কক্সবাজার রামু থানার ওসি একেএম মজিবুল ইসলামকে গতকাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার স্থলে গাজী সাখাওয়াত হোসেনকে নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপরদিকে বৌদ্ধমন্দিরে হামলা ও অগি্নসংযোগের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগি্নসংযোগের ঘটনায় জামায়াত ও রোহিঙ্গা মৌলবাদীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। নেপথ্যের ঘটনা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গা মৌলবাদী ও জামায়াতে ইসলামীর কানেকশন থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুরো ঘটনা তদন্ত চলছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। উগ্র মৌলবাদীরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির টার্গেট নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। এসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত চলছে।
এদিকে টেকনাফে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জামায়াত নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ আনোয়ারীকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে।
গত দু'দিনে সেখানে আটক করা হয় ৩১ জনকে।
এ ঘটনায় অজ্ঞাত নামাসহ ৬৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। রামুতে সহিংসতায় গত দু'দিনে আটক হয়েছে ৬০ জন। এছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়ায় মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ সোমবার রাতে আরও ১২ জনকে আটক করে। চকরিয়ায় নাশকতার অভিযোগে ৩ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়।
এদিকে বৌদ্ধবিহারে অগি্নসংযোগ ও হামলার বিচারের দাবিতে রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।
প্রতিনিধি, রামু (কক্সবাজার) জানান, কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধপল্লী ও মন্দিরে সংঘটিত সহিংস ঘটনায় আরও ৪৭ জন আটক হয়েছে। এ নিয়ে গত দু'দিনে রামুতে আটককৃতদের সংখ্যা ৬০ জন। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ গতকাল দুপুরে ৬০ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, কর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত।
এ কারণে ঘটনার পর থেকে চলমান ১৪৪ ধারা গতকাল সকালে তুলে নেয়া হয়েছে। এদিকে গতকাল সকাল ৯টায় রামু-কক্সবাজার আসনের বিএনপি দলীয় এমপি লুৎফুর রহমান কাজল ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহারসহ বসতবাড়ি পরিদর্শন করেন। এর আগে সকালে রামু থানার বিতর্কিত ওসি একে নজিবুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। কক্সবাজার পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, উত্তম কুমার বড়ুয়া নামের এক যুবক পবিত্র কোরআন শরীফের পাতায় মহিলার দু'পা রাখা ছবি শেয়ার করার জের ধরে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় মিছিল সমাবেশ শুরু করে।
পরে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রহস্যজনক নীরবতায় রাতভর সহিংসতা চালায়। এতে ১১টি বৌদ্ধমন্দির, ১৫টি বসতঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় আরও শতাধিক বসতঘর ও দোকানপাট।
রামুর সহিংতার শিকার বৌদ্ধ পরিবার ও মন্দিরগুলোতে পাঁচ লাখ টাকা ও ঢেউটিন বিতরণ করেছে সেনাবাহিনী।
গতকাল বিকেলে জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে ৫৭ ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল যায়েদ হোসেন এসব অর্থ বিতরণ করেন।
প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার) জানান, টেকনাফ হোয়াইক্যং-এর ঘটনায় জামায়াত নেতা ইউপি চেয়ারম্যান নূর আহাম্মদ আনোয়ারীকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ দু'দিনে ৩১ আসামি আটক করে। অজ্ঞাতসহ ৬৫৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক মামলা করে পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক।
রোববার সন্ধ্যায় বড়ুয়া ও হিন্দু পল্লীতে হামলা ও অগি্নসংযোগ।
ঘটনায় হোয়াইক্যং পুলিশের এএসআই মাহফুজ বাদী হয়ে ৭০ জন এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাত ২/৩ শত লোককে আসামি করে। এ মামলায় পুলিশ সোমবার গভীর রাতে ৮ আসামি আটক করে। এরা হচ্ছে, হোয়াইক্যং এলাকার আমির হোসন, শামিম, উমর ফারুক, সোহেল, মো. ইউসুফ, আবুল হাশেম, আবদুল গফুর ও মো. শাহেদ। আটককৃতদের সকালে পুলিশি হেফাজতে কক্সবাজার আদালতে প্রেরণ করা হয়। এ মামলায় রোববার গভীর রাত ও সোমবার সকালে পুলিশ ২৩ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে।
এ দু'দিনে ৩১ আসামি আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
এছাড়া জোয়ারীখোলার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক সাধন মলি্লক বাদী হয়ে হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা নূর আহাম্মদ আনোয়ারীকে প্রধান আসামি করে ৩৩ জন এজাহারনামীয় আসামি ও অজ্ঞাত ২ থেকে আড়াই শত লোককে আসামি করে মামলা করেছে। এ মামলার আসামি ধরতে পুলিশ এলাকায় অভিযান অব্যাহত রাখে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন গতকাল বিকেল ৩ টায় এক জরুরি আইনশৃঙ্খলা সভা আহ্বান করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে।
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া টেকনাফের ১২টি ক্যং ও মন্দিরেও বিশেষ নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুল ইসলাম। এখনও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন ও টহল অব্যাহত আছে।
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৌদ্ধবিহার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় সোমবার রাতে পুলিশ আরও ১২ জনকে আটক করেছে।
বিহার ও মন্দির ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছিল দেশের বৃহৎ জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কিছু উগ্রবাদী শ্রমিক। গত রোববার ঘটনার পর ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ওই প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত উগ্রবাদী শ্রমিকদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
এদিকে এক প্রতিবাদ সভায় কোলাগাঁও ও লাখেরা এলাকায় বৌদ্ধ, হিন্দু সমপ্রদায়ের ৪টি মন্দিরে হামলার ঘটনায় পটিয়া থানার পুলিশের অবহেলাকে দায়ী করেছে বক্তারা। পুলিশ আগের থেকে সতর্ক অবস্থায় থাকলে সমপ্রদায়িক হামলা থেকে রক্ষা পেত মন্দিরগুলো। লাখেরা বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার সময় কালারপোল পুলিশ ফাঁড়ির ৪/৫জন পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল বলে বক্তারা বলেন।
গতকাল (সোমবার) সন্ধ্যায় সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি পরিষদের আহ্বায়ক ডা. দীলিপ ভট্টাচার্যর সভাপতিত্বে পটিয়া থানার মোড় চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম মাস্টার, পটিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শামসুদ্দিন আহমদ, পটিয়া পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ, ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সৈয়দ প্রমুখ।
চকরিয়ায় নাশকতার চেষ্টার অভিযোগ গভীর রাতে ৩ রোহিঙ্গা যুবক গ্রেফতার
চকরিয়া (কক্সবাজার), প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংখ্যালঘু পল্লীতে নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে ৩ রোহিঙ্গা যুবককে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশের একটিদল। সোমবার রাতে পুলিশ উপজেলার মানিকপুর এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করেছে।
চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক কামরুল আজম জানান, ওসি রনজিত বড়ুয়ার নির্দেশে সোমবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে মানিকপুর এলাকায় অভিযান চালায় এসআই হাসান উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। ওই সময় পুলিশ মানিকপুর সংখ্যালঘু (রাখাইন) পল্লীর নিকটস্থ এলাকা থেকে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা কালে ৩ রোহিঙ্গা নাগরিককে গ্রেফতার করে।
তারা হলেন_ ছৈয়দ আহমদের ছেলে আবু তৈয়ব (৩২), নুর হোসেনের ছেলে আবদুল মালেক (২৬) ও মো. হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম (২৮)। তাদের বাড়ি মায়ানমারের আকিয়াব জেলার বলিবাজার ও নাইথং থানা এলাকায়।
অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে চকরিয়া থানার ওসি রনজিত বড়ুয়া বলেন, কয়েকজন যুবক রাতে সংখ্যালঘু পল্লীর আশপাশ এলাকায় সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করছে গোপনে এমন সংবাদ নিশ্চিত হয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাস্টার মানিক এলাকায় বিশাল আকারের বসতি নির্মাণ করে রোহিঙ্গা নাগরিক ও তাদের পরিবারকে ভাড়া দিয়ে এখানে বসবাসের সুযোগ দিচ্ছে। রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংস ঘটনার পর অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে এখানে অবস্থান নিয়েছে। তবে স্থানীয় সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জানিয়েছেন, রামু উপজেলায় সহিংস ঘটনার পর থেকে তার ইউনিয়নের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চল প্রতিনিধি, জানান, কক্সবাজারের রামু ও উখিয়াসহ বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে অগি্নসংযোগ এবং বৌদ্ধদের ওপর বর্বরোচিত হামলার বিচার ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গতকাল রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে।
রাঙ্গামাটি ভিক্ষু সংঘ ও বৌদ্ধ জনসাধারণের ব্যানারে জেলা প্রশাসন কার্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় বিভিন্ন দাবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়। মানববন্ধনে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দিরের ধর্মীয় প্রধানসহ বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি অংশ নেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত শুভদর্শী মহাথেরো, পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের রাঙ্গামাটি পৌর শাখার সহ-সভাপতি ভদন্ত ধর্মকীর্তি মহাথেরো, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. নিহাররেন্দু তালুকদার, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা নির্মলেন্দু ত্রিপুরা, প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বিজয় কেতন চাকমা, সৈকত রঞ্জন চৌধুরী ও উদয়ন বড়ুয়া প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে নেতারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরবারে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সংবাদ ডেস্ক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।