তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী তাইয়েপ এরদোয়ান প্রতিবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়ার এক দিন পর আজ মঙ্গলবার দেশটির পুলিশ প্রতিবাদীদের হটাতে অভিযান চালিয়েছে। রয়টার্স বলছে, ইস্তাম্বুলের তাকসিম চত্বরে অবস্থান নেওয়া প্রতিবাদী লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। এ সময় সরকারবিরোধী প্রতিবাদীরা পাথর ছুড়ে ও পটকা ফুটিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
বর্ম আচ্ছাদিত গাড়ি নিয়ে শত শত দাঙ্গা পুলিশ আজ সকালে তাকসিম চত্বরের পাশে সমবেত হয়। রাস্তার ইট ও ঢেউটিন দিয়ে বিক্ষোভকারীরা যে ব্যারিকেড তৈরি করেছিল, সেগুলোকে পুলিশ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়।
অভিযান
আজ ভোরে অভিযান শুরু করে পুলিশ বাহিনী তাকসিম চত্বরে প্রতিবাদীদের টানানো অনেকগুলো ব্যানার খুলে ফেলে। স্থানীয় গভর্নর দাবি করেছেন, প্রতিবাদীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে দমন করার কোনো অভিপ্রায় ছিল না পুলিশ বাহিনীর।
গভর্নর হুসেইন আবনি মতলু টুইটারে লিখেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আতাতুর্কের প্রতিকৃতি ও আতাতুর্ক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে টানানো বিভিন্ন ব্যানার ও ছবি সরিয়ে ফেলা। এ ছাড়া ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য ছিল না। ’
সবকিছু সরিয়ে তাকসিম চত্বরের পাশে অবস্থিত এক ভবনে পুলিশ তুরস্কের একটি পতাকা ও আধুনিক তুরস্কের স্থপতি কামাল আতাতুর্কের একটি ছবি টানিয়ে দিয়েছে।
তাকসিম চত্বর ও পার্শ্ববর্তী গেজি উদ্যানে অবস্থান নেওয়া কয়েক শ প্রতিবাদী পুলিশের আক্রমণ ঠেকাতে মাথায় শ্রমিকদের হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ও পটকা ছোড়ে।
প্রতিবাদীদের মধ্যে ‘সব জায়গায় তাকসিম, সব জায়গায় প্রতিরোধ’ স্লোগান দেওয়া ১৯ বছর বয়সী ছাত্র সাইয়্যিত চিকমান বলেন, ‘এ আন্দোলন এখানেই থামবে না। আমরা যা শুরু করেছি, তা এই পার্কের চেয়ে বড় কিছু। আমি মনে করি না, এরপর কেউ এ সরকার বা কোনো সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলতে ভয় পাবে। ’
পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে লাউডস্পিকারে ঘোষণা করে, ‘গেজির প্রিয় বন্ধুরা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অপারগ। আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আপনাদের কোনো ক্ষতি করার উদ্দেশ্য আমাদের নেই। দয়া করে এখান থেকে সরে যান। ’
তুরস্কের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, গত ১০ দিনের বিক্ষোভে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও জলকামানে আহত হয়ে মোট চার হাজার ৯৪৭ জন চিকিত্সা নিয়েছেন।
উদ্যান ছাড়িয়ে দেশজুড়ে
তুরস্কে দুই সপ্তাহ ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ইস্তাম্বুলের একটি উদ্যানকে বিপণিবিতানে পরিণত করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা দেশজুড়ে সরকারবিরোধী কর্মসূচির রূপ নেয়। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, ইসলামপন্থী সরকারের একরোখা ও রূঢ় আচরণের কারণে উদার ও প্রগতিশীল তুরস্ক ক্রমে গোঁড়া রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। তুরস্কের এ আন্দোলনের মূল অংশগ্রহণকারীরা বয়সে তরুণ এবং তাঁদের সমর্থন দিচ্ছে দেশটির বামপন্থী ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। তুরস্কের এ বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত এবং পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
বিকাশমান বাজার হিসেবে তুরস্কের যে উত্থান দেখা যাচ্ছিল, তা গত কয়েক মাসে বড় ধাক্কা খেয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের উত্সাহে ভাটা পড়েছে। ২০১১ সালের অক্টোবর মাস থেকে ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার মান ক্রমে কমছে। মুদ্রা মানের ক্রমাবনতি ঠেকাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে বলে ঘোষণা করেছে। গত ১০ মাসে দেশটিতে ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।
যদিও বড় ধরনের সংকট থেকে দেশটি এখনো অনেক দূরে।
ছোটলোক
প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান বিক্ষোভকারীদের ‘কাপুলকুলার’ বা ছোটলোক বলে গাল দিলেও উপপ্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত অরিঞ্চ গতকাল সোমবার জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলাপে বসতে চান। সম্ভবত আসছে বুধবার এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।