আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলার ঈদ-5

খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।

ঈদের আগের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় ঈদের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। বিভিন্ন রকম পিঠে তৈরী হয়। মিষ্টি, নোনতা।

কোরানো নারকোল চিনি জিয়ে জ্বাল দিয়ে তৈরী হয় সমোসার পুর। ময়দার রুটি বেলে পছন্দমত আকারে কেটে নিয়ে তাতে নারকোলের পুর দিয়ে তৈরী হয় সমোসা। বিভিন্ন আকারের। কোনটা তেকোণা, কোনটা পুলির মত তো কোনটা আবার দোকানের সিঙাড়ার মত দেখতে। ভাজা হয়ে গেলে ঘন করে জ্বাল দেওয়া চিনির রসে ডুবিয়ে তুলে রেখে দাও বড় গামলায়।

ঈদের দিনে শরবত আর সেমুইএর সাথে এই সমোসাও দেওয়া হবে মেহমানদের। সাথেই ভেজে রাখা আছে খাস্তা নিমকি। যে মিষ্টি সমোসা খাবে না , তার জন্যে! ভোরের আজানের সাথেই উঠে পড়েন মা, চাচি আর ফুফুরা। ফজরের নামাজ সেরে অন্ধকার থাকতেই তারা ঢুকে পড়েন রান্নাঘরে। পুরুষেরা মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ সেরে এসে হাঁক-ডাক শুরু করেন, এই পোলাপান, এখনও ঘুমাইতেছস? শিগগির ওঠ! সকাল হইয়া গ্যাসে তো! গোসল কইরা রেডি হ সব, নামাজে যাবি না? মাঝরাত পার করে ঘুমুতে যাওয়া সব ছেলে-মেয়ে, আমরা, চোখমুখ কচলে সোজা পুকুরে।

মুখ ধুয়ে ঘরে আসতে আসতে টেবিলে হাজির আগের দিনে তৈরী করে রাখা সব সমোসা, নিমকি আর এক্ষুনি রান্না করা সেমুই, সুজির হালুয়া। এই সুজির হালুয়াটা দাদুর ফেভারিট। ঘরে বানানো, কিনে আনা যত খাবারই থাকুক, দাদুর সুজির হালুয়া চাইই চাই। ফ্লাস্ক ভর্তি চা আর ট্রেতে রাখা সব কাপ ডিশ। আমরা পোলাপানেরা তখন চা পেতাম না।

আমাদের জন্যে জাগে আছে গরম দুধ। দুধ আমি একদম পছন্দ করি না, আমি চা ই খেতে চাই, কিন্তু চাইলেও কি পাওয়া যায়? দাদি বলে, চা খেলে নাকি আমি আরও কালো হয়ে যাব! অগত্যা : দুধ! ভেতরবাড়ির উঠোনে তখন কাকার তদারকিতে কসাই খাসির মাংস টুকরো করছে। ভোরেই জবাই হয়েছে খাসি। কাজের বুয়ারা ঘুরঘুর করছে আশে-পাশেই। খাসির কলিজা, দিল, মগজ এগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্যে।

একটা ঝাল ঝাল কষা হবে লুচির সাথে খাওয়ার জন্যে। সেটা মা রাঁধবে। খাওয়ার ঘরে তিন-চারজন বসে বেলছে লুচি। মা মাঝে মাঝেই রান্নাঘর থেকে উঠে এসে দেখে যাচ্ছে লুচি বেলার কদ্দূর কি হল। কুলোতে খবরের কাগজ পেতে রাখা হচ্ছে বেলা লুচি, কুলো ভরে উঠলেই এক ছুট্টে আমি সেটা রান্নাঘরে নিয়ে যাচ্ছি ভাজার জন্যে, ( আমিও বসে লুচি বেলছি কি না! ) সেখানে চাচি লুচি ভাজছে।

এই লুচিগুলো বেশ বড় বড়। আর ভাজাও হয় একটু কড়া করে। অত লোকের বাড়িতে সকলের নাশতার জন্যে ছোট ছোট লুচি বেলতে বেলতেই নাকি রাত হয়ে যাবে, তাই দাদির পরামর্শে লুচিগুলো আকারেও বড় আর ওজনেও ভারী! (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।