আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অধিকার বঞ্চিত হিজড়াদের দৌরাত্মে সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্লিপ্ততা

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল বিকট সাজপোশাক, পুরুষালি চেহারায় উৎকট প্রসাধন, অস্বাভাবিক আকারের যে দলবদ্ধ মানুষগুলোকে দেখে হঠাৎ রাস্তায় চমকে উঠি, মান বাঁচাতে এড়ানোর পথ খুঁজি, তাদের আমরা হিজড়া নামে চিনি। লৈঙ্গিক অস্বাভাবিকতার কারণে এদের কেউ কাজ দেয় না, অথবা তারা কাজ করে না, তাই দলবদ্ধভাবে ভিক্ষা করে, চাঁদা তুলে জীবন যাপন করে। এই ভিক্ষা বা চাঁদা আদায় মানসম্মান নেওয়ার ছুড়ি ঠেকিয়ে রীতিমত ছিনতাই বা ডাকাতি। আমার এক বন্ধুর বোন তার সদ্যজাত শিশু, স্বামী ও একটি কাজের মেয়ে নিয়ে উত্তরার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকত। এক সকালে, কলিং-বেলের শব্দে ডাইনিং রুমে গিয়ে আমার বন্ধুর বোনটির ভয়ে অজ্ঞান হবার অবস্থা; দেখে দুই বিশাল দেহী ভয়ংকর-দর্শন (তাঁর ভাষ্যমতে) হিজড়া শাড়ী পরে কোমরে হাত দিয়ে একেবারে ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে আর কাজের মেয়েটি দূরে এককোণে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে (না বুঝে দরজা খুলে দিয়েছে)।

কোত্থেকে বাচ্চা হয়েছে, এই খবর শুনে এই উসিলায় টাকা নেওয়ার জন্য হাজির; নিচে দারোয়ানের দায়িত্বের অবহেলায় একবারে ঘরে (এদের মাঝে যোগসাজশ থেকে থাকতে পারে)। ঘরে ছোট কাজের মেয়েটি ছাড়া আর কেউ ছিল না। ভদ্রমহিলার স্বামী খুব সকালে অফিসের জন্য বেড়িয়ে গিয়েছিলেন আগেই। হয়ত হিজড়ারা ইচ্ছে করেই এ সময়ে এসেছিল ভদ্রমহিলাকে নিরাপত্তার দিক থেকে বেকায়দায় ফেলতে। যাহোক এসেই হাততালি দিয়ে খিস্তি খেউর গালাগালির মাঝে সাফ জানিয়ে দিল ৫০০০ টাকা দিতে হবে না হলে বাচ্চা নিয়ে যাবে! এর মাঝে মুখস্থ জানিয়েও দিল যে তারা হিজড়া, এবং এদের কেউ কাজ দেয় না।

তাই এভাবেই টাকা আদায় করে এদের জীবন চলে। বন্ধুর বোনটি কাঁপতে কাঁপতে বলল যে তাঁর কাছে ৫০০০ টাকা নেই, ৩০০০ টাকা আছে; ঘরে আর কেউ নেই। এ কথা বলতেই হিজরাগুলা কাপড় চোপর খোলার যোগার; উদম নৃত্য শুরু করবে এমন! বাচ্চা নিয়ে যাবার হুমকি! একেবারে বেডরুমে ঢুকে বাচ্চা হাতে নিতে রীতিমত ধস্তাধস্তি। এই অবস্থায় ভদ্রমহিলার কাকুতি-মিনতি সম্বলিত আপ্রাণ চেষ্টায় এক পর্যায়ে তাদের বোঝাতে সক্ষম হলেন যে তার কাছে সত্যিই ৩০০০ টাকা আছে এবং শেষ পর্যন্ত শেষ কয়েক তালি, খিস্তি-খেউর, গালিগালাজ করে পুরো টাকাটা গুনে বিদায় হল। বন্ধুর কাছে শুনেছি ওর বোনের বাসাটা অনেক খোলা-মেলা, আর বিশাল বিশাল বারান্দা সম্বলিত ছিল বলে আসে পাশের মানুষ (লাগোয়া দালানগুলোর) উৎসুক দৃষ্টিতে হিজড়াদের এই কাণ্ড দেখছিল।

যাহোক তার কিছুদিন পরে আমার বন্ধুটি তখন ঢাকায়, তার সেই বোনের বাসায়। আবার এক সকাল বেলা, সেই কাজের মেয়ের চিৎকারে দৌড়ে গেল সদর দরজার কাছে। দেখে, এবার শিকল দিয়ে সে দরজা খুলেছিল বলে (আগের ঘটনার পরের সতর্কতায় শিকলের/চেইনের ব্যবস্থা করেছিল...ঐ যে, ছিটকানিও দেওয়া যায় আবার শিকল দিয়ে দরজা আধখোলা করে দেখা যায় কে এলো...) হিজড়ারা ঘরে ঢুকতে পারেনি কিন্তু ঢুকতে চেয়ে কাজের মেয়েটির সাথে রীতিমত ধস্তাধস্তি। দ্রুত দরজায় শক্তি আরও জোরদার করল আমার বন্ধুটি। এর মাঝে তার বোনটিও সেখানে।

ধস্তাধস্তি করতে করতে তারা চিৎকার করে জানাল যে মাত্র কয়েক মাস আগে এসে কিছু হিজড়া বাচ্চার নামে টাকা নিয়ে গেছে। কে শুনে কার কথা! ধাক্কাধাক্কি গালাগালি, একেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা! বোনের সামনে এসব শুনে ভয়ংকর বিব্রত আমার বন্ধুটি পুনরায় চিৎকার করে অনুরোধ করে, “আপনারা খবর নেন, আমরা সত্যি বলছি। কয়েকদিন আগেই কয়েকজন এসে ৩০০০ টাকা নিয়ে গেছে!” এই করে আধ ঘণ্টার ধাক্কাধাক্কির পরে শেষে ক্লান্ত হয়ে আর সময় নষ্ট না করে চলে গেল হিজড়ারা। আরও অনেক বাসা পরে আছে এইভাবে ডাকাতি করতে যাবার। কত কত দিন আমাদের অফিসের বারান্দা থেকে দেখেছি দারোয়ানদের সাথে সেই কি মারামারি এই হিজড়েদের; ধস্তাধস্তি করে ঢুকে হল্লা করার জন্য! দেখেছি এক বাসায় ঢুকতে না পেরে ভাংচুর পর্যন্ত করতে।

এক দারোয়ানের কাছে শুনেছি গেটের উপরের সরু ফাঁক দিয়ে ঢুকে ঘরের গৃহিণীদের, বাচ্চাদের সামনে নেংটো হয়ে নাচার ঘটনা। আরেক ঘটনায় আমার এক পরিচিতা, কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সকালের মহানগর প্রভাতিতে (ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সকালের ট্রেনটা) উঠতে গিয়ে মুখোমুখি এক হিজড়ার। বলল, “ঐ টাকা দে”। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ুয়া মেয়েটি সরল মনে ২০টা টাকা বের করে দিতে এমন জঘন্য এক গালি দিল বেচারিকে যে তার চোখে পানি এসে গেল। পরে ১০০ টাকা দিয়ে ছাড় পেয়েছিল তাও আরো কিছু জঘন্য কিছু গালাগালি স্বীকার করেই।

আসে পাশের লোকজন ফ্যল ফ্যাল করে ঘটনাটা দেখল, তার সম্বিত ফিরে পেয়ে পুনরায় চলল! যেন তাসের লোকজন! কোন বিতর্কে, বাকবিতণ্ডায় হুলস্থূল করার উদ্দেশ্য নয় আমার। কৌতূহলী শুধু যে এ নিয়ে কি মাথা ঘামানোর কিছু নেই, বা কারো মাথা ব্যথা নেই? শুনেছি পুলিশও এদের ঘাটায় না। এরা যে দিনে দুপুরে জনসম্মুখে ডাকাতি করে বেড়ায় তাতে কারো কোন ভ্রূক্ষেপ নেই? নাকি আছে, আমি’ই জানি না!! এও শুনেছি যে এদের লিঙ্গ সনাক্ত করা যায় না দেখে নাকি এদের আইনের আওতায় আনা যায় না! এটা কি সত্যি? কি ভয়ঙ্কর কথা! পড়ে জানলাম বাংলাদেশে এরা মানুষ হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারে এমন কোন আইন’ই নাই। সম্প্রতি ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হলেও, দেওয়া হয়েছে তাঁদেরকে নারী বা পুরুষ হিসেবে নথিভুক্ত করে। বুঝাই যায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থেই এই প্রয়াস।

এই উদ্যোগ হিজড়াদের কল্যাণকে মাথায় রেখে হলে পুরুষ কিংবা নারী হিসেবে নথিভুক্ত করত না। হিজড়া হিসেবেই করত। একদিকে আইনগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দিক থেকে যেমন যথেষ্ট স্বীকৃতি না থাকার কারণে এরা চাঁদা তোলার নামে সাধারণ মানুষকে প্রকাশ্যে লুট করে বেড়ায়, ঐ দিকে এই দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা প্রদানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভয়ংকর উদাসীন, নিদেন পক্ষে বিপদজনক-ভাবে বিব্রত। (অথবা চাঁদার একটা বড় অংশ যায় তাদের কাছেও) এইদিকে জানলাম সাধারণ হিজড়েরা তাদের সর্দারদের অত্যাচারের শিকার। এইসব সর্দারদের নির্দেশে, তাদের তলা বিহীন ঝুলি ভরে তুলতেই সাধারণ হিজড়ারা সাধারণ মানুষকে লুটপাট করতে বের হয়।

লুটপাটের টাকা তারা নিজেরা সরাসরি ভোগ করতে পারে না। বরং সর্দার’রাই তাদের দেখভাল করে। প্রকাশ্যে এই ভাবে ডাকাতি করে অনেক হিজড়া সর্দারেরা ঢাকা শহরে বাড়ি পর্যন্ত করেছে। অস্ত্রোপচার করে কৃত্রিমভাবে হওয়া হিজড়া আর জন্মগত হিজড়েদের মধ্যে লুট করতে যাওয়ার অঞ্চল ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়। এদের সাধারণ মানুষের মত বেঁচে থাকার জন্য অনুকূল আইন কিংবা সুযোগ সৃষ্টির চেষ্টা যেমন করে না সরকার, আবার এদের লুটপাটে বাঁধাও দেয় না।

মাঝখান থেকে সাধারণ মানুষের হেনস্থা। আগারটা খাওয়া, তলারটাও কুড়ানো প্রশাসন হাই তুলে বেড়াবে আর শিশুদের নিরাপত্তায় ভিত মায়েরা, রাস্তাঘাটে অসহায় মেয়েরা দিনে দুপুরে লুট হবে, ঐ দিকে বিশেষ কিছু লোকজন ফয়দা লুটলেও, সাধারণ জিজড়াদের ভাগ্যও থেকে যাবে অপরিবর্তিত? অসুস্থ দেশ, অসুস্থ সরকার। এই দেশের ক্যান্সার হয়েছে। ক্যামু দিয়ে মাথার চুলগুলা না শুধু, মাথাটাই ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা না করতে পারলে কিছু দিন পর এক সকালে ঘুম থেকে উঠে পায়ে সত্যিকারের শিকল আর গলায় দাসত্বের বেড়ি দেখতে পেলেও অবাক হয়ে যাওয়ার কিছু নেই। মধ্য যুগের দিকেই এগোচ্ছে দেশ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.