আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলার প্রেম ছেলেবেলার গান (২)

প্রকৃতিকে করো তব দাস-চে দ্য আইডল (ব্লগার নং - ৩১৩৩৯) ভাবলেই কেমন বিষন্নতা প্রজাপতি উড়া দিন পাখিদের গান শোনা দিন বাদাড়ের গাছে গাছে হলুদিয়া পাখির মাতাল নাচে মুগ্ধ হারিয়ে যাবার দিন স্মৃতির পৃষ্ঠায় আজো অমলিন... আমাদের কেউ বলে না দিলেও আমরা অদ্ভুত আবেগে হাতের রক্ত কাগজে মাখিয়ে শেখমুজিব কে উৎসর্গ করেছিলাম। কষ্ট টা পেয়েছিলাম কিছুক্ষণ পর। মাদ্রাসা থেকে আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা তিন চারটে ছেলে এসে একটানে ছিঁড়ে ফেলে দিলো আমাদের উৎসর্গ পত্র! মাদ্রাসার অকাটমূর্খ গুলোর প্রতি সেই থেকেই একটা ঘৃণা বোধ করতাম। বলছিলাম, হ্যাপির কথা। হ্যাপির সাথে আমাদের মিথস্ক্রিয়া খুব একটা ছিলো না।

জেসমিন তাছলিমাদের যতই বৌ বৌ ডাকা হোত না কেন, আমি একটা ছেলে আর ও একটা মেয়ে, অতএব আমরা পরস্পর... এজাতীয় চিন্তার কোন মানসিক শক্তি আমাদের সময়ে আমরা পাই নি। অবশ্য এখন সময় পাল্টে গেছে। আমার কলেজ ছিলো নৌবাহিনী কলেজ, চট্টগ্রাম। সিইপিজেড সংলগ্ন ২ নং নাবিক কলোনি তে ছিলো ক্যাম্পাস। ঐ কলোনির একটা জুটি রোজ বিকেলে ঘুরতে বের হত।

আমরা একবার তাদেরকে চুম্বন করতেও দেখেছিলাম। মজার কথা হল, ছেলেটা পড়ত ক্লাস সিক্সে আর মেয়েটা ফোরে। সময়টা ২০০৫-০৬। যায় হোক,হ্যাপি আমাদের কাছে আলাদা ছিলো। আর আমাদের প্রেমের প্রকাশ টাও ছিলো অসাধারণ।

প্রেমের প্রবল আবেগে আমরা হ্যাপির নিরবচ্ছিন্ন জীবনে কত ধরণের ঝামেলা করা যায় তা নিয়ে রীতিমত গবেষণা করতাম। হ্যাপি খুব ভালো মেয়ে ছিলো। কখনোই স্যারের কাছে নালিশ করে নি, বরঙ প্রায়ই আমাদের ঝালমুড়ি খাওয়াতো। সবাই খেলেও আমি খেতাম না। আমি এসময়টায় লজ্জা বোধ করতাম আর চাইতাম হ্যাপি যেন আমার অস্ত্বিত্ব বুঝতে না পারে।

মজার কথা হলো, এটা বুঝতে পারতাম না, আমার অনুপস্থিতিটাই আমাকে আরো বেশী প্রতীয়মান করে তুলছে ! হ্যাপি আমার এক ক্লাস সিনিয়র, এ ব্যপারে ক্লাস ফোর ফাইভে আমার হালকা দুঃখবোধ ছিলো। কারণ আমি মূলত হ্যাপির ক্লাসমেটই ছিলাম। নিজের কারণেই এক ক্লাস পিছিয়েছি। ঘটনা টা ক্লাস ওয়ানে। বার্ষিক পরীক্ষার আগের দিন আমার মামা বাড়ি আসলেন।

মামা মালয়েশিয়ান শীপের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তো, মা যাবেন। আমি ধরলাম পিছ। কোন ভাবেই রেখে যাওয়া গেলো না। ফিরলাম ছয় সাতদিন পর।

ততদিনে আমার পরীক্ষা শেষ। মাসখানেক পরে স্কুলে গিয়ে দেখি, আমাকে আবার ক্লাস ওয়ানেই বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি তো কেঁদেকেটে অস্থির। আমি ক্লাস ওয়ানে পড়েছি। আর পড়ব না।

পরে আমাকে বুঝানো হলো, ওটা ছোট ওয়ান ছিলো। এখন পড়তে হবে বড় ওয়ানে। আমিও মনের আনন্দে বড় ওয়ানে পড়তে লাগলাম। পরে শুনেছিলাম, হেডস্যার নাকি বাবা কে বলেছিলেন, ক্লাস টু তে উঠিয়ে দিতে। কিন্তু বাবার এক কথা, পুলা ওয়ানে কি শিখলো, এটাই তো বুঝি নাই! বাবার কারণেই হয়তো আমার শৈশবের প্রথম প্রেমটি অংকুরেই মারা গিয়েছিলো।

অবশ্য বাবাকে কখনো এরজন্য প্রবলভাবে দায়ী করিনি। কারণ হ্যাপির ক্লাসে পড়তে গেলে আমাকে মহসিন মাসুম ফারুকদের হারাতে হত। হ্যাপির চেয়ে ওদের প্রতি আমার টান টা বেশীই ছিলো। হ্যাপি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো আমরা ক্লাস ফাইভে উঠার সময়। হ্যাপি তখন প্রাইমারি শেষ করে ফেলেছে।

ক্লাস ওয়ান টু তে তেমন কিছু মনে নাই স্কুলের। কেবল একটা মারামারির কথা মনে পড়ে। টু তে সম্ভবত, বসার জায়গা নিয়ে ঝগড়া করে আমি এক ছেলের কানে কামড় দিয়েছিলাম। সেই ছেলেটার ভাই পড়ত তখন ফোর কি ফাইভে। দুই ভাই মিলে আমাকে মারলো।

আমি হেডস্যারের কাছে বিচার দিলাম। হেডস্যার দুই ভাই কে কান ধরে উঠবস করালো। সেই ভাই টির সাথে কিছুদিন আগে দেখা হলো চট্টগ্রামের নিউমার্কেটে। বিয়ে করে দুই সন্তানের পিতা। মাশুল হিসেবে রিকশা চালায়।

একসাথে বসে চা খেতে খেতে মারামারির কথা টা তুলে হেসেছিলাম দুইজন। আমি কোথায় পড়ি, কি করি, এসব জানার পর কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সেভেনের পর আর পড়া হয় নি তার। এভাবেই কত ছেলে মেয়ে ঝরে পড়ে। আমার একটা জিনিস অবাক লাগে, মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষার পরিধিটা সরকার অনেকখানি বাড়িয়েছে।

এজন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা। কিন্তু অনেক ছেলেরাও যে টাকার অভাবে ঝরে পড়ে, সেই খবর সরকার রাখে না। কথা প্রসঙ্গে বলি, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য শিক্ষার বিশেষ সুবিধাপ্রদান, নারী অধিকার আইন, নারী নির্যাতন আইন এসব অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও এগুলো স্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের উচিৎ বিশেষ সুবিধা দিয়ে নারীকে যত দ্রুত সম্ভব এমন একটা উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, যেখানে সে আর নারী থাকবে না বরঙ মানুষ হয়ে উঠবে, তেমনি পুরুষও পুরুষতান্ত্রিক পূঁজ ছেড়ে মানুষে পরিণত হবে। নারী পুরুষের ব্যবধান রেখে প্রকৃত উন্নতি কতটা সম্ভব? এক কথায়, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ এমন একটা সমাজব্যবস্থা যেখানে কোনো নারী অধিকার- পুরুষ অধিকার থাকবে না, থাকবে কেবল মানবাধিকার।

এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, মানব বলতে পুরুষকে বুঝাই নি। মানুষ তথা নারী-পুরুষ উভয়কে বুঝিয়েছি। কে কিভাবে নেবেন জানি না, আমার মনে হয় আমাদের বাংলাভাষার একটা বড়সড় দুর্বলতা আছে। তা হল, এখানে নারী বাচক আর পুরুষবাচক শব্দ অনেক বেশী। শিক্ষক বলতে আমরা শিক্ষাদানকারী পুরুষ কে বুঝি।

নারী শিক্ষাদানকারীকে বোঝাতে বলি, শিক্ষিকা। কেন, শিক্ষক কি সার্বজনীন হতে পারত না? কিছুদিন আগে ভার্সিটি তে গ্র্যাজুয়েশান কমপ্লিশান প্রোগ্রাম র্যাগ করলাম। স্যুভেনিরের দায়িত্ব ছিলো আমার কাঁধে। ওখানে ব্যাচের সবার পরিচিতি পাতার জন্য একটা ফরম ছাড়লাম। ওখানে আমি প্রথমেই লিখেছিলাম, 'ছাত্রের নাম: ...............................' ।

কয়েকজন মেয়ের কাছে আমাকে প্রশ্ন শুনতে হলো, আমি কি মেয়েদের নাম ছাপাবো না! এই হলো অবস্থা! এদিক দিয়ে ইংরেজী সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। এখানে টিচার-স্টুডেন্ট-ইউ বলেই শিক্ষক শিক্ষিকা, ছাত্র ছাত্রী, আপনি তুমি তুই এর সমস্যা কাটানো যায়! বাংলাভাষার জন্য পরিপূর্ণ ভাষানীতি প্রণয়ন অত্যাবশ্যক এখন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।