সকল অন্ধকারের হোক অবসান
কত রকম খাবার যে আমরা খাই, তার কোন ইয়ত্তা নাই। পোলাও, কোর্মা, চমচম, দই- কত কী! কিন্তু মজার বিষয় হলো এ সব খাবারে ঘুরেফিরে স্বাদ থাকে চারটাই: মিষ্টি, টক, নোনতা এবং তিতা। এটা মোটামুটি দুনিয়ার সকলেই জানে। কিন্তু পঞ্চম স্বাদের খবর পাওয়া গেছে। নাম: উমামি।
অন্য চারটি স্বাদের তুলনায় এই নতুন স্বাদ একটু জটিল, অনেকে বলে, এই স্বাদটি বোঝাও যেমন কঠিন আবার চেনাও কষ্টকর। কিন্তু মনে থাকবে আজীবন। বিভিন্ন রন্ধন বিশারদও ঠিকঠাক এই স্বাদের কথা বুঝিয়ে বলতে পারেনি। উমামির স্বাদ বোধে এক ধরনের আলোড়ন তৈরী করে। অন্য চারটি স্বাদকে বাড়িয়ে দেয় আরো কয়েক গুণ।
আবিষ্কার
পঞ্চম এই স্বাদ আবি®কৃত হয় প্রায় একশ’ বছর আগে। আবিষ্কারক টোকিওর ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর কিকুনাই ইকিদা। তিনি লেখাপড়ার জন্য জার্মানের লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে তিনি ইউরোপিয় ঐতিহ্যের রন্ধন প্রণালীর সঙ্গে পরিচিত হন। সেখানকার অধিকাংশ খাবারে থাকে টমেটো, এ্যাসপারাগাস এবং চিজ- সেসব খাবারেই তিনি আবিষ্কার করেন নতুন এই স্বাদ, যা তাঁর দেশ জাপানে কখনই পাননি।
এমন স্বতন্ত্র স্বাদের ব্যাখ্যা দেয়া বেশ জটিল। অন্য চারটি স্বাদ থেকে যে এইটা একেবারে আলাদা এ ব্যাপারে ইকিদা ছিলেন নিশ্চিত।
ডক্টর ইকিদা জাপানে ফিরে নতুন স্বাদের উৎস্য সন্ধান করতে থাকেন। খুঁজতে থাকেন কোথায় এই স্বাদ পাওয়া যায়। পেয়েও যান।
নাম কমবু। কমবু হল এক ধরনের স্যুপ স্টক (স্যুপের পানি), যা তৈরী হয় সামুদ্রিক গুল্ম লতা থেকে। জাপানের বহু খাবারে এই তরল দেয়া হয়, স্বাদ বৃদ্ধির জন্য।
এই তরল বিশ্লেষণ করে ডক্টর ইকিদা দেখলেন উমামি স্বাদের পেছনে রয়েছে গ্লুটামেট- এক ধরনের এ্যামিনো এসিড যা প্রোটিনে পাওয়া যায়।
১৯০৮ সালে উমামি স্বাদের জন্ম হয়।
১৯১২ সালে ডক্টর ইকিদা শিকাগোতে যান, বৈজ্ঞানিক সমাজের কাছে তাঁর নয়া আবি®কৃত স্বাদ সম্পর্কে বলতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁর এই আবিষ্কার জাপানের বাইরে তেমন আলোড়ন তৈরী করতে পারেনি। মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে ঐ চারটি স্বাদের সঙ্গেই পরিচিত। অতএব পঞ্চম স্বাদ নিয়ে কেউ তেমন একটা মাথা ঘামায়নি। আসলে মূল ঐচার স্বাদের বাইরে আরো কোনো স্বাদ থাকতে পারে, এটা কেউ বিশ্বাস করেনি।
স্বাদের স্বীকৃতি
ডক্টর ইকিদার উমামি স্বাদের সরাসরি ইংরাজি কিংবা ইউরোপিয় কোনো তর্জমা হয় না। জাপানি ভাষায় উমামি শব্দের অর্থ: ‘ভালো স্বাদ’। যাই হোক, গত শতাব্দীর আশির দশক পর্যন্ত পশ্চিমা বিজ্ঞানিরা ইকিদার আবিষ্কার সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। ১৯৮২ সালে উমামিকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেয়া হয়- পঞ্চম স্বাদ হিসেবে। উমামি এমন এক স্বাদ যা এখনো পর্যন্ত বড় বড় শেফ এবং খাদ্য সমালোচকের কাছে ব্যাখ্যাতীত এবং অসাধারণ।
২০০০ সালে, আবিষ্কারের প্রায় ৯০ বছর পর, চিকিৎসা বিদ্যার গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন, আমাদের জিহ্বা পৃথক করে উমামিকে চিনতে পারে।
উমামি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন ভোজন রসিক এবং রন্ধন শিল্পীদের কাছে পরিচিত নাম হয়ে উঠছে। বিভিন্ন খাবারকে আরো সুস্বাদু করে তুলতে এর নাকি জুড়ি নাই।
(রিডার্স ডাইজেস্ট, নভেম্বর ২০০৮ অবলম্বনে। লেখাটি কিশোরবেলা পত্রিকার ১ম সংখ্যায় 'এ আক্তার' ছদ্মনামে প্রকাশিত।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।