আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলার ঈদ-9

খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।

ঈদের সকালের প্রতীক্ষায় রাত যেন আর ভোর হয় না! চোখ বন্ধ করতেও ভয় লাগে, ঘুমিয়ে পড়লে যদি সকল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়? সকালবেলাতেই তো সব ঈদের সালামী দেবে। আব্বু, চাচু, দাদু, দাদি, চাচি। সবাই হাতের মুঠোয় টাকা লুকিয়ে রেখে দেয় আগে থেকেই।

সালাম করলেই সালামী! সব্বাইকে পা ছুঁয়ে একটা করে সালাম আর তারপরেই কড়কড়ে দশ টাকার একটা করে নোট! যতগুলো সালাম ততগুলো নোট! মামা তো খামের মুখ বন্ধ করে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে, জামা-কাপড়ের সাথে। মাকে চিঠি লিখে দিয়েছে প্রতিবারের মত এবারেও, মামার সালামটা আমি যেন মা'কে করি আর তারপরেই মা যেন আমাকে খামটা দেয়! টপাটপ মা'কে দু'বার সালাম আর তারপরেই খাম হাতে! ভেতরে একটা কার্ড, ঈদ মুবারক লেখা, একটা চিঠি আর একটা নতুন পঞ্চাশ টাকার নোট! আমি কার্ড চিঠি আর টাকা হাতে নিয়ে সারা বাড়ি একপাক ঘুরে আসি ছুট্টে, জনে জনে কার্ড চিঠি আর টাকা দেখিয়ে। মা বলে, চিঠিটা তো পড়! কিন্তু আমি তো জানি, মামা চিঠিতে কি লিখেছে! মামা যে প্রতিবছর একই কথা লেখে! মামা লিখেছে, মা আমার , ঈদ মুবারক। লক্ষ্মী হয়ে থাকিস, একদম দুষ্টুমি করিস না! ইতি, বেটা। মামা যে আমার বেটা ছিল আর আমি মামার 'মা'।

আমি অপেক্ষায় থাকি, কালকের। মামা যে কাল আসবে। সালামী মা আর চাচিও পায়। রান্নাঘরের পাট চুকিয়ে স্নান সেরে নতুন শাড়িতে দুজনে দাদুকে যখন সালাম করতে আসে তখন প্রায় দুপুর। দাদু তাঁর হাতবাক্স থেকে দুখানা একশ টাকার নোট বার করে দুজনকে দেয়।

আমি বুঝতে পারি না, সালামী পেয়েও মা কিংবা চাচি কেন সেটা নিতে চায় না, বারে বারেই বলে, থাক না আব্বা কি দরকার! একপাটি দাঁতহীন দাদু আমার হেসে বলেন, রাখ না সোনা ( দাদু মা'কে 'সোনা' বলে ডকতেন) , আমি যদ্দিন আছি, তদ্দিনই তো! এরপর তোমারে আর কে সালামী দেবে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।