না, উপরে নিচে। অর্থাৎ বুঝিয়াছে।
এমতবস্থায় এক ছাত্রী বলিল," স্যার আপনার কলেজে কি মেয়েরা পড়িত"। আমি বলিলাম, হ্যাঁ। ইহা শুনিয়া সবাই কেমন জানি রহস্যময় হাসি হাসিতে লাগিল" এমন সময় পিছন থেকে সেই বিখাউজ দের একজন বলিয়া উঠিল "স্যার আপনের দাঁড়ির স্টাইলডা ফাইন। চিন্তা করতাসি আপনের মত স্টাইল করামু। কুন সেলুন থেইকা করাইছেন কনদিনি"।
ইহা শুনিয়া ব্রহ্মরন্ধ্র তেজে জ্বলিয়া উঠিল। তাহাকে ভতসরনা করিয়া বলিলাম, পাঠে মনোযোগ দাও। ইহাতে দেখিলাম তাহারা মোটেও ভয় পাইল না। যতই আমি ধারার অঙ্ক নিয়া মাতামাতি করি ততই তাহারা কথার ধারা উপধারা সৃষ্টি করিয়া আমাকে ধারার ধারা হইতে বিচ্যুত করিতে লাগিল। ফলে আমার ঘর্মগ্রন্থি দিয়া অবিরাম ধারায় বর্ষণ শুরু হইয়া গেল।
হটাত কানে আসিল কতিপয় ছাত্রী আমার দাঁড়ি ছাগলা নাকি অন্য ধরনের তা নিয়া গবেষণা করিতেছে। নিজেকে তখন আমার ছাগল বলিয়াই মনে হইতে লাগিল। কারন শিক্ষক হইয়া কিছুতেই ছাত্রছাত্রীদের দমন করিতে পারিতে ছিলাম না। অবশেষে ৪৫ মিনিট সমাপ্ত হইতেই সবকিছু ক্ষান্ত দিয়া বাকি ইজ্জত টুকো হাতে লইয়া হলে ফিরিয়া আসিলাম। এর মধ্যে কোচিং প্রধান এর ফোন আসিল।
বলিল, আজ ছিল আপনার টেস্টিং ক্লাস। আপনি ভালই পড়াইয়াছেন। ছাত্রছাত্রীরা আপনার উপর প্রীত হইয়াছে। তবে আপনাকে খানিকটা কঠোর হইতে হইবে। ইহা বলিয়া তিনি রাখিয়া দিলেন আর আমি তখনও ভ্যাবাচেকা খাইয়া ঘটনাগুলো চিন্তা করিতে লাগিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।