আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজী বিভাগ এবং আহারে আমি!

আমি আমার সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। আমি চাই সবাই আমার সাথে মিশুক এবং আমাকে বুঝুক। :) বিশাল এক করুণ আত্মজীবনী পড়ার জন্য প্রস্তু হন। এইচ.এস.সি পরীক্ষায় আমার রেজাল্ট প্রত্যাশিত রকমের খারাপ হয় যদিও আমার ফেইল করার কথা। কিন্তু দুর্ভ্যাগ্য পাশ করে গেলাম।

পাশ না করলে আমার আরেক প্ল্যান ছিল। এইচ এস সি পরীক্ষায় আমার প্রত্যাশা আসলে ছিল আকাশ ছোঁয়া, তাই পরীক্ষায় কোন একটা সাবজেক্ট যখন ব্যাপক খারাপ হল আমি সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছিলাম যে সেবার আর পরীক্ষাই দিব না। কিন্তু আমার পরিবার থেকে ব্যাপারটাকে মোটেই সাপোর্ট দেওয়া হল না। এইদিকে আমার দুঃখের শেষ নাই। আমার স্বপ্ন ছিল মারাত্মক ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীতে পড়ব।

কিন্তু সেই কোন এক সাবজেক্টায় খারাপ করায় আমার মন ভেঙ্গে গেল। পরীক্ষা দিতে ইচ্ছা হল না। অবশেষে আমাকে বুঝানো হল আমি পাশ করি আর যাই করি আমি পরের বছর আবার পরীক্ষা দিব। আমি সুযোগ পেয়ে পড়া ছেড়ে আরাম আয়েশ করতে লাগলাম! তাও কীভাবে যে পাশ করলাম! এইবার আমার ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পালা। মা এখন একটা কুপ্রস্তাব দিলেন- “তুমি নেক্সট টাইম পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নাও, আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকাল একটা কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়ে থাক।

” আমার জান গেলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব না, ‍সাফ জানিয়ে দিলাম। তাও মা বুঝাতে লাগলেন, ‍সবাই বুঝাতে লাগলেন। আমিও তখন চিন্তা ভাবনা করছি কী করা যায়। ততদিনে বন্ধুরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেছে বা কেউ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পড়াশোনায় ব্যস্ত, আর আমি ব্যস্ত হওয়ার চেস্টা করছি এইচ এস সি পরীক্ষার প্রস্ততি নেওয়ার। পড়ায় আর মন বসে না।

মাকে জানালাম যে পরীক্ষা দিব না, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হব। “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তো মানুষ ভর্তি হয়ই- হয় যে না, তা তো না” নিজেকে বুঝালাম। পড়াশোনার উপর থেকে মন একদম গেছে। আমার ধারণা ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা লোক দেখানো ছাড়া কিছুই না। আর মামাদের “লোক” আছে, আমার পছন্দের সাবজেক্টে ভর্তি করায়ে দিতে পারবে।

হয়ে গেল, আর প্রস্তুতির কী দরকার। ভর্তি পরীক্ষ দিলাম, খুবই বাজে একটা সাবজেক্ট পেলাম। মামার “লোকরা” কিছুই করতে পারলো না। কারো কিছু করার নাই। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।

আমি তো এই সাবজেক্ট নিয়ে পড়ে নিজের “ক্যারিয়ার” নস্ট করতে পারি না। অবশেষে আমার এক টীচার জানালেন যে রিলীজ স্লিপ দিয়ে একই কলেজে বা অন্য কলেজে ভর্তির একটা সুযোগ আছে। আমি মা-মামাদের বোকা বানিয়ে ঢাকার একটা গ্যঞ্জামমুখর কলেজে (ঢাকা কলেজ নয়) ইংরেজী বিভাগে ভর্তি হয়ে গেলাম। আমি চাইলে আমাদের স্থানীয় কলেজটাতেই ভর্তি হতে পারতাম। আসলে “ঢাকা” বলতে একটা কথা আছে।

আমার কাছে ঢাকা তখন “রহস্যময়” এক আজব শহর। তাই ঢাকাতেই ভর্তি হওয়া। এখন আমার গল্প শুরু- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। পাশ করে বের হতে হয়ত একটু বেশী সময় লাগবে, তাতে কী! ভালো একটা রেজাল্ট করলে অবশ্যই তার মূল্য আছে। একটা মেসে উঠলাম।

ওমা! আমি পড়াশোনাও শুরু করলাম! আরো ভালো পড়ার জন্য একটা ডিজিটাল ডিকশনরী কিনলাম। একটা কম্পিউটারও কিনলাম। ইন্টারনেট নিলাম- ইন্টারনেট থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। তারপর যা হওয়ার তাই হইছে কলেজে যাইতে মঞ্চায় না। খালি ঘুম আর ঘুম।

দিন শুরু হয় সিগ্রেট দিয়া শেষ হয় সিগ্রেট দিয়া। খাওয়া-দাওয়ার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। সারাদিন কম্পিউটার-ফেইসবুক-মুভি আর ঘুম। একটার পর একটা সিগারেট আছেই। ‍রুমের সবাই মিলে খাই- কোন বড়ভাই ছোটভাই নাই।

সারারাত জাগাও হয়। হয়ত কোনদিন সারারাত ঘুমাই নাই সেদিন সকাল পর্যন্ত জেগে থাকার সুযোগ পাইসি, সেই সুযোগে কলেজ গেছি। কলেজে পোলাপান কী মজা পায়, সেইটা আমার কাছে এখনো এক রহস্য। আমার লেকচার শুনলে সবচেয়ে বেশী ঘুম পায়। ১৯৯২ ‍সালের ৩৭ নং আইন অনুযায়ী আমাদের এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত।

মূল লক্ষ সেশন জট মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা। সেখানে আমি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঈদের চাঁদের সাথে তুলনা করেছি- যেখানে মাঝে মাঝে পরীক্ষার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। এই পর্যন্ত আমাদের ২টা পরীক্ষ হইছে, একটায় আমি এটেন্ডই করি নাই, আরেকটার কোন সাব্জেক্টেও পাশ করি নাই। এ নিয়ে আমার মধ্যে কোন আফসোস কাজ করে নাই, পড়ি নাই, পাশ করি নাই, শেষ, কত সিম্পল! এমনও না যে এই পরীক্ষাগুলায় পাশ না করায় আমার ফাইনাল পরীক্ষায় নাম্বার কম পাব। ভাগ্য ভালো যে সেগুলো ফাইনাল পরীক্ষা ছিল না।

এবার আসি আমার সাব্জেক্ট ইংলিশ নিয়ে- ইংরেজী যে আমার খুব প্রিয় তা কিন্তু না। ইংরেজীতে আমি যথেষ্ট খারাপ আর অন্যান্য সাব্জেক্টগুলোতে ভর্তি হওয়ার মত যথেষ্ট মার্কস আমার ছিল না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে আমাকে ইংরেজী বিভাগেই ভর্তি হইতে হইসে- আর আমার ধারণা আমার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী না হইলেও ভালো সিদ্ধান্ত। এখন তো প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিবিএ, এমবিএ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। ইংরেজীর শিক্ষক কয়জনের ঘরে আছে? আমার একটা আলাদা দাম থাকবেই বের (!) হওয়ার পর।

ইংরেজীতে যে আমি খুব খারাপ তাও না, তবে এতদিন গ্রামারনির্ভর কম্যুনিকেটিভ ইংলিশ পরে অভ্যস্ত ছিলাম তাই এখন ইংরেজী সাহিত্যের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছি না। ইংরেজী সাহিত্য ভালো কথা কিন্তু আমাদের প্রাচীন লেখকদের দুর্বেোধ্য ইংরেজী কেন পড়তে হবে। এই যুগের কবি সাহিত্যিকের কি অভাব আছে? যীশু খ্রীস্টের জন্মের আগের ইংরেজী পড়ার মানে কী? সেই সাথে কার কবে জন্ম হইসে, কার গার্ল ফ্রেন্ডের নাম কী, কার বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড দুইটাই ছিল? কে কার জামাই রে নিয়া কবিতা লেখসে! ইংরেজী সাহিত্য নিজেই যথেষ্ট বোরিং তার সাথে যুক্ত হইসে আরো দুইটা বাংলা সাব্জেক্ট নন-মেজর হিসেবে- রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান/সমাজকর্ম। ইংরেজী সাহিত্যের ‍সব দোষ আমি মাফ করে দিলাম, কিন্তু এই দুইটা সাব্জেক্ট আমাদের নন-মেজর হিসেবে পড়তে হবে কেন? কী লাভ এই দুইটা সাব্জেক্ট পড়ে? এই ‍দুইটা ‍সাব্জেক্ট আমাদের কী কাজে আসবে? সক্রেটিস-প্লেটো-এরিস্টটলের নাম তো এমনিতেই জানি। তাদের জন্ম সাল- তাল পাতায় কী বই লেখসে, রাষ্ট্র সম্পর্কে কার কী ধারণা এইগুলা জানা কী খুবই ইম্পর্টেন্ট? এইগুলা তো বিসিএস পরীক্ষার সময় নতুন কইরা আবার শিখতে হইবই! এখন পড়ার কী দরকার।

ফাইনাল এক্সাম ইজ নকিং এট মাই ডোর। কী করা উচিৎ বুঝতেছি না। যেখানে আমার বেশি বেশি পড়া উচিৎ সেইখানে আমি ব্লগে নিজের দুঃখের কথা লেখতেসি। আমি কী খুবই খারাপ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.