আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলাই মারা

বিড়ালের উত্‍পাতে জীবন অতিষ্ট । আর সহ্য করা যায়না। এর একটা বিহিত করতেই হবে আজ । এভাবে আর কত সহ্য করা যায় । কথাগুলো বিড়বিড় করে বলছিল সুজন ।

গতকাল খুব শখ করে রাতে ২ কেজি ইলিশ মাছ কিনে এনেছিল সে। অভাবের সংসার , তার উপর বাবা অসুস্থ । ডাক্তার বলেছে ঔষধ এর পাশাপাশি একটু ভালমন্দ ও খেতেহবে রুগীকে। ধান বিক্রী করেআনা শখের মাছ যদি বিড়ালে খায়কার না মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । আজ বিড়ালের রক্ষা নেই ।

লাঠি নিয়ে বসে আছে সুজন, বিড়াল মারবে । কিন্তু কোথায় গেল বিড়ালের বাচ্চারা ? সারাদিন বিড়াল মারার অপেক্ষাটা বৃথা হয়ে গেল । নাহ্ আর পারা গেলনা, বিড়ালেরবাচ্চারা মনে হয় জেনে গেছে ব্যাপারটা । প্রযুক্তির যুগতো জানতেও পারে । হয়তঃ ডিজিটাল যুগের ছোঁয়া লেগেছে পশু পাখিদের জীবনে ।

তাছাড়াকিভাবে জানবে যে তাকে মারার জন্য একজন লাঠিহাতে বসে আছে ? নাকি চোরের মন পুলিশ পুলিশ, এই ভয়ে...... এরকম অনেক কিছুই চিন্তা করে সুজন । আসলে বিড়াল বেটা উদরপুরে খেয়েছে তো, সারাদিন কোথাও গিয়ে একটু রেষ্ট এ ছিল । তাই লোকসম্মুক্ষে আসেনি । সকালবেলা মাটির ঘরের বারান্দায় বসে ভাত খাচ্ছে সুজন । এমন সময় সেই চিরচেনা পুরাতন সুর ! ম্যাঁও ম্যাঁও ।

মাথায় যেন বাঁজ পড়ে সুজনের । পিছনেতাকিয়ে সেই অপরাধী ধূসর বর্ণের বিড়ালটিকে দেখতে পায় । তুই আজ আবার এসেছিস ? তোর জন্য গতকাল আমার সারাটা দিন মাটি হয়েছে। তোকে আজ আমি শেষ করে ফেলবো ! বলেই হাতের কাছের পিড়িটা বিড়াল বরাবর ছুড়ে মারলো সুজন । অমনি বেচারী এক হাত উপর দিকে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ে গেল ।

আর ছটফট করতে লাগলো যেমন মুরগী জবাই করেছেড়ে দেয়ার পর ছটফট করে । সবার নজর কাড়লোঐ বিড়ালটির দিকে । মা, রাগান্বিত হয়ে বললো একি করলি তুই ! অবলা জীবটাকে এইভাবে মেরে ফেললি ? মা তাড়াতাড়ি পানি এনে পরম আদরে বিড়ালটির মাথায় ঢালছে অনবরত । অনেক চেষ্টার পর অবশেষে দুনিয়ার মায়া ছেড়ে বিড়ালটি একটু নড়ে উঠে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো । মা অনেক বকাঝকাকরলো সুজনকে ।

আসলে মায়ের মন তো এমনিই দরদমাখা হয় । সুজনও হতবাক হয় । এটা কি করলাম ! কেন মারলাম বিড়ালটিকে ? ওর তো কোন দোষ ছিলনা । ও যা করেছে তাতো পেটের ক্ষুধায় করেছে , আর তাছাড়া যদি নিজেরা যদি একটু সাবধান হতাম তাহলেই তোএমন ঘটনা ঘটতো না । নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হয়সুজন ।

জীব হত্যা নাকি মহাপাঁপ, আবার কবির ভাষায় জীবে প্রেম করেযেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সুজন। প্রভুর কাছে দু হাত তুলে প্রার্থনা করে কৃতকর্মের জন্য । সুজনের নিরব নিভৃতে কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়েওঠে । এই কর্মচঞ্চল মানুষটি নিমিষেই যেন চুপসে যায় , সারাদিন কিছু খেতে পায়নি, শুধু বুক ফেটে চিত্‍কার করে বলছে এ আমি কি করলাম, কি করলাম. . . . . . ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।