আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শতাব্দীর সেরা গোল এবং ম্যারাডোনা (ভিডিও)

ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত দুটো গোল কী কী? অবশ্যই ‘হ্যান্ড অব গড’ এবং ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, দুটো গোলই হয়েছিল চার মিনিটের ব্যবধানে! ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ‘চিরশত্রু’ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই দুটো গোল করেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
ম্যাচের ৫১ মিনিটে রেফারিকে ফাঁকি দিয়ে হাত দিয়ে বল জালে ঠেলেছিলেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। এই গোলটি হয়তো ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়েই থাকত। কিন্তু চার মিনিট পরেই যে অবিশ্বাস্য গোল তিনি করে দেখালেন, তাতে সব মিলিয়ে পুরো গল্পটা হয়ে উঠল ফুটবলীয়-পুরাণের অংশ।

ছয় ইংলিশ ফুটবলারকে কাটিয়ে মাঝমাঠেরও ভেতর থেকে একাই বল টেনে নিয়ে গিয়ে করেন ম্যাচের এবং নিজের দ্বিতীয় গোল। ‘হ্যান্ড অব গড’ এবং ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ করে আজকের ২২ জুন তারিখকে ম্যারাডোনা অমর করে রাখেন ইতিহাসে! সঙ্গে নিজেকেও।
দুটো গোল নিয়েই এত এত লেখা হয়েছে, নতুন কিছু বলাই বাহুল্য। কিন্তু শতাব্দীর সেরা গোল নিয়ে ম্যারাডোনা নিজে কী বলেন? শুনুন তাঁর জবানিতেই শতাব্দীর সেরা গোলের বৃত্তান্ত, যা তিনি বলেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিষয়ক সাময়িকী ‘স্পোর্টস৩৬০’কে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে:
এক. ওই গোলের প্রতিটা মুহূর্ত এখনো আমার চোখে ভাসে। প্রতিটা সেকেন্ড, এমনকি বলটা যখন লাফিয়ে আমার কাছে এল, সেটাও।

অ্যাজটেক স্টেডিয়ামের মাঠের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। তেমন দেখভালই করা হয়নি। মাঠের এখানে-ওখানে জমে ছিল পানি। এখন চ্যাম্পিয়নস লিগে আমরা যেমন মাঠ দেখি, তেমনটা কিন্তু ছিল না। মাঠের অবস্থা ছিল আসলেই খারাপ।


দুই. মনে আছে, যখন ড্রিবলিং শুরু করলাম, তখন বলটা নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কদিন আগে এটা নিয়ে আমি আর পিটার রিড (ওই ম্যাচে খেলা ইংলিশ মিডফিল্ডার) একটা সাক্ষাত্কারে কথা বলছিলাম। ড্রিবলিং করার সময় আমি দুদিকে তাকালাম। হঠাত্ খেয়াল করলাম, পিটার আমার দিকে ঠিক এভাবে এগিয়ে আসছে। [ম্যারাডোনা অভিনয় করে দেখালেন কীভাবে এগিয়ে আসছিলেন রিড]।

ওর সব শিরা-উপশিরাই দেখা যাচ্ছিল! ওকে ওই দিন জিজ্ঞেস করলাম, ‘যখন বলটা সামনে ঠেলে দিয়ে এগোলাম, দেখলাম, তুমি আর আমার পিছে তাড়া করলে না, থেমে গেলে, কেন?’ ও বলল, ‘তোমাকে ধরতেই পারতাম না। যতবারই চেষ্টা করতাম, দেখতাম তুমি ঠিকই এক মিটার সামনে এগিয়ে আছ। এগিয়ে গেলেও শুধু তোমার পিঠের নম্বরটাই দেখতাম, আর কোনো লাভ হতো না। ’ ওর কথা শুনে মনে হয়েছিল, বাহ, দারুণ তো!
তিন. এরপর মনে পড়ছে, (টেরি) বুচার ছিল আমার বাঁ-দিকে। (টেরি) ফেনউইকও তা-ই।

আমার সাপোর্টে ছিল বুরুচাগা আর ভালদানো। আমি ভাবছিলাম, পাস দেব নাকি একাই এগিয়ে যাব।
চার. ফেনউইকই আমাকে সিদ্ধান্তটা নিতে সাহায্য করল। ও ছিল ঠিক আমার সামনে। কিন্তু যেন বুঝতে পারছিল না, বল কেড়ে নিতে আমার দিকে এগোবে নাকি বুরুচাগাকে পাহারা দিতে যাবে।

এখন আমি আমার খেলোয়াড়দের বলি, একজন ডিফেন্ডার যখন এমন দ্বিধায় পড়ে, সঙ্গে সঙ্গেই ও শেষ হয়ে যায়। ফেনউইক ভাবছিল, সে একা, অথচ তাঁকে আমাদের দুজনকে ঠেকাতে হবে। সে কাকে ঠেকাব? একে না ওকে? শেষ পর্যন্ত ও কাউকেই ঠেকাতে পারল না। পাথরের মূর্তির মতো মাঝখানে পড়ে থাকল। আসলে ওই দ্বিধাই ওকে শেষ করে দিয়েছিল।


পাঁচ. ফেনউইককে পেরিয়ে যাওয়ার পর পিটার শিলটন (ইংলিশ গোলরক্ষক ও অধিনায়ক) বেরিয়ে এল। প্রথমে ভেবেছিলাম ওই পাশের কোণটা দিয়ে বল ঢোকাব। কিন্তু শিলটন এমন একটা ভঙ্গি করল... [আবার অভিনয় করে দেখালেন যে শিলটন পড়ে যাচ্ছেন]। এমন নয় যে আমি দুর্দান্ত একটা মুভ নিলাম। আসলে শিলটন গোলপোস্ট আগলাতে খুব বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

ফলে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করে দিল। ওকে দেখে আমার মনে হয়েছিল, ‘আরে ওর হয়েছে টা কী? ওকে মদটদ খাইয়ে মাঠে নামিয়েছে নাকি!’ ও যেন পাগলের মতো আচরণ করছিল। আতঙ্কে একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ল। তাই একটা টোকা দিয়ে ওকে পাশ কাটিয়ে বলটা জালে পাঠিয়ে দিলাম। গোওওওওল!
এরপর বুচার এসে রাগের চোটে আমাকে জোরে লাথি মেরেছে।

এমন বেদনাদায়ক আঘাতের অভিজ্ঞতা খুব বেশি হয়নি। বাসে করে ফেরার সময় পায়ে বরফের ব্যাগ রাখতে হয়েছিল। অবশ্য কুছ পরোয়া নেহি। ইংলিশদের হারিয়েছি, আর কী চাই!

হ্যান্ড অব গড এবং শতাব্দীর সেরা গোল দুটির ভিডিও দেখুন:

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.