Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকারি গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) নজরদারি রাখছে। দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সাবেক কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা ‘প্রিজম প্রকল্প’ থেকে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মার্কিন এই নজরদারির তালিকার প্রথম নামটি ইরান। এর পরপরই পাকিস্তান। আর ভারত আছে পঞ্চম স্থানে।
গত ৩ দশকসহ চলতি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল প্রতিপ হিসেবে বিবেচিত রাশিয়া ও চীনের আগেই এদের অবস্থান। গত ১২ জুন বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং ১৩ জুন দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের গোপনে নজরদারির তথ্য ফাঁস করেন অ্যাডওয়ার্ড স্নোডেন নামের সিআইএ’র সাবেক কর্মী। ফাঁসকৃত চরম গোপনীয় মার্কিন এই পরিকল্পনার নাম ছিল ‘প্রিজম প্রকল্প’। এ প্রকল্পের অধীনে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) এমন একটি অনলাইন পরিকাঠামো তৈরি করে যা ব্যবহার করে যে-কারও ব্যাপারে নাক গলানোর সুযোগ পাবে যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি এ কর্মসূচির মাধ্যমেই মার্কিন প্রশাসন বিভিন্ন অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্ভারেও আড়ি পাতে এবং তথ্য সংগ্রহ করে। এর মাধ্যমে কারও ই-মেইল থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত ফোনালাপ সবই সংগ্রহ করা সম্ভব। অনায়াসে মিলতে পারে ই-মেইল, ফেসবুকসহ ক্রেডিট কার্ডের পাসওয়ার্ড, ফোন রেকর্ড। আর এভাবেই গত মার্চ নাগাদ এনএসএ সংগ্রহ করেছে ১৯ হাজার ৭০০ কোটিরও বেশি তথ্য।
স্নোডেনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৭ জুন ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান পত্রিকা মার্কিন গোয়েন্দাদের গোপন এ কর্মসূচী ফাঁস করে।
পত্রিকাদুটির প্রতিবেদনে বলা হয় গুগল, ইয়াহু, ফেসবুকসহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মালিকানায় থাকা নয়টি প্রতিষ্ঠানের সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা। তবে এ বিষয়টি এনএসএ গোয়েন্দা প্রধান ও প্রতিষ্ঠানগুলো অস্বীকার করে। তবে ফাঁস করা তথ্যের বিশ্লেষণে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা ও একই সঙ্গে নজরদারির শিকার হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
স্নোডেনের তথ্যঅনুযায়ী এই সময়ে মার্কিন নজরদারির এক নম্বরে ইরান। কম্পিউটার ও টেলিফোন নেটওয়ার্ক উভয় মাধ্যমকে ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ইরান থেকেই।
সংখ্যায় ১৪০০ কোটি। দ্বিতীয় পাকিস্তান। সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণ ১৩৫০ কোটি। তিন নম্বরে রয়েছে মধ্যেপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশ জর্ডান। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তথ্য জোগাড় করেছে ১২৭০ কোটি।
চারে মিশর। সংগৃহীত তথ্যের পরিমাণ ৭৬০ কোটি। আর ভারত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৬৩০ কোটি তথ্য।
তবে বিষয়টি প্রথম কদিন চাপা পড়ে থাকলেও বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এই স্পর্শকাতর বিষয়টিতে মুখ খুলতে শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক এ.কে মেনন জানিয়েছেন, দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত ইয়াহু মেইল বা জিমেইল ব্যবহার করেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লেনদেন করেন।
স্পর্শকাতর তথ্য স্থানান্তরে ক্ষেত্রেও তারা জিমেইল ও ইয়াহু মেইলের ওপরই ভরসা রাখেন।
এছাড়া ভারতেও অনেক সরকারি তথ্য ও ছবি আদান প্রদানে অনেক সময় জিমেইল এবং ইয়াহুর মতো মেইল কায়েন্ট ব্যাবহার করা হয়। এছাড়া দেশটির অনেক কর্মকর্তাই পাবলিক ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে জানার পরও অফিশিয়াল ইমেইল ব্যবহার করেন না তারা। এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের অধিবেশনে যোগ দিতে আসা এশিয়া অঞ্চলের ৩৩ টি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ২০ জন যোগাযোগের জন্য জিমেইল, হটমেইল বা ইয়াহু মেইল ঠিকানা দিয়েছেন। অফিশিয়াল কোনো মেইল ঠিকানা দেননি তারা।
এই বিতর্কিত ‘প্রিজম প্রকল্প’ ফাঁস হয়ে যাবার পর মার্কিন প্রতিরা দপ্তরের কর্তা, এমনকি ওবামার নিজস্ব প্রতিক্রিয়া হলো, এন এস এর এই গোয়েন্দাগিরি শুধুমাত্র বিদেশীদের জন্য। কোনো মার্কিন নাগরিকের গোপনীয়তা, কিংবা কোনও মার্কিন আইন এতে লঙ্ঘিত হয়নি। বরং এটি করা হয়েছে মার্কিন স্বার্থে।
তবে বিশ্বব্যাপী সরকারী ও বেসরকারি নাগরিকদের ইমেইলে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকতার তথ্য নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে টু-শব্দটিও করেননি মার্কিন কর্তৃপ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) প্রধান কিথ আলেকজান্ডার গতকাল ইন্টারনেট ও ফোন সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের গোয়েন্দা কৌশল সমর্থন করে বলেছেন, প্রিজম প্রকল্পের সংগ্রীহিত তথ্য এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন সন্ত্রাসী হামলা ভেস্তে দেয়ায় সহায়ক হয়েছে।
গত সপ্তাহে সংবাদপত্রে বিশ্বজুড়ে ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর মার্কিন গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রমের কথা ফাঁস হওয়ার, মার্কিন সিনেটে এক শুনানিতে আইনপ্রণেতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাদের নজরদারি কার্যক্রম যথাযথ আইনি ও বিচারিক তদারকিতেই পরিচালিত হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, তার সংস্থার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন জনগণের আস্থা একটি পবিত্র শর্ত।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা গত বুধবার বলেন, মার্কিন জনগণকে সন্ত্রাসবাদের আক্রমণ থেকে রার জন্য ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যতটুকু লংঘিত হয় ততটুকুই তারা করেছেন এবং এর পরিমাণ খুব বেশি নয়। এ ব্যাপারে এফআইএসএ নামে একটি গোপন আইনও করা হয়েছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সময়, যার আওতাতেই এগুলো করা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।