আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পঞ্চম পর্বঃ দেবীর অভিশাপ

নিজের সম্পর্কে কিছুই লিখার নাই। ওরা মাত্র দুজনের একটা ছোট দল। প্রথমজন কাং-চি, অন্যজন তেখ্রা। কাং-চি লম্বায় প্রায় ৭ ফুটি একটা দানববিশেষ, অন্যদিকে বেটে তেখ্রা টেনেটুনে মাত্র সাড়ে চার। গোত্রগত ভাই তারা।

দুজনের এই ছোট এই দলের দলনেতা হচ্ছে তেখ্রা। ওরা দুজনে হিমালয়ের অতিপ্রাচীন এক গোপন সংগঠনের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছে। তাদের মত আরো অনেক গুপ্তচর রয়েছে এই সংগঠনের অধীনে। এদের কাজ দুই প্রকার;ইয়েতিদের উপরে নিয়মিত নজর রাখা, যদি কোন ইয়েতি কাজক‌র্ম তাদের সংগঠনের স্বা‌র্থ পরিপন্থী হয়, তাকে গুম করে ফেলার ব্যবস্থা করা। তবে তাদের কাজ বেশি নয়, গত কয়েক হাজার বছরে ইয়েতিরা তাদের মতই আছে, তাদের মাঝে বেশি চাঞ্চল্য দেখা যায়নি।

সংগঠনের উচু প‌র্যায়ের নেতারা ইয়েতিদের নিয়ে বরাবরই বেশ চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু তাদের দু:চিন্তা এতদিনে বাস্তব রুপ নেয়নি। আজ কি নেবে? তেখ্রা ভাবতে শুরু করে কবে এই অর্থহীন কষ্ট শেষ হবে। দিনের পর দিন সে এই গুপ্তচর বৃত্তি করে চলেছে। আর কতদিন পরে তার অবস্থার উন্নতি হবে, সে সংগঠনের আরও উচ্চপদে উঠতে পারবে।

এই সংগঠন ধারন করে শতাব্দী প্রাচীন গোপন জ্ঞান। কেবলমাত্র অতি উচ্চ প‌র্যায়ের নেতৃত্বই পারে সেই জ্ঞানের গোপন আধারে প্রবেশ করতে। সেই প্রবেশাধিকার চায় তেথ্রা নিজেও। তার কাছে খুব অবাক লাগে, এই সব ইয়েতিদের জন্যে কেন এতো কষ্ট করে এতো শক্তিশালী একটি সংগঠন। এরা তো প্রায় পশুর পর্যায়ে পড়ে।

তবে এটাও ঠিক যে এই ইয়েতিদের মাঝে অদ্ভুত কিছু জিনিস আছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই। ইয়েতিদের বেশ কয়েকটি গোত্র আছে আর প্রতিটি গোত্রের আছে অসংখ্য দল উপদল। এদের নিজেদের মাঝে যোগাযোগ করার অদ্ভুত কোন একটা উপায় আছে, যেটা আর কোন নিম্নশ্রেনীর পশুর মাঝেই দেখা যায় না। তাই এরা পশুর মত চলাফেরা করলেও তেথ্রা এদের পশু বলে মানতে পারে না। তাদের প্রতিটি দলেই আছে একজন দলপতি, প্রতিটি গোত্রে আছে একজন সর্দার।

প্রতিটি গোত্রে আরো একজন করে আছে, এদের তেথ্রা দুচোখে দেখতে পারে না। এরা ডাইনী, এরা জাদু করে। তাকে কয়েকবারই প্রচন্ড ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়েছিল এই ডাইনীগুলোর জন্য। এরা সাংঘাতিক চালাক হয়, আর দেখতে ভীষণ কুৎসিত। কিছুদিন হলো ইয়েতিদের আচরণে পরিব‌র্তন এসেছে।

ওরা সবাই কেমন সতর্ক হয়ে গেছে, যেকোন কাজ করছে খুব সাবধানতার সাথে। যেন কিছু গোপন করতে চায়। তাদের আচরণগত পরিব‌র্তনের কথা সংগঠনে জানাতে সময় নেয়নি গুপ্তচরের দল। এই খবর জানতে পেরে স্বাভাবিকভাবেই সংগঠনের নেতারা কেউ খুশি হয়নি। তারা গোপন আলোচনায় বসেছে আর তেথ্রার মত লোকেদের উপরে জারি হয়েছে ভিন্ন নির্দেশ।

আগের মত আর ইয়েতিদের দলের কাছাকাছি যাওয়া চলবে না। ওদের কোনভাবে কোন কিছুতে উস্কে দেয়া যাবে না। তবে ওদের গতিবিধি আরো ভালভাবে লক্ষ্য করতে হবে। এর পরের যে নি‌র্দেশ আসে, সেটা তাকে আরও বেশি অবাক করে। ওদের মধ্যে কোন দলের সাথে যদি কোন মেয়ে মানুষ দেখা যায় তাকে ওদের থেকে তুলে আনতে হবে।

উচ্চ প‌র্যায় থেকে আপাত-সহজসরল এই নির্দেশ পেয়ে ওদের মতো সব গুপ্তচরদল অবাক হয়েছিলো। ইয়েতিদের মাঝে মানুষ আসবে কোথা থেকে, তাও আবার মেয়ে? এরা তো মানুষ এর সংস্প‌র্শ সম্পু‌র্ন ভাবে এড়িয়ে চলে। তবে কি তারা মানুষ শিকার করছে? তাও বা কি করে হয়, এখনো পর্যন্ত শোনা যায়নি ইয়েতিরা মানুষখেকো। ওরা বরং মানুষের মতোই অন্যান্য প্রানী ধরে এনে পুড়িয়ে খায়। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য কাঁচাও খেতে দেখা গেছে, কিন্তু মানুষ কখনোই নয়।

যে দলকে তেথ্রারা অনুসরন করছে, তারা এসেছে তিব্বদের উচ্চ মালভুমি থেকে। এরা কোন নি‌র্দিষ্ট গোত্রের নয় বরং এরা প্রতিটি গোত্র থেকে বাছাই করা সেরা যোদ্ধা। এটাই তথ্যটাই তেখ্রাকে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও তেখ্রা তেমন একটা ভয় পায় না এসব ইয়েতি, সে জাদুর মায়ায় নিজেকে এবং কাং-চি কে আড়াল করে নিতে পারবে বেশ ভালো করেই। দরকারে আরও ক্ষমতাশালী জাদু করার অধিকার দেয়া হয়েছে তাকে।

গত তিনমাস ধরে এই ছোট্ট দলটাকে অনুসরন করে চলেছে তেখ্রা। এই দলের নেতা একজন ডাইনী। সে শুধু জাদুবিদ্যায় পারদ‌র্শী নয়, একই সাথে একজন ভালো যোদ্ধাও। ওর নাম আংলু। তেখ্রা যে কয়েকবার ইয়েতিদের হাতে ধরা পরার অবস্থায় এসেছিল, প্রতিবার তার কারন ছিলো আংলু।

তখন একেবারেই প্রথম যুক্ত হয়েছিলো তেখ্রা গুপ্তচরের কাজে। আর এই কাজে বিশ্বাসী ছাড়া কাউকেই নেয়া হয় না কারন এরা সংগঠনের অনেক গোপন জিনিস জানে সেই সাথে এরা সংগঠনের জ্ঞানের একটা অংশ জানতে পারে। তো প্রথম যে দলের উপর তার গুপ্তচরবৃত্তি শুরু হয় সেই দলেই একটা শিশু ইয়েতির জন্ম হয়। ঐ বাচ্চাটার পশম ছিলো অন্য ইয়েতিদের তুলনায় অনেক ভিন্ন। বাচ্চাটার গায়ের পশমের রঙ ছিলো লালচে।

ঠিক যেন আগুনের মতো চোখ ধাধিয়ে দেয়। আর ঐ গ্রুপেই ছিলো আংলু নামের এই ডাইনী। বাচ্চাটাকে তুলে আনার পর তেখ্রা প্রথমবারের মতো বুঝতে পারলো ইয়েতি ডাইনী তাকে অনুসরন করতে পারছে কোন সমস্যা ছাড়াই। প্রচুর ভয় পেয়ে গিয়েছিলো তেখ্রা সেবার, তবে তেখ্রার সাথে থাকা গুপ্তচর আরো ভালো মায়া প্রয়োগ করে সে যাত্রা বেচেছিলো তারা, সেই সঙ্গী আজ সংগঠনের একজন উচু পর্যায়ের নেতা। যার সাথে তেখ্রার রয়েছে দারুন সম্পর্ক।

এরপর থেকেই সে যদি কোন ইয়েতিকে ভয় পায় সে হচ্ছে এই আংলু। তাই তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে উপযুক্ত সুযোগের, কাজ করতে হয়েছে সাংঘাতিক সত‌র্কতার সাথে। আজ সেই অপেক্ষার ফলাফল পেয়েছে তেখ্রা। কিছু আগেই সে পাকা খবর পেয়েছে, ইয়েতিদের দল কয়েকটি মানুষকে ধরেছে। ঐ পর্বত চুড়ায় যে মন্দির আছে তার আশেপাশেই লুকিয়েছে ইয়েতির দল, কখনো গুহার মুখ ছেড়ে বের হয়নি, কিন্তু তেখ্রা বেশ ভালো করেই জানত ওরা আছে আশেপাশেই।

কিন্তু তাদের কাজক‌র্ম বুঝতে পারেনি সে। ইয়েতিরা সাবধানতা অবলম্বন করে একবারের জন্যেও আগুন জ্বালেনি। কি করেছে কে জানে। কিছুক্ষণ আগেই মানুষগুলোকে বন্দী করে নিয়ে এসেছে তারা। কাং-চি এটা দেখে তখনই ওদের গুম করতে চেয়েছিলো, কিন্তু তেখ্রা সেটা করতে দেয়নি।

কিছু একটা তাকে সত‌র্ক করেছে। তার মনে সন্দেহ, আংলু নিশ্চয়ই নিরাপত্তার জন্য কোন জাদু ব্যবহার করেছে, ডাইনীটা সাংঘাতিক চালাক। না বুঝে তার পাতা কোন ফাঁদে পড়তে চায় না তেখ্রা। তবে কাংচির তাড়াহুড়োর কারণটা সে বোঝে, অনেকদিন নারীসঙ্গ বর্জিত এই দানব। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ফিরতে চায়।

তবে তেখ্রাকে অনেক ভয় পায়, তাই চুপ করে মেনে নিয়েছে তার নি‌র্দেশ। এই মুহূর্তে একটা পর্বতের ঢালের একটা পাথরের আড়ালে দাড়িয়ে আছে ওরা। ভেতর থেকে এইমাত্র দুটি মেয়ে একটা পালকীতে উঠে বসেছে। তেখ্রা সাথে সাথে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে সব জানায় তাদের। ওরা জানতে চেয়েছিলো কোন মেয়ে দেখতে কি রকম, কার জন্ম সতের বসন্ত আগে।

কিন্তু সে জানাতে পারেনি। অত কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়ে দুটি পালকিতে বসেছে গিয়ে। সেটাই জানায় সে নেতাকে। এবারে নেতার কঠিন এবং নির্মম নির্দেশ; যে করেই হোক ঐ মেয়ে দুটিকে চাই তার। ওদের নিয়ে এসো যেকোনো মুল্যে।

রহস্য কি এই মেয়ে দুটার? ভাবছে তেখ্রা। এতদিন জানত একজন মেয়ে এখন দুজন। একজনকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়াই অনেক কষ্টকর, এখন আবার দুজন। এই হঠাৎ উদ্ভুত হওয়া ঝামেলা কিভাবে সব সামলাবে ভাবতে শুরু করে সে। একটু নিচ থেকে কাং-চি জানায়, ওদের সাথে আরও তিনজন মানুষ আছে, তিনজন পুরুষমানুষ।

তেথ্রা আমল দেয় না। তার দায়িত্ব কেবলমেয়েদুটো কে নিয়ে। বাকিদের কি হল, সেটা তার দায় নয়। অনেক দূর থেকে ওদের অনুসরন করার নির্দেশ দেয় কাং-চি কে। কোন ঝুকি নেয়া চলবে না, কোনভাবে ইয়েদিতের তাদের নজরদারির বিষয়ে সত‌র্ক হতে দেয়া যাবে না।

বহুদিন অপেক্ষার ফল, এই সুযোগ হারাতে চায় না ও। ওর ধূর্ত মস্তিষ্কে বেজে উঠে চাঞ্চল্যের অনুরনন। মেয়েদুটোকে কব্জা করতে হবে, ইয়েদিরা যেন আবার তাদরে ছিনিয়ে নিতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ** ** দুই দিন পার হয়ে গেছে। ক্লান্তিকর দুটো দিন।

কিন্তু এর মাঝে ভাল কোন সুযোগ বের করে নিতে পারেনি তেথ্রা। একটা সুযোগ আছে, কিন্তু তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। সে অপেক্ষা করতে থাকে সামনের নদীর জন্যে। ছোট কিন্তু খরস্রোতা ঐ পাহাড়ি নদী পেড়িয়েই ইয়েতিদের মূল আবাসের দিকে যাবে ওরা। নদীটা ছোট, কিন্তু প্রচন্ড স্রোত তাতে।

যখন পালকি মাঝ নদীতে থাকবে তখন নিশ্চয়ই আংলু ঐ পালকির সাথে থাকবে না, তাকে তখন দলের নদী পারাপার তদারক করতে হবে। আর তখনি ওরা যাদুর মায়ায় চলে যাবে পালকির মধ্যে, এরপরে মেয়ে দুটিকে নিয়ে পালিয়ে আসা কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার। খুব সহজ এবং চমৎকার! নিজের বুদ্ধিমত্তায় খুশি হয়ে নিজের পিঠ চাপড়ে দেয়। অপেক্ষা করতে করতে আবারো নিজের পরিকল্পনার খুটিনাটি বারবার নজর বোলাতে থাকে। ছোট কোন ভুল থাকলেও তার পরিকল্পনা একদম শেষ হয়ে যাবে।

** ** আজ মাঝ রাতেই ওরা নদী পারি দেবে। পরিকল্পনা বিস্তারিত কাং-চি কে খুলে বলল তেখ্রা। কাংচি একজনকে ধরে রাখবে অন্যজন সে নিজেই ধরবে। সেখান থেকে বের হয়ে তাদের ব‌র্তমান অবস্থানে চলে আসবে তারা। ধীরে ধীরে বেলা ফুরিয়ে আসছে।

অধীর অপেক্ষায় দুই গুপ্তচর চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকে কখন ছোট্ট দলটি নদী পাড় হবে। আশেপাশে কোন পাখি ডেকে উঠলেও চমকে উঠছে ওরা। অপেক্ষা করতে করতেওদের দুজনের মাথায় এই শেষ মুহূর্তে খেলে যাচ্ছে ভিন্ন রকম চিন্তার স্রোত। তেখ্রা ভাবছে কিভাবে এবং কতো দ্রুত সংগঠনের উচু পর্যায়ে চলে যাবে সে। এই সাফল্য তাকে কোথায় নিয়ে যাবে।

কাং-চি ভাবছে মেয়ে দুটোকে নিয়ে কিভাবে মজা করা যায়। নানাভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কল্পনা করে মনেমনে মজা পাচ্ছে সে। এসবের কোন কিছুই জানতে পারেনি ছোট্ট ঐ দলটা। মেয়েদুটো কি ভাবতে পেরেছে তাদের মাথায় কেমন বিপদ নেমে আসছে? আংলু, সেও তো কিছুই করতে পারবে না, কিছুই করার থাকবে না ঐ যোদ্ধা দলের। ভাবতেই ওদের দুজনের মুখে ফুটে উঠছে হিংস্রতা।

সন্ধ্যের লাল আলোয় সে হিংস্রতা এমন নারকীয় রুপ ধারন করেছে যে একটা শকুন ওদের দেখতে পেয়ে বীভৎস চিৎকার দিয়ে উড়ে চলে যায় উচু কোন নিরাপদ জায়গায়। অফ টপিকঃ পরের পর্ব বৃহস্পতিবার দেয়া হবে। কৃতজ্ঞতাঃ খন্দকার ইশতিয়াক মাহমুদ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।